ইসলাহী বয়ান
‖ কে সফল, কে ব্যর্থ
اَلْحَمْدُ لِلهِ وَكَفٰى، وَسَلَامٌ عَلٰى عِبَادِهِ الَّذِينَ اصْطَفٰى، أَمَّا بَعْدُ. فَأَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ.
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا. صدق الله مولانا العظيم.
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন কারীমে সফল মানুষ আর ব্যর্থ মানুষের কথা আলোচনা করেছেন। এক প্রকার মানুষ সম্পর্কে বলেছেন, তারা কামিয়াব ও সফল। আরেক প্রকার মানুষ সম্পর্কে বলেছেন, তারা না-কাম ও ব্যর্থ।
কে সফল আর কে ব্যর্থ– আল্লাহ তাআলা সূরা শামসে এ কথাটি খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন–
قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىہَا، وَقَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا.
অবশ্যই সে সফল হয়েছে, যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা বিনষ্ট করেছে। –সূরা শামস (৯১) : ৯-১০
আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, সফল তারা, যারা নফসকে পাক-সাফ করেছে, পাক-সাফ রেখেছে। আর ব্যর্থ তারা, যারা গুনাহ ও নাফরমানী করে করে নফসকে বরবাদ করে ফেলেছে।
আল্লাহর কসমের রহস্য
কথাটি আল্লাহ তাআলা জোর দিয়ে বলেছেন, তাকিদ দিয়ে বলেছেন। কথাটির প্রতি জোর তাকিদ ও গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর আগে অনেকগুলো বিষয়ের কসম করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে–
وَالشَّمۡسِ وَضُحٰہَا، وَالۡقَمَرِ اِذَا تَلٰىہَا، وَالنَّہَارِ اِذَا جَلّٰىہَا، وَالَّیۡلِ اِذَا یَغۡشٰىہَا، وَالسَّمَآءِ وَمَا بَنٰہَا، وَالۡاَرۡضِ وَمَا طَحٰہَا، وَنَفۡسٍ وَّمَا سَوّٰىہَا، فَاَلۡہَمَہَا فُجُوۡرَہَا وَتَقۡوٰىہَا.
কসম সূর্যের ও তার উজ্জ্বল রোদের এবং চাঁদের, যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে। কসম দিনের, যখন তা সূর্যকে দীপ্তিমান করে এবং রাতের, যখন তা সূর্যকে ঢেকে ফেলে। কসম আকাশের ও তাঁর, যিনি তা নির্মাণ করেছেন। কসম পৃথিবীর ও তাঁর, যিনি তাকে বিস্তৃত করেছেন। কসম নফসের ও তাঁর, যিনি তাকে নিখুঁতভাবে বানিয়েছেন। অতঃপর তাতে নাফরমানী ও পরহেযগারীর বুঝ দান করেছেন। –সূরা শামস (৯১) : ১-৮
এখানে আল্লাহ তাআলা নিজের নামে যেমন কসম করেছেন, অনেকগুলো মাখলুকের নামেও কসম করেছেন। সবই তো আল্লাহর মাখলুক, তো আল্লাহ তাআলা নিজের নাম ছাড়া আর যার নামেই কসম করবেন, সে তো তাঁর মাখলুকই হবে!
মোট এগারো বিষয়ের কসম করে আল্লাহ তাআলা এবার ইরশাদ করছেন, নফসকে যে পাক-সাফ করতে পেরেছে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। আর নফসকে যে পাক-সাফ করতে পারেনি, সে-ই ব্যর্থ, সে-ই না-কাম হয়ে গেছে।
আল্লাহ তাআলার কসম খাওয়ার তো কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও আল্লাহ কসম খেয়েছেন কেন? আগত বিষয়টিকে মজবুত করার জন্য। বান্দার হৃদয়ে কথাটি মজবুতির সাথে বসানোর জন্য।
আল্লাহ তাআলা এগারোটি বিষয়ের কসম করেছেন– সূর্যের কসম, সূর্যের আলোর কসম, চাঁদের কসম, দিনের কসম, রাতের কসম, আসমানের কসম, আসমান যিনি বানিয়েছেন তাঁর কসম, জমিনের কসম, জমিন যিনি বিস্তৃত করেছেন তাঁর কসম, নফসের কসম, নফসকে যিনি পরিপাটি করেছেন তাঁর কসম।
এভাবে এগারো বিষয়ের কসম করে আল্লাহ কী কথা বলছেন? একটি কথা বলার জন্যই আল্লাহ এ কসমগুলো করেছেন। কথাটি কী? কথাটি হল–
قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىہَا، وَقَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا.
অর্থাৎ কামিয়াব তো সেই ব্যক্তি, যে নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর ব্যর্থ সে ব্যক্তি, যে (গুনাহের কাজে) নফসকে বরবাদ করেছে।
ভালো কাজ ও মন্দ কাজ চেনার উপায়
শেখ সা‘দী রাহ. বলেন–
مکن نفس اماره را پیروی
অর্থাৎ নফসে আম্মারার ‘পায়রবী’ করো না। সে যা বলে, তার অনুসরণ করো না।
ব্যস, নফস যে কাজটা করতে বলে, নফস যে কাজ করার প্ররোচনা দেয়, বুঝে নেব, সেটাই হল মন্দ কাজ। সেই কাজটা ছেড়ে দেওয়ার নামই হল, নফসের ইসলাহ। সেই কাজগুলো না করার নামই হল, তাযকিয়ায়ে নফস।
আর এটা যে করবে, সে-ই হল কামিয়াব ও সফলকাম। এটা যে করতে পারবে না, সে-ই না-কাম ও ব্যর্থ।
নফসের তিন স্তর
নফস মূলত একটাই। কিন্তু এর তিনটা স্তর আছে–
প্রথম স্তরের নাম হল, ‘নফসে আম্মারাহ’ (মন্দ কাজে উদ্বুদ্ধকারী নফস)।
দ্বিতীয় স্তরের নাম হল, ‘নফসে লাউওয়ামাহ’ (মন্দ কাজের জন্য তিরস্কারকারী নফস)।
তৃতীয় স্তরের নাম হল, ‘নফসে মুতমাইন্নাহ’ (নেককাজে প্রশান্তি অর্জনকারী নফস)।
নবী প্রেরণের অন্যতম উদ্দেশ্য নফসের ইসলাহ
আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন, তাদের প্রেরণের উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল নফসের ইসলাহ। আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন–
لَقَدۡ مَنَّ اللّٰہُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ بَعَثَ فِیۡہِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡ اَنۡفُسِہِمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِہٖ وَیُزَکِّیۡہِمۡ وَیُعَلِّمُہُمُ الۡکِتٰبَ وَالۡحِکۡمَۃَ وَاِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ.
অবশ্যই আল্লাহ মুমিনগণের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদেরই মধ্য থেকে– যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদের পবিত্র করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও গভীর প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় শিক্ষা দেন। আর তারা তো পূর্বে স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে ছিল। –সূরা আলে ইমরান (০৩) : ১৬৪
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কয়েকটা বড় বড় মাকসাদে নবী পাঠিয়েছেন–
১. یَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِہٖ
মানুষকে আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করে শোনাবেন।
২. وَیُزَکِّیۡہِمۡ
নবী উম্মতের তাযকিয়া করবেন।
তাযকিয়া কী? ইসলাহে নফস বা নফসের পরিশোধন। নফসের মধ্যে যত রোগ আছে, নবী আলাইহিস সালাম সেগুলোর চিকিৎসা করবেন, ইসলাহ করবেন, সংশোধন করবেন।
৩. وَیُعَلِّمُہُمُ الۡکِتٰبَ
তাদেরকে কিতাব শিক্ষা দেবেন।
৪. وَالۡحِکۡمَۃَ
তাদেরকে হেকমত শিক্ষা দেবেন। হেকমত কী জিনিস? হেকমত হল–
العِلْمُ المُوَافِقُ لِنَفْسِ الأَمْرِ.
যে ইলম বাস্তবের মুয়াফিক হয়; মুখালিফ না হয়, তাকেই হেকমত বলা হয়।
এর অন্যতম উদ্দেশ্য, ‘হাদীসুর রাসূল’– রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস। কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন। আর হেকমত দ্বারা উদ্দেশ্য হল হাদীস।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ চারটি কাজ।
এক. তিলাওয়াতুল কুরআন
তালীমুল কুরআন না; উম্মতকে কুরআন পড়ে পড়ে শোনানো, এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি যিম্মাদারী। আর তালীমুল কুরআন ভিন্ন আরেক যিম্মাদারী। উম্মতের সামনে কুরআন পড়া এক যিম্মাদারী, উম্মতকে কুরআন শেখানো আরেক যিম্মাদারী।
দুই. তাযকিয়া
অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি। অন্তরকে পাক-সাফ করা। এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম প্রধান কাজ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নফসের ইসলাহ করে দেবেন। এটা আমাদের ওপর আল্লাহ তাআলার ইহসান যে, আমাদের নফসকে ইসলাহ করে দেওয়া, পাক-সাফ করে দেওয়ার যিম্মাদারী আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ন্যস্ত করে দিয়েছেন।
এ কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে বলেছেন। আল্লাহর কথা সমস্ত কথার সেরা কথা। প্রবাদ রয়েছে–
كَلَامُ الْمُلُوكِ مُلُوكُ الْكَلَامِ.
রাজার কথা হয় কথার রাজা। বাদশাহ্র কথা হয় কথার বাদশাহ।
ইসলাহের দুটি ধাপ : তাখলিয়া ও তাহলিয়া
এই ইসলাহে নফসের জন্য আমাদের মোট দুটি কাজ–
তাখলিয়া ও তাহলিয়া।
তাখলিয়া মানে খালি করা, মুক্ত করা, পরিচ্ছন্ন করা।
তাহলিয়া মানে সাজানো, সুসজ্জিত করা, পরিপাটি করা।
প্রথম কাজ তাখলিয়া
অন্তরের বিশেষ দশটা রোগ আছে, এগুলো থেকে অন্তরকে পাক-সাফ করতে হবে। এই পাক-সাফ করার নাম তাখলিয়া।
কবি বলেছেন–
خواهي که شود دل تو چوں آينه
ده چيز برو کن از درون سينه
حرص و امل و غضب وکذب وغیبہ
بخل وحسد و ريا وکبر وکينه
তুমি যদি তোমার দিলকে আয়নার মতো ঝকঝকে পরিষ্কার করতে চাও, তাহলে দিল থেকে দশটি জিনিস বের করে দাও–
লোভ, দীর্ঘ আশা, রাগ, মিথ্যা, গীবত, কৃপণতা, হিংসা, রিয়া, অহংকার ও কীনা।
এ দশটি রোগ ভেতর থেকে আগে বের করতে হবে। রোগ ভেতরে রেখে যত চেষ্টাই করা হোক, কাজ হবে না। সব বেকার হয়ে যাবে। এজন্য সবার আগে চেষ্টা করতে হবে, অন্তর থেকে রোগ বের করে দেওয়া। আগে রোগ বের করতে হবে। তারপর সুস্থতা আসবে, তারপর সবকিছু হবে।
দ্বিতীয় কাজ তাহলিয়া
এরপর আসবে দ্বিতীয় কাজ। দ্বিতীয় কাজ হল তাহলিয়া। অর্থাৎ উত্তম গুণাবলি দিয়ে অন্তরকে সুসজ্জিত করা। এর মধ্যে মৌলিক সিফাত ও গুণ নয়টি। এই নয়টি সিফাত অবশ্যই অর্জন করতে হবে।
অন্তরকে এ নয়টি সুন্দর সিফাত দিয়ে অবশ্যই সুসজ্জিত করতে হবে। সেই নয়টি সিফাত কী কী?
কবি বলেন–
خواہی کہ شوی بمنزل قرب مقیم
نو چیز بہ نفسِ خویش کن تعلیم
صبر وشکر وقناعت وعلم ویقین
تفویض وتوکل ورضا وتسلیم
যদি চাও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করতে, তাহলে নিজের নফসকে নয়টি জিনিসের তালীম দাও–
সবর (ধৈর্য)
শোকর (কৃতজ্ঞতা)
কানাআত (অল্পেতুষ্টি)
ইলম (দ্বীনী ইলম)
একীন (বিশ্বাস)
তাফবীয (আল্লাহর কাছে নিজেকে পুরোপুরি ন্যস্ত করে দেওয়া)
তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপরই ভরসা করা)
রেযা (আল্লাহর ফয়সালায় রাজি থাকা) এবং
তাসলীম (আল্লাহ তাআলার পূর্ণ আনুগত্য করা)।
এই নয়টা গুণ অর্জন করতেই হবে। আর আগে যে দশটি গুণের কথা বলা হল, সেগুলো বর্জন করতেই হবে। এই অর্জন আর বর্জনের নামই হল ইসলাহে নফস। এই অর্জন ও বর্জনের বিষয়ই কুরআনের ভাষায় এভাবে এসেছে–
قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ زَکّٰىہَا، وَقَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا.
অবশ্যই সে সফল হয়েছে, যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা বিনষ্ট করেছে। –সূরা শামস (৯১) : ৯-১০
এ অর্জন আর বর্জন করতে না পারলে আমি আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এরই নাম তাযকিয়া। এরই নাম আত্মশুদ্ধি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের এ তাযকিয়াই করতেন। উম্মতের কলবের রোগগুলো বের করে গুণগুলো কলবের মধ্যে দাখেল করার মেহনত করতেন।
দশটা দোষ আর নয়টা গুণ যে বলা হল, এর দ্বারা ‘তাহদীদ’ উদ্দেশ্য না। অর্থাৎ দোষ শুধু এ দশটাই না। গুণ শুধু এ নয়টাই না। যেমনিভাবে আরও দোষ আছে, তেমনি আরও গুণ আছে। তবে এ দশটা আর নয়টা হল কিছু মৌলিক দোষ ও মৌলিক গুণ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম বড় কাজ ছিল, তিনি অন্তরের মৌলিক দোষগুলো বের করে মৌলিক গুণগুলো অন্তরে দাখেল করতেন। আয়াতে কারীমায় যে وَیُزَکِّیۡہِمۡ বলা হল, এর দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য।
অধিক নফল ইবাদত ও যিকির : আত্মশুদ্ধির আরেক মাধ্যম
আত্মশুদ্ধির জন্য এ দুই কাজের পাশাপাশি আরেকটা কাজ করতে হবে। সেটা হল, ‘কাছরাতে নাওয়াফেল ওয়া যিকর’। অর্থাৎ নফল ইবাদত বাড়িয়ে দিতে হবে, যিকির বাড়িয়ে দিতে হবে।
বেশি বেশি নফল ও বেশি বেশি যিকির করতে হবে। এর দ্বারাও আত্মশুদ্ধি হয়। এর দ্বারাও ইসলাহ হয়।
নাওয়াফেল ও যিকিরে ‘কাছরাত’ বা আধিক্য ইসলাহে বাতেন ও আত্মশুদ্ধির জন্য অনেক বড় সহায়ক। দিনে-রাতে যত প্রকার নফল ইবাদত আছে, নফল আমল আছে, ইহতেমামের সাথে সেগুলো আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।
ফরয ইবাদতের পাশাপাশি যে বান্দা নফল ইবাদতেও যত্নবান হয়, সে আল্লাহ তাআলার চূড়ান্ত নৈকট্য অর্জন করে।
নফল থেকে ফরযের গুরুত্ব অনেক বেশি
একটা কথা খুব মনে রাখতে হবে। নফল ইবাদতের গুরুত্ব তখনই, যখন বান্দা ফরয ইবাদত ঠিক রাখে। ফরয নষ্ট করে নফলের কোনোই মূল্য নেই।
হাদীসে কুদসীর মধ্যে আল্লাহ তাআলা ফরযকেই সবার আগে রেখেছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য ফরয ইবাদতের চেয়ে বড় কিছু নেই। অসংখ্য নফলও একটা ফরযের সমান হতে পারে না। ফরয থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়া তো দূরের কথা।
হাদীসে কুদসী মানে কথাটা আল্লাহর, ভাষাটা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। একটি হাদীসে কুদসীর মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন–
وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّه.
বান্দার ওপর আমি যে আমল ফরয করেছি, আমার নৈকট্য লাভের জন্য এর চেয়ে প্রিয় কোনো বিষয় নেই। আর বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার কাছাকাছি হতে থাকে, একপর্যায়ে আমি তাকে আমার মাহবুব ও প্রিয় বানিয়ে নেই। –সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৭
অর্থাৎ ফরয আমলই হল আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। বোঝা গেল, ফরযের গুরুত্ব সবার আগে। ফরয আদায় না করে, ফরযকে গুরুত্ব না দিয়ে হাজারো নফল আদায় করি, কোনো কাজ হবে না। হাঁ, ফরয সব ঠিক রেখে তারপর বেশি বেশি নফল পড়ব, বেশি বেশি যিকির করব।
এক ব্যবসায়ীর ঘটনা
হাজ্বী সিরাজুদ্দৌলা মরহুম একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী ছিলেন। আমি যখন জামেয়া মুহাম্মাদিয়ায় ছিলাম, একদিন ফজর নামাযের পর তিনি আমার কামরায় এলেন। বললেন, আজ রাতে আমি আল্লাহ তাআলার এক বড় নিআমত লাভ করেছি। নিআমতের শোকর তো আমি আদায় করছিই। শোকর আদায় হিসেবেই আপনার কাছে বলতে চাই। আপনি আমাকে উৎসাহ দেবেন।
একথা বলে তিনি বললেন, আজ রাতে আলহামদু লিল্লাহ আমি দুই শ রাকাত নফল নামায আদায় করেছি।
আল্লাহু আকবার! একজন সাধারণ ব্যবসায়ী মানুষ, রাত জেগে দুই শ রাকাত নফল নামায পড়েছেন! আসলে কার মাকাম যে কোথায়, সেটা আল্লাহ তাআলাই জানেন। এভাবে গোপনে-প্রকাশ্যে নফল আদায় করে করে আল্লাহ তাআলার কে যে কত করীব হয়ে গেছেন– সেটা আমরা অনুমানও করতে পারি না।
বলছিলাম, ইসলাহে বাতেনের জন্য দ্বিতীয় বিষয় হল, ফরয আদায়ের পর ‘কাছরাতে যিকির’ ও ‘কাছরাতে নাওয়াফেল’। যিকির বেশি বেশি করতে হবে। নফল বেশি বেশি আদায় করতে হবে।
হাফেজ্জী হুজুরের ‘কাসরাতে নাওয়াফেল’ ও ‘কাসরাতে তিলাওয়াত’
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. মাগরিবের পর নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। এশা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় নফল নামায পড়তেন। আমার মধ্যে একসময় কৌতূহল সৃষ্টি হল, হুজুরের নফলে এত সময় লাগে কেন। জানতে পারলাম, হুজুর মাগরিবের পর আওয়াবীনে তিন পারা কুরআন তিলাওয়াত করেন। তাহাজ্জুদেও তিন পারা পড়েন। হাঁটাচলায় আরও তিন পারা।
এভাবে প্রতিদিন নিয়মিত এই নয় পারা তিলাওয়াত করতেন। এটা হুজুরের নিয়মিত আমল ছিল। এ ছাড়াও সুযোগ পেলেই হযরত কুরআন নিয়ে বসে যেতেন। হযরতের কাছে গেলেই দেখা যেত, হয়তো কুরআন কারীম দেখে দেখে তিলাওয়াত করছেন, নয়তো জবান নড়তে থাকত যিকিরে।
আমার বড় মেয়ের কথা আমি বহুবার বলেছি। পাঁচ বছর বয়সে মেয়েটা মারা যায়। প্রতিদিন দশটা বাজলেই সে হযরতের কামরার দরজায় গিয়ে উপস্থিত হত। বলত, নানা! আমার পায়ের নিচে মাটি নেই।
হযরত বুঝে ফেলতেন, মেয়েটা ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। তার পা পরিষ্কার। হযরত হেসে বলতেন, আমার কোলে বসতে চাও? বসো বসো।
সে হযরতের কোলে বসেই মাথাটা ঘুরিয়ে হযরতের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকত। হযরত বলতেন, তুমি কী দেখো, বোন! আমার ঠোঁট নড়ে–এটা দেখ? আমি সব সময় আল্লাহর নাম নিই, আমি সব সময় আল্লাহর নাম নিই।
স-ব সময় হযরত যিকিরের মধ্যেই থাকতেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হালাত ছিল–
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ.
সব সময় সর্ব হালতে আল্লাহর যিকির করতেন। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৭৩
হাফেজ্জী হুজুর রাহ. ঠিক এর নমুনা ছিলেন। সব সময় আল্লাহর যিকির। সব সময় আল্লাহর যিকির! একটা মিনিট সময় নষ্ট করতেন না। জীবনে একটা মিনিট সময় নষ্ট করেছেন, বেহুদা কোনো কাজ করেছেন, বেহুদা কোনো কথা বলেছেন– আমার জানামতে এমন কোনো ঘটনা হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ.-এর জীবনে ছিল না।
হযরত বলতেন, যে কথায় দুনিয়ার কোনো ফায়েদা নেই, আখেরাতেরও কোনো লাভ নেই, সাবধান! এমন কথা যেন কখনো মুখ থেকে বেরই না হয়।
জিহ্বার একটাই কাজ : আল্লাহর যিকির
মুমিনের জবান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এজন্য দেননি যে, সে বেহুদা কথা বলবে। মুমিনের জবানের কাজই হল, আল্লাহর যিকির করা। আল্লাহ তাআলা সব অঙ্গ জোড়ায় জোড়ায় দিয়েছেন। কিন্তু জবান দিয়েছেন একটা। কেন? কী হেকমত? আসল হেকমত তো আল্লাহ্ই জানেন। কিন্তু আমাদের বড়রা বলেন, জবান একটা দিয়ে আল্লাহ এটাই বোঝালেন যে, জবান একটা দিয়েছি, এই জবানের কাজও একটা– সব সময় আমার যিকির কর।
সব সময় আমার যিকির করবা। খাওয়ার সময় খেলাম, পড়ার সময় পড়লাম আর বাকি সময় শুধু আল্লাহর যিকির, শুধু আল্লাহর যিকির।
আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কথা গুছিয়ে বলতে পারি না। এলোমেলো কথা বলি। আপনারা আমাকে মাফ করে দিয়েন। পুরোপুরিই মাফ করে দিয়েন। কখন যে দুনিয়া থেকে চলে যাই!
এটিই হয়তো জীবনের শেষ মুহূর্ত
মাফ চাওয়ার প্রসঙ্গ যখন এল, আরেকটু বলি। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. এ কথাটাই বেশি বেশি বলতেন–
شاید کہ ہمیں نفس نفس واپسی بود۔
হতে পারে এ মুহূর্তটাই আমার আল্লাহর কাছে ফেরত যাওয়ার মুহূর্ত।
আমিও সব সময় একথাই বলি। আমার কাছে প্রতিটি মুহূর্ত এমন মনে হয় যে, এটাই বুঝি আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত।
শেখ সাদী রাহ. গুলিস্তাঁর মধ্যে একটা কবিতা লিখেছেন–
خیرکن اے فلاں وغنیمت شمار عمر
زاں پیشتر کہ بانگ بر آید فلاں نماند
ভালো কাজ করতে থাক, নেককাজ করতে থাক, নিজের জীবনটাকে গনীমত মনে কর, ঐ দিন আসার আগেই, যেদিন খবর আসবে যে, অমুক চলে গেছে।
আমিও আপনাদেরকে বলি, কখন যে ডাক আসে, বলা যায় না, আমাকে আপনারা অন্তর থেকে মাফ করে দিবেন। কেউ আমার কোনো কথায় বা আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ করে দেবেন। কোনো পাওনা থাকলে আমাকে বলবেন, আমি শোধ করে দিব ইনশাআল্লাহ।
নফসকে ‘মুতমাইন্নাহ’ বানানোর উপায়
এতক্ষণ যা কিছু বলা হল, তার খোলাসা হল, নফসের তিনটা স্তর–
এক. নফসে আম্মারা।
দুই. নফসে লাউওয়ামাহ।
এই ‘নফসে আম্মারা’র পেছনে মেহনত করে করে সাধনা করে করে একে ‘লাউওয়ামাহ’ বানাতে হবে। এই নফসটাকেই লাউওয়ামায় পরিণত করতে হবে।
‘নফসে আম্মারাহ’ বিষয়ে কুরআন কারীমের বিখ্যাত আয়াত–
وَمَاۤ اُبَرِّئُ نَفۡسِیۡ اِنَّ النَّفۡسَ لَاَمَّارَۃٌۢ بِالسُّوۡٓءِ.
আমি নিজ নফসকে পবিত্র বলে দাবি করি না। নিশ্চয় নফস মন্দ কর্মের প্ররোচনা দেয়। –সূরা ইউসুফ (১২) : ৫৩
(ইউসুফ আ.-এর প্রতি অন্যায় আচরণের স্বীকারোক্তি দিয়ে ‘আযীযে মিশর’-এর স্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের একটি অংশ আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে এভাবেই ব্যক্ত করেছেন। অবশ্য কোনো কোনো মুফাসসির এটিকে হযরত ইউসুফ আ.-এর বিনয়সুলভ বক্তব্য হওয়ার সম্ভাবনাও প্রকাশ করেছেন।
যাইহোক, এ আয়াত এ শিক্ষাই দিচ্ছে যে,) নফসের আসল কাজই হল মন্দ কাজের নির্দেশ দেওয়া। কিন্তু এ নফসের পেছনে সাধনা করতে করতে একটা স্তর এমন আসবে, তখন এ নফসই ‘নফসে লাউওয়ামাহ’ হয়ে যাবে। তিরস্কারকারী নফস হয়ে যাবে।
আপনার দ্বারা গুনাহের কাজ হয়ে গেছে। তখন আপনার এ নফসই আপনাকে তিরস্কার করে বলতে থাকবে, কী করলি তুই এটা? কী করলি তুই এটা? তোর তো অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল! তুই তো নিজেকে বরবাদ করে ফেললি, তুই তো নিজেকে ধ্বংস করে ফেললি!
এভাবে নফস মালামাত ও ভর্ৎসনা করতে থাকবে। তিরস্কার করতে থাকবে।
তিন. নফসের তৃতীয় স্তর হল, ‘নফসে মুতমাইন্নাহ’।
এই ‘নফসে আম্মারাহ’কেই মেহনত করতে করতে ‘নফসে লাউওয়ামাহ’ বানাতে হবে। আবার এই ‘নফসে লাউওয়ামাহ’কে মেহনত করতে করতে ‘নফসে মুতমাইন্নাহ’ বানাতে হবে।
এই নফসটাকেই ‘লাউওয়ামাহ’র স্তর থেকে ‘মুতমাইন্নাহ’র স্তরে নিয়ে আসতে হবে।
কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন–
یٰۤاَیَّتُہَا النَّفۡسُ الۡمُطۡمَئِنَّۃُ، ارۡجِعِیۡۤ اِلٰی رَبِّکِ رَاضِیَۃً مَّرۡضِیَّۃً، فَادۡخُلِیۡ فِیۡ عِبٰدِیۡ، وَادۡخُلِیۡ جَنَّتِیۡ.
হে প্রশান্ত নফস! আপন রবের দিকে এভাবে ফিরে আস যে, তুমি (তাঁর প্রতি) সন্তুষ্ট, (তিনিও) তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর আমার বান্দার দলে শামিল হয়ে যাও। প্রবেশ কর আমার জান্নাতে। –সূরা ফাজর (৮৯) : ২৭-৩০
আল্লাহ বলছেন, হে ঐ ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে ‘মুতমাইন্নাহ’ বানাতে পেরেছ! আর দুনিয়ায় থাকতে হবে না, এবার রবের কাছে এসে পড়। তুমিও আল্লাহর ওপর রাজি, আল্লাহ্ও তোমার ওপর রাজি। আমার খাস বান্দার দলে দাখেল হয়ে যাও আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
‘নফসে মুতমাইন্নাহ’ যতক্ষণ না হবে, ততক্ষণ এ সুসংবাদ পাওয়া যাবে না। এ সুসংবাদ পাওয়ার জন্য প্রথমে ‘নফসে আম্মারাহ’-এর পেছনে দুইভাবে মেহনত করতে হবে। বর্জন ও অর্জনের আমল করতে হবে। আর ‘কাছরাতে যিকির ও কাছরাতে নাওয়াফেল’-এর ইহতিমাম করতে হবে। এগুলো করে নফসকে ‘লাউওয়ামাহ’ বানাতে হবে।
তারপর এর পেছনেও মেহনত করতে থাকতে হবে, করতে করতে একে ‘মুতমাইন্নাহ’-এ পরিণত করতে হবে। তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সুসংবাদ পাওয়া যাবে।
নফসকে পবিত্র করতেই হবে। কোনো উপায় নাই। করতেই হবে। পবিত্র করার আগে নফস ‘আম্মারাহ’ থাকে। পবিত্র করতে থাকলে ‘লাউওয়ামাহ’-এ রূপান্তরিত হয়। আরেকটু অগ্রসর হলেই ‘মুতমাইন্নাহ’ হয়ে যায়। যখনই নফস ‘মুতমাইন্নাহ’ হয়ে যাবে, তখনই আমরা জান্নাতের হকদার হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা নফস সবাইকেই দিয়েছেন। এমন কেউ নেই, যার নফস নেই। এমন কোনো নফস নেই, যা একসময় ‘আম্মারাহ’ ছিল না। মেহনত ও মুজাহাদার দ্বারা এ নফসই ‘লাউওয়ামাহ’ হয়ে যায়। তারপর মুতমাইন্নাহ।
প্রথম প্রকার নফসের অনুসরণ কিছুতেই করা যাবে না। আগেও একবার বলেছি, শেখ সাদী রাহ. বলেন–
مکن نفس اماره را پیروی
অর্থাৎ নফসে আম্মারার ‘পায়রাবী’ বা গোলামী করো না।
যিকির সব সময় করতে হবে। হাফেজ্জী হুজুর বলতেন, যখন মুখে যিকির করা নিষেধ, যেমন কেউ ইস্তেঞ্জাখানায় আছে, তো সে তখনো যিকির করবে। কীভাবে করবে? তখন সে যিকরে ক্বলবী করবে। মনে মনে আল্লাহর যিকির করবে। আল্লাহকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলবে না। এটাও যিকির। এভাবেও সব সময় সর্ব হালতে আল্লাহর যিকির ধরে রাখা সম্ভব।
তোমরা বেহুদা কথা বল কীভাবে!
হাফেজ্জী হুজুর রাহ. যখন কাউকে বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত দেখতেন, আফসোস করে বলতেন, আহা, তোমাদের কীভাবে মনে চায়, বেহুদা কথা বলতে! তোমরা বেহুদা কথা বল কীভাবে?
এমনভাবে বলতেন, যেন হযরতেরই বড় কোনো ক্ষতি হয়ে গেছে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন– আমীন।
وَآخِرُ دَعْوَانَا أَنِ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.
[মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’র প্রধান দপ্তর মিরপুর, পল্লবীতে প্রদত্ত ইসলাহী বয়ান
অনুলিখন ও প্রস্তুতকরণ :
মাওলানা আবরারুয যামান পাহাড়পুরী]