Muharram 1447   ||   July 2025

ঈমানী আলোচনা কি শুধু মসজিদের জন্যই প্রযোজ্য?

আবু হাসসান রাইয়ান বিন লুৎফুর রহমান

(পূর্ব প্রকাশের পর)

 

বাহনের পিঠে ঈমানী মুযাকারার কিছু দৃষ্টান্ত

নবী যুগ এবং সাহাবা যুগে ঈমানী মুযাকারা মসজিদের বাইরে কতটা ব্যাপক পরিসরে হত, তার একটি স্পষ্ট প্রমাণ হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. বাহনের পিঠে সওয়ার হয়েও ঈমানী মুযাকারা করতেন নিম্নে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল

(১)

حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمُعاذٌ رَدِيفُه عَلَى الرَّحْلِ، قَالَ: يَا مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: يَا مُعَاذُ، قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ ثَلاَثًا، قَالَمَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِه، إِلَّا حَرَّمَه اللهُ عَلَى النَّارِ.

আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, একদিন মুআয রা. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বাহনে বসা ছিলেন তিনি বললেন, হে মুআয ইবনে জাবাল! তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাজির এভাবে তিনবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মুআয ইবনে জাবাল! আর তিনিও উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উপস্থিত আছি অতঃপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি অন্তর থেকে এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ আল্লাহ এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৮

এই বর্ণনাটি মুন্তাখাব হাদীস কিতাবেও এসেছে (হাদীস ৫১)

এই রেওয়ায়েতে স্পষ্টভাবে এসেছে যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারীর ওপর আরোহণরত অবস্থায় মুআয রা.-এর সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন

(২)

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّه حَدَّثَه: أَنَّه رَكِبَ خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا، فَقَالَ لَه رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا غُلامُ، إِنِّي مُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ: احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، وَإِذَا سَأَلْتَ فاَسْأَلِ اللهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ، لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ لَكَ، وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ، لَمْ يَضُرُّوكَ إِلا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الْأَقْلامُ، وَجَفَّتِ الصُّحُفُ.

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একদিন তিনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বাহনে আরোহণ করলেন তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দেব আল্লাহ তাআলার (বিধানসমূহ) হেফাজত করো, তিনি তোমাকে হেফাজত করবেন আল্লাহ তাআলার (বিধানসমূহ) হেফাজত করো, তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে যখন প্রার্থনা করবে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো যখন সাহায্য চাইবে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও 

জেনে রাখো, যদি সমস্ত উম্মত একত্রিত হয়ে তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তবে ততটুকু উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন আর যদি সকলে একত্রিত হয়ে তোমার ক্ষতি করতে চায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে আর (তাকদীরের) কাগজের কালি শুকিয়ে গেছে মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৬৬৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৬

এই বর্ণনাটি মুন্তাখাব হাদীস কিতাবেও আছে (হাদীস নং ১১২)

এই হাদীসেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনের ওপর আরোহণ করে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে ঈমানী বিষয়াদি শিক্ষা দিয়েছেন

(৩)

 عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ رِدْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَيَا حُذَيْفَةُ، تَدْرِي مَا حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ؟ قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُه أَعْلَمُ، قَالَيَعْبُدُونَهُ وَلَا يُشْرِكُونَ بِه شَيْئًا، ثُمَّ سَارَ فَقَالَيَا حُذَيْفَةُ، قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَأَتَدْرِي مَا حَقُّ الْعِبَادِ عَلَى اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِذَا فَعَلُوا ذلِكَ؟ قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُه أَعْلَمُ، قَالَيَغْفِرُ لَهُمْ.

হুযাইফা রা. বলেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সওয়ারীতে বসা ছিলাম তিনি বললেন, হুযাইফা! তুমি কি জানো, বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী?

আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন

তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক হল, বান্দা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে তাঁর সাথে কোনো কিছু শরীক করবে না

অতঃপর তিনি কিছুদূর পথ চলে বললেন, হুযাইফা!

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি উপস্থিত আছি!

তিনি বললেন, তুমি কি জানো আল্লাহর ওপর বান্দার কী হক রয়েছে?

আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন

তিনি বললেন, আল্লাহর ওপর বান্দার হক হল, তিনি তাদের মাফ করে দেবেন মুসনাদে বাযযার, হাদীস ২৯১৮

নূরুদ্দিন হাইছামী রাহ. বলেন

رواه البزار و رجاله ثقات.

মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/২০৯

এই হাদীসেও আমরা দেখতে পেলাম, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনের ওপর বসে হুযাইফা রা.-এর সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন

(৪)

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا رَدِيفُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ! مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ. قَالَ: قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: فَسَكَتَ عَنِّي، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً، ثُمَّ قَالَ: مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ. قَالَ: قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: فَسَكَتَ عَنِّي، ثُمَّ سَارَ سَاعَةً، ثُمَّ قَالَ: مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، وَجَبَتْ لَهُ ٱلْجَنَّةُ. قَالَ: قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ، وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ أَبِي الدَّرْدَاءِ.

 আবুদ দারদা রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে বাহনে বসা ছিলাম তিনি বললেন, হে আবুদ দারদা! যে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে

আমি বললাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে?

তিনি চুপ রইলেন অতঃপর কিছুদূর চলার পরে আবার বললেন, যে সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে

আমি বললাম, যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে?

তিনি চুপ রইলেন অতঃপর কিছুদূর পথ চলার পর আবার বললেন, যে সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে

আমি বললাম, যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে?

তিনি বললেন, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে; যদিও আবুদ দারদার বিষয়টি অপছন্দ হয় (তবুও তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে) মুসনাদে আবু হানীফা লিল হারিছী, হাদীস ৬৬০, ৬৬১, খ. ১, পৃ. ৪২২

উপরোক্ত হাদীসেও আমরা দেখতে পেলাম, নবীজী বাহনের ওপর বসে ঈমানী আলোচনা করেছেন

(৫)

عَنْ سُهَيْلِ ابْنِ الْبَيْضَاءِ، قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي سَفَرٍ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَنَا رَدِيفُه، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا سُهَيْلَ ابْنَ الْبَيْضَاءِ، وَرَفَعَ صَوْتَه مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا، كُلُّ ذلِكَ يُجِيبُه سُهَيْلٌ، فَسَمِعَ النَّاسُ صَوْتَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَظَنُّوا أَنَّه يُرِيدُهُمْ، فَحُبِسَ  مَنْ كَانَ بَيْنَ يَدَيْهِ، وَلَحِقَه مَنْ كَانَ خَلْفَه، حَتَّى إِذَا اجْتَمَعُوا، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّه مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ، وَأَوْجَبَ لَهُ الْجَنَّة.

সুহাইল ইবনুল বাইদা রা. বলেন, আমরা একদিন এক সফরে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম আমি তাঁর বাহনের উপর তাঁর পেছনে বসা ছিলাম তখন তিনি উঁচু আওয়াজে দুই থেকে তিনবার বললেন, হে সুহাইল ইবনুল বাইদা! প্রত্যেকবারই সুহাইল রা. উত্তর দিলেন নবীজীর আওয়াজ শুনে লোকজন ভাবল, তিনি তাদের সবাইকে তলব করেছেন, তাঁর সামনে যারা ছিল তাদের থামিয়ে দেওয়া হল আর পেছনের লোকজন তাঁর সাথে মিলিত হল যখন সবাই জমা হল, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন এবং তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৭৩৮

(৬)

عن أَبي أَيُّوبَ رضي الله عنه أَنَّ أَعْرَابِيًّا عَرَضَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ فِي سَفَرٍ، فَأَخَذَ بِخِطَامِ نَاقَتِهِ -أَوْ بِزِمَامِهَا- ثُمَّ قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ -أَوْ يَا مُحَمَّدُ- أَخْبِرْنِي بِمَا يُقَرِّبُنِي مِنَ الْجَنَّةِ، وَمَا يُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ، قَالَ: فَكَفَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ نَظَرَ فِي أَصْحَابِه، ثُمَّ قَالَلَقَدْ وُفِّقَ، أَوْ لَقَدْ هُدِيَ، قَالَ: كَيْفَ قُلْتَ؟ قَالَ: فَأَعَادَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَتَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِه شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ، دَعِ النَّاقَةَ.

আবু আইয়ূব রা. বলেন, একবার কোনো এক সফরে এক বেদুঈন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে দাঁড়াল এবং নবীজীর উটনীর লাগাম ধরে ফেলল অতঃপর বলল, ‘আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমলের কথা বলুন, যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেবে আর জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী করে দেবে’ ...তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে আর তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, আত্মীয়দের হক রক্ষা করবে

ব্যস, এবার উটনী ছেড়ে দাও সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩

(৭)

عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَوْ عَنْ عَمِّه، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَفَةَ، فَأَخَذْتُ بِزِمَامِ نَاقَتِهِ -أَوْ خِطَامِهَا- فَدَفَعْتُ عَنْهُ، فَقَالَدَعُوهُ فَأَرَبٌ مَا جَاءَ بِهِ، فَقُلْتُ: نَبِّئْنِي بِعَمَلٍ يُقَرِّبُنِي مِنَ الْجَنَّةِ وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ. قَالَ: فَرَفَعَ رَأْسَه إِلَى السَّمَاءِ، ثُمَّ قَالَلَئِنْ كُنْتَ أَوْجَزْتَ فِي الْخُطْبَةِ لَقَدْ أَعْظَمْتَ وَأَطْوَلْتَ، تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَحُجُّ الْبَيْتَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَأْتِي إِلَى النَّاسِ مَا تُحِبُّ أَنْ يَأْتُوهُ إِلَيْكَ، وَمَا كَرِهْتَ لِنَفْسِكَ فَدَعِ النَّاسَ مِنْهُ، خَلِّ عَنْ زِمَامِ النَّاقَةِ.

মুগীরা ইবনে সা‘দ তার পিতা অথবা চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আরাফার ময়দানে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসি এবং তাঁর উটনীর লাগাম টেনে ধরি আমাকে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হল নবীজী বললেন, তাকে আসতে দাও কোনো প্রয়োজনেই হয়তো এসেছে

আমি বললাম, আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেবে তিনি আসমানের দিকে মাথা উঠিয়ে বললেন, যদি তুমি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন করতে! তুমি তো বড় ও দীর্ঘ প্রশ্ন করেছ তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, বাইতুল্লাহ্র হজ¦ করবে এবং রমাযানে সিয়াম পালন করবে মানুষের কাছ থেকে যেমন আচরণ আশা করো, তাদের সাথেও ঠিক সেই আচরণ করো মন্দ আচরণ পরিহার করো

ব্যস, এবার উটনীর লাগাম ছেড়ে দাও মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৭০৫, আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৫৪৭৮

উপরোক্ত দুটি হাদীসেই আমরা লক্ষ করলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনীর পিঠে চড়ে মানুষকে ঈমান ও ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন

সফরের মধ্যে ঈমানী মুযাকারার কিছু দৃষ্টান্ত

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রা. যেমনিভাবে নিজ এলাকায় মসজিদের বাইরে ঈমানী মুযাকারা করতেন, ঠিক তদ্রƒপ সফরের হালতেও মসজিদের বাইরে ঈমানী মুযাকারা করতেন কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল

এক.

عَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ الجُهَنِيِّ، أَنَّه قَالَ: صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةَ الصُّبْحِ بِالحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْلَةِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، فَقَالَ: هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُه أَعْلَمُ، قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِه، فَذلِكَ مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ بِالكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ: بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذلِكَ كَافِرٌ بِي وَمُؤْمِنٌ بِالكَوْكَبِ.

যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদাইবিয়া নামক স্থানে আমাদের ফজর নামায পড়ালেন আগের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল নবীজী নামায শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?

তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন

(নবীজী বললেন,) আল্লাহ বলেছেন, আমার বান্দাদের মধ্যে কতক আজ ঈমানের হালতে সকালে উঠেছে আর কতক কাফের অবস্থায় সকালে উঠেছে যারা বলেছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমাদের প্রতি বৃষ্টিপাত হয়েছে’ তারা আমার প্রতি ঈমান আনয়নকারী আর যারা বলেছে, ‘তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে’ তারা আমাকে অস্বীকারকারী আর তারকার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৪৬

দুই.

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلى الله عَليه وسَلم فِي سَفَرٍ، فَأَصْبَحْتُ يَوْمًا قَرِيبًا مِنْهُ، وَنَحْنُ نَسِيرُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ، قَالَ: لَقَدْ سَأَلْتَنِي عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّه لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللهُ عَلَيْهِ، تَعْبُدُ الله، لاَ تُشْرِكُ بِه شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ البَيْتَ.

মুআয ইবনে জাবাল রা. বলেন, আমি এক সফরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম একদিন পথ চলতে চলতে আমি নবীজীর নিকটবর্তী হয়ে গেলাম আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমলের কথা বলে দেন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখবে

নবীজী উত্তরে বললেন, তুমি তো আমাকে কঠিন প্রশ্ন করলে, তবে তা সহজ ঐ ব্যক্তির জন্য, যাকে আল্লাহ সহজ করে দেন তুমি আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানে সিয়াম পালন করবে, বাইতুল্লাহ্র হজ¦ করবে জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬১৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৭৩

উপরের বর্ণনাতেও আমরা দেখতে পেলাম, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে প্রবেশের জন্য অন্যান্য ফরয আমলের সাথে শিরকমুক্ত ঈমান ও ইবাদতের আদেশ করেছেন এই ঘটনা কোনো এক সফরে সংঘটিত হয়েছে

তিন.

عَنْ يُوسُفَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ نَسِيرُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ سَمِعَ الْقَوْمَ وَهُمْ يَقُولُونَ: أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِه، وَجِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَحَجٌّ مَبْرُورٌ، ثُمَّ سَمِعَ نِدَاءً فِي الْوَادِي يَقُولُ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَوَأَنَا أَشْهَدُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا يَشْهَدَ بِهَا أَحَدٌ إِلَّا بَرِئَ مِنَ الشِّرْكِ.

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বলেন, আমরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফর করছিলাম তখন তিনি লোকজনকে বলতে শুনলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ আমল সর্বোত্তম?

তিনি বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা এবং মকবুল হজ¦

অতঃপর তিনি উপত্যকায় এই আওয়াজ শুনলেন

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ.

(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল)

একথা শুনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি এবং এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, যে ব্যক্তি এই কথার সাক্ষ্য দেবে, সে শিরক থেকে মুক্ত হয়ে যাবে মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৭৮৩

নূরুদ্দিন হাইসামী রাহ. বলেন

رواه أحمد والطبراني في الأوسط ورجالهماثقات.

মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৫/৫০৬

এই হাদীসেও আমরা স্পষ্টভাবে দেখলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর সাথে ঈমানী আলোচনা করেছেন

চার.

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَسِيرٍ لَه، فَلَمَّا كَانَ فِي بَعْضِ اللَّيْلِ تَنَحَّى فَلَبِثَ طَوِيلًا، ثُمَّ أَتَانَا، فَقَالَ: أَتَانِي آتٍ مِنْ رَبِّي، فَأَخْبَرَنِي أَنَّه مَنْ مَاتَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ أَنَّ لَهُ الْجَنَّةُ، قُلْتُوَإِنْ زَنَى، وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: نَعَمْ.

আবু যর রা. বলেন, আমরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো এক সফরে ছিলাম রাতের কোনো এক অংশে তিনি একটু দূরে গেলেন এবং দীর্ঘ সময় অবস্থান করলেন অতঃপর তিনি আমাদের কাছে এসে বললেন, আমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক ফেরেশতা আমার কাছে এসেছিল সে আমাকে এই সংবাদ দিয়েছে, যে ব্যক্তি এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, সে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই; তবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত

আমি বললাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তবুও কি তার জন্য জান্নাত রয়েছে?

তিনি বললেন , হাঁ সুনানে কুবরা নাসায়ী, হাদীস ১০৮৯০

পাঁচ.

عَنْ نَافِعِ بْنِ عُتْبَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ، قَالَ: فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْمٌ مِنْ قِبَلِ الْمَغْرِبِ، عَلَيْهِمْ ثِيَابُ الصُّوفِ، فَوَافَقُوهُ عِنْدَ أَكَمَةٍ،... فَحَفِظْتُ مِنْهُ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ، أَعُدُّهُنَّ فِي يَدِي، قَالَتَغْزُونَ جَزِيرَةَ الْعَرَبِ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ فَارِسَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الرُّومَ فَيَفْتَحُهَا اللهُ، ثُمَّ تَغْزُونَ الدَّجَّالَ فَيَفْتَحُهُ اللهُ.

قَالَ: فَقَالَ نَافِعٌ: يَا جَابِرُ! لَا نَرَى الدَّجَّالَ يَخْرُجُ، حَتَّى تُفْتَحَ الرُّومُ.

নাফে ইবনে উতবা রা.  বলেন, আমরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যুদ্ধ অভিযানে ছিলাম ইত্যবসরে পশ্চিম দিক থেকে কিছু লোক নবীজীর সাথে দেখা করতে এলেন তাদের পরনে ছিল পশমের পোশাক তারা একটি ছোট টিলার কাছে নবীজীর সঙ্গে মিলিত হলেন... তখন নবীজীর চারটি কথা আমি হাতে গুনে গুনে মুখস্থ করেছি তিনি বলেছেন, তোমরা জাযীরাতুল আরবে অভিযান পরিচালনা করবে আল্লাহ সেখানে তোমাদের বিজয় দান করবেন অতঃপর পারস্যে আল্লাহ তোমাদের বিজয় দেবেন অতঃপর রোমে আল্লাহ তোমাদের বিজয় দান করবেন অতঃপর দাজ্জালের সাথে তোমাদের লড়াই হবে আর আল্লাহ তার বিরুদ্ধে বিজয় দান করবেন

নাফে রা. বললেন, হে জাবের! যতক্ষণ রোম বিজয় হবে না, ততক্ষণ আমরা দাজ্জাল বের হতে দেখব না সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯০০

ছয়.

عن أَبِي عَمْرَةَ الْأَنْصَارِي، حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزَاةٍ، فَأَصَابَ النَّاسَ مَخْمَصَةٌ، فَاسْتَأْذَنَ النَّاسُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَحْرِ بَعْضِ ظُهُورِهِمْ،... فَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُه، فَقَالَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللهِ، لَا يَلْقَى اللهَ عَبْدٌ مُؤْمِنٌ بِهَا إِلَّا حُجِبَتْ عَنْهُ النَّارُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

আবু আমরা আনসারী রা. বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম লোকজনকে প্রচণ্ড ক্ষুধা আক্রান্ত করল তারা নবীজীর কাছে কিছু বাহনজন্তু যবেহ করার অনুমতি চাইল...

অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন, এমনকি তাঁর মাড়ির দাঁত প্রকাশ পেয়ে গেল

তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি আল্লাহর রাসূল যে কোনো বান্দা আল্লাহর সামনে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে, সে এই কালিমার প্রতি ঈমান রাখে, তবে এই কালিমা তাকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল করে দেবে মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৪৪৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২২১

নূরুদ্দিন হাইছামী রাহ. বলেন

رواه أحمد والطبراني في الكبير والأوسط، ورجاله ثقات.

    মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১/১৬৫

সাত.

عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا بَرَزْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ إِذَا رَاكِبٌ يُوضِعُ نَحْوَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَكَأَنَّ هذَا الرَّاكِبَ إِيَّاكُمْ يُرِيدُ، قَالَ: فَانْتَهَى الرَّجُلُ إِلَيْنَا، فَسَلَّمَ، فَرَدَدْنَا عَلَيْهِ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَمِنْ أَيْنَ أَقْبَلْتَ؟ قَالَ: مِنْ أَهْلِي وَوَلَدِي وَعَشِيرَتِي، قَالَ: فَأَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ: أُرِيدُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَفَقَدْ أَصَبْتَه. قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، عَلِّمْنِي مَا الْإِيمَانُ؟  قَالَ: تَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ الْبَيْت..  

জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, আমরা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোথাও রওয়ানা হলাম যখন আমরা মদীনা থেকে বের হলাম, দেখলাম এক আরোহী আমাদের দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মনে হচ্ছে এই আরোহী তোমাদের কাছেই আসছে

লোকটি আমাদের কাছে পৌঁছে সালাম দিল আমরা তার সালামের জবাব দিলাম...

সে বলল, আমি আল্লাহর রাসূলকে চাচ্ছি তিনি বললেন, তুমি তাকে পেয়ে গেছ সে বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে শিক্ষা দিন ঈমান কাকে বলে?

তিনি বললেন, তুমি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমাযানে সিয়াম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহ্র হজ¦ করবে... মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৯১৭৬ 

মোটকথা, উপরের আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. শুধু মসজিদে নয়, বরং ঘরে, বাইরে, বাগানে, বাজারে, বাহনে, ময়দানে, সফরে সর্বত্র ঈমানী আলোচনা করতেন সুতরাং ঈমান শেখা এবং ঈমানী আলোচনার জন্য মসজিদকে নির্দিষ্ট করা এবং একেই সীরাতের অনুসৃত পদ্ধতি আখ্যায়িত করা সীরাত সম্পর্কে অজ্ঞতারই নামান্তর 

 

 

advertisement