Safar 1447   ||   August 2025

ফিলিস্তিন : দুটি নিবন্ধ

ওয়াসআতুল্লাহ খান

গাজার ত্রাণ-শিকার কেন্দ্রসমূহ

ইহুদীদেরকে মালগাড়িতে তোলার জন্য এই মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হত যে, তাদেরকে নতুন এক বসতিতে পুনর্বাসন করা হবে, যেখানে সব মৌলিক সুবিধা আছে যাতায়াতের পাথেয় হিসেবে প্রতি পরিবারের জন্য মাখন, মধু, পাউরুটি, বিস্কুটভর্তি থলে দেওয়া হবে ভয় ও ক্ষুধার তাড়ণায় মানুষ অনেক সময় খুনির ফাঁদে পড়ে যায় যেমন ঘাস-লতার লোভ দেখিয়ে মেষ-ছাগলদের জবাইখানায় নিয়ে যাওয়া হয় এরপর মালগাড়িতে ওঠা ঐসব দুর্ভাগাদের আর কোনো খবর পাওয়া যায় না

জাতি নিধনের নাৎসি মডেলটিই ইসরাইল ফিলিস্তিনে প্রয়োগ করছে যার এক ক্ষুদ্রতম দৃষ্টান্ত হল, ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে দিয়ে, ইসরাইল ও আমেরিকা গাজায় ত্রাণের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়া ক্ষুধার্ত মানুষদের বেষ্টনীবদ্ধ করার জন্য ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামের এক যৌথ মৃত্যুফাঁদ তৈরি করেছে

মে মাসের শেষ দিকে চালু হওয়া জিএইচএফ-এর তিনটি ‘ত্রাণ কেন্দ্রের’ দিকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনী যখন ছুটে যাচ্ছিল তখন আশেপাশে থাকা সশস্ত্র ইসরাইলী সেনারা জন্তুর মতো নিশানা করে তাদের হত্যা করে এর মধ্যে এমন শিশুও আছে, যাদের পরিবারের সব বড় সদস্য মারা গেছে এবং তাদের মা-বোনেরা তাদেরকে ত্রাণ আনতে পাঠিয়েছিল কিন্তু ত্রাণের ব্যাগের বদলে তারা তাদের মৃতদেহ ফিরে পেয়েছে বড় ও শিশুদের অনেকে তো এ অবস্থায় গুলির শিকার হয়েছে যে, মৃত্যুর পরও মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে ছিল খালি থলে

তিন মাস আগেও গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নাম কেউ শোনেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় যে, জিএইচএফ আসলে ইসরাইল ও আমেরিকার যৌথ ‘ফ্রন্ট কোম্পানি’ যার প্রধান হল ফিল রাইলি নামের এক ব্যক্তি যে মার্কিন সিকিউরিটি কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিল যে কোম্পানি আমেরিকার ইরাক দখলের পর বহু গণহত্যায় জড়িত ছিল

গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় অংশীদার হল ‘ইউজি সলিউশনস’ নামের একটি আমেরিকান কোম্পানি যাকে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলাকালে গাজাকে দুই ভাগ করা হলে নেটজারিম সামরিক করিডোরে শরণার্থী ফিলিস্তিনীদের তল্লাশির কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এর বদলে কোম্পানিটির প্রতি প্রহরী দৈনিক ১ হাজার ১০০ ডলার মজুরি পেত

প্রায় দেড় মাস আগে জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনটি কেন্দ্রে ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনী নিহত ও চার হাজারের বেশি আহত হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রায় অর্ধেকই হল শিশু

ত্রাণের নামে এসব মৃত্যু-কেন্দ্রগুলোর বিষয়ে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রগুলোর ভেতরে এবং বাইরে ছুরি ও পিস্তলধারী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ঘোরাফেরা করে কোনো উপায়ে ত্রাণ সংগ্রহে সক্ষম হওয়া ক্ষুধার্ত লোকদের থেকে তারা জিএইচএফ-এর কর্মী ও ইসরাইলী সেনাদের সামনেই এই ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় এবং পরে কালোবাজারে তা বিক্রি করে ক্ষুধার্ত ত্রাণ প্রত্যাশীদের সাথে এই সন্ত্রাসীদের ঝগড়া বাঁধলে ইসরাইলী সেনা ও জিএইচএফ-এর সশস্ত্র প্রহরীরা গুলি ছুঁড়তে থাকে

এখন পর্যন্ত ইসরাইলের নীতি হল, শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণ এবং নিজের অঞ্চলে তাদের অনুপ্রবেশ ঠ্যাকানোর জন্য গুলি চালানো যেন ত্রাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ইসরাইলী সৈন্যরা হামাসের যেকোনো আকস্মিক সশস্ত্র হামলা থেকে নিরাপদ থাকে

কিন্তু গত সপ্তাহে থলের বিড়াল যেন বেরিয়েই এল প্রভাবশালী ইসরাইলী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ ইসরাইলী সেনাদের সাক্ষাৎকারসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এতে বলা হয়েছে, ত্রাণ প্রত্যাশী নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয় এ সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেনাবাহিনীর প্রসিকিউটর দপ্তর উচ্চ কমান্ডের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে

অনেক ইসরাইলী সৈন্য হারেৎজকে জানিয়েছে, এই ফিলিস্তিনীরা তাদের জন্য কোনো হুমকি নয় তবুও তাদেরকে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত পুলিশি উপায় (লাঠি, টিয়ার গ্যাস, রাবারের গুলি, জল কামান ইত্যাদি) ব্যবহার না করে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয় আর ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে মেশিনগান, মর্টার লঞ্চার এমনকি ট্যাংকের গুলিও রয়েছে

একজন সৈন্য পত্রিকাটিকে জানিয়েছে, ত্রাণ প্রত্যাশী ফিলিস্তিনীদের ভিড় হাঁসের ঝাঁকের মতো হয় আমি যেখানে দায়িত্বরত ছিলাম, সেখানে এক দিনে পাঁচজনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে মারা হয়েছিল আমার সহকর্মীদের কাছে এমনও শুনেছি, অন্যান্য ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে সৈন্যরা নিজেদের মধ্যে এ বাজি পর্যন্ত ধরে যে, তাদের কে আজ কয়জনকে মারতে পারে

অনেক আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ একে সরাসরি যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছেন যে, এই অপরাধে  ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ-ও শামিল কারণ তারা ত্রাণ প্রত্যাশীদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছে করেই ত্রাণ বিতরণ করছে যা অপরাধে অংশীদার হওয়ার সমান

পরিতাপের বিষয় এই যে, ট্রাম্প প্রশাসন জিএইচএফ-এর এখন পর্যন্ত চলমান ‘চমৎকার কার্যক্রমে’ (!) সন্তুষ্ট হয়ে, প্রাণঘাতী এই ত্রাণ বিতরণের জন্য গত সপ্তাহে আরও ৩০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য অনুমোদন করেছে

২ মার্চের পর থেকে গাজার ফিলিস্তিনীদের কাছে আন্তর্জাতিক কোনো খাদ্য সরবরাহ পৌঁছায়নি (যে রাষ্ট্র তাদের না খাইয়ে মারছে, সে রাষ্ট্রই ত্রাণ বিতরণের নামে তাদের হত্যা করে চলেছে)

ফিলিস্তিনীদের সামনে এখন দুটি পথ হয় ক্ষুধায় মারা পড়বে অথবা ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলী সেনার গুলিতে মরবে কারণ কালোবাজারে প্রতি কেজি আটার দাম ২৫ থেকে ৩০ ডলার বেশিরভাগ মানুষেরই তা ক্রয়ের ক্ষমতা নেই অনেকেই সামান্য মসুর ডাল কোনো উপায়ে সংগৃহীত পানিতে ফুটিয়ে স্যুপের মতো দিনে একবার খেয়ে বেঁচে আছেন জিএইচএফ-এর ত্রাণ কেন্দ্র থেকে যে ব্যাগ পাওয়া যায়, তাতে পাস্তা থাকলেও শিশুদের জন্য কোনো দুধ থাকে না

ত্রাণ সংগ্রহের জন্য আসা অনেকেই বলেছেন, এই ত্রাণ কেন্দ্রগুলো হল মৃত্যুর ফাঁদ তবুও আমরা ১৫-২০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে এই ভেবে আসি যে, ক্ষুধায় ধুকে ধুকে মরা কিংবা কাউকে মরতে দেখার চেয়ে গুলি বা গোলার আঘাতে তৎক্ষণাৎ মরে যাওয়াই ভালো!

 

লক্ষ্যবস্তু এবার কাতার

দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলার দুই দিন পর ৯ অক্টোবর ২০২৩ সালে মিথ্যাটি প্রথমবার সামনে আসে ইসরাইলী প্রশাসন দাবি করেছিল, হামাস যোদ্ধারা ৪০টি শিশুর শিরশ্ছে করেছে এবং বেশ কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করেছে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চোখ বুজে এসব অভিযোগ তোতাপাখির মতো আওড়েছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত এই অভিযোগের পক্ষে একটি প্রমাণও তারা তুলে ধরতে পারেনি এটি ছিল এক নির্লজ্জ মিথ্যাচার খোদ ইসরাইলীরাও এখন তা উচ্চারণ করতে লজ্জা পায়

গাজার হাসপাতালগুলো এই বলে ধ্বংস করা হয়েছে যে, এগুলো আসলে হাসপাতাল নয়; হামাসের  গোপন নিয়ন্ত্রণকক্ষ এসব হাসপাতালে হামাস অস্ত্র মজুদ করে এবং এগুলোর নিচে তাদের গোপন সুড়ঙ্গ রয়েছে ফলে তারা এসব হাসপাতালের ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করেছে এবং হাসপাতালভিত্তিক হামাসের সামরিক তৎপরতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক ডাক্তার ও চিকিৎসাকর্মী শাহাদত বরণ করেছেন আর অনেককে এখনো নির্যাতনশালায় বন্দি রাখা হয়েছে কিংবা মুক্তি দেওয়ার পর ড্রোন হামলা চালিয়ে সপরিবারে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এ দাবির পক্ষে আজ পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ তারা তুলে ধরতে পারেনি

তৃতীয় ও ন্যক্কারজনক মিথ্যা অভিযোগটি আনা হয়েছে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA)-এর বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবরের হামলায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর সাতজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার দাবি  করা হয়েছে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনকি জাপানও চোখ বুজে অভিযোগটি বিশ্বাস করে নেয় ইসরাইলের পার্লামেন্ট একটি আইন অনুযায়ী আনরা-কে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে তার গোডাউন, অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে অথবা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে

সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি পশ্চিমা কয়েকটি দেশ দায়মুক্তির জন্য কয়েক মাস পরই নিজেদের আর্থিক সহায়তা পুনরায় চালু করলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি কেননা ৭৭ বছর ধরে ফিলিস্তিনীদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার লাইফলাইন হয়ে থাকা ওই সংস্থাটিকে এক নির্জলা মিথ্যার রশি দিয়ে ইসরাইল গলা রোধ করে দিয়েছে

এ হল নির্লিপ্ত ইসরাইলের নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও অভিযোগের কয়েকটি নমুনামাত্র যা তারা ফিলিস্তিনীদের জাতি নিধন সহজ করার জন্য একের পর এক রটনা করে চলেছে

এখন তাদের লক্ষ্যবস্তু হল ওইসব মধ্যস্থতাকারী দেশ, যারা হামাস ও ইসরাইলের মাঝে সমঝোতা ও যুদ্ধবিরতির জন্য শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল এ সপ্তাহের শুরুতে ইসরাইলের ‘চ্যানেল ১২’ কাতারকেই প্রথম লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে তারা দাবি করছে, ইসরাইলের সেনাবাহিনী কোনো ভবন অথবা সুড়ঙ্গ থেকে কিছু চাঞ্চল্যকর নথি উদ্ধার করেছে, যা থেকে স্পষ্ট যে, কাতার নিজেকে বাহ্যিকভাবে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী জাহির করলেও সে মূলত হামাসের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষক

এসব নথিতে হামাসের শীর্ষ নেতা শহীদ ইসমাইল হানিয়া ও ইয়াহইয়া সিনওয়ারের স্পষ্ট চিরকুট ছাড়াও কাতার নের্তৃবৃন্দের সাথে হামাস নের্তৃবৃন্দের বৈঠকের বিবরণ এবং তুরস্ক, ইরান ও কাতারের সাথে হামাসের যোগাযোগ ও মিশরের গৃহীত নীতির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশের বিবরণ আছে বলে দাবি করা হয়েছে এসব বিষয়াদি সামনে এনে ‘চ্যানেল ১২’ এই উপসংহারে পৌঁছে যে, কাতারও হামাসের অপরাধে সমান অংশীদার

কাতার অবশ্য ফাঁস হওয়া এসব নথিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আমেরিকা ও কাতারের বিশেষ সম্পর্ক নষ্ট করা ও ফিলিস্তিনীদের আঞ্চলিক সহায়তা ও মধ্যস্থতা থেকে বঞ্চিত করার হীন চক্রান্ত আখ্যা দিয়েছে

অবশ্য কাতার এ ব্যাখ্যা না দিলেও নথিগুলো পড়ে আমার মতো বোকাও ভাবত যে, ইসরাইল হাইটেক জগতের স্বীকৃত একটি শীর্ষ দেশ অথচ তাদের একজন ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটারও নেই যে সত্যের খোলসে মিথ্যাকে এমনভাবে তুলে ধরবে, যেন পুরো বিশ্ব না হলেও অন্তত অর্ধেক তা বিশ্বাস করে নেবে

এসব নথি ফাঁসের পেছনের ঘটনা হল, সম্প্রতি আদালতের আদেশে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা নেতানিয়াহুর দপ্তরের দুজন কর্মকর্তাকে এ অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করছে যে, তারা ইসরাইলের গণমাধ্যমে মিশরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও কাতারের ইমেজ বাড়ানোর জন্য কাতার সরকার থেকে টাকা নিয়েছে

কাতার গেট (Qatari connection affair/Qatargate) কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাবেক উপদেষ্টা জোনাথন (Jonathan Urich) ও সাবেক মুখপাত্র এলি ফেল্ডস্টেইনও (Eli Feldstein) রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, ঘুষ, প্রতারণা, বিদেশি এজেন্টদের সাথে সম্পর্ক এবং সরকারি আস্থা ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে

তাছাড়া ওই দুই অভিযুক্তের বস নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় পদে না থাকলে তাকে জেলেও যেতে হতে পারে এ কারণেই বিরোধী দলের মন্তব্য হল, নিজের গর্দান বাঁচানোর জন্যই নেতানিয়াহু যেকোনো উপায়ে যুদ্ধাবস্থা বহাল রাখতে চায়

কাতারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও নেতানিয়াহুর ওই গা বাঁচানো পরিকল্পনারই অংশ কিন্তু এসব অভিযোগ তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায় না কারণ সবাই জানে যে, কাতার হাতেগোণা কয়েকটি দেশের একটি, যারা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য ইসরাইলের সম্মতিতে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে

৭ অক্টোবরের আগে কাতার গাজায় হামাস প্রশাসনের দায়িত্বশীলদেরকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসেবে মাসিক সম্মানি ও ভাতা প্রদান করত

এছাড়া গাজায় জ্বালানী, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অনেক প্রকল্পও কাতারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হত আর এটি তো কারো অজানা নয় যে, হামাসের নির্বাসিত নের্তৃবৃন্দ কাতারেই অবস্থান করতেন সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আলআসাদ ও তুরস্কও হামাসের নের্তৃবৃন্দকে তাদের দেশে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিল এ কথাও সবার জানা যে, ইরান ও হিযবুল্লাহ হামাসের দুই প্রকাশ্য সমর্থক এছাড়া সিরিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন আরব দেশে কাতারের সমর্থক সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টিও গোপন কিছু নয়

আর কাতার হল আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ডের হেড কোয়ার্টার ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরে কাতার ও আমেরিকার মধ্যে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে কাতার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একটি ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বিমান উপহার দিয়েছে ঠিক এমন সময়ে ইসরাইলের গণমাধ্যমে হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাতারের বিনিয়োগ ও পুঁজি সরবরাহের প্রতিবেদনটি কমেডির এমন কোনো স্তরেই পড়ে না, যা দেখে মানুষের হাসি পাওয়া তো দূরের কথা, মুচকি হাসাও কঠিন

[বিদেশি দৈনিক থেকে অনূদিত

অনুবাদ : মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ ফাহাদ]

 

advertisement