Safar 1447   ||   August 2025

মাওলানা সা‘দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে আকাবির উলামায়ে বাংলাদেশের ফতোয়া বিস্তারিত আলোচনা

(পূর্ব প্রকাশের পর)

 

মাওলানা সা‘দ সাহেব যেসব উসূল ও আহকামে পরিবর্তন এনেছেন অথবা দলীলবিহীন যেসব আহকাম বানিয়েছেন সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

মাওলানা সা‘দ সাহেবের গোমরাহীর মারাত্মক একটা দিক এটাও যে, তিনি দাওয়াতের একটি বিশেষ পদ্ধতিকে বেছে নিয়ে তাতে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়েছেন তাই দেখা যাচ্ছে, তিনি শরীয়তের অনেক উসূল ও আহকামে পরিবর্তন এনেছেন এবং শরয়ী দলীল ছাড়া বিভিন্ন বিধানও সৃষ্টি করেছেন দ্বীনের মধ্যে এ ধরনের পরিবর্তন ও নবসৃষ্টিকেই শরীয়তের পরিভাষায় বলা হয় ‘ইহদাস ফিদ দ্বীন’ তথা দ্বীনের মাঝে নবআবিষ্কার এটা মারাত্মক গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা

মাওলানা সা‘দ সাহেবের এ প্রকারের গোমরাহীর তালিকাও ছোট নয় এখানে বিস্তারিত আলোচনার তো সুযোগ নেই, তবে সা‘দ সাহেব সম্পর্কে যে শরয়ী হুকুম ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট করার জন্য এখানে এ বিষয়ে কিছু কথা পেশ করা মুনাসিব মনে হচ্ছে সেজন্য প্রথমে আমরা তিনি যেসব উসূল ও আহকামে পরিবর্তন এনেছেন এবং দলীলবিহীন যেসব আহকাম বানিয়েছেন, বিশেষত দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে নতুন নতুন যেসব মাসআলা তৈরি করেছেন এবং নানা আপত্তিকর ও বাড়াবাড়িমূলক কথাবার্তা বলেছেন, সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা উল্লেখ করছি

১. ঈমানের হালকা মসজিদের সঙ্গে নির্দিষ্ট করে দেওয়া

২. তালীমকে মসজিদের সঙ্গে খাস করে দেওয়া

৩. তরবিয়তকে মসজিদের সঙ্গে খাস করে দেওয়া

৪. দাওয়াতকে মসজিদের সঙ্গে খাস করে দেওয়া

৫. নামাযকে মসজিদের যিমনী (দ্বিতীয় পর্যায়ের) আমল আখ্যা দেওয়া

৬. নাহি আনিল মুনকার এবং খুরূজ ও নফরের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের বিধান হুবহু এক হওয়ার দাবি করা

৭. এ কথা বলা, ‘মশওয়ারা ছেড়ে দেওয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেয়ে বেশি খারাপ এবং তার চেয়ে বড় গুনাহ

৮. ‘সবকিছু ছেড়ে মশওয়ারার জন্য আসা নামাযের জন্য আসার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি

৯. ‘মশওয়ারার আদব ও তরিকা এবং মশওয়ারার গুরুত্ব ও তার ইজতিমাইয়্যাত শতভাগ নামাযের মতো

১০. ‘মশওয়ারা মসজিদের আমল

১১. ‘ইনতেযাম (ব্যবস্থাপনাগত বিষয়)-এর ক্ষেত্রে মশওয়ারা হয়, কাজের ক্ষেত্রে মশওয়ারা হয় না কাজ মানসূস আর মানসূস বিষয়ে মশওয়ারা নেই’ কিংবা এ কথাকাজ তো সীরাতের তাবে‘ (অনুগামী) আর মশওয়ারাওয়ালারা কাজের তাবে‘

১২. তাবলীগ জামাতের প্রচলিত খুরূজে বিলম্ব করাকে কবীরা গুনাহ ও নেফাক আখ্যা দেওয়া

১৩. কুরআনে বর্ণিত ‘নফর’-এর বিধান, ফযীলত ও বৈশিষ্ট্যসমূহকে হুবহু বরং আরও বাড়িয়ে তাবলীগী খুরূজের জন্য সাব্যস্ত করা এবং ‘নফর’-এর আয়াত ও হাদীসসমূহকে সরাসরি এই তাবলীগী খুরূজের ওপর প্রয়োগ করা এবং এ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আয়াত-হাদীসসহ সূরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতের মর্মকে মারাত্মকভাবে বিকৃত করা

১৪. তার দাবি ইসলামের নুসরত কেবল দাওয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ দাওয়াত ছাড়া ইসলামের নুসরতের আর কোনো কাজ নেই (একেবারেই ভ্রান্ত কথা)

১৫. তার বক্তব্য দাওয়াত কেবল নকল ও হরকত এবং খুরূজ ও নফরের মধ্যে সীমাবদ্ধ এসব ব্যতীত কোনো দাওয়াত দাওয়াত নয় তেমনিভাবে নিজে গিয়ে দাওয়াত না দিলে এবং সরাসরি নিজে গিয়ে তাবলীগ না করলে ওই তাবলীগ তাবলীগ নয় (সম্পূর্ণ দলীলবিহীন কথা)

১৬. তার দাবি তাযকীর তাহরীর (লেখা) দ্বারা হয় না বরং তাকরীর (বয়ান) দ্বারাও হয় না আসল জিনিস হল তাহরীক (অর্থাৎ নকল ও হরকত) তাহরীক ছাড়া তাযকীর করলে সেটা তাযকীর নয় (ভিত্তিহীন কথা)

১৭. তার দাবি আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের জন্যও নকল-হরকত ও খুরূজ জরুরি আর নকল-হরকত ও খুরূজই আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের একমাত্র মাসনূন তরিকা এবং এটাই তাকমীলে ঈমান (ঈমানের পূর্ণতা)-এর একমাত্র উপায় (তার এ কথা উম্মতের ইজমা ও আমলে মুতাওয়ারাসের সম্পূর্ণ খেলাফ)

১৮. তার দাবি প্রচলিত গাশত ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না (ভিত্তিহীন কথা)

১৯. এর চেয়েও আগে বেড়ে তার দাবি ইনফেরাদী দাওয়াত ফরযে আইন (এটা সম্পূর্ণ তার মনগড়া এবং ভুল কথা)

২০. তার দাবি গায়েবী নুসরত নিজে গিয়ে দাওয়াত দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নকল-হরকত ও খুরূজওয়ালা দাওয়াত ব্যতীত গায়েবী নুসরত নাযিল হওয়া সম্ভব নয় (সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা এবং এটা افتراء على الله তথা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটানোর শামিল)

২১. তার দাবি কাজ (অর্থাৎ প্রচলিত তাবলীগ জামাতের কাজ, যার রূপরেখা দিয়েছেন হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. এবং মাওলানা সা‘দ সাহেবের নিজের দাবি অনুযায়ী তিনি যেটার তাজদীদ ও সংস্কার করছেন) মানসূস এবং এর প্রতিটি বিষয় সীরাত থেকে নেওয়া হয়েছে

(বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রচলিত তাবলীগ জামাতের কাজকে মানসূস বলা এবং এর প্রতিটি বিষয় সীরাত থেকে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা এটা তার মৌলিক গোমরাহীগুলোর একটা দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়াসমূহে সা‘দ সহেবের এই গোমরাহী সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে বলা হয়েছে, দাওয়াত সম্পর্কে তার নিজস্ব বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর শরয়ী নুসূসের অপপ্রয়োগের বিষয়গুলো একদম স্পষ্ট)

২২. তার দাবি তালীমের একটি তরিকাই মাসনূন হয়তো মসজিদে হবে, নতুবা খুরূজ ও নফরের সঙ্গে হবে (এটা সম্পূর্ণ তার বানানো কথা)

২৩. তার দাবি ঈমান শেখার মাসনূন ও মানসূস তরিকা এই যে, গাশতের মাধ্যমে মানুষকে মসজিদে একত্র করে ঈমানের হালকা কায়েম করা হবে ঈমানের পূর্ণতা সৃষ্টির এটাই নির্ধারিত তরিকা অর্থাৎ মসজিদে ঈমানের হালকা কায়েম করা হবে (এটা স্পষ্ট গোমরাহীপূর্ণ কথা এবং শরীয়তে হস্তক্ষেপ)

২৪. তার দাবি আমাদেরকে নবী, ফেরেশতা ও সাহাবায়ে কেরামের চেয়ে বেশি ঈমান দেওয়া হয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)

২৫. তাবলীগে ইলম (ইলমের প্রচার), হেফাযতে ইলম (ইলমের সংরক্ষণ) এবং ইশাআতে ইলম (ইলমের প্রকাশ ও প্রচারণা)-কে গায়রে মানসূস, গায়রে মাসনূন, প্রভাবশূন্য এবং সওয়াবশূন্য আখ্যা দেওয়া (সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া কথা)

২৬. কিতাল ফী সাবীলিল্লাহসহ বড় বড় দ্বীনী কাজের মাকসাদগুলো প্রচলিত খুরূজের জন্য সাব্যস্ত করা এবং এই সবকিছুকে প্রচলিত খুরূজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া (অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ)

২৭. দাওয়াত ও তালীম ছাড়া মাল খরচ করাকে খেলাফে সুন্নত বলা (মারাত্মক অন্যায় কথা)

২৮. নুসরতে ইসলামের জন্য যুগ পরম্পরায় অনুসৃত ‘কাফালাতে আম্মাহ’ তথা গণপৃষ্ঠপোষকতা-ভিত্তিক ভাতা ব্যবস্থাকে ‘নাকেস মুজাহাদা’ ও খেলাফে আযীমত আখ্যা দেওয়া এবং নবী ও সাহাবায়ে কেরামের তরিকা পরিপন্থি বলা (সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা)

২৯. যে কোনো রেওয়াজ ও প্রচলন শুধু রেওয়াজ হওয়ার কারণেই তার সমালোচনা করা অর্থাৎ সব রেওয়াজকেই ঢালাওভাবে খেলাফে সুন্নত ও পরিত্যাজ্য বলা (অন্যায় কাজ)

৩০. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশিদীনের যমানায় বিদ্যমান বিভিন্ন ব্যবস্থাপনাগত ও সাময়িক বিষয়, যেগুলো পরিস্থিতি ও সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ইলমুল ফিকহের পরিভাষায় সেগুলোকে মুবাহ বলে এগুলোর স্তর হল মুবাহের স্তর কিন্তু মাওলানা সা‘দ সাহেব অনেক সময় এ ধরনের বিষয়কে সুন্নত (মাকসূদা) ও আইনে সুন্নত (হুবহু সুন্নত) আখ্যা দেন অপরদিকে যদি কোনো বিষয় তার পছন্দ না হয়, তাহলে সে সময়ের বিভিন্ন মুবাহ বিষয়কে খেলাফে সুন্নতও বলে দেন স্পষ্ট যে, উভয় পন্থাই একেবারে মৌলিক ভুল এবং পুরোপুরি আপত্তিকর ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ

৩১. তেমনিভাবে যেসব বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশিদীনের যামানায় তানাওউয়ে সুন্নত (সুন্নাহর বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্য)-এর উসূল কার্যকর ছিল, অর্থাৎ একই কাজে একাধিক মাসনূন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, ইমাম ও ফকীহগণ ওইসকল পদ্ধতি মাসনূন ও অনুসরণযোগ্য মনে করতেন যে পদ্ধতিই গ্রহণ করুক কোনো সমস্যা নেই; তবে অন্য পদ্ধতিগুলোকে তারা ভুল বা খেলাফে সুন্নত মনে করতেন না কিন্তু মাওলানা সা‘দ সাহেব নিজের পছন্দমতো কোনো একটা পদ্ধতিকে মাসনূন সাব্যস্ত করে বাকি পদ্ধতিগুলোকে খেলাফে সুন্নত আখ্যা দিয়ে দেন এটাই তার বড় একটা মৌলিক ভুল এ ধরনের ভুল কট্টরপন্থি সালাফীরা বেশি করে থাকেন

এমনকি যেসব বিষয়ে ‘তানাওউয়ে মুবাহ’-এর উসূল কার্যকর, সেসব বিষয়েও কোনো একটা মুবাহ পদ্ধতিকেও অস্বীকার বা তাচ্ছিল্য কিংবা খাটো করা জায়েয নয় কিন্তু মাওলানা সা‘দ সাহেব এ কাজও করেন

৩২. আধুনিক যন্ত্র ও সরঞ্জামাদি এবং দুনিয়ার ব্যবস্থাপনাগত কাজের জন্য নবআবিষ্কৃত উপায়-উপকরণ ও মাধ্যমের বিষয়ে শরীয়ত ও সুন্নতের শিক্ষা এবং যে ব্যাপারে সকল ইমাম ও ফকীহ একমত, তা এই যে, শুধু নতুন হওয়ার কারণে কিংবা অমুসলিমদের আবিষ্কৃত হওয়ার কারণে সেগুলোকে নাজায়েয ও মুনকার বলা যাবে না; বরং যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হয়, তাহলে শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে সেটাকে ব্যবহার করা জায়েয এর মাধ্যমে কোনো দ্বীনী কাজে সহযোগিতা নিতে কোনো সমস্যাও নেই কোনো শরয়ী দলীল ছাড়া সেটাকে প্রভাবশূন্য ও সওয়াবশূন্য বলা জায়েয নয় হাঁ, যদি কোনো যন্ত্র বা মাধ্যম এমন হয়, যা শুধু গুনাহের কাজেই ব্যবহার করা যায় অথবা যেটা কোনো অমুসলিম জাতির শিআর বা প্রতীক, এমন হলে সেটা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে

এটা সকল যুগের আহলে ইলমের ফয়সালা কিন্তু মাওলানা সা‘দ সাহেব কোনো বাছবিচার না করেই আধুনিক সকল যন্ত্র-সরঞ্জাম ও উপায়-উপকরণকে ঢালাওভাবে মন্দ বলেন সেগুলোকে কখনো বাতিল বলেন কখনো গুনাহ বলেন আবার কখনো খেলাফে সুন্নত ও বে-আসর বলেন আর এটা তো সব সময়ই বলেন, এসব যন্ত্র ও উপকরণের ব্যবহার উম্মতকে গায়েবী নুসরত থেকে মাহরূম করে রেখেছে

তার এই অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি সত্ত্বেও দেখা যায়, তিনি নিজেও নতুন অনেক যন্ত্র ও উপকরণ ব্যবহার করেন উদাহরণত দ্বীনী বয়ানে লাউড স্পিকার ব্যবহার করেন হজ্ব ও দাওয়াতের সফরে উড়োজাহাজ এবং ইঞ্জিনচালিত গাড়ি ব্যবহার করেন ফোনে দ্বীনী কথাবার্তা বলে থাকবেন তার ঘরে (যেখানে তালীমসহ ঘরের পাঁচ কাজ নিশ্চয় হয়ে থাকবে) এবং মসজিদে (অর্থাৎ নেযামুদ্দীন মারকাযে) বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার হয় তার সামনে তাবলীগী ইজতিমাগুলোতে আযান-ইকামতের জন্য স্পিকার ব্যবহার করা হয় এমনকি ফরয নামাযে মুকাব্বিরও লাউড স্পিকার ব্যবহার করেন তাবলীগের অনেক ইজতিমায় খোদ ইমামই নামাযে লাউড স্পিকার ব্যবহার করে থাকেন

উসূল ও আহকামের এসব পরিবর্তন এবং দলীলবিহীন নতুন নতুন বিধান আবিষ্কার করাটাই তো মারাত্মক ভ্রষ্টতা, বেদআত সৃষ্টি এবং শরীয়তে হস্তক্ষেপের মতো ভয়াবহ অপরাধ আর এসব গোমরাহীর কথা প্রমাণ করার জন্য তিনি যে বিভিন্ন আয়াত-হাদীস, সীরাতের ঘটনা ও সাহাবায়ে কেরামের ঘটনার মধ্যে শব্দগত ও মর্মগত বিকৃতি সাধন করেছেন, সেগুলোর তালিকাও দীর্ঘ ফতোয়ার সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা মুশকিল আপাতত আমরা উল্লেখিত তালিকা থেকে প্রথম তেরোটি বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা মুনাসিব মনে করছি

وما توفيقي إلا بالله، عليه توكلت وإليه أنيب.

উল্লেখিত প্রথম ১৩টি বিষয় নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা

১-৪. দাওয়াত, তালীম, তরবিয়ত ও ঈমানের হালকাকে মসজিদের সাথে খাস করে দেওয়া

মাওলানা সা‘দ সাহেব দাওয়াত, তালীম, তরবিয়ত ও ঈমানের হালকাকে মসজিদের সাথে খাস মনে করেন আর এই দাবি করেন যে, এসব কাজ মসজিদের বাইরে আঞ্জাম দেওয়া সুন্নত পরিপন্থি এবং এটা এসব কাজের প্রভাবশূন্য ও সওয়াবশূন্য হওয়ার কারণ ঈমানের পূর্ণতা মসজিদের ঈমানী হালকাতেই হয় এবং এটাই ঈমান শেখার একমাত্র মাসনূন তরিকা

অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগ থেকে এখন পর্যন্ত যুগ পরম্পরায় মুসলিম উম্মাহর আমল এটাই যে, এসব কাজের কোনোটাকেই মসজিদের সঙ্গে খাস করা হয়নি এসব কাজ মসজিদে ও মসজিদের বাইরে সব জায়গায় হতে পারে এবং সব জায়গাতেই আঞ্জাম দেওয়া হয়েছে যদি এসব কাজ ইখলাসের সঙ্গে এবং শরয়ী বিধান লক্ষ রেখে আঞ্জাম দেওয়া হয়, তাহলে যেখানেই করা হোক সেটা প্রভাবপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ হবে সেজন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এসব বিষয়কে মসজিদের সঙ্গে খাস করে দেননি যে, এগুলো মসজিদেই হতে হবে এসব কাজ তিনি মসজিদেও করেছেন, মসজিদের বাইরেও করেছেন তাঁর জীবদ্দশায় সাহাবায়ে কেরামও এমনই করতেন তাঁর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবা ও তাবেয়ীন এমনই করতেন হাদীস, সীরাত ও ইতিহাসের কিতাবাদিতে এর এক-দুটি নয়, বরং অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যুগ যুগ ধরে পুরো উম্মতের সর্বসম্মত আমলের বিপরীতে মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেন

میں یہ عرض کرنا چاہتا ہوں کہ ایمان میں کمال پیدا کرنے کا تو یہی طریقہ ہے کہ مسجدوں میں ایمان کے حلقے قائم کئے جائیں، اور جتنے مسجد سے باہر کے پھیلے ہوئے نقشے ہیں ان نقشوں میں سے مسلمانوں کو ایمان سیکھنےکے عنوان پر مسجد کے ماحول میں لا یا جائے، یہ ایمان کے سیکھنے کا بنیادی طریقہ ہے، یہ طریقہ مسنون ہے اور منصوص ہے، سنت سے ثابت ہے، اور قرآن کی آیتوں میں یہ طریقے پائے جاتے ہیں، صاف اللہ نے فرمایا کہ وہ ایمان والے ہی ہوں گے جو مسجدوں کو آباد رکھیں گے، یہ فرمایا جس کو تم بکثرت مسجد کو آتے ہوئے دیکھو اس کے مومن ہونے کی گواہی دے دو۔

تو میں نے عرض کیا کہ ایمان میں کمال پیدا کرنے کا متعین طریقہ یہی ہے۔

আমি একথা বলতে চাইছি যে, ঈমানে পূর্ণতা সৃষ্টি করার তো এটাই পথ আর তা হল, মসজিদে ঈমানের হালকা কায়েম করবে মসজিদের বাইরে যত নকশা ছড়িয়ে আছে, সেসব নকশা থেকে বের করে মুসলমানদেরকে ঈমান শেখার শিরোনামে মসজিদের পরিবেশে নিয়ে আসবে এটা ঈমান শেখার বুনিয়াদী তরিকা

এ তরিকা মাসনূন ও মানসূস সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত কুরআনের আয়াতসমূহে এ তরিকা পাওয়া যায় আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন, ঈমানদার তারাই হবে, যারা মসজিদ আবাদ রাখবে এ কথা বলেছেন, ‘যাকে তোমরা বেশি বেশি মসজিদে আসতে দেখবে, তার মুমিন হওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে দাও’ তো আমি বলছিলাম, ঈমানে পূর্ণতা সৃষ্টির নির্ধারিত তরিকা এটাই...” (বয়ান ৩০/১০/২০১৮ ঈ., বাদ ফজর, মিনিট : ২০-২৩)

তিনি আরও বলেন

ہدایت کے لے، اللہ کا تعلق پیدا کرنے کے لے، اللہ سے اللہ کے بندوں کو جوڑنے کے لیےمسجد کا ماحول متعین ہے، متعین ہے، پہلے علم کی حلقے مسجد میں ہوا کرتے تھے، ضروریات زمانہ کی وجہ سے علم مسجد سے نکل گیا۔

 صفہ مدرسہ نہیں تھا، صفہ مدرسہ نہیں تھا، صفہ قیام گاہ تھا، مسجد درسگاہ تھی، صفہ مسجد سے باہر کا حصہ ہے، یہاں قیام ہوتا تھا فقراء صحابہ کا، مسجد میں تعلیم ہوتی تھی، مسائل یہاں سکھلائے جاتے تھے، فضائل یہاں سنائے جاتے تھے،  اس لیے میں تاکید سے عرض کر رہا، یہ پورا مجمع ہماری بات سن رہا ہے، یہ امانت ہے، دوسروں تک پہچانا۔

হেদায়েতের জন্য, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্য, আল্লাহর সঙ্গে আল্লাহর বান্দাদের জুড়ে দেওয়ার জন্য মসজিদের পরিবেশ নির্ধারিত নির্দিষ্ট প্রথম যুগে ইলমের হালকাগুলো মসজিদে হত সময়ের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ইলমকে মসজিদ থেকে বের করা হয়েছে

সুফফা মাদরাসা ছিল না সুফফা মাদরাসা ছিল না সুফফা ছিল কিয়ামগাহ (অবস্থানস্থল) মসজিদ ছিল দরসগাহ (পাঠদানের জায়গা) সুফফা মসজিদের বাইরের অংশ এখানে দরিদ্র সাহাবীগণ অবস্থান করতেন মসজিদে তালীম হত মাসআলা-মাসায়েল এখানে শেখানো হত ফাযায়েল এখানে শোনানো হত এ জন্য আমি গুরুত্বের সঙ্গে বলছি এই পুরো মজমা আমাদের কথা শুনছে এটা আমানত অন্যদের কাছে পৌঁছাতে হবে’ (বয়ান ২৬/০২/২০১৮ ঈ., আওরঙ্গবাদ ইজতিমার আখেরি মজলিস, ২৭ মি. থেকে)

তিনি এটাও বলেন

میں بار بار نظام الدین سے یہ بات ساتھیوں سے بھی مجمع سے بھی عرض کر رہا کہ ہمارے گشتوں کا مقصد مسجد میں لانا ہے۔ گھروں پر، دکانوں پر، چوپالوں پر، پارکوں میں، ہوٹلوں میں باتیں کرنا خلاف سنت ہے، نہ یہ صحابہ کا طریقہ ہے، نہ یہ نبیوں کا طریقہ ہے، بلکہ مختصر دعوت دے کر ہر شخص کو مسجد کے ماحول میں لاؤ، کہ ہم آپ سے مسجد میں بات کرنا چاہتے ہیں، کیونکہ اللہ قرآن میں فرما رہے ہیں کہ اللہ رب العزت مسجد کے آباد کرنےوالوں کے دلوں سے اپنے غیر کا خوف نکال دیں گے، اور اللہ فرما رہے کہ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ.

کہ یہی وہ لوگ ہوں گےجو اللہ کی طرف سے ہدایت پانے والے ہوں گے ۔

আমি ক্রমাগত একথা নেযামুদ্দীনে সাথিদেরকে ও মজমাতেও আরয করে আসছি যে, আমাদের গাশতের উদ্দেশ্য মসজিদে নিয়ে আসা ঘরে, দোকানে, মাঠে, পার্কে, হোটেলে দ্বীনের কথা বলা সুন্নত পরিপন্থি এটা না সাহাবীদের তরিকা, না নবীদের তরিকা বরং সংক্ষিপ্ত দাওয়াত দিয়ে সবাইকে মসজিদের পরিবেশে নিয়ে আসবে বলবে, আমরা আপনাদের সঙ্গে মসজিদে কথা বলতে চাই কারণ আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত মসজিদ আবাদকারীদের অন্তর থেকে গায়রুল্লাহর ভয় বের করে দেবেন এবং আল্লাহ বলছেন

فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ.

অর্থাৎ এরাই সেসব মানুষ হবে, যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে (এই বয়ানের অডিও আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে তবে তার তারিখ জানা নেই)

এক বয়ানে তিনি বলেন

تو میرے دوستو، خلاصہ ساری بات کا یہ ہواکہ ایمان کے سیکھنے کی جگہ مسجد کا ماحول اور تربیت اور اللہ کے تعلق پیدا ہونے اور تقوی اور ہدایت کے دلوں میں اترنے کی اصل جگہ مسجد ہے۔

তো আমার বন্ধুরা! পুরো কথার খোলাসা হল, ঈমান শেখার জায়গা হল মসজিদের পরিবেশ তেমনিভাবে তরবিয়ত ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার এবং দিলের মধ্যে তাকওয়া ও হেদায়েত তৈরি করার আসল জায়গা মসজিদ’ (বয়ান ৯/৭/২০১৯ ঈ., বাদ ফজর, ৪৩ মি. ৪১ সে.)

এই বয়ানে এই কথা তিনি বারবার বিভিন্নভাবে বলেছেন

[এধরনের কথা অক্টোবর ২০২২ ঈসায়ী মালয়েশিয়ার ইজতেমাতেও ভিন্ন ভঙ্গিতে বলেছেন অন্যান্য অনেক বয়ানেও আছে]

এই বয়ানেই তিনি আরও বলেন

اللہ کا امرہے ایمان والوں کے لیے ایمان لانےکا، تو سوال یہ ہے کہ اس ایمان کے لانے کا طریقۂ عمل کیا ہوگا؟ طریقۂ محنت کیا ہوگا؟ طریقۂ محنت صحابہ سے ملےگا،  ایمان لانے کا امر ہے، اس امر پورا کرنے کا تعلق اس طرح مسجد سے ہے جس طرح نماز کے ادا کرنے کا تعلق مسجد سے ہے، ہمارے اس بات توجہ سے سننا۔

ঈমানদারের প্রতি আল্লাহর আদেশ ঈমান আনা তাহলে প্রশ্ন হল, ওই ঈমান আনার পদ্ধতি কী হবে? মেহনতের তরিকা কী হবে? মেহনতের তরিকা সাহাবা থেকে পাওয়া যাবে ঈমান আনার আদেশ হয়েছে এ আদেশ পূরণের সম্পর্ক মসজিদের সঙ্গে এমন, যেমন নামায আদায়ের সম্পর্ক মসজিদের সঙ্গে আমার এই কথা মনোযোগসহ শুনতে হবে..’ (বয়ান ০৯/৭/২০১৯ ঈ., বাদ ফজর, ২৫ মি. ৩৭ সে. থেকে ২৬ মি. ৮ সে. পর্যন্ত)

এক বয়ানে আরও পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন

میں نے عرض کیا کہ حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم نے ایک نظام قائم کیا تعلیم و تربیت کا، اور اس تعلیم وتربیت کے نظام کو حضور صلی اللہ علیہ وسلم نے عبادت کی طرح مسجد سے جوڑا، نظام تعلیم کو مسجد سے الگ کر دینا تعلیم و تربیت کے درمیان فرق کر دینا ہے، ہماری بات توجہ چاہتی ہے آپ سب سے، کیونکہ تعلیم و تربیت یہ دونوں چيزيں اس طرح متلازم ہیں ایک دوسرے کے ساتھ، کہ تعلیم تربیت کے بغیر نہیں تھی، حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم جو تعلیمی اور تربیتی نظام لائے تھے وہ پورا نظام مسجد سے تھا، پوری طرح مربوط تھا مسجد کے ساتھ۔

আমি আরয করেছি, হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নেযাম কায়েম করেছেন তালীম ও তরবিয়তের এবং তালীম-তরবিয়তের এ নেযামকে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদতের মতো মসজিদের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন তালীমের নেযামকে মসজিদ থেকে পৃথক করা মানে তালীম ও তরবিয়তকে পরস্পর থেকে আলাদা করে দেওয়া আমাদের কথা আপনাদের সবার থেকে মনোযোগের দাবি রাখে কারণ তালীম ও তরবিয়ত এ দুটি বিষয় একটি অপরটির সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত যে, তালীম তরবিয়ত ছাড়া হয় না হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালীম ও তরবিয়তের যে নেযাম নিয়ে এসেছিলেন সেই পুরো নেযাম মসজিদ থেকে ছিল, পরিপূর্ণরূপে যুক্ত ছিল মসজিদের সঙ্গে’ (বয়ান ০২/৭/২০১৯ ঈ., বাদ ফজর, মহারাষ্ট্রের জোড়, ১০ মিনিট থেকে)

তিনি এটাও বলেছেন

حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم نے تربیت کے لیے مسجد کو متعین کیا تھا، زوایا بھی تربیت کے لیے دور نبوت میں نہیں تھے، بعد کی چیزیں ہیں، بہت بعد کی چیز، تربیت کی اصل جگہ مسجد تھی۔

হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরবিয়তের জন্য মসজিদকে নির্ধারণ করেছিলেন তরবিয়তের জন্য খানকা নবীযুগে ছিল না এটা পরবর্তীকালের জিনিস অনেক পরের জিনিস তরবিয়তের আসল জায়গা ছিল মসজিদ’ (বয়ান ০২/৭/২০১৯, ২৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে)

পর্যালোচনা

এ ধরনের কথা সা‘দ সাহেবের বয়ানে অনেক তার এই এক চিন্তাধারার মাধ্যমেই তিনি শরীয়ত, সুন্নত, সীরাতে নববী ও তরিকায়ে সাহাবার মৌলিক চারটি বিধানের মধ্যে পরিবর্তন এনেছেন

ক. ঈমানের হালকা মসজিদের সঙ্গে নির্দিষ্ট করে দেওয়া

খ. তালীমকে মসজিদের সঙ্গে খাস করে দেওয়া

গ. তরবিয়তকে মসজিদের সঙ্গে খাস করে দেওয়া

ঘ. দাওয়াতকে মসজিদের সঙ্গে খাস করে দেওয়া

মাওলানা সা‘দ সাহেবের মতে এসব কাজ মসজিদের বাইরে করা সুন্নত পরিপন্থি এতে নাকি কাজ প্রভাবশূন্য হয় এবং কখনো সওয়াবশূন্যও হয় অথচ শরীয়ত, সুন্নত, সীরাতে নববী, তরিকায়ে সাহাবা ও তরিকায়ে সালাফে কখনো এ চার কাজ এবং নুসরতে দ্বীনের অন্য কোনো কাজ মসজিদের সঙ্গে খাস ছিল না

হাদীস, সীরাত ও ইসলামী ইতিহাস সম্পর্কে যাদের পড়াশোনা আছে তারা জানেন, উল্লেখিত চারটি কাজ মসজিদে, ঘরে, রাস্তায় চলতে চলতে, উটে আরোহণ করে, প্রবাসে নিবাসে, গাছের নিচে, পাহাড়ের উপরে, পাহাড়ের পাদদেশে, মসজিদের দরজায় এককথায় সব জায়গায় হত হাদীস ও সীরাতের কিতাবসমূহ থেকে এ ধরনের কিছু রেওয়ায়েত ও বর্ণনা একত্র করা হয়েছে, যা স্বতন্ত্র কিতাবের রূপ ধারণ করেছে এবং অচিরেই প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ স্বয়ং ‘হায়াতুস সাহাবা’ কিতাবেই এ ধরনের অনেক রেওয়ায়েত বিদ্যমান আছে দাওয়াতের বিষয়ে কথা হল, এটা তো অধিকাংশ সময় মসজিদের বাইরেই হত এটা তো এত স্পষ্ট বিষয় যে, ইতিহাসের সাধারণ তালিবে ইলমেরও তা জানা আছে কেবল সীরাতে ইবনে ইসহাক, সীরাতে ইবনে হিশাম বা হায়াতুস সাহাবা থেকেই দাওয়াতের প্রথম দিকের ইতিহাসের রেওয়ায়েতগুলো পড়লেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ সংক্ষেপ করার জন্য এখানে প্রথমে হযরত মাওলানা সাঈদ আহমাদ খান সাহেব রাহ.-এর মাকাতীব তথা চিঠিপত্রের সংকলন থেকে দুইটি কথা উদ্ধৃত করা হচ্ছে

মাওলানা সাঈদ আহমদ খান রাহ. লেখেন

جب یہ دعوت قائم تھی، سوفی صد مسلمان دعوت دے رہا تھا تو سب شکلیں حقیقت پر قائم تھیں اور ان کے ثمرات دنیا میں بھی ظاہر ہورہے تھے لیکن جب یہ دعوت کم ہوتے ہوتے اور گھٹتے گھٹتے بازاروں، بسوں مکانوں سے صرف مسجد کی چار دیواری میں آئی تو دعوت کے ثمرات بھی ختم ہوتے چلے گئے۔

যখন দাওয়াতের কাজ কায়েম ছিল, (যখন) শতভাগ মুসলমান দাওয়াত দিচ্ছিল তখন দ্বীনের সব কাজ হাকীকতের ওপর কায়েম ছিল এবং তার ফলাফল দুনিয়াতেই প্রকাশ হচ্ছিল কিন্তু যখন এ দাওয়াত কমতে কমতে বাজার, রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি থেকে শুধু মসজিদের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল, তখন দাওয়াতের ফলাফলও শেষ হতে লাগল’ (মাকাতীবে হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ খান, সংকলন : মুহাম্মদ রওশন শাহ কাসেমী, পৃষ্ঠা ৫০, পত্র ২০)

আরেক পত্রে মাওলানা সাঈদ আহমদ খান সাহেব রাহ. লেখেন

آج ہم نے اپنی کم فہمی کی وجہ سے دعوت کا پورا میدان مسجد کو سمجھ لیا، اس سے بھی فتنے پیدا ہوتے ہیں، حضور پاک صلی اللہ علیہ وسلم کی ১৩ سالہ مکی زندگی میں حرم پاک میں نہ تعلیم ہوئی اور نہ وعظ ہوا، بلکہ دار ارقم میں سیکھنا سکھانا ہوا کرتا تھا، اور اسی کو صحابہ اپنے اپنے گھروں میں جاکر رائج کرتے تھے، جیسے ام جمیل حضرت عمر کی بہن کو ان کے شوہر گھر میں پڑھارہے تھے، اور دعوت برابر چل رہی تھی، عورتوں میں بھی مردوں میں بھی۔

اس طرح مصعب بن عمیر کے مقری بن کر مدینہ منورہ جانے سے پہلے مسلمانوں کے لیے کون سی مسجد تھی، اور پھر مدینہ منورہ پہنچنے کے بعد ایک صحابی کا گھر تعلیم کے لیے مقرر ہوا جس میں مصعب بن عمیر ٹھیرے ہوئے تھے، جہاں پر سعد بن معاذ اور اسید بن حضیر اسلام لائے اس وقت کون سی مسجد میں تعلیم ہوتی تھی، اور اسلام اتنا پھیل چکا تھا کہ حضور پاک صلی اللہ علیہ وسلم مکہ مکرمہ سے ہجرت فرماکر قبا میں پہنچے تو پانچ سو صحابہ نے استقبال کیا ہے۔(مکاتیب مولانا سعید احمد خان ، ص ৩৮৭-৩৮৮، مکتوب نمبر ৩৪)

বর্তমানে আমরা আমাদের বুঝের স্বল্পতার কারণে দাওয়াতের পুরো ময়দান মসজিদকে মনে করে নিয়েছি এখান থেকেও ফেতনা তৈরি হয় হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ১৩ বছরের মক্কী যিন্দেগীতে হারাম শরীফে না তালীম হয়েছে না ওয়াজ হয়েছে বরং দারে আরকামে শেখা শেখানোর কাজ হত আর এটাকেই সাহাবীগণ নিজেদের ঘরে গিয়ে প্রচার করতেন যেমন হযরত উমর রা.-এর বোন উম্মে জামীল রা.-কে তার স্বামী ঘরে পড়াতেন আর দাওয়াত চলমান ছিল; নারীদের মধ্যেও, পুরুষদের মধ্যেও

এমনিভাবে মুসআব ইবনে উমাইর রা. কুরআনের শিক্ষক হিসেবে মদীনা মুনাওয়ারায় যাওয়ার আগে মুসলমানদের জন্য কি কোনো মসজিদ ছিল? মদীনা মুনাওয়ারায় পৌঁছার পর এক সাহাবীর ঘর তালীমের জন্য নির্ধারিত হয় যেখানে মুসআব ইবনে উমায়ের রা. অবস্থান করেন সেখানে সা‘দ ইবনে মুআয রা. ও উসাইদ ইবনে হুযাইর রা. ইসলাম কবুল করেন সে সময় কোন্ মসজিদে তালীম হত ?

আর এভাবেই ইসলাম এতটা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা মুকাররমা থেকে হিজরত করে কুবায় পৌঁছলে পাঁচশ সাহাবী তাঁকে ইসতিকবাল করেন এবং তাঁর সঙ্গে কুবা থেকে মদীনা পর্যন্ত যান...’ (মাকাতীবে মাওলানা সাঈদ আহমদ খান, পৃ. ৩৮৭-৩৮৮; পত্র নং ৩৪)

মোটকথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াতের জন্য কোনো পদ্ধতি ও মাধ্যমকে নির্ধারণ করে দেননি যে, ওই বিশেষ পদ্ধতি ও মাধ্যম ব্যতীত অন্য কোনো মাধ্যম বা পদ্ধতি গ্রহণ করলে সেটা খেলাফে সুন্নত হবে তেমনিভাবে দাওয়াতের জন্য কোনো স্থানও নির্ধারণ করে দেননি (উদাহরণস্বরূপ মসজিদ) যে, ওই বিশেষ স্থানের বাইরে অন্য কোনো স্থানে দাওয়াতের কাজ আঞ্জাম দিলে তা খেলাফে সুন্নত হয়ে যাবে বরং এক্ষেত্রে শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে দাওয়াতের জন্য যখন যে স্থান এবং যে মাধ্যম ও পদ্ধতি মুনাসিব ও উপকারী মনে হয়, তখন সে স্থান এবং সে মাধ্যম ও পদ্ধতি গ্রহণ করার অবকাশ রয়েছে

খোদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পরিস্থিতি বিবেচনা করে দাওয়াতের জন্য একেক সময় একেক পদ্ধতি ও স্থান গ্রহণ করেছেন উদাহরণস্বরূপ যখন কুরআন কারীমের আয়াত

وَ اَنْذِرْ عَشِیْرَتَكَ الْاَقْرَبِیْنَ .

[(হে নবী!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করুন সূরা শুআরা (২৬) : ২১৪]

নাযিল হয় তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ে ওঠে واصباحاه واصباحاه বলে কুরাইশদের একত্র করেন এবং তাদেরকে আখেরাতের আযাবের বিষয়ে সতর্ক করেন (দেখুন : সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৯৭১, ৪৭৭০; সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ সালেহী ২/৩২৩-৩২৪; হায়াতুস সাহাবা ১/৭৩-৭৪)

এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী উক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এটাও করেছেন যে, তিনি) আলী রা.-কে সংক্ষিপ্ত দাওয়াতের ব্যবস্থা করত বনু আবদুল মুত্তালিবকে একত্র করার নির্দেশ দিলেন আলী রা. দাওয়াতের ব্যবস্থা করলেন কেবল একজনের পরিমাণ খাবার ছিল কিন্তু নবীজীর মোজেযা, ওই সামান্য খাবার প্রায় চল্লিশজন মানুষ তৃপ্তিসহ খেয়েছিল; এরপরও কিছু খাবার রয়ে গিয়েছিল এই মেহমানদারির পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ঈমানের দাওয়াত দিলেন (দেখুন : সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ২/২৩৪ ইবনে সা‘দ, বাইহাকী ও আবু নুআঈমের সূত্রে; ফাতহুল বারী ৮/৩৬১, কিতাবুত তাফসীর (সূরা শুআরা), ৪৭৭০ নং হাদীসের অধীনে)

তালীমের জায়গা ও পদ্ধতি

একই অবস্থা তালীমের শরীয়ত প্রদত্ত উসূল ও আহকামের গণ্ডিতে থেকে এর জন্য যে কোনো মুবাহ স্থান ও মুবাহ পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে

এখন নমুনাস্বরূপ কেবল নিচের রেওয়ায়েতগুলো লক্ষ করুন

১. মদীনার সত্তরজন কারী, যারা মুসলমানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য হতেন তাদের ঘটনা প্রসিদ্ধ এখানে কেবল সংশ্লিষ্ট অংশ উল্লেখ করা হচ্ছে এ সাহাবীগণের নিয়ম ছিল রাত বাড়ার পর তারা মসজিদ থেকে বের হতেন, তবে ঘরে যেতেন না বরং

فَكَانُوا إِذَا جَنَّهُمُ اللَيْلُ، انْطَلَقُوا إِلَى مَعْلَمٍ لَهُمْ بِالْمَدِينَةِ، فَيَدْرُسُونَ فِيهِ الْقُرْآنَ حَتَّى يُصْبِحُوا.

অর্থাৎ তারা রাতে মদীনার এক বিশেষ স্থানে (কোনো উপযুক্ত স্থানে) একত্র হতেন এবং ফজর পর্যন্ত সেখানে কুরআন শিখতেন এবং শেখাতেন মুসনাদে আহমাদ, খ. ৩, পৃ. ১৩৭ (১২৪০২); মুসনাদে আবদ ইবনে হুমায়েদ, হাদীস ১২৭৭; তাবাকাতে ইবনে সা‘দ, খ. ৩, পৃ. ৪৭৭; শরহুস সুন্নাহ, বাগাভী, খ. ১৩, পৃ. ৩৯৫

এ রেওয়ায়েত হায়াতুস সাহাবাতেও আছে দেখুন খ. ২ পৃ. ১৪, অধ্যায় : জিহাদ

২. আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রা. বদর যুদ্ধের পর হিজরত করে মদীনায় এসে তিনি কোথায় অবস্থান করেন?

ইমাম ইবনে সা‘দ রাহ. লেখেন

فنزل دار القراء وهي دار مخرمة بن نوفل.

তিনি দারুল কুররায় (কুরআন ও কিরাত বিশেষজ্ঞগণের তালীম ও অবস্থানের ঘর) অবস্থান করেন সেটা ছিল মাখরামা ইবনে নওফেলের ঘর তাবাকাতে ইবনে সা‘দ, খ. ৪, পৃ. ৪২২ (আততাবাকাতুস সানিয়া মিনাল মুহাজিরীনা ওয়াল আনসার)

মদীনায় আগমনকারী ব্যক্তিদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের কাছে সোপর্দ করতেন সাহাবীগণ তাদেরকে কুরআন কারীমেরও তালীম দিতেন এ তালীম ঘরেও হত

এ প্রসঙ্গে কেবল একটি রেওয়ায়েতের উদ্ধৃতি দেখুন : মুসনাদে আহমাদ (২২৭৬৬); হায়াতুস সাহাবা, খ. ৪, পৃ. ৩০৭

৩. খোলাফায়ে রাশেদীন, বরং নবীযুগেই শিশুদের জন্য মকতবের ব্যবস্থা ছিল বাচ্চাদের মকতব মসজিদে নয়, বরং আলাদা জায়গায় হত এর নাম ছিল কুত্তাব নবীযুগে যে শিশুদের জন্য মকতব ছিল, এর আলোচনা মুসনাদে আহমাদে ৩৬৯৭ নং হাদীসে বিদ্যমান আছে

আর খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবিয়ীনের যুগের মকতবের আলোচনা তো হাদীস, সীরাত ও তারীখের কিতাবসমূহে অনেক প্রসিদ্ধ উদাহরণস্বরূপ দেখুন

তহাবী, খ. ১, পৃ. ২৬৪; হায়াতুস সাহাবা, খ. ৪, পৃ. ২৪১; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ১০৪৪; সহীহ বুখারী, দিয়ত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : من استعان عبدا أو صبيا; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, খ. ৪, পৃ. ৪০৪, ২৯২, খ. ৬, পৃ. ২৩৮; তাবাকাতে ইবেন সা‘দ, খ. ৪ পৃ. ৪১১, ইবনে উমর রা.-এর জীবনী; তাহযীবুল কামাল, খ. ৩, পৃ. ৪২৮

৪. মাসতূরাতের তালীম ঘরে হত এটা তো কুরআন কারীম, হাদীস শরীফ ও সীরাতের ঘটনাবলি দ্বারা এত প্রসিদ্ধ যে, এ সম্পর্কে আলাদা করে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই

৫. কোনো কোনো সাহাবীর ঘরে সর্বস্তরের তালীম হত বিশেষত উঁচু স্তরের তালীমের এত চর্চা হত যে, সে ঘরটাই যেন উচ্চতর শিক্ষার মাদরাসা ছিল বরং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর ঘরের নামই ছিল দারুল কুররা সেখানে তাফসীরের দরসও হত আবু মূসা আশআরী রা.-এর ঘরে তালীমের ব্যবস্থা ছিল একদিন তো পুরো কুরআন পড়েছে এমন শাগরিদদের একত্র করা হল দেখা গেল তারা তিন শ’র কাছাকাছি

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর ঘর হাদীস তাফসীর ও ফিকহের তালীমের বড় মারকায ছিল আর স্বয়ং ইবনে আব্বাস রা. তার ইলম হাসিলের যে ইতিহাস শুনিয়েছেন তা এই যে, তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঘরে গিয়ে গিয়ে ইলম হাসিল করতেন দরজায় বসে অপেক্ষা করতেন তার আসার সংবাদ পৌঁছাতেন না সাহাবী ঘর থেকে বের হলে তার নিকট ইলম শিখেছেন

এ সম্পর্কিত রেওয়ায়েত জানার জন্য দেখুন সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৬১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, খ. ১৩, পৃ. ৩৮৭; আলমাদখাল ইলা ইলমিস সুনান, ইমাম বাইহাকী, খ. ২, পৃ. ৪৯১; হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নুআঈম, খ. ১, পৃ. ২৫৭; হায়াতুস সাহাবা, খ. ৪, পৃ. ৩১২; আদ দুররাতুস সামীনা ফী আখবারিল মাদীনা, ইবনুন নাজ্জার, পৃ. ১১৭; আলমাগানিমুল মুতাবা ফী মাআলিমি তবা, মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী, খ. ১, পৃ. ৪৩৯; ওফাউল ওফা, সামহূদী, খ. ২, পৃ. ৯২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৯৯২; হিলইয়াতুল আউলিয়া, খ. ১, পৃ. ৩২০-৩২১; তাহযীবুল আসার, তবারী, খ. ১ পৃ. ১৮০; আলখিলাফিয়্যাত, বাইহাকী, খ. ১ পৃ. ২৬৯; সুনানে দারেমী, বর্ণনা ৫৯০

৬. মাওলানা সা‘দ সাহেবের দাবি অনুযায়ী সুফফা শুধু ছিল ‘কিয়ামগাহ’ অর্থাৎ অবস্থানস্থল, সেটা দরসগাহ তথা তালীমের স্থান ছিল না তালীমের স্থান ছিল মসজিদ কিন্তু হাদীস ও সীরাত থেকে আমরা জানতে পারি, সুফফাতেও ঈমানী মুযাকারা হত, কুরআনের তালীম হত এ সম্পর্কে দুইটি হাদীস দেখুন

ক. আউস সাকাফী রা. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সুফফায় বসা ছিলাম তিনি আমাদেরকে ওয়াজ করছিলেন এবং আমাদের উপদেশ দিচ্ছিলেন হাদীসের শব্দ এই

إنا لقعود عند رسول الله صلى الله عليه وسلم في الصفة وهو يقص علينا ويذكرنا..

(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬১৬৩)

খ. আনাস রা. বলেন, আবু তালহা রা. উম্মে সুলাইম রা.-এর কাছে এসে বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তিনি আসহাবে সুফ্ফাকে সূরা নিসা পড়াচ্ছেন ক্ষুধার কারণে তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল...

(আনাস রা. বলেন, তখন) আবু তালহা আমাকে ডেকে বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর সাথিদেরকে সুফ্ফায় পড়াতে দেখেছি

)إِنِّي تَرَكْتُهُ مَعَ أَصْحَابِهِ فِي الصُّفَّةِ يُقْرِئُهُمْ(

তুমি তাঁর নিকট যাও এবং তাঁকে নিয়ে আস অন্য কাউকে সঙ্গে আনবে না কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে নিয়ে আসলেন (আলমু‘জামুল কাবীর, তবারানী, খ. ২৫, পৃ. ১০৬, হাদীস ২৭৫; আলমু‘জামুল আওসাত, তবারানী, খ. ৩, পৃ. ২৬৬, হাদীস ৩১০৫)

)وقال الهيثمي في المجمع: رواه الطبراني في الأوسط وإسناده حسن.(

ওয়াজ, নসীহত, কুরআনের তালীম সবকিছুই সুফফায় হত কিন্তু সা‘দ সাহেব এক নিশ্বাসে সব অস্বীকার করে ফেললেন!

যাহোক, মাওলানা সা‘দ সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী যেহেতু সুফফা ছিল মসজিদের বাইরে এবং সেটা ছিল কেবল কিয়ামগাহ তথা অবস্থানস্থল, সেহেতু এই দুই হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, ওয়াজ-নসীহত, মাসায়েল শেখানো, কুরআন শেখানো এইসব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে মসজিদের ভেতরে করেছেন, তেমনি মসজিদের বাইরেও করেছেন এমনকি মসজিদের একেবারে সন্নিকটে থাকা সত্ত্বেও তালীম ও তাযকীরের জন্য মসজিদের ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি

৭. এ বিষয়ে একটু চিন্তা করুন কুরআন কারীমের ১১৪টি সূরা এবং ৬২৩৬ আয়াতের কতটুকু মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী বা অন্য কোনো মসজিদে নাযিল হয়েছে আর কতটুকু অংশ মসজিদের বাইরে? অনেক সূরা ও আয়াত নাযিল হওয়ার জায়গাও রেওয়ায়েতসমূহে উল্লেখ আছে সেগুলো হাদীস, সীরাত, তাফসীর ও শানে নুযূলের কিতাবসমূহে দেখা যেতে পারে সেসব রেওয়ায়েত থেকেও কিছু অনুমান হবে যে, কত আয়াত মসজিদের বাইরে নাযিল হয়েছে

৮. এ বিষয়েও একটু ভাবুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসমস্ত হাদীস ইরশাদ করেছেন, সাহাবায়ে কেরাম রা. ও তাবেয়ীন যেসমস্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেগুলোর শতকরা কত সংখ্যক মসজিদে হয়েছিল আর কত সংখ্যক মসজিদের বাইরে? অনেক রেওয়ায়েতে হাদীস বর্ণনার জায়গারও উল্লেখ আছে সেগুলোতে নজর বুলালে বোঝা যাবে, মসজিদের বাইরে কত জায়গায় হাদীস ইরশাদ করা হয়েছে ও বর্ণনা করা হয়েছে

৯. সাহাবায়ে কেরাম নবীযুগে ও পরবর্তীতে ঈমানের হালকা কি শুধু মসজিদে করতেন? কিছুতেই নয় ঈমানী মুযাকারা, ঈমানী মজলিস, ঈমানী হালকা, ঈমানী কথা সব জায়গায় হত মসজিদেও হত কিন্তু এটাকে মসজিদের সঙ্গে খাস করা এবং মসজিদের বাইরে হলে সেটাকে প্রভাবশূন্য আখ্যা দেওয়া কিংবা গায়রে মাসনূন বা খেলাফে সুন্নত বলা একদম বাস্তবতা পরিপন্থি এবং এ ধরনের চিন্তা একেবারেই বেদআত ও গোমরাহী

ঈমানী মুযাকারার জন্য মানুষকে গাশত করে মসজিদে নিয়ে আসার বিষয়ে মাওলানা সা‘দ সাহেব সাধারণত যেসব রেওয়ায়েত দিয়ে দলীল দেন, সেগুলোর কোনোটাতেই মসজিদের কথা নেই কিন্তু সা‘দ সাহেব ব্যাখ্যা করার সময়, কখনো তরজমা করার সময় নিজের পক্ষ থেকে মসজিদের কথা যুক্ত করে দেন এটাকেই বলে শরয়ী দলীলের ভুল ব্যবহার এবং শরয়ী দলীলের বিকৃতি

উদাহরণস্বরূপ তিনি মুআয ইবনে জাবাল রা.-এর বাণী

اجلس بنا نؤمن ساعةً

উল্লেখ করেন অথচ এতে মসজিদের কথা একদম নেই অতএব এ বসা যে কোনো জায়গায় হতে পারে এটাকে জোরপূর্বক কোনো দলীল ছাড়া মসজিদের সঙ্গে যুক্ত করলে সেটা হবে নিজের পক্ষ থেকে হাদীসের মধ্যে সংযোজন করা

উপরন্তু সা‘দ সাহেব বলেন, ইমাম বুখারী রাহ. মুআয ইবনে জাবাল রা.-এর এ আমল দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মসজিদে ঈমানের হালকা কায়েম করা এটা ঈমান বাড়ার মাধ্যম (৯/৭/২০১৯ বাদ ফজর, ৩৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থেকে; ২০/১০/২০২২ মালয়েশিয়ার ইজতেমা, ১৪ মিনিট থেকে)

অথচ সহীহ বুখারীতে এ বাণীকে ঈমান বৃদ্ধির দলীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু তাতে মসজিদের কথা একেবারে নেই এখানে মুআয রা.-এর সঙ্গে ইমাম বুখারী রাহ.-এর নামেও গলত কথা বলা হল

আসওয়াদ ইবনে হেলাল রাহ. মুআয রা.-এর এই ঘটনা আরেক রেওয়ায়েতে আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন সেখানে তিনি বলেন

كَانَ مُعَاذٌ يَقُولُ لِرَجُلٍ مِنْ إخْوَانِه: اجْلِسْ بِنَا فَلْنُؤْمِنْ سَاعَةً، فَيَجْلِسَانِ يَتَذَاكَرَانِ اللهَ وَيَحْمَدَانِهِ.

অর্থাৎ মুআয রা. তাঁর কোনো ভাইকে বলতেন, আমার সঙ্গে বসো, আমরা কিছুক্ষণ ঈমান তাজা করি! তখন উভয়ই বসে আল্লাহকে স্মরণ করতেন এবং তাঁর প্রশংসা করতেন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৫/৬০২, বর্ণনা ৩১০০২

দেখুন, এখানে কোথায় আছে গাশত করে মসজিদে নিয়ে আসার কথা?

এমনিভাবে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রা.-এর কথার উদ্ধৃতি দেন অথচ তাতে আছে

تعال، نؤمن بربنا ساعة.

আসো, কিছু সময় আমাদের রবের প্রতি ঈমান আনি (অর্থাৎ ঈমান তাজা করি)’

এখানে একথা নেই যে, তিনি এ ধরনের মজলিসের জন্য মানুষকে মসজিদে নিয়ে আসতেন রেওয়ায়েতে মসজিদের উল্লেখ নেই

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে রাওয়াহা রা.-এর কথাকে সমর্থন করে বলেছেন

يرحم الله ابن رواحة، إنه يحب المجالس التي تباهي بها الملائكة.

ইবনে রাওয়াহাকে আল্লাহ রহম করুন সে ওসব মজলিসকে ভালবাসে, যেগুলোকে নিয়ে ফেরেশতাগণ গর্ব করেন

এখানেও মজলিসের কথা আছে; মসজিদের কথা নয় মাওলানা সা‘দ সাহেব হাদীসের তরজমা করতে গিয়ে নিজের পক্ষ থেকে ‘মসজিদ’ শব্দ বাড়িয়ে দিয়েছেন (দ্র. ০২/৭/২০১৯ ঈ., বাদ ফজর বয়ান, ৩৯ মি. থেকে)

এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে (১৩৭৯৬) আছে সেখানে দেখুন; তাতে মসজিদের কথা নেই

তেমনিভাবে লালাকাঈর কিতাবে আছে

عن شريح بن عبيد أن عبد الله بن رواحة كان يأخذ بيد الرجل من أصحابه، فيقول: قم بنا نؤمن ساعة، فيجلس في مجلس ذكر.

অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. তাঁর সাথিদের কারো হাত ধরে বলতেন, আমার সাথে ওঠো! কিছুক্ষণ ঈমান তাজা করি এরপর তিনি সেই সাথিকে নিয়ে যিকিরের কোনো মজলিসে বসে যেতেন শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাহ, লালাকাঈ ৫/১০১৫, বর্ণনা ১৭০৮

আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. সাথিকে নিয়ে মসজিদেরই কোনো মজলিসে বসতেন, নাকি যিকিরের যে কোনো মজলিসে বসে যেতেন চাই সেটা মসজিদের ভেতরে হোক কিংবা মসজিদের বাইরে হোক একথা রেওয়ায়েতে বর্ণিত নেই এটাকে দলীল ছাড়া নিশ্চিতভাবে মসজিদেরই কোনো মজলিস আখ্যা দেওয়া তাহাক্কুম (تحكم) তথা অন্যায় জবরদস্তি, যা নাজায়েয আবার দলীলের ভুল ব্যবহারও রেওয়ায়াতের মধ্যে যদি দলীলবিহীন কিছু নিজের পক্ষ থেকে বাড়িয়ে অতঃপর সে রেওয়ায়েত দিয়ে ইসতিদলাল তথা প্রমাণ পেশ করে, তাহলে তো এই ইসতিদলাল রেওয়ায়েত দিয়ে হল না; বরং নিজের মত বা কথাকেই দলীল হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হল

উমর রা.-এর ঘটনাতেও এমনই আছে

قُمْ بِنا نَزْدَدْ إيماناً

আমাদের সাথে ওঠো; আমরা ঈমান বাড়াই আসসুন্নাহ, খাল্লাল ৫/৪৯ (১৫৮৪); আশশরীয়াহ, আজুররী ২/৬৯-৭০ (৩৭); শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ১/৬৯-৭০

উমর রা.-এর এ বক্তব্য আরও কিতাবে আছে কিন্তু কোথাও এ কথা নেই যে, তিনি একথা বলে মানুষকে মসজিদে নিয়ে আসতেন অবশ্যই তাদেরকে নিয়ে তিনি ইলম ও যিকিরের কোনো মজলিসে বসে থাকবেন তবে সে মজলিস মসজিদে ছিল এমন কথা কোনো বর্র্ণনায় নেই

এ অবস্থায় تعال বা قُمْ (আসো) অথবা মজলিস শব্দ দেখেই সেটাকে মসজিদের মজলিস আখ্যা দেওয়া, এরপর এ দাবি করা যে, সাহাবায়ে কেরাম রা. শুধু মসজিদেই ঈমানী হালকা কায়েম করতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ঈমানের মজলিসের জন্য মসজিদকেই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন এটা একদম অন্যায় জবরদস্তি ও সিনাজুরি সেজন্য মাওলানা সা‘দ সাহেবের এই ইসতিদলাল বাতিল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নেই

মাওলানা সা‘দ সাহেব তার একাধিক বয়ানে এটাও বলেছেন

مسجد سے متعلق یقین کا سیکھنا ایک ایسا معمول تھا صحابۂ کرام کا، اور خلفائے راشدین کا کہ جب مدینہ منورہ میں آگ لگی اور پہاڑ سے آگ نکل کر مدینے میں پھیل گئی، تو عمر رضی اللہ عنہ سب سے پہلے دوڑے مسجد کی طرف، وہاں تمیم داری نماز پڑ رہے ہیں، فرمایا، تمیم، یہ آگ نکلے ہیں، اس کو پہاڑ میں داخل کر کے آؤ، حضرت تمیم داری نے عرض کیا، امیر المومنین یہ ایک چنگاری ہے، اس چنگاری کو پکڑ کر پہاڑمیں داخل کر دینا کوئی مشکل کام نہیں، لیکن ...۔

মসজিদ থেকে ইয়াকীন শেখা সাহাবায়ে কেরাম ও খোলাফায়ে রাশিদীনের এমন এক রীতি ছিল যে, যখন মদীনা মুনাওয়ারায় আগুন লাগল এবং পাহাড় থেকে আগুন বের হয়ে মদীনায় ছড়িয়ে পড়ল তখন উমর রা. সর্বপ্রথম মসজিদে এলেন সেখানে তামীম দারী রা. নামায আদায় করছিলেন, হযরত উমর রা. বললেন, তামীম! আগুন বের হয়েছে, আগুন পাহাড়ে রেখো এসো হযরত তামীম দারী রা. বললেন, আমীরুল মুমিনীন! এটা একটা অগ্নিশিখা এ অগ্নিশিখাকে নিয়ে পাহাড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া কোনো কঠিন কাজ নয়, কিন্তু...’ (বয়ান ০২/৭/২০১৯ ঈ., বাদ ফজর, মহারাষ্ট্রের জোড়, ১৪ মি. ৩০ সে. থেকে ১৫ মি. ৪০ সে. পর্যন্ত)

আরেক বয়ানে তিনি বলেন

آگ نکلی پہاڑ سے، آگ نکلی پہاڑ سے، سارے مدینہ کو آگ نے گھیر لیا، سنۂ ھجری کے مسلمان تمیم داری، وہ مسجد میں نماز پڑھ رہے تھے، حضرت عمر رضی اللہ عنہ آگ کی خبر سن کر مسجد کی طرف آئے، چلو مسجد، کیا ہوا کہ آگ نکلی ہے؟ حالانکہ آگ نکلی ہے تو پانی کا انتظام کریں، مٹی کا انتظام کریں، آگ بجھانے کے اسباب اختیار کریں کہ نہیں مسجد چلو، وہاں تمیم داری نماز پڑھ رہے تھے، کہا تمیم، یہ آگ نکلی ہے پہاڑ سے؟ ا سے پہاڑ میں داخل کر آؤ۔

আগুন বের হল পাহাড় থেকে আগুন বের হল পাহাড় থেকে পুরো মদীনায় আগুন ছড়িয়ে পড়ল নবম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণকারী তামীম দারী রা., তিনি মসজিদে নামায পড়ছিলেন হযরত উমর রা. আগুনের সংবাদ শুনে মসজিদের দিকে আসলেন চল মসজিদে কী হয়েছে? আগুন বের হয়েছে আগুন বের হয়েছে, তো পানির ব্যবস্থা কর, মাটির ব্যবস্থা কর, আগুন নেভানোর উপকরণ গ্রহণ কর না, মসজিদে চল সেখানে তামীম দারী রা. নামায পড়ছিলেন বললেন, তামীম! এ আগুন পাহাড় থেকে বের হয়েছে এটাকে পাহাড়ের মধ্যে ঢুকিয়ে আসো...’ (বয়ান ০৩/৯/২০১৯ ঈ., বাদ ফজর, মিনিট ৩১)

আগুন লাগার এ ঘটনা বাহশালের ‘তারিখে ওয়াসেত’ (পৃ. ২৩১), বাগাভীর ‘মু‘জামুস সাহাবা’ (খ. ১, পৃ. ৩৭১), আবু নুআঈমের ‘দালায়িলুন নুবুওয়াহ’ (পৃ. ৫৮৩, হদীস ৫৩৪), বাইহাকীর ‘দালায়িলুন নুবুওয়াহ (খ. ৬, পৃ. ৮০), ইবনে আসাকিরের ‘তারিখে দিমাশক’ (খ. ১১, পৃ. ৭৮), এরপর যাহাবীর ‘সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা’ (খ. ২, পৃ. ৪৪৬), ইবনে হাজারের ‘আলইসাবা’ (খ. ৬, পৃ. ২৩৮) এবং ‘হায়াতুস সাহাবা’য় (খ. ৪, পৃ. ২৪) আছে

কিন্তু কোনো রেওয়ায়েতে এবং কোনো কিতাবে এ কথা নেই যে, আগুনের সমস্যা সমাধানের জন্য উমর রা. মসজিদের দিকে গিয়েছিলেন রেওয়ায়েতে আছে, উমর রা. তামীম দারী রা.-এর কাছে তার ঘরে গিয়েছিলেন তামীম দারী রা. সে সময় মসজিদে ছিলেনই না তিনি মাগরিব পড়ে দুইজন মেহমান নিয়ে ঘরে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তাদের মেহমানদারি করছিলেন

এভাবে নিজ থেকে কথা বানিয়ে যদি রেওয়ায়েতে যুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে কি রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল দেওয়া হল, নাকি নিজের বানানো রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল দেওয়া হল?

সা‘দ সাহেব ঘটনাকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তাতে শ্রোতাদের মনে হবে, বাস্তবেই কোথাও আগুন লাগলে সেটাকে নেভানোর ব্যবস্থা করার আগে মসজিদে যাওয়াই সুন্নত এবং এটাই ছিল খোলাফায়ে রাশিদীনের তরিকা অথচ বিষয়টা এমন নয় মুমিন সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করে বিপদাপদে আল্লাহর দিকে রুজু হয় কিন্তু এর নিয়ম এটা নয় যে, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা বাদ দিয়ে মসজিদে চলে যাবে

এ ঘটনায় আগুন কোনো ঘর বাড়ি বা বাগানে লাগেনি অতএব এটাকে আগুন লাগা ও আগুন ছড়িয়ে যাওয়া শব্দে ব্যক্ত করা, এরপর এ কথা বলা যে, এটাকে নেভানোর ব্যবস্থা করার পরিবর্তে উমর রা. মসজিদে গিয়েছেন এটা একদম বানানো কথা

(চলবে ইনশআল্লাহ)

 

 

টীকা :

১. মাওলানা সা‘দ সাহেব পরবর্তীতে তার কোনো বয়ানে এটাও বলেছেন যে, দাওয়াত মসজিদের বাইরের আমল যেমনিভাবে আযান একটি দাওয়াত এবং তা মসজিদের বাইরে হয় একথা বলা সত্ত্বেও তিনি তার এই চিন্তার ওপরই অটল আছেন যে, গাশতের মাকসা‘দ কেবল কথা পৌঁছে দেওয়া বা দাওয়াত দিয়ে চলে আসা নয়, বরং মানুষকে দাওয়াত দিয়ে তার পরিবেশ থেকে মসজিদের পরিবেশে নিয়ে আসা জরুরি অথচ এই দাবিটি সম্পূর্ণ দলীলবিহীন

২. দাওয়াত কখনো কখনো মসজিদে হারামেও হয়েছে তবে অধিকাংশ সময় মসজিদের বাইরেই হয়েছে

৩. বরং দারুল আরকামের আগেও কত সাহাবী ইসলাম কবুল করেছেন! তাদের দাওয়াত ও তালীম যখন যেখানে সহজ ও সম্ভব ছিল সেখানে হয়েছে

 

advertisement