ফিরে দেখা ১৪৪৬ হিজরী
‖ আমরা যাঁদের হারিয়েছি
মাওলানা মুহাম্মাদ যহীরুল ইসলাম
১৪৪৬ হিজরী। মুসলিম উম্মাহর বেদনাবিধুর আরেকটি সন। আম্বিয়ায়ে কেরামের পুণ্যভূমি গাজায় চলমান ইতিহাসের বর্বরতম ইসরাইলী গণহত্যায় নির্বিচারে শহীদ হয়েছেন অসংখ্য নিরপরাধ মুসলিম শিশু, নারী ও বীরযোদ্ধা। কেবলমাত্র মুসলিম হওয়ার কারণে যাদের ওপর চলছে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। তারা তাদের এই পবিত্র ভূখণ্ডের জন্য ‘একাই’ লড়াই করছেন এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁদের ত্যাগ ও আত্মত্যাগের বদৌলতে পবিত্র এ ভূখণ্ডকে মুক্ত করুন। জালেম ও তাদের দোসরদের উপযুক্ত শাস্তি দিন। মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন। তাঁদের অন্তরগুলোকে মিলিয়ে দিন। তাঁদের অন্তরে ঈমান ও প্রজ্ঞার নূর দান করুন– আমীন।
শহীদানের এ কাফেলায় অজানা কত মুমিন মুজাহিদকে আমরা হারিয়েছি, তা শুধু রাব্বুল আলামীনই জানেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদের সবাইকে জান্নাতের উচু মাকাম নসীব করুন। উমর রা.-এর মুখ নিঃসৃত ইতিহাসের সেই মহান দুটি বাক্য নিঃসন্দেহে এখানেও প্রযোজ্য–
এক জিহাদের পর বিজয়ের সুসংবাদ শোনানোর সাথে সাথে শহীদদের নাম শোনানোর সময় উমর রা.-কে বলা হল–
وآخرين يا أمير المؤمنين لا تَعرِفهم.
আরও অনেকে শহীদ হয়েছেন, যাদের আপনি চেনেন না। তখন উমর রা. কাঁদতে কাঁদতে বললেন–
لا يضرهم أن لا يعرفهم عمرُ؛ لكن الله يعرفهم.
উমর তাদের চেনে না, তাতে কী! আল্লাহ তো তাদের চেনেন। –সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪৭৫৬
এছাড়াও ১৪৪৬ হিজরীতে আমরা অনেক আকাবির আহলে ইলমকেও হারিয়েছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের মধ্যে তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি করে দিন– আমীন।
এ প্রবন্ধে ১৪৪৬ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন এমন কয়েকজন আহলে ইলমের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হল।
১৭ মুহাররম (২৪-৭-২০২৪), বুধবার
মাওলানা শাকিল আহমদ সীতাপুরী রাহ.
ভারতের উত্তর প্রদেশের সীতাপুরের তম্বুর শহরের প্রবীণ বুজুর্গ আলেম। ১৯৭২ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দারুল উলূম দেওবন্দের সর্বজনপ্রিয় উস্তায ছিলেন। দেওবন্দের শায়খুল হাদীস ও সদরুল মুদাররিসীন হযরত মাওলানা ফখরুল হাসান মুরাদাবাদী রাহ. (মৃ. ১৪০০ হি.) ও হযরত মাওলানা কারী তায়্যিব ছাহেব রাহ. (মৃ. ১৪০৩ হি.)-এর ঘনিষ্ঠ শাগরেদ ছিলেন। তম্বুর শহরে ১৯৪৮ সালে তার জন্ম। ১৯৬৯ সনে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। ১৯৭২ সনে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে উস্তায হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮০ সনের ঘটনার পর তিনি দারুল উলূম ওয়াকফ-এ যুক্ত হন। দুই বছর পর দারুল উলূম হায়দারাবাদে চলে যান। পরবর্তীতে নিজ শহর তম্বুরের মাদরাসা যিয়াউল উলূমে মুহতামিমের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইউপির প্রসিদ্ধ মাদরাসা কারী সিদ্দীক আহমদ বান্দাভী রাহ.-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দারুল উলূমিল ইসলামিয়ায় সুদীর্ঘ ১১ বছর (১৯৯৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত) দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দেন। দারুল উলূমিল ইসলামিয়ার মুখপত্র ‘ফিকরে ইসলামী’ পত্রিকায় ‘মাআরিফুল কিতাব’ শিরোনামে নিয়মিত তাফসীর বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কলাম লিখতেন। তাঁর আলোচনা ও বক্তৃতায় অপরিসীম প্রভাব ছিল। ‘গাওহারে ইলম জাওহারে সীরাত’, ‘দেখনা তাকরীর কী লাযযাত’ নামে তার বক্তৃতার একাধিক সংকলনও ছেপেছে।
২৩ মুহাররম [আরবের চাঁদ দেখা অনুসারে] (২৯-৭-২০২৪), সোমবার
ড. মুহয়ী হিলাল ছারহান রাহ.
ইরাকের তিকরিত শহরের ইলমী ব্যক্তিত্ব। পূর্ববর্তী মনীষীদের অনেক তুরাছের খেদমত করেছেন। ইমাম ছদরুশ শহীদ রাহ. (৫৩৬ হি.)-এর ‘শরহু আদাবিল কাযী’ কিতাব তিনিই প্রথম তাহকীক করে ছাপিয়েছেন। যা ইরাকের ওযারাতুল আওকাফ থেকে ১৯৭৭-৭৮ সনে চার খণ্ডে ছেপেছে। আলাউদ্দীন ইবনুল হিন্নাঈ রাহ. (৯৭৯ হি.)-এর ‘তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ’ কিতাবেরও তিনি কাজ করেছেন। ১৯৫৪ সনে কিতাবটি জনৈক মুহাক্কিক ভুলক্রমে তাশ কুবরি যাদা রাহ.-এর নামে ছাপিয়েছিল। ড. মুহিউদ্দীন ছারহান রাহ. ১৯৮১ সালে ‘মাওরিদ’ পত্রিকায় (ভলিউম ১০, ৩-৪ যৌথ সংখ্যা) এ বিষয়ে সংশোধনীমূলক একটি প্রবন্ধ লেখেন। পরবর্তীতে তারই তাহকীকে মুআসসাসাতুদ দুহা বৈরুত থেকে কিতাবটি ছাপা হয়েছে। এছাড়াও তিনি সত্তরের অধিক থিসিস ও গবেষণাপত্রের তত্ত্বাবধান করেন। ১৩৫১ হি. / ১৯৩২ ঈ. সনে তিকরিত শহরে তাঁর জন্ম। ইন্তেকালের সময় হিজরীবর্ষ হিসেবে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
২৫ মুহাররম [আরবের চাঁদ দেখা অনুসারে] (৩১-৭-২০২৪), বুধবার
শহীদ ইসমাঈল বিন আবদুস সালাম হানিয়া রাহ.
গাজার আশ-শাতি শরণার্থীশিবিরে ১৯৬৩ সনে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর চাচার সহায়তায় শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেন। হামাস সংগঠনের সূচনালগ্ন থেকেই তিনি এ কাফেলার সদস্য ছিলেন। জীবনের বড় অংশ জুড়ে দখলদার কর্তৃক জেল-জুলুম, হত্যা চেষ্টা, হয়রানি ও নির্বাসনের মধ্যে কাটিয়েছেন। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৭ সালের ৬ মে হামাসের শূরা কাউন্সিল তাঁকে রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করে। ৭ অক্টোবরের পর শায়খুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম দোহায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের বিবরণে মুফতী তাকী উসমানী দা.বা. বলেন, “জনাব ইসমাঈল হানিয়া রাহ. হামাসের প্রধান ছিলেন। ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবারের জিহাদ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার সাথে সাক্ষাৎ এবং সম্ভাব্য সহযোগিতার লক্ষ্যে বান্দা কাতারের দোহায় উপস্থিত হই। তিনি অত্যন্ত সজ্জন, প্রখর ধীশক্তি সম্পন্ন, বিনয়ী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পবিত্র কুরআনের হাফেয ছিলেন। নির্বাচিত হয়ে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। তাঁর সাথে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ হয়। আমার ধারণা বিশ্বাসে পরিণত হয়- এ কাফেলা দুনিয়াবী কোনো উদ্দেশ্যে নয়; কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছে।” (মাসিক আল বালাগ, ডিসেম্বর ২০২৪)
৩১ জুলাই ২০২৪ তেহরান সফররত অবস্থায় ইসরাইল তাঁর ওপর বোমা হামলা করে। তিনি শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অমরত্ব বরণ করেন।
৭ সফর (১৩-৮-২০২৪), মঙ্গলবার
হযরত মাওলানা আনওয়ার বদখশানী রাহ.
জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউন করাচীর সুদীর্ঘ ৫০ বছরের উস্তায। হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রাহ., মুফতী ওলী হাসান টোংকী রাহ.-সহ সমকালীন পাক-আফগানের বড় বড় মাশায়েখের শিষ্যত্বধন্য ছিলেন। আফগানিস্তানের বদখশান প্রদেশে ১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সনে বিন্নুরী টাউন থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। দুই বছর করাচীর জামিয়া ফারুকিয়ায় তাদরীসের পর ১৯৭৪ সনে হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রাহ.-এর ডাকে ‘মাদরাসায়ে আরাবিয়া ইসলামিয়া’ (বর্তমান জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউন)-এ চলে আসেন। ফারসী ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিতাব রচনা ও অনুবাদ করেন। নেসাবে তালীমের কিতাবগুলো সহজায়নের ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ও মনোযোগ ছিল এবং এ অঙ্গনে তিনি অনেক খেদমতও আঞ্জাম দিয়েছেন।
১১ সফর (১৭-৮-২০২৪), শনিবার
হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াকুব সাহারানপুরী রাহ.
মাযাহেরুল উলূম সাহারানপুর মাদরাসার সর্বজনশ্রদ্ধেয় উস্তায। শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রাহ.-এর শাগরেদ ছিলেন। ১৩৮৬ হিজরীতে মাযাহেরুল উলূম থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। পরের বছর ১৩৮৭ হিজরী থেকেই তিনি মাযাহেরুল উলূম মাদরাসায় খেদমতে নিযুক্ত হন। ১৪২৩ হিজরী থেকে মাযাহেরুল উলূম (ওয়াকফ) সাহারানপুরের সদরুল মুদাররিসীন ছিলেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ৭৬ বছর হয়েছিল।
২২ সফর (২৮-৮-২০২৪), বুধবার
হযরত মাওলানা কাযী আবদুর রশীদ রাহ.
শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা সালিমুল্লাহ খান ছাহেব রাহ. ও মুফতী নিযামুদ্দীন শামযাঈ রাহ.-এর বিশিষ্ট শাগরিদ। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ‘নাযেমে আলা’ ছিলেন। ১৯৫৮ সনে রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর শোকবার্তায় লেখেন–
وفاق المدارس العربیہ پنجاب کے ناظم مجلس عاملہ کے رکن رکین حضرت مولانا قاضی عبد الرشید کی وفات ناگہانی خبر سے سخت صدمہ ہوا، ہم اپنے ایک متحرک فعال اور مدبر بازو سے محروم ہوگئے۔ انا للہ وانا الیہ راجعون۔ ان کی ہمہ جہت خدمات کا بہترین صلہ جنت میں عطا فرمائیں۔
১৫ রবিউল আওয়াল (১৯-৯-২০২৪), বৃহস্পতিবার
হযরত মাওলানা সায়্যিদ শাহ তাকীউদ্দীন ফেরদাউসী নদভী রাহ.
হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ. ও রাবে হাসানী নদভী রাহ.-এর শিষ্য। নদওয়াতুল উলামা লাখনৌর শূরা সদস্য ছিলেন। ১৯৪২ সালে পাটনার মুনীর শরীফে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা পিতা সায়্যিদ শাহ এনায়েতুল্লাহ ফেরদাউসী ও চাচা শাহ মুরাদুল্লাহ রাহ.-এর নিকট হাসিল করে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামায় যান। ১৯৬১ সনে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামা থেকে ফারেগ হন। তাঁর জীবনের বড় অংশ হিজায ও মিশরেই কেটেছে। মিশরের শায়েখ আবু যাহরা ও শায়েখ শাওকী দেঈফ-এরও সোহবতধন্য ছিলেন। ইন্তেকালের আগে তিনি ‘হায়াতী’ নামে আত্মজীবনী লিখেছেন।
উল্লেখ্য, শায়খ তাকীউদ্দীন মাযাহেরী নদভী হাফিযাহুল্লাহ আর তাকীউদ্দীন ফেরদাউসী নদভী রাহ. দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি।
১৪ রবিউল আখির [আরবের চাঁদ দেখা অনুসারে] (১৭-১০-২০২৪), বৃহস্পতিবার
বীর মুজাহিদ শহীদ ইয়াহইয়া সিনওয়ার রাহ.
ফিলিস্তিনী প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান প্রতীক এবং ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রামের একজন কিংবদন্তি নেতা। ১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিসে দখলদারিত্বের কঠিন পরিস্থিতে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ বছর বয়সেই ইসরাইলের কারাগারে গিয়েছেন। জীবনের ২৩ বছর তিনি শত্রুর জেলখানায় কাটিয়েছেন। কিন্তু তিনি জেলখানাকে ইবাদতখানা ও দরসগাহে পরিণত করেছিলেন। সেখানে থেকেই দ্বীন পড়েছেন। সেখানে থেকেই বই লিখেছেন। সেখানে থেকেই গড়ে তুলেছেন চিন্তা ও আদর্শের অনেক সহযোদ্ধা। ২০১১ সালে বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।
৩১ জুলাই ২০২৪ ইসমাঈল হানিয়ার শাহাদাতের পর ৬ আগস্ট তিনি হামাসের প্রধান নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি সাধারণ সৈনিকের মতোই লড়ে গেছেন। অঙ্গহানি ও আহত হওয়া সত্ত্বেও যে বীরত্ব দেখিয়ে গেছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আঘাতে জর্জরিত বাহু, ভাঙা হাঁটু, হাতের ভাঙা আঙুলে লাঠি নিয়ে ইসরাইলী ড্রোনের ওপর সর্বশেষ যে হামলা করেন, সে দৃশ্য যুগ যুগ ধরে মজলুমানের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে থাকবে। মাজলুমদের টিকে থাকার অনুপ্রেরণা দেবে। নিষ্পেষিত মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস জোগাবে।
২৭ রবিউল আখির (৩১-১০-২০২৪), বৃহস্পতিবার
মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মাদ শফী রাহ.
বড়কাটারা (হুসাইনিয়া আশরাফুল উলূম) মাদরাসার শায়খুল হাদীস ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৪৩ বছর দরস-তাদরীসের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছিলেন। ১৯৫৭ সালে কুমিল্লা বরুড়া থানাধীন পেরুল গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা মরহুম মাওলানা আব্দুল গনী রাহ. এবং দাদা মাওলানা আশরাফ আলী রাহ. উভয়ে শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ.-এর স্নেহধন্য শাগরেদ ছিলেন। ১৯৭৮ সালে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব রাহ. (১৪০২হি.), শায়খুল হাদীস সূফী আব্দুল কাইয়ূম রাহ. (১৪০১হি.), মাওলানা মুহাম্মদ আলী রাহ. (১৪০৪হি.) এবং হামেদ ছাহেব রাহ. (১৪০৭হি.) প্রমুখ ছিলেন তাঁর উস্তায। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বড়কাটারা মাদরাসায় উস্তায হিসেবে নিযুক্ত হন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ প্রতিষ্ঠানে দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যান।
১৯ জুমাদাল আখিরাহ (২২-১২-২০২৪), রবিবার
আল্লামা কমরুদ্দীন গওরখপুরী রাহ.
দারুল উলূম দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বি উস্তায। ১৯৩৮ সালে ভারতের গওরখপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে দারুল উলূম দেওবন্দে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা সমাপ্ত হয়। দিল্লির মাদরাসায়ে আবদুর রব-এ তালীম-তাদরীসের জীবন শুরু হয়। ১৩৮৬ হিজরীতে (১৯৬৬ সালে) হযরত মাওলানা ইবরাহীম বালিয়াভী রাহ. তাঁকে দারুল উলূম দেওবন্দে নিয়ে আসেন। হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-এর বিশিষ্ট খলীফা শাহ ওসীউল্লাহ ফতেহপুরী রাহ.-এর হাতে বাইআত ছিলেন। তাঁর ওফাতের পর মুহীউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রাহ.-এর হাতে বাইআত হন এবং খেলাফতপ্রাপ্ত হন। দেওবন্দে তাঁর আসাতেযায়ে কেরামের মধ্যে ছিলেন সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. (১৩৭৭ হি.), মাওলানা ফখরুদ্দীন আহমাদ মুরাদাবাদী রাহ. (১৩৯২ হি.), মাওলানা ইবরাহীম বালিয়াভী রাহ. (১৩৮৬ হি.) ও ফখরুল হাসান মুরাদাবাদী রাহ. (১৪০০ হি.)।
২৯ জুমাদাল আখিরাহ (১-১-২০২৫) বুধবার
মাওলানা শহীদুল্লাহ বিন আরদুল্লাহ রাহ.
জুমাদাল আখিরার শেষ দিন ২৯ তারিখে চলে গেছেন হযরত মাওলানা মুফতী ওলী হাসান টোংকী রাহ. ও মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ নুমানী রাহ.-এর শাগরেদ মুন্সীগঞ্জের মাওলানা শহীদুল্লাহ বিন আরদুল্লাহ রাহ.। ১৯৬১ সনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৪-১৯৮৫ সনে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ থেকে তাকমীলে হাদীস সমাপ্ত করেন। অতঃপর ১৯৮৫-১৯৮৭ সনে জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া বিন্নুরি টাউনে ইফতা এবং ১৯৮৭-১৯৯০ পর্যন্ত উলূমুল হাদীস বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর বর্ণনাকৃত হাদীসের একটি সংকলন তৈরি করেন, যাতে কিতাবুল আছার এবং ‘মাসানীদুল ইমাম আবী হানীফা’ শিরোনামে সংকলিত কিতাবাদির বর্ণনাগুলোর বাইরে মুহাদ্দিসীনের কিতাবাদিতে ছড়িয়ে থাকা বর্ণনাগুলো জমা করা হয়েছে। হযরত নুমানী রাহ. সংকলনটির মূল্যায়নে লেখেন–
وهذا المختصر عَلَقٌ نفيس، ينبغي للحنفية أن يحفظوه ويعتنوه درسا وتحقيقا، وشرحاً وتعليقاً.
চুয়াডাঙ্গার দারুল উলূম বুজরুক গড়গড়ী মাদরাসায় (স্থাপিত ১৯৬৬ ঈ.) কয়েক বছর খেদমত করেন। ২০০৩-২০২২ পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ মারকায মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসায় মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)