নবীদের শিক্ষা হল শিরক ও মুশরিকের সাথে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করা
বায়তুল মোকাররমের মিম্বর থেকে
[১৭ রবিউল আখির ১৪৪৭ হি./১০ অক্টোবর ২০২৫ ঈ.]
হামদ ও সালাতের পর...
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَالَّذِیْنَ مَعَهٗ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَءٰٓؤُا مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَیْنَنَا وَبَیْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰی تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗ.
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْهِمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللهَ وَالْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَمَنْ یَّتَوَلَّ فَاِنَّ اللهَ هُوَ الْغَنِیُّ الْحَمِیْدُ.
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শোকর আদায় করি, তিনি আমাদেরকে মুমিন ও মুসলিম বানিয়েছেন, আলহামদু লিল্লাহ! ঈমান ও ইসলামের তাওফীক হওয়া এবং মুসলিম ও মুমিন হতে পারার চেয়ে বড় নিআমত নেই। মাখলুকের প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যত নিআমত রয়েছে, সবচেয়ে বড় নিআমত হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মেহেরবানী করে তার বান্দাকে মুসলিম ও মুমিন বানিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে ইসলামের নিআমত, ঈমানের নিআমত ও তাওহীদের নিআমত দান করেছেন, এজন্য আমরা বলি– আলহামদু লিল্লাহ!
رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا.
অর্থাৎ আল্লাহ্ই একমাত্র রব, আল্লাহ্ই খালিক, আল্লাহ্ই মালিক। আল্লাহ্ই একমাত্র রিযিকদাতা। উপকার-অপকারের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ্ই যেহেতু একমাত্র রব, তাই মাবুদও একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
মুসলিম উম্মত ছাড়া তাওহীদের এই কালিমা আর কারও কাছে নেই–
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ.
(আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।)
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيْكَ لَه، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه.
[আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।]
এই কালিমাগুলোতে তাওহীদের শাহাদাত আছে। রব একমাত্র আল্লাহ তাআলা। মাবুদ একমাত্র আল্লাহ। ইবাদত একমাত্র আল্লাহরই হক। এর নাম হল ঈমান ও ইসলাম।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ– এই কালিমা একমাত্র মুসলিমদের কাছেই আছে। মুসলিম উম্মত ছাড়া তাওহীদের এই কালিমা আর কারও কাছে নেই। সকল নবী এই কালিমারই দাওয়াত নিয়ে এসেছেন। আদম আলাইহিস সালামের সময় ছিল একই কালিমা। নূহ আলাইহিস সালামের সময় ছিল একই কালিমা– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে নূহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত মাঝখানে যত নবী ছিলেন, সকলেরই কালিমা ছিল– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। নূহ আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত যত নবী ছিলেন (আল্লাহ্ই জানেন, কত নবী তিনি পাঠিয়েছেন!) সবার কালিমা ছিল– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
সকল উম্মতের জন্য ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মধ্যে শিক্ষা রয়েছে
সকল নবীকে আল্লাহ তাআলা তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন, যেন তাঁরা উম্মতের মাঝে তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করেন এবং তাওহীদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। যাদের কিসমত ভালো ছিল তারা তাওহীদ গ্রহণ করেছে, তাওহীদের এই কালিমা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছে, যবানে উচ্চারণ করেছে এবং এই কালিমাকে যিকির হিসেবে গ্রহণ করেছে, দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টার যিন্দেগীর মধ্যে এই কালিমার প্রয়োগ ঘটিয়েছে। তারা আল্লাহর মুআহ্হিদ ও একত্ববাদী বান্দা।
সকল নবী যার যার যুগে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহর জমিনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। সৌভাগ্যবান লোকেরা তাওহীদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন আর হতভাগারা পিছিয়ে গিয়েছে।
তাওহীদের দাওয়াত প্রসঙ্গে অনেক নবীর ঘটনাই কুরআন কারীমে উল্লেখ হয়েছে, কিন্তু ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাওহীদের পথে যত কুরবানী করেছেন, তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য যত মেহনত করেছেন, সেগুলোর বিবরণ আল্লাহ তাআলা বারবার এনেছেন, বিভিন্নভাবে এনেছেন এবং বিস্তারিত বলেছেন। যাতে কিয়ামত পর্যন্ত তাওহীদে বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য সবক গ্রহণের উপকরণ হয়ে থাকে।
খুতবার শুরুতে আজ আমরা দুটি আয়াত তিলাওয়াত করেছি। একটি সূরা মুমতাহিনা থেকে, আরেকটি সূরা যুখরুফ থেকে। সূরা মুমতাহিনাতে আল্লাহ তাআলা খাতামুন নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল উম্মতের জন্য শিক্ষা রেখেছেন।
(যারা শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত কবুল করেছেন তারা তো বাস্তব অর্থেই উম্মত। যারা দাওয়াত কবুল করেনি অথবা করছে না, তারাও নবীজীর উম্মত এই অর্থে যে, সবাই নবীজীর দাওয়াতের অধীনে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দাওয়াত কবুল করার জন্য আদিষ্ট। কারণ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন খাতামুন নাবিয়্যীন, রাহমাতুল লিল আলামীন, সায়্যিদুল মুরসালীন। কাজেই সবাই তাঁর দাওয়াত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট এবং বিধানগতভাবে বাধ্য। গ্রহণ না করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে।)
বলছিলাম, সকল উম্মতের জন্য আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আমলের মধ্যে শিক্ষা রেখে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন–
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَالَّذِیْنَ مَعَهٗ.
অর্থাৎ তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দর আদর্শ রয়েছে ইবরাহীম এবং যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনে তাঁর সঙ্গে ছিল, তাদের জীবন ও কর্মে।
সেটা কী?
اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ.
যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাহাবীগণ নিজ সম্প্রদায়ের শিরকে নিমজ্জিত মুশরিকদের উদ্দেশে ঘোষণা দিয়েছেন–
اِنَّا بُرَءٰٓؤُا مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ.
অর্থাৎ আমরা তোমাদের থেকে এবং আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা অন্য যাদের ইবাদত করছ, তার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও সম্পর্কহীন! তোমাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই, তোমরা যেসব কিছুর উপাসনা করছ, তার সাথেও আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
আল্লাহর তাওহীদ ও ইবাদত বাদ দিয়ে অন্য কিছুর ইবাদত করছ? গাইরুল্লাহর ইবাদত করার কারণে আমরা তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট।
ঈমান ও ইসলামের ভিত্তিতে একের প্রতি অপরের যে ভালবাসা থাকে, সেটি তোমাদের সাথে আমাদের নেই। অসম্ভব! তোমরা আল্লাহর হক মাখলুককে দিয়েছ। কারণ ইবাদত একমাত্র আল্লাহর হক, কিন্তু সেটি তোমরা মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করেছ। কাজেই আমরা তোমাদেরকে ভালবাসতে পারি না। তোমাদের সঙ্গে আমাদের ভালবাসা হতে পারে না। বরং–
كَفَرْنَا بِكُمْ.
অর্থাৎ আমরা কখনো গাইরুল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে তোমাদের সাথে একমত নই! আমরা তোমাদের এই দর্শন ও বাতিল বিশ্বাসকে অস্বীকার করি! আর–
وَبَدَا بَیْنَنَا وَبَیْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا.
অর্থাৎ আমাদের ও তোমাদের মাঝে শত্রুতা একেবারেই স্পষ্ট! কারণ তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করছ। পক্ষান্তরে আমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি। কাজেই তোমাদের সাথে আমাদের কোনো ভালবাসা নেই। ধর্মের দিক থেকে, ঈমান ও ইসলামের দিক থেকে তোমরা আমাদের শত্রু।
মুশরিকরা কিন্তু আমাদেরকে শত্রুই মনে করে। কোনো মুশরিক তাওহীদে বিশ্বাসীকে আপন মনে করে না। করতে পারেও না, কোনো মুশরিক কোনো মুমিনকে ভালবাসতে পারে না। অসম্ভব!
সুতরাং আমরাও এ কথার ঘোষণা করি যে, দ্বীন-ঈমানের দিক থেকে তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই! কোনো ভালবাসা নেই! শিরক করার কারণে, তাওহীদে অবিশ্বাসী হওয়ার কারণে, আল্লাহর হক আল্লাহর মাখলুককে দেওয়ার কারণে দ্বীন-ঈমানের দিক থেকে তোমরা আমাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছ!
حَتّٰی تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗۤ.
হাঁ, যদি একমাত্র আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো, একমাত্র আল্লাহকেই মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করো, তাহলে তোমরা আমাদের মুমিন ও মুসলিম ভাই। আর যদি ঈমান না এনে শিরকের ওপর থাক, তাহলে তোমাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব নেই। যে বন্ধুত্বটা ঈমানের কারণে এবং তাওহীদে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে তৈরি হয়, সে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক তোমাদের সঙ্গে আমাদের হতে পারে না, হওয়া সম্ভবও নয়! অসম্ভব!
আল্লাহর মাখলুক হিসেবে দুনিয়াতে সবারই জানমালের নিরাপত্তার অধিকার আছে
তবে হাঁ, তোমরাও আদম সন্তান, আমরাও আদম সন্তান। তোমরাও আল্লাহর মাখলুক, আমরাও আল্লাহর মাখলুক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের স্পষ্ট ঘোষণা আছে। যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, বরং আল্লাহর অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে অথবা অস্তিত্বকে স্বীকার করে, কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করে, এই ধরনের মুশরিক, কাফের ও বেদ্বীন, চাই নাস্তিক হোক আর মুশরিক, সবার ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ঘোষণা হল দুনিয়াতে তাদের জানমালের নিরাপত্তা আছে।
কিন্তু যেহেতু তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আননি, বরং আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছ অথবা আল্লাহর সঙ্গে ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করেছ, এই কুফর ও শিরক দুই অপরাধের কারণে বা কোনো এক অপরাধ, (কুফর আর শিরককে যদি আলাদা করে বলি) এগুলো এত বড় অপরাধ, যার কারণে ব্যক্তি চির জাহান্নামী হয়ে যায়। কেউ যদি এমন অপরাধে লিপ্ত হয় এবং তওবা করে ঈমান না আনে, বরং এই কুফর ও শিরকের অবস্থায়ই তার মত্যু হয়, আখেরাতে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মুক্তি পাবে না। সে হবে চির জাহান্নামী। আর দুনিয়াতে যতদিন বেঁচে থাকবে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার প্রতি তাওহীদের দাওয়াত থাকবে। যুগে যুগে নবীদের মাধ্যমে দাওয়াত দিয়েছেন। আর আখেরী নবী খাতামুন নাবিয়্যীন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই তাওহীদের দাওয়াত দিয়েই পাঠিয়েছেন। তাঁর উম্মতকেও কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন যে, তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর ওপর অটল-অবিচল থাক এবং এই কালিমার দাওয়াত সব জায়গায় পৌঁছে দাও।
সুতরাং দাওয়াত পৌঁছানো হচ্ছে এবং তা অব্যাহত। যার কিসমত ভালো, সে গ্রহণ করবে, যার কিসমত ভালো না, গ্রহণ করবে না। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, গ্রহণ না করলেও আমার একজন মাখলুক হিসেবে এ দুনিয়াতে বেঁচে থাকার অধিকার তার আছে। আল্লাহ তাআলা তার জানমালের নিরাপত্তা দিয়েছেন। এমনকি সে যখন পূজা করে, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করছে, ওই অবস্থায়ও তার জানমালের নিরাপত্তা আছে। মুসলিম সরকারের অধীনে যেসব অমুসলিম থাকে, তারা যখন শিরক করে, ওই শিরক করা অবস্থায়ও মুসলিম সরকারের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এটা ইসলামের বিধান। আল্লাহ যেহেতু রহমানুর রহীম, তাঁর পক্ষ থেকে ছাড় রয়েছে। তিনি ছাড় দিয়ে রেখেছেন। শিরক করতে করতেও যদি এর খারাপি ও কুফলতার কিছুটা তার সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়, একসময় হয়তো সে বলে উঠবে– ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এজন্য মওত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ছাড় রয়েছে।
উদারতার নামে ঈমান-আকীদার বিসর্জন দেওয়া যায় না
ইসলাম শিরককে স্পষ্ট বাতিল মনে করে, শিরককারী ব্যক্তির ঠিকানা জাহান্নাম ঘোষণা করে। শিরকের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন–
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
অর্থাৎ শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম ও অবিচার। এটা নিজের প্রতিও অবিচার-অত্যাচার, খালিক ও সৃষ্টিকর্তার প্রতিও অবিচার। এরচেয়ে বড় জুলুম আর হতে পারে না!
ইসলাম এইসকল ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও ইসলাম মুশরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দিয়েছে। এটা ইসলামের উদারতা। আল্লাহ তাআলার দেওয়া শরীয়তের মধ্যেই মুশরিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান রয়েছে। যদি তারা নিজ থেকেই এই নিরাপত্তা নষ্ট না করে, তাহলে তাদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে। এমনকি পূজা করা অবস্থায়ও তাদের নিরাপত্তা আছে, তবে তাদের গণ্ডিতে।
উদারতা অর্থ কী, সেটা বুঝতে হবে। উদারতার নামে ঈমান বিসর্জন দেওয়া যায় না। উদারতা এক জিনিস, ঈমানের ওপর মজবুত থাকা ভিন্ন জিনিস। উদারতার নামে যদি কারও ঈমানই দুর্বল হয়ে পড়ে, উদারতার নামে যদি কেউ ঈমান ও তাওহীদের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে, তাহলে কি এটা উদারতা হল, না নিজের দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে দুর্বলতা হল? অনেকে এমন উদারতাও দেখায়, যার কারণে ঈমানই শেষ হয়ে যায়! নাউযুবিল্লাহ!
উদারতার নামে নিজের তাওহীদ বিসর্জন দেবেন না!
মনে রাখতে হবে, এই তাওহীদ আমার অমূল্য ধন! তাওহীদের এই সম্পদ, ঈমান ও ইসলামের এই সম্পদ যদি কোনো মুসলিম নষ্ট করে ফেলে, তার বাঁচার কোনো উপায় নেই। মুক্তির কোনো উপায় সে পাবে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আল্লাহকে পাওয়ার কোনো উপায় তার থাকবে না। জান্নাত পাওয়ার তার কোনো উপায় থাকবে না। অতএব আমাদেরকে তাওহীদ গ্রহণ করে তাওহীদের ওপরই মজবুত থাকতে হবে!
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে সমস্ত শিরক থেকে, সকল মুশরিক থেকে, মুশরিকদের সকল উপাস্য থেকে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা করতে হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বন্ধুত্ব, ভালবাসা ও অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক হতেই পারে না।
তাদের সঙ্গে আমাদের যে শত্রুতা সেটিও কার জন্য? একমাত্র আল্লাহর জন্য। ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নয়। শত্রুতা যেহেতু আল্লাহর জন্যই, আল্লাহ্ই যেহেতু তাদের জানমালের নিরাপত্তা দিয়েছেন, আমরা তাদের জানমালের নিরাপত্তা ভাঙব না। এটা যেহেতু কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা ও আক্রোশ নয়, কাজেই আমি কখনো কোনো মুশরিকের ওপর জুলুমও করব না। মুশরিক আমার শত্রু এজন্য যে, সে আমার মাবুদকে অবজ্ঞা করে। আমার মাবুদের হক মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করে। এজন্য সকল মুশরিক আমার শত্রু; এজন্য নয় যে, তার প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ আছে। সুতরাং এই শত্রুতাও যেহেতু আমার মাবুদ একমাত্র আল্লাহর জন্য, এক্ষেত্রেও আমি আল্লাহর বিধানের বাইরে যাব না। আমার আল্লাহ এই মুশরিকদের জানমালের নিরাপত্তা দিয়েছেন, আমি তাদের জানমালের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করব না। আমার আল্লাহ তাদেরকে মানুষ হিসেবে জীবিত থাকার অধিকার দিয়েছেন, আমি সেই অধিকার নষ্ট করব না। আমার আল্লাহ তাদেরকে তাদের পরিমণ্ডলে তাদের পূজা-অর্চনা ও উপাসনা করার অধিকার দিয়েছেন, আমি সেখানে বাধা দিব না।
তবে হাঁ, আমি নিজে যেহেতু মুমিন ও মুসলিম, আমার ঈমান ও ইসলামের মধ্যে, আমার তাওহীদের মধ্যে ন্যূনতম কোনো দুর্বলতাও থাকতে পারবে না। থাকার অবকাশ নেই। তাদের এসব শিরকী কাজ আমি ঘৃণা করি। এর প্রতি আমার মনের কোনো ঝোঁক নেই।
কথা বুঝতে হবে! যদি তাদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে নিজের ঈমান হারিয়ে আসেন, এটা তাওহীদ হল না; ঈমান ও ইসলাম হল না। আপনার কোনো কথা, কাজ ও আচরণ থেকে যদি শিরকের প্রতি বা মুশরিকদের প্রতি সামান্য দুর্বলতাও প্রকাশ পায়, এটা অন্যায়! এটা হারাম! ক্ষেত্রবিশেষে ঈমানও শেষ হয়ে যেতে পারে!
কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এরকম অনেক কথা শুনতে পাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন আচরণ থেকে। পূজা মণ্ডপে ও পূজা অনুষ্ঠানে গিয়ে এরকম কাজ ও কথা বিভিন্ন ব্যক্তি বলছে, যার দ্বারা সন্দেহ হয়, এই বাতিল ধর্ম বা এগুলোর প্রতি কোনো ধরনের দুর্বলতা ও আকর্ষণ তার অন্তরের কোনো কোণায় আছে কি না! আল্লাহ্ই ভালো জানেন!
ইসলাম ছাড়া সকল ধর্মই বাতিল
মনে রাখতে হবে, ইসলাম ছাড়া সকল ধর্ম বাতিল! আল্লাহ তাআলা বলেছেন–
اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ.
আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলাম।
একথা অন্য ধর্মের লোকদের বলার কোনো অধিকার ও অবকাশই নেই! একথা একমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই বলতে পারে যে, আমাদের ধর্ম একমাত্র সত্য ধর্ম। অন্যগুলো অসত্য অবাস্তব ও বাতিল ধর্ম। কোনোটা একেবারে গোড়া থেকেই অমূলক। কোনোটার গোড়া ছিল, কিন্তু পরবর্তীরা তাদের ধর্মের মূল থেকে সরে গিয়ে ধর্মকে ও ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করে ফেলেছে। আজকাল ইসলাম ছাড়া পুরো দুনিয়াতে যত ধর্ম আছে, সবই বাতিল ধর্ম। কোনোটা হয়তো একেবারেই গোড়াবিহীন ও ভিত্তিহীন; কোনো মূল নেই। কোনোটার গোড়া ও মূল ছিল, কিন্তু তার অনুসারীরা পরবর্তীতে গোড়া ছিন্ন করে এবং গোড়া থেকে বের হয়ে নিজেদের ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করেছে, ধর্মের শিক্ষাকে বিকৃত করেছে।
ইহুদী ও খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মকে বিকৃত করেছে, শিরকে লিপ্ত হয়েছে
ইহুদীদের গোড়া ছিল। মূসা আলাইহিস সালামের প্রতি আল্লাহ তাআলা তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলেন। ইহুদীরা যদি তাওরাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকত, মূসা আলাইহিস সালামের শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে আজ সবাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত মেনে একসাথে মুসলিম হত।
খ্রিস্টানদের কাছেও ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষা ছিল। ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি আল্লাহ তাআলা যে কিতাব ইঞ্জিল নাযিল করেছিলেন, সেই কিতাব ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। এমনকি বিকৃত ইঞ্জিলও এখন আর নেই। অনূদিত ও বিকৃত ইঞ্জিলও নেই। এখন আছে বাইবেল। বাইবেল পরবর্তী লোকদের রচনা। আল্লাহর নাযিলকৃত ইঞ্জিল নয়। তাওরাতের তাও বিকৃত একটা রূপ হলেও আছে। হাঁ, সেটা বিকৃত রূপ। বিকৃত অবস্থায় হলেও কিছু আছে। কিন্তু ইঞ্জিলের তা-ও নেই। যেটাকে তারা এখন বাইবেল বলে থাকে, সেটা সম্পূর্ণ বিকৃত। ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষা ও ইঞ্জিলের শিক্ষা বাদ দিয়ে যেদিকে তারা ছুটছে, সেটা ভিন্ন পথে। নাম দিয়েছে ঈসায়ী, অথচ ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পরবর্তী এক ব্যক্তির শেখানো যত শিরক, তার আবিষ্কৃত ও বিকৃত যত বিষয়, সেগুলোকেই এখন ঈসায়ী নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষার মধ্যে কি ত্রিত্ববাদ আছে? নাউযুবিল্লাহ! ত্রিত্ববাদ ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষায় নেই। খ্রিস্টানদের আবিষ্কৃত ‘কাফ্ফারা আকীদা’-ও ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষায় নেই।
বলেছি, ইহুদী ও খ্রিস্টান ধর্মের গোড়া ছিল, কিন্তু এখন বিকৃত। অন্যান্য ধর্মগুলোর একেবারে গোড়াই নেই। শিরকের যত ধর্ম আছে, সেগুলোর একটারও গোড়া নেই। হাঁ, ইহুদী-নাসারাদের ধর্মের মধ্যেও শিরক ঢুকেছে। কুরআন কারীমে সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তার বিবরণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বিকৃতিগুলো গোড়াতে ছিল না। আমি বলতে চাচ্ছি, অনেক ধর্ম রয়েছে, যেগুলোর সরাসরি গোড়াতেই রয়েছে শিরক। গোড়াতেই যেগুলোর শিরক রয়েছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। কারণ আল্লাহ শিখিয়েছেন তাওহীদের শিক্ষা। আল্লাহ তাআলা দান করেছেন তাওহীদের দ্বীন। কাজেই যেটার মধ্যে শিরক থাকবে, সেটা আল্লাহর দেওয়া ধর্ম নয়। তার গোড়াই নেই। সেটা মানুষের বানানো।
দুনিয়ার সকল শিরকপন্থি দাবি করে, আমরা শিরক করি না!
মজার কথা হল, সকল শিরকওয়ালারা শিরক অস্বীকার করে অথবা শিরকের অপব্যাখ্যা দেয়। শিরক করেও দাবি করে, আমরা শিরক করি না। যে কোনো মুশরিককে জিজ্ঞেস করে দেখুন, আপনি হিন্দুদের জিজ্ঞেস করুন, বৌদ্ধদের জিজ্ঞেস করুন, তারা দাবি করবে, আমরা শিরক করি না। এটা তো কেবল বললেই হয় না।
ইহুদীরা দাবি করে, তাদের মধ্যে শিরক নেই। নাসারারা দাবি করে, তাদের মধ্যে শিরক নেই। ঈসা আলাইহিস সালামকে তিন খোদার এক খোদা বলে বা সরাসরি খোদা বলে অথবা নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহর পুত্র বলে, তার পরও নাকি তাদের মধ্যে শিরক নেই!
ইহুদীরা উযাইরকে সরাসরি ‘ইবনুল্লাহ’ বলে, তার পরও নাকি শিরক হয় না! নাউযুবিল্লাহ! আল্লাহর দেওয়া বিধান ও শরীয়ত বাদ দিয়ে নিজেদের আবিষ্কৃত বিধানকে শরীয়ত বানায়, তার পরও নাকি তাদের শিরক হয় না!
বৌদ্ধদের ত্রি-রত্নের বিশ্বাস কি শিরক নয়?
আপনি বৌদ্ধদের দেখুন! তারা ত্রি-রত্নে বিশ্বাস করে! তো ত্রি-রত্ন কি খোদা? বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ– এই তিন রত্ন নাকি খোদা! ত্রি-রত্নের প্রার্থনা হয়। ত্রি-রত্নের পূজা ও বন্দনা হয়। এগুলো গাইরুল্লাহর ইবাদত কি না? অবশ্যই এগুলো গাইরুল্লাহর উপাসনা! আল্লাহ তো বলে দিয়েছেন–
اِنَّ الَّذِیْنَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ عِبَادٌ اَمْثَالُكُمْ فَادْعُوْهُمْ فَلْیَسْتَجِیْبَوْا لَكُمْ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ.
নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাক, তারা তোমাদেরই মতো (আল্লাহর) বান্দা। সুতরাং তোমরা তাদের কাছে প্রার্থনা কর, অতঃপর তারা তোমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করুক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও! –সূরা আ‘রাফ (০৭) : ১৯৪
অর্থাৎ তোমরা যে তাদেরকে উপাস্য বলে দাবি করছ, এতে তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণ ও কল্যাণ সাধনের জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা জানাও এবং দেখি, তারা তা মঞ্জুর করুক! বলা বাহুল্য, তা মঞ্জুর করার সাধ্য তাদের নেই। এটাই প্রমাণ করে, উপাস্য হওয়ার যোগ্যতা তাদের নেই এবং তোমাদের দাবিও সঠিক নয়।
কাজেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে প্রার্থনা করছ, হাত ওঠাচ্ছ, এরা তো তোমাদের মতোই আরেক বান্দা ও সৃষ্টি!
গৌতম বুদ্ধ মানুষ ছিলেন। মানুষের সন্তান তো মানুষই হবে। তার ছবি ও মূর্তির সামনে স্মরণ করছ। প্রার্থনা করছ। বন্দনা করছ। এটা সরাসরি শিরক। এ ধরনের শিরকের বিষয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আকবারুল কাবাইর– সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ। নবী যা বলেন তা আল্লাহর হুকুমেই বলেন, ওহীর ভিত্তিতেই বলেন। আর কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন–
اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
নিশ্চয়ই শিরক অনেক বড় জুলুম।
সকল মুশরিককে আমরা তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি
সকল শিরকের ঠিকানা জাহান্নাম। এজন্য সব ধরনের শিরক ও মুশরিক থেকে আমরা মুক্ত। শিরকের প্রতি ন্যূনতম কোনো দুর্বলতা আমাদের মধ্যে নেই। শিরকের ধর্মগুলো কোনোভাবেই সঠিক ধর্ম হতে পারে না। অসম্ভব! কোনো শিরক, কোনো কুফর, কোনো নেফাক যে ধর্মের মধ্যে থাকবে, সে ধর্ম সঠিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাদের প্রতি আমাদের করুণা হবে, আফসোস হবে যে, আহা! এই লোকেরা তাওহীদের নিআমত থেকে বঞ্চিত! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর নিআমত থেকে বঞ্চিত। যিনি তার খালিক ও মালিক, যার হাতে তার হায়াত ও মওত, সেই আল্লাহকে ছেড়ে আল্লাহকে রেখে এরা কার ইবাদত করছে?! তাদের জন্য দুআ করব, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করুন! তাদেরকে তাওহীদের নিআমত দান করুন! নিজের সাধ্যানুযায়ী তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিব।
আমরা এ দেশের সকল মুশরিকদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি! যত নামের শিরক আছে এই দেশে, সকল ধরনের শিরকে আক্রান্ত মুশরিকদেরকে আমরা এক আল্লাহর তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি। বরং পুরো দুনিয়ার সকল মুশরিকদেরকে আমরা তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি–
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ.
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لاَ شَرِيْكَ لَهٗ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ. لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ. إِنَّ الْحَمْدَ، وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ.
এভাবে সকলকে আমরা তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি। মক্কার মুশরিকরা যে ধরনের শিরক করত, সেই শিরক হোক, হিন্দুদের শিরক হোক আর বৌদ্ধদের শিরক হোক, ইহুদীদের শিরক হোক আর খ্রিস্টানদের শিরক হোক বা মূর্তিপূজার শিরক হোক, এভাবে আরও যত ধর্ম-কর্মের গোষ্ঠী আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও প্রতি বন্দনা পেশ করে, অন্য যে কোনোভাবে গাইরুল্লাহর উপাসনা করে, সকলকে আমরা তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছি– লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আরেক ঘটনা আল্লাহ তাআলা সূরা যুখরুফের মধ্যে এনেছেন। তাঁর বাবাও কিন্তু মুশরিক ছিলেন। তিনি তাঁর বাবা এবং মুশরিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেছেন–
وَاِذْ قَالَ اِبْرٰهِیْمُ لِاَبِیْهِ وَقَوْمِهٖۤ اِنَّنِیْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ.
অর্থাৎ জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যারই ইবাদত করছ, ওই সকল উপাস্য থেকে আমি কিন্তু বিচ্ছিন্ন! সবার প্রতি আমি অসন্তুষ্ট এবং সম্পর্কহীন!
তারা যদিও শিরক করত, কিন্তু আল্লাহকেও মানত। অর্থাৎ আল্লাহকেও মানত, আবার শত মাবুদেরও ইবাদত করত, নাউযুবিল্লাহ!
এজন্য তিনি বলেছেন–
اِلَّا الَّذِیْ فَطَرَنِیْ.
অর্থাৎ যিনি আমার খালিক ও মালিক, আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তোমরা তো তারও কিছু ইবাদত কর, আমি একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি।
فَاِنَّهٗ سَیَهْدِیْنِ.
অর্থাৎ আল্লাহ্ই তো আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন। কারণ হেদায়েত একমাত্র আল্লাহর হাতে। সঠিক পথ আল্লাহ আমাকে দেখাবেন, আল্লাহ্ই আমাকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।
وَجَعَلَهَا كَلِمَةًۢ بَاقِیَةً فِیْ عَقِبِهٖ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ.
আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি ইবরাহীমকে তাওহীদের ওপর মজবুত থাকা এবং সকল শিরক আর মুশরিক থেকে বিচ্ছিন্নতা ও সম্পর্কহীনতার ঘোষণা করার যে বিধান দিয়েছি, আমি পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও ইবরাহীমের এই শিক্ষা বাকি রেখেছি। যেন কিয়ামত পর্যন্ত যারা আসবে, সকলেই এই শিক্ষা গ্রহণ করে। যেন সবাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর শিক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে কোনো শিরকের সামনে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে পারে–
اِنَّنِیْ بَرَآءٌ مِّمَّا تَعْبُدُوْنَ.
আমি সকল শিরক ও সকল মুশরিক থেকে পৃথক, বিচ্ছিন্ন ও সম্পর্কহীন। এই শিক্ষা আমি কিয়ামত পর্যন্ত আগতদের জন্য রেখে দিলাম।
لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ.
[যাতে মানুষ (শিরক থেকে) ফিরে আসে।]
যদি আল্লাহর কোনো বান্দা এই শিক্ষা লাভ করে তাওহীদ গ্রহণ করে! যদি মুমিন বান্দারা কালিমায়ে তাওহীদের ওপর মজবুত ও প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং সকল শিরক আর মুশরিক থেকে দূরে থাকে! সেজন্য এই শিক্ষা আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে, নূহ আলাইহিস সালাম, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম; এভাবে সকল নবী হয়ে আখেরী নবী, সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যিম্মাদারী দিয়ে দিলেন, যেন সকল মানুষের কাছে এই তাওহীদের শিক্ষা পৌঁছে দেন। তিনি পৌঁছাবেন এবং তাঁর উম্মতরাও পৌঁছাতে থাকবে।
কাজেই তাওহীদের ব্যাপারে মুুমিনের কখনো কোনো ধরনের দুর্বলতা আসতে পারে না। অন্তরেও নয়, আচরণ-উচ্চারণেও নয়।
আল্লাহকে নারাজ করে, ঈমানের বিসর্জন দিয়ে নিজের দল প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে না
ইসলামে উদারতা আছে, কিন্তু উদারতার নামে তাওহীদকে দুর্বল করা অথবা তাওহীদের বিষয়ে শৈথিল্য প্রদর্শন করার কোনো সুযোগ নেই।
আর যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকেও সঠিক জ্ঞান করা হয়, যদি মনে করা হয়, সেটাও একটা গ্রহণযোগ্য ধর্ম, নাউযুবিল্লাহ! অথবা তার দ্বারাও নাজাত পাওয়া যাবে, নাউযুবিল্লাহ, তাহলে সেটি হবে স্পষ্ট কুফরী।
এখন তো মিডিয়ার যমানা, মুসিবত হয়ে গেছে; কে কোথায় গিয়ে কী বলে, কোন্ পূজামণ্ডপে, কোন্ পূজা অনুষ্ঠানে গিয়ে কী বলে না বলে, সব প্রকাশ হয়ে যায়! মনে করে, আমাদের দলটা একটু প্রতিষ্ঠিত হোক!
হায়রে, আল্লাহকে নারায করে দল প্রতিষ্ঠিত করবে?! খবরদার, ঈমান বিসর্জন দিয়ে নিজের দলকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে না! তোমরা যদি ইনসাফের ওপর থাক, আবারও বলছি যদি ন্যায় ও ইনসাফের ওপর থাক, জুলুম না কর, তাহলে হিন্দুরা তোমাদেরকে এমনিতেই ভোট দেবে। হিন্দুদের সাথে তাদের পূজা, তাদের শিরক ও কুফরের ব্যাপারে বা বৌদ্ধদের সঙ্গে তাদের কুফর ও শিরকের ব্যাপারে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে না! একাত্মতা পোষণ করলে তো তোমার নিজের ঈমানই থাকবে না! তুমি আর মুসলিম পরিচয় দিতে পারবে না! নবীদের শিক্ষা হল শিরক ও মুশরিকের থেকে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করা আর তোমরা গিয়ে সেখানে একাত্মতা প্রকাশ করছ! নাউযুবিল্লাহ!
একাত্মতার কোনো সুযোগ নেই! বরং তোমরা তাদের জানমালের নিরাপত্তা দাও! তাদের ওপর জুলুম না করাটাই হল কাজ। একাত্মতা পোষণ করলে তো তোমার ঈমানই শেষ হয়ে যাবে।
আচ্ছা, তারা কি তোমাদের ঈদে একাত্মতা পোষণ করার জন্য আসে? তারা কি তোমাদের বাইতুল্লাহর হজ্বে যায়, একাত্মতা পোষণের জন্য? তোমরা কি বোঝ না– أَفَلاَ تَعْقِلُوْنَ
أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه.
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
শ্রুতলিখন : মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম