মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি
‖ শুধু সমস্যা চিহ্নিত করলেই হবে না...
গত সপ্তাহে (২১-০৭-২০২৫) বাংলাদেশে ঘটে গেছে অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। পুরো জাতি শোকে স্তব্ধ রয়েছে এখনো।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণরত একটি যুদ্ধবিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের একটি ভবনের উপরে বিধ্বস্ত হয়। তাতে হতাহত হয় কচিকাঁচা, স্কুলগামী শিশু-কিশোরসহ বহু মানুষ। অনেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। স্কুলের কচিকাঁচা শিশুদের সাথে সাথে তাদেরকে আনতে যাওয়া কয়েকজন অভিভাবকও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। কিন্তু কিছু দুর্ঘটনা মানুষের মন-মননকে নাড়া দেয়। অনেক লোকের তো সাহস আছে। তারা দাঁড়িয়ে ভিডিও করতে পারে, ছবি ওঠাতে পারে। কিন্তু আসলে এ বিষয়গুলো এত কষ্টের আর এত হৃদয়বিদারক হয় যে, এর খবর বা খবরের শিরোনাম পড়তেও তো খুব সাহসী মনের পরিচয় দিতে হয়। অন্তর কঠিন হতে হয়।
মা-বাবার কচি সন্তান, যাকে উন্নত জীবনের জন্য, যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য স্কুলে দিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে যদি সে লাশ হয়ে ফেরে, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে! এই ঘটনায় পুরো জাতির সাথে আমরা আলকাউসার পরিবারও শোকাহত। যারা দুনিয়া থেকে চলে গেছে, আমরা আল্লাহ তাআলার দরবারে তাদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসের দুআ করি।
শিশুরা তো নিষ্পাপই। আমরা তাদের মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের জন্যও দুআ করি, আল্লাহ তাআলা তাদের সবাইকে ধৈর্যধারণের তাওফীক দান করুন। এর বিনিময়ে আল্লাহ তাদেরকে ইহ ও পরকালীন উত্তম বদলা দান করুন।
এখানে আরও দুয়েকটি কথা আরজ করতে চাই–
প্রথমত আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি, বিশেষ দুআও করি ওই মহিয়সী শিক্ষিকা (মাহরীন চৌধুরী)-এর জন্য, যিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচিয়েছেন, নিজের জান কোরবান করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে উত্তম বদলা দেন। তাঁর পরিবারকে রক্ষা করেন। কবির একটা ভক্তিমূলক চরণ মনে পড়ে গেল–
اچھا تھا کہ آگ بجھانے میں مرتے ہم
افسوس کہ اپنی جان بچانے میں مر گئے
এই কবিতায় কবি ওইসকল লোকদের কাপুরুষতা সামনে এনেছেন, যারা স্বার্থবাদী হয়, যারা শুধু নিজেকে রক্ষা করতে চায়, কিন্তু একসময় নিজেকেও রক্ষা করতে পারে না। বরং চারদিকের আগুন, চারদিকের প্রতিকূলতা তাকেও গ্রাস করে নেয়। কবি আফসোস করে বলেছেন, এটাই তো ভালো ছিল, অন্তত আমি সেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করতাম, প্রতিকূলতা কাটিয়ে অন্যদের রক্ষা করার চেষ্টা করতাম। তাহলে তো আমার জীবন গেলেও মূল্য থাকত।
শিক্ষিকা মাহরীন সেটারই স্বাক্ষর রেখেছেন। হয়তোবা তিনি অন্যদেরকে বাঁচাতে না গেলেও নিজে অগ্নিদগ্ধ হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তো অনেকের জান বাঁচিয়েছেন। এ ধরনের লোকেরা শুধু আল্লাহ তাআলার কাছেই সম্মানিত হন না; দুনিয়াতেও তাদের নাম সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয়।
এখানে আরেকটি কথা। দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই। কিন্তু চারদিকে এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত বিমানটি নিয়ে। কেউ কেউ বলতে চাচ্ছেন, পাইলট প্রথমবারের মতো একা বিমানটি চালাচ্ছিলেন। একথা বলে হয়তো কেউ ইঙ্গিত দিতে চান, তিনি কোনো ভুল করলেন কি না।
আবার অনেকেই বলছেন, বিমানটি ছিল অনেক পুরোনো। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কেন এত পুরোনো বিমান এখনো বিমানবাহিনীর বহরে রাখা হয়েছে?
কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এ ধরনের প্রশিক্ষণ কেন জনবহুল এলাকায় হবে? প্রশিক্ষণের জন্য জনমানবহীন এলাকায় ভিন্ন এয়ারপোর্ট, ভিন্ন রানওয়ে থাকা উচিত। এসব কথার যৌক্তিকতা রয়েছে। আমাদের দেশে তো অনেকগুলো বিমানবন্দর এখনো পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। এক্ষেত্রে অনেকে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের কথা বলছে। কুমিল্লায় বিমানবন্দর পড়ে আছে। ফেনীতে বিমানবন্দর আছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই বিমানবন্দর আছে। এ বিমানবন্দরগুলো থেকে কোনো একটা তো এইসমস্ত কাজে নিশ্চয়ই ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ মুহূর্তে আরেকটি কথাও মনে পড়ছে, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় দেখা গেছে, সশস্ত্র বাহিনীর এক শ্রেণির মতলবি ও সুবিধাবাদী অফিসারদের খুশি রাখার জন্য সরকার সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এমন কোনো ব্যবসা-কারবার নেই, যা সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া হয়নি। ইউনিভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ, রাস্তাঘাটের ঠিকাদারিসহ বড় বড় বহু ব্যবসা তাদের অনেকে হাতিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত তারা নিয়েছে বা তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।
এখান থেকে বোঝা গেল, সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে দেশের একেবারে কম ব্যয় হয়নি। এরপরও কেন বিমানবাহিনী এত পিছিয়ে থাকল? বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ফ্লাইটের দিক থেকে, যুদ্ধবিমানের দিক থেকে কেন এত পিছিয়ে থাকল? বর্তমানে তো দেশে দেশে আকাশযুদ্ধই বড় হয়ে উঠছে। এখন সম্মুখ যুদ্ধের দিন অনেকটা শেষ হয়ে আসছে। ড্রোন থেকে শুরু করে বড় বড় যুদ্ধবিমানেই এখন আস্থা রাখে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী দেশগুলো। তাই আমাদের তো মান্ধাতার আমলে থাকলে চলবে না। বিগত সরকারের একরকমের মানসিকতা ছিল। তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে অনেক বেশি তাঁবেদার হয়ে চলার কারণে, বাংলাদেশের সামরিক শক্তিকে সত্যিকার অর্থে সুদৃঢ় করে তোলার প্রতি তাদের তেমন আগ্রহ ছিল না।
এটা স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তুলনা করলে আমরা দেখব, মরহুম জিয়াউর রহমান যেভাবে বাংলাদেশের সামরিক শক্তিকে সুদৃঢ় করতে চেয়েছেন, আওয়ামী লীগ সেদিকে তেমন মনোযোগ দেয়নি। বরং তারা জেনারেল আজিজ ও তার মতো আরও কিছু মতলবি অফিসারদের খুশি রেখে স্থায়ীভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখায় সচেষ্ট ছিল। যেহেতু তাঁবেদার গোষ্ঠী আওয়ামী লীগই দীর্ঘদিন এই রাষ্ট্র চালিয়েছে, তাই আমাদের সামরিক বাহিনী বিশেষত বিমানবাহিনী কিছু কিছু দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। এখন সেসব বিষয়ে অবশ্যই নজর দেওয়া দরকার।
একটা ভুল হয়ে গেলে, দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তা থেকে শিক্ষা নেওয়া, পরবর্তীতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রস্তুতি রাখাই তো বুদ্ধিমানদের কাজ। কিন্তু তা না করে যদি আমরা দু-চার দিন শুধু আওয়াজ তুলি, একটু কথাবার্তা বলি, কিছু সময় শোক পালন করি, এ নিয়ে তদন্ত করে বিভিন্ন দিক চিহ্নিতও করি, ব্যস, পরে ভুলে যাই, পরে আবার যাচ্ছেতাই হয়ে যায়; তাহলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠ্যাকানো কঠিন হবে।
আল্লাহ তাআলা এই দেশকে রক্ষা করুন। এদেশের বাহিনীগুলোকে আরও শক্তিশালী হওয়ার তাওফীক দান করুন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পোশাক বিতর্ক
<br> ‖ ওরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে বিজাতীয় কালচার চাপিয়ে দিতে চায়
শত শত শিশু ও তাদের অভিভাবকের আর্তনাদ, বুকফাটা কান্না এবং অগণিত শিশুর দগ্ধ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার ঘটনায় যখন পুরো দেশ শোকে স্তব্ধ; বলতে গেলে যখন এই একটি বিষয়ই দেশের মানুষের আলোচনায় ছিল। তাদের মুখে ও দিলে একটি দুআই ছিল– আল্লাহ! যারা বেঁচে আছে, তাদেরকে সুস্থ করে দাও; যাদের বুকের ধন চলে গেছে, তাদেরকে সহ্য করার শক্তি দাও।
ঠিক এমনই সময়ে দেশের একটি নামকরা পত্রিকা মেতে উঠেছে অন্য আরেকটি খবর নিয়ে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কর্মীদের জন্য পোশাক বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। এদেশে কিছু কিছু মহিলা ভিনদেশি ও বিজাতীয় পোশাকের মহড়া দেখিয়ে থাকে, তা যেন সরকারি দপ্তরে না দেখানো হয়– এমন কথা বলা হয়েছিল সেখানে। সেই খবর যেন মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাদের কাছে এই বিষয়টি হয়ে গেছে অতিব গুরুত্বপূর্ণ! মনে হয় দেশটা ভেঙে পড়ল। তাদের কাছে এটা নিছক খবর নয়; বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩১ তলা বিল্ডিংই যেন তাদের মাথার ওপর পড়েছে।
এদেশের কিছু লোককে আমরা আগেও দেখেছি। আগেই বলে নেওয়া যাক– যারা এই ধরনের কারবার করে, তারা নিতান্তই সংখ্যালঘু; এরা সঙ্গবদ্ধভাবে কাজ করে– তারা এত নাগরিক, অত নাগরিক, অত বিশিষ্ট নাগরিক– এরকম বিবৃতি দিয়ে থাকে। আপনি খবর নিয়ে দেখবেন, ঐ নাগরিকদের ঘরের লোকেরাও হয়তো তাদেরকে সমর্থন করে না; বাইরের লোকেরা তো পরের কথা। তো সেই ব্যক্তিরা, সেই চিহ্নিত গোষ্ঠী তো পারলে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরো লোকদেরকেও নামিয়ে ফেলে! যারা এই নির্দেশনা দিয়েছে, তাদেরকে ক্ষমতা থেকে এক রাত্রেই নামিয়ে ফেলে! কেন নারী কর্মীদের শর্ট পরে সেখানে যেতে নিষেধ করা হল, আঁটসাঁট পোশাক পরে যেতে নিষেধ করা হল। কেন ভদ্রোচিত পোশাক পরতে বলা হল। এটা হল তাদের গায়ের জ্বালা।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে আবহমান কাল থেকে চলে আসা সভ্যতা-সংস্কৃতি বহাল থাকবে, না ঐ সংখ্যালঘু কুরুচিপূর্ণ লোকদের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেওয়া হবে বাংলাদেশের সভ্য-শালীন জনগণের ওপর। এটা তো কারো নিজের জায়গা নয়, কোনো পত্রিকার দপ্তর নয় যে, সম্পাদক চাইলেই তার মন মতো লোক বসিয়ে দেবেন কিংবা এটা কোনো কুরুচিপূর্ণ ব্যবসায়ী মাফিয়ার দপ্তরও না যে, সেই দপ্তরে চাইলেই সে নিজ পিএ বা এসিস্ট্যান্টকে যেকোনো পোশাকে বসাবে। মনে রাখতে হবে, এটি বাংলাদেশের জনগণের অর্থে চলা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেই ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের পুরো ব্যাংকব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়, সেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত বৃহৎ প্রতিষ্ঠান, যার সম্পর্ক জনগণের সাথে। জনগণের পয়সায় চলা জনগণের দপ্তর। সে দপ্তরে নিজের মন মতো যেনতেন পোশাক পরে কর্মী যাবে– এটা দুনিয়ার কোথায় আছে! কোন্ জায়গায় আছে এমন নিয়ম যে, কর্মী নিজের ইচ্ছে মতোই চলে যেতে পারবে রাষ্ট্রীয় দপ্তরে!
কিন্তু তারা ওটাই এখানে চালু করতে চায়। তারা কোনো কিছুকে নিয়মে আনতে দেবে না।
দেশের সাধারণ জনগণকে সরব হতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় তারা যেরকম সংখ্যালঘু অল্প কয়জন লোক চিল্লিয়ে ওঠে, চেঁচামেচি করে, ঐ চেঁচামেচিগুলোকে ভবিষ্যতে খুব ভদ্রভাবেই থামিয়ে দেওয়ার জন্য সতর্ক-সচেতন থাকতে হবে এবং চিহ্নিত করে রাখতে হবে– কারা ঐসকল নাগরিক, কারা এগুলো করে? সামাজিকভাবে তাদেরকে বয়কট করতে হবে। তারা কেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলিম জনগণের সভ্যতা-সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক, কৃষ্টি-কালচারে বিদেশিদের চিন্তা-চেতনার অনুপ্রবেশ ঘটাতে চায়, জোর করে চাপিয়ে দিতে চায়; এসব কারণে অবশ্যই তাদেরকে চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। এখন আর আগের মতো বারবার শুধু তাদেরটা দেখে গেলেই চলবে না; বরং সাধারণ মানুষদেরও সরব হয়ে ওঠার সময় এসেছে।
বামপন্থি রাজনীতি এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থিদের উত্থান দেখছি, আমি উদ্বিগ্ন।’
মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন, তখন দুই ধরনের লোক তার দলে যোগ দিয়েছিলেন। কিছু লোক তো ছিল, যারা জিয়ার পুরো আদর্শের সাথে একমত হয়ে দলে যোগ দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা সামনে এনেছেন, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা বুঝতে পেরে ধর্মীয় বিষয়ে নমনীয়তা দেখিয়েছেন। সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তথাকথিত সমাজতন্ত্র বিতাড়িত করেছেন। এইসবের ওপর আস্থা রেখেই তারা যোগ দিয়েছিল বিএনপিতে।
অন্যদিকে এমন কিছু লোকও তখন বিএনপিতে যোগ দিয়েছিল, যারা ছাত্র যামানা থেকে বামপন্থি রাজনীতি করত। আগে থেকেই ইসলামকে, ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে ভয় পেত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, আজ পর্যন্ত পৃথিবীর উন্নত থেকে উন্নত কোনো সমাজব্যবস্থারও যাঁর নিয়ে আসা সমাজব্যবস্থার সাথে তুলনা হয় না; সেই ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে যেই বাম ও তাদের বিদেশি নেতারা তিরস্কার করে, সেই চিন্তা-চেতনার অনেক লোকও যোগ দিয়েছিল তখন বিএনপিতে। এ তো বললাম প্রতিষ্ঠাকালীন কথা। এ ধরনের লোক পরবর্তীতেও এ দলে যোগ দিয়েছে।
এরপর তো অনেক বছর পার হয়ে গেছে। বিএনপিরও বয়স হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অল্প মানুষই এখন বেঁচে আছেন। বিশেষত জিয়ার পুরো আদর্শ ধারণ করা সেই ব্যক্তিবর্গ এখন হাতে গোনা। মির্জা ফখরুল সাহেবসহ বিএনপির আরও কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা বামপন্থি রাজনীতি করে আসা লোক হিসেবে চিহ্নিত। তারা তো ইসলামপন্থি লোকদের কথা-বার্তা শুনলে ভয় পাবেনই। যারা ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেন না, ইসলামী শাসনব্যবস্থা দেখেন না, ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে সামনে আনেন না, তারা তো অযথা কথাবার্তা বলবেনই! তারা বলবেন, দেশ পিছিয়ে যাবে! নারীদের এই হয়ে যাবে, সেই হয়ে যাবে!
ফখরুল সাহেবরা একটু কষ্ট করে যদি পড়তেন! যদি দেখতেন, আমাদের রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে মদীনা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন! কীভাবে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ চলেছে! রাষ্ট্র কি তখন অগ্রসর হয়েছিল, না পিছিয়ে গিয়েছিল! নারীরা কি সম্মানিত ছিল, না অসম্মানিত! এগুলো যদি তারা পড়তেন, দেখতেন, তাহলে এখনো তাদের এ অন্ধের জগতে থাকতে হত না।
আফসোস লাগে ওইসমস্ত নেতাদের জন্য, যারা পুরোটা জীবন লাগিয়ে দিলেন রাজনীতিতে। আমরা বুঝি, রাজনীতি করতে গিয়ে তাদের কষ্ট হয়, জেল-জুলুম সইতে হয়, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। কিন্তু তাদের অনেককেই আমরা দেখি, অন্ধ আদর্শ লালন করেন। না জেনে, না শুনে দূর থেকে ভাসাভাসা জ্ঞান নিয়ে কথাবার্তা বলতে থাকেন, পড়াশোনা করেন না, বাস্তবতা যাচাই করেন না।
ফখরুল সাহেবদের থেকে মানুষ এগুলো আশা করে না। ফখরুল সাহেবকে মানুষ মনে করে, তিনি অনেকটা ক্লিন ইমেজের লোক। কিন্তু ফখরুল সাহেব! ক্লিন ইমেজের সাথে সাথে পড়াশোনারও তো দরকার হয়। আমাদের দেশে এই কালচারটা খুব কম দেখি। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপতির কথা আমরা শুনি যে, তাদের লাইব্রেরি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। তারা মাসে কয়টা বই পড়ছেন, তাও গণনা করা হয়। মানুষের মাঝে তা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু আমাদের এ দেশে অন্ধ রাজনীতির প্রচলন বেশি। পড়াশোনা করা নেতার সংখ্যা এ দেশে হাতে গোনা।
ফখরুল সাহেবদের সামনে কিন্তু নির্বাচন! মনে রাখতে হবে, তাকে যে পত্রিকা এখন ডেকে সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, তার মুখ দিয়ে ধর্ম এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বের করছে, এটা কি তার দলের পক্ষে যাবে, না বিপক্ষে যাবে? এতে করে জনগণের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত হবেন, নাকি আরও বিচ্ছিন্ন হবেন– এগুলো তার ও তার দলের নেতাদের বিশেষত তারেক রহমান সাহেবদের বোঝা দরকার।
এই দেশে ওই পত্রিকা ও তাদের মতো একটা গোষ্ঠী আছে, যাদের কাজই হল, এসব করা। এ দেশের সভ্যতা-সংস্কৃতির বাইরে, এ দেশের গণমানুষের চিন্তা-চেতনার বাইরে গিয়ে নিজস্ব চিন্তা-চেতনা প্রতিষ্ঠিত করা। ফখরুল সাহেব তাদের ফাঁদে পা দিলেন না তো– সেটাও বোঝা দরকার।