Muharram 1447   ||   July 2025

‘সামর্থ্য অনুযায়ী মজলুমের পাশে না দাঁড়ানো আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার শামিল’

Mawlana Muhammad Abdul Malek

বায়তুল মোকাররমের মিম্বর থেকে

[১২-১০-১৪৪৬ হি./১১-৪-২০২৫ ঈ.]

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন কারীমে অনেক জায়গায় আমাদেরকে তাকওয়া অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন

সংক্ষেপে তাকওয়া হল, আল্লাহকে ভালবেসে আল্লাহর ফরযগুলো আদায় করা, হুকুম-আহকাম পালন করা এবং আল্লাহর ভয়ে তাঁর নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকা

আল্লাহ বান্দাকে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে বলেন

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ.

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর প্রত্যেকেই আগামীকাল অর্থাৎ নিজের ভবিষ্যতের বিষয়ে ফিকির কর সেদিনের প্রস্তুতি হিসেবে তোমার পক্ষ থেকে কী পাঠানো হয়েছে আর আল্লাহকে ভয় কর তোমাদের ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় সবকিছু তিনি জানেন [দ্র. সূরা হাশর (৫৯) : ১৮]

এরপর আল্লাহ বলেছেন

وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ نَسُوا اللهَ فَاَنْسٰىهُمْ اَنْفُسَهُمْ.

যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল, তোমরা তাদের মতো হয়ো না! ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে তাদের নিজেদের ভুলিয়ে দিয়েছেন

অর্থাৎ তারা যখন আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল, তার শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে তাদের নিজেদেরকেই ভুলিয়ে দিয়েছেন ফলে এখন তারা নিজেরাই নিজেদের চেনে না নিজেদের কল্যাণ বোঝে না এখন আর তাদের নিজেকে নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই

তারপর আল্লাহ তাআলা বলছেন

اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

এরা তো ফাসেক

অর্থাৎ যে আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, এর শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের নিজেদেরই ভুলিয়ে দিয়েছেন, এরা ফাসেক তোমরা এদের মতো হয়ো না!

এখানে দুটা বিষয় বুঝতে হবে :

১. আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার কী অর্থ?

২. এর শাস্তিস্বরূপ নিজেকে ভুলে যাওয়ার কী অর্থ?

এক. আল্লাহকে ভুলে যাওয়া

আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার বিভিন্ন দিক রয়েছে যেমন

ক. তাওহীদ ভুলে যাওয়া

অর্থাৎ আল্লাহ আমার খালিক ও মালিক, তিনি আমার রব সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা, তাই একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা জরুরি, সেটি ভুলে যাওয়া আল্লাহ্ই একমাত্র ইবাদতের উপযুক্ত তিনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই আল্লাহর নির্ধারিত হকের মধ্যে অন্য কাউকে শরীক না করা একথাই যদি ভুলে যাই, এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে! এটা আল্লাহকে ভোলার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র

তাওহীদের একটি কালিমা

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ.

তাওহীদের আরেক কালিমা

أَشْهَدُ أَنْ لّاَ إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ.

তাওহীদের প্রথম কথা তো এটাই আল্লাহ্ই একমাত্র মাবুদ কুরআনে এসেছে

اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.

আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি! সূরা ফাহিতা (০১) : ০৪

কাজেই তাওহীদ ভুলে যাওয়া হল আল্লাহকে চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং মারাত্মকভাবে ভুলে যাওয়া

খ. শরীয়ত ভুলে যাওয়া

আমি আল্লাহর বান্দা এই দুনিয়াতে আমি যেন সুন্দরভাবে থাকতে পারি ভালোভাবে থাকতে পারি এখানে থেকে আখেরাতের প্রস্তুতি সুন্দরভাবে গ্রহণ করতে পারি তার জন্য আল্লাহ তাআলা আমাকে শরীয়ত দান করেছেন হালাল-হারামের বিধান দান করেছেন জীবনাচারের বিভিন্ন বিধান দান করেছেন

এটা আমাকে মাথায় রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা বান্দার ফায়দার জন্যই শরীয়ত দান করেছেন কাজেই সেটি পরিপূর্ণ মেনে চলতে হবে তবেই আমি দুনিয়া ও আখেরাতে সফল তবেই হেদায়েত ও সঠিক পথে থাকব

কিন্তু কেউ যদি এমন মনে করে, অন্যান্য মাখলুক ও জীব-জন্তুর যেমন কোনো শরীয়ত নেই, জীবনে কোনো বিধি-বিধান মেনে চলার বিষয় নেই, মানুষের কেন থাকবে, মানুষও তেমনই, তার হবে মনচাহি যিন্দেগী নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলব, স্বাধীনভাবে থাকব, শরীয়তের কোনো দরকার নেই এটাও আল্লাহকে ভুলে যাওয়া

কারণ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে শরীয়ত দান করা মানে কেবল আইন শুনিয়ে দেওয়া নয়; বরং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের মাধ্যমে শরীয়তের প্রতিটি বিধানের প্রায়োগিক রূপ ও আমলী নমুনা আল্লাহ দান করেছেন

কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللهَ كَثِیْرًا.

[বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে সূরা আহযাব (৩৩) :  ২১]

অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি যার ঈমান ও বিশ্বাস আছে, আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস আছে, তার যিন্দেগী মনচাহি ও খেয়াল-খুশি মতো হতে পারে না; তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে উত্তম, নির্ভুল ও সুন্দর আদর্শ রেখে দেওয়া হয়েছে সেটি দেখে দেখেই তাকে চলতে হবে

কাজেই যে ব্যক্তি শরীয়তে ইসলামী ভুলে গেল, উসওয়ায়ে হাসানাহ ভুলে গেল, সে মূলত আল্লাহকে ভুলে গেল

গ. আল্লাহর নিআমত ভুলে যাওয়া

অর্থাৎ যে আল্লাহর দেওয়া নিআমত ভুলে গেল, সে আল্লাহকে ভুলে গেল আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার এটি আরেক কঠিন দিক!

আল্লাহ তাআলা সরাসরি বলেননি যে, তোমরা আল্লাহকে ভুলো না! বরং বলেছেন, তোমরা ওদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে! এভাবে উপস্থাপনের মধ্যে অনেক ইঙ্গিত রয়েছে

একটি বড় নিআমত

আমার অস্তিত্ব প্রদান আমাকে দেওয়া আল্লাহ তাআলার এক অনেক বড় নিআমত! হাত-পা, চোখ-কান বাকশক্তিসহ যা কিছু তিনি দিয়েছেন, পুরোটাই আমার জন্য নিআমত! যাদের এসব নিআমতের কোনো একটা কমতি আছে, তাদের দেখেই তো বোঝা উচিত, আমি আল্লাহ তাআলার কত নিআমত ভোগ করছি! নিআমতগুলো অনেক বড়! কিন্তু সহজে ও মুফতে পেয়ে যাওয়ায় আমাদের কাছে সাধারণ ও স্বাভাবিক মনে হতে পারে!

জরুরি নিআমতগুলো কিন্তু সবার কাছেই আছে পাশাপাশি প্রত্যেকের কাছে এমন কিছু বিশেষ নিআমতও আছে, যা অন্যের কাছে হয়তো তুলনামূলক কম এসব নিআমতের শোকরও আদায় করা উচিত

যেভাবে শোকর আদায় হতে পারে

১. প্রথম শোকর আদায় তো এটাই যে, তাঁর ওপর আমরা ঈমান আনব

২. তাঁর দ্বীনের নুসরত করব

৩. তাঁর শরীয়ত গ্রহণ করব এবং মেনে চলব

৪. একমাত্র তাঁরই ইবাদত করব

৫. তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বানাব না

দুই. আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার শাস্তিস্বরূপ নিজেকে ভুলে যাওয়া

আল্লাহকে ভুলে গেলে পরিণতিতে তুমি নিজেকেও ভুলে যাবে আল্লাহ ভুলিয়ে দেবেন

আল্লাহ তাআলা বলেছেন

وَ لَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِیْنَ نَسُوا اللهَ فَاَنْسٰىهُمْ اَنْفُسَهُمْ  اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

অর্থাৎ ওদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে আল্লাহকে ভুলে গেলে আল্লাহ্ও তোমাকে তোমার কথা ভুলিয়ে দেবেন

নিজেকে ভুলে যাওয়ার প্রাথমিক স্তর

এর প্রাথমিক স্তর তো হল, তুমি যে দুনিয়াতে এসেছ আখেরাতের জন্য, সেটাই তোমার মনে থাকবে না এমনভাবে চলবে দুনিয়াতে, দেখে মনে হবে, এই দুনিয়াই সব এটাই শুরু, এটাই শেষ তোমার চলা-ফেরা, কথাবার্তা, আয়-ব্যয়, খরচ-উপার্জন এমনভাবে করছ, যেন এর পরে তোমার আর কোনো গন্তব্য নেই!

তোমার যাবতীয় কর্মকাণ্ড দেখে বোঝা যায়, তুমি আখেরাত নামে কিছু বিশ্বাস কর না! এটাই ভুলে যাওয়া আমাকে যে আরেক যিন্দেগীর জন্য এখানে পাঠানো হয়েছে, সেটাই ভুলে গেলাম আমি আল্লাহর বান্দা সেটাই ভুলে গেলাম ফিকিরই করছি না, আল্লাহর সামনে দাঁড়ালে কী জবাব দেব? তিনি তো আমাকে জিজ্ঞেস করবেন!

এই পুরো পৃথিবীর আয়োজন কি আল্লাহ তাআলা আমার জন্য এমনিতেই করেছেন? সব উপভোগ করব, কিন্তু আল্লাহর ইবাদত করব না! আল্লাহর বিধান মতো চলব না! আল্লাহর শরীয়ত মেনে চলব না! আল্লাহর নবীর সুন্নত মতো চলব না!

অন্তত এটুকু তো স্মরণে থাকা উচিত যে, আমার এসব করা জরুরি তবুও মানুষ হিসেবে কিছু ভুল-ত্রুটি হবে, হয়ে যাবে, তার জন্য তওবা করব কিন্তু আমি যদি উদাসীন হয়ে থাকি, আখেরাতকে ভুলে থাকি, আল্লাহর বান্দা হওয়ার বিষয়টা ভুলে থাকি, তাহলে তো ভয়াবহ কথা!

আমি মুমিন, কাজেই আমার যিন্দেগী অমুসলিমদের জীবনের মতো হতে পারে না আমি ইনসান, আমার যিন্দেগী চতুষ্পদ প্রাণীর মতো হতে পারে না একথা যদি ভুলে থাকি, এটাই হল কঠিন ভুলে যাওয়া

নিজেকে ভুলে যাওয়ারও বিভিন্ন স্তর রয়েছে কিছু আছে একেবারে কঠিন স্তর সব ধরনের ভুলে যাওয়া থেকেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে

এখন কথা হল, কেন এরকম আমরা ভুলে যাচ্ছি? কেন তওবা করার কথা মনে পড়ছে না?

তওবা করার কথা মনে না আসা  তো আরও কঠিনভাবে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া! নসীহতের পর নসীহত আসছে, কিন্তু কান থেকে ভেতরের দিকে যায় না, দিলে বসে না এগুলো নিজেকে ভুলে যাওয়ার কিছু আলামত ও নিদর্শন

নিজেকে ভুলে যাওয়া থেকে বাঁচব কীভাবে?

কয়েকটি বিষয় মনে রাখলে বান্দার জন্য অনেক কিছু সহজ হয়ে যায় সে নিজেকে ভুলে যাওয়া থেকে বাঁচতে পারে :

ক. সামনে থাকবে আখেরাত

আমি আল্লাহর মাখলুক ও বান্দা দুনিয়াতে সবসময় থাকব না এবং এটি চিরকাল থাকার জায়গাও না সবসময় এখানে থাকার জন্য আমাকে পাঠানোও হয়নি; আমার আসল ঠিকানা আখেরাত

কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে

وَ اِنَّ الدَّارَ الْاٰخِرَةَ لَهِیَ الْحَیَوَانُ.

[বস্তুত আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন সূরা আনকাবূত (২৯) : ৬৪]

অর্থাৎ ওই জীবনই আসল জীবন, যার শুরু আছে শেষ নেই আমাকে এই দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে সেই চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য

কারো অন্তরে যদি আখেরাতের ভয় থাকে, দুনিয়াতে তার যত বড় দাপট আর শক্তি থাকুক, সে বিনয়ী হবেই! যত বড় ক্ষমতাবানই হোক, কারো অন্তরে যদি একথা বিদ্যমান থাকে যে, আমি আল্লাহর বান্দা, তার বিনয়ী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই কারো প্রতি জুলুম করতে দশবার ভাববে, এখন যদিও তার ওপর আমার ক্ষমতা আছে, কিন্তু আল্লাহর সামনে দাঁড়ালে তখন কী হবে? এখন তাকে কিছু মানুষের সামনে একটা থাপ্পড় মেরে দিলাম, কিন্তু আল্লাহর সামনে যখন এর প্রতিশোধ স্বরূপ আমাকে থাপ্পড় মারা হবে, তখন কী হবে? অসংখ্য অগণিত মানুষ সেদিন আমার এই থাপ্পড় খাওয়া দেখবে! একেক জুলুমের পরিবর্তে আমার আমলনামা থেকে নেক আমলগুলো নিয়ে যাবে, তখন আমার কী দশা হবে?

কাজেই একথা কখনো ভোলা যাবে না যে, আমার এই যিন্দেগী মূল নয়; আখেরাতই আমার আসল ঠিকানা

খ. সবসময় মৃত্যুর ফিকির

মৃত্যু এমন বিষয়, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না এমনকি যে ব্যক্তির আল্লাহর ওপর বিশ্বাস নেই, নবী-রাসূল মানে না, ফেরেশতা মানে না, অদৃশ্য জগতের কিছুই মানে না এমন নাস্তিকও মৃত্যুকে অস্বীকার করতে পারে না

মৃত্যুর ফেরেশতা হাযির হওয়ার পর সে নিজেকে যেমন মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারে না, তার চারপাশের লোকজনও তাকে রক্ষা করতে পারে না

মজার কথা হল, মৃত্যুর ফেরেশতাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সকল নাস্তিকের নাস্তিকতা, সব বেঈমানের বেঈমানী শেষ হয়! যদিও এই সমাপ্তি তার কোনো কাজে আসে না সে আর ঈমানদার হতে পারবে না কারণ দেখে বিশ্বাস করলে আর ঈমানদার হতে পারে না

গ. হতে হবে প্রকৃত মুমিন

ঈমান তখনই ধর্তব্য হয়, যখন ঈমানটা ‘ঈমান বিল গাইব’ হয় ঈমান তো হয়ই অদৃশ্য জগতের বিষয়ে

আল্লাহ বা তাঁর রাসূল যা বলেছেন, তাঁদের সে কথার ওপর আস্থা রেখে তা বিশ্বাস করা ও মেনে নেওয়াকে ঈমান বিল গাইব তথা অদৃশ্য জগতের প্রতি ঈমান আনা বলা হয়

কুরআন কারীমের প্রথম দিকেই ইরশাদ হয়েছে

الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِالْغَیْبِ ..

যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে...

এভাবে মুত্তাকীদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে

মুত্তাকী হল যাদের গায়েবের প্রতি ঈমান আছে অদৃশ্য জগৎ ও ধরা-ছোঁয়ার বাইরের বিষয়কে বিশ্বাস করে তার এ বিশ্বাসটা কেবল এজন্য যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সংবাদ এসেছে আল্লাহ তাআলা ঈমান আনতে বলেছেন, ব্যস সে বলে

آمنّا.

[আমি ঈমান আনলাম]

মুমিন আরও বলে

سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا .

[আমরা (আল্লাহ ও রাসূলের বিধানসমূহ মনোযোগ সহকারে) শুনেছি এবং তা (খুশিমনে) পালন করছি সূরা বাকারা (০২) : ২৮৫]

মুমিনকে এজন্যই মুমিন বলা হয় অন্যথায় মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ফেরেশতা যখন জান কবয করার জন্য চলে আসে, তখন জান্নাত-জাহান্নাম এমনিতেই নজরে আসে

ঘ. মৃত্যুর আগেই সকল প্রস্তুতি

মৃত্যুর হাত থেকে কেউ যদি ফেরত আসতে পারত, তাকে হয়তো জিজ্ঞেস করা যেত, কী হয়েছিল সেখানে কিন্তু মৃত্যুর পর তো আর ফেরত আসার কোনো নিয়ম নেই কোনো সুযোগই নেই

কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে

مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْ لَاۤ اَخَّرْتَنِیْۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَ.

[তোমাদের কারো মৃত্যু এসে যাবে আর তখন বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কিছু কালের জন্য সুযোগ দিলে না কেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম সূরা মুনাফিকূন (৬৩) : ১০]

অর্থাৎ, আর কয়েকটা দিন যদি আমাকে সুযোগ দেওয়া হত! একটু দান-খয়রাত করে আসতাম! কিছু নেক আমল করে আসতাম!

কিন্তু তখন আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট ঘোষণা হবে

وَ لَنْ یُّؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا  وَ اللهُ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ.

যখন কারো নির্ধারিত কাল এসে যাবে, তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দিবেন না আর তোমরা যা-কিছু কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত সূরা মুনাফিকূন (৬৩) : ১১

অর্থাৎ আল্লাহর নিকট সবার জন্য যে নির্ধারিত সময় রয়েছে, সেই সময় এসে যাওয়ার পর এক মুহূর্তও আর পেছানো হয় না সুযোগ দেওয়া হয় না

জাহান্নামের কাছে গিয়েও বান্দা একই কথা বলবে

یٰلَیْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِاٰیٰتِ رَبِّنَا وَنَكُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِیْنَ.

হায়! আমাদেরকে যদি (দুনিয়ায়) ফেরত পাঠানো হত, তবে আমরা এবার আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মুমিনদের মধ্যে গণ্য হতাম সূরা আনআম (০৬) : ২৭

সবকিছু দেখার পর বান্দা আবার দুনিয়াতে ফেরত পাঠানোর আকুতি জানাবে তখন বান্দা সবকিছুর ওপর ঠিকভাবে ঈমান আনবে, নেক আমল করার ওয়াদা করবে

কিন্তু তখন সেই সুযোগ আর থাকবে না কারণ অদৃশ্য বিষয়গুলো দেখে ফেলার পর ভালোভাবে চললে তো আর পরীক্ষা হল না পরীক্ষা তো হল মহান আল্লাহ তাআলা যিনি ‘আসদাকুল কা-ইলীন’ এবং আমাদের খালিক ও মালিক, তাঁর কথা ও সংবাদের ওপর আস্থা রাখতে পারা

যদি এমন হয় যে, বেঈমানদের কথা বিশ্বাস করেছ; আল্লাহর কথা বিশ্বাস করনি, বেঈমানদের কথা বিশ্বাস করেছ; আল্লাহর রাসূলের কথা বিশ্বাস করনি, এখন তুমি বলছ, আমি আবার দুনিয়াতে যাব, এটা তো হয় না 

ঙ. পরকালের জন্য কিছু পাঠানো

আমি আল্লাহর বান্দা ও মাখলুক তিনি আমার রব আল্লাহ আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন আখেরাতের প্রস্তুতির জন্য আখেরাত যার সুন্দর তার সব সুন্দর! আখেরাতই আমার আসল ভবিষ্যৎ মা-বাবা সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, তার আসল ভবিষ্যৎ মৃত্যু পরবর্তী ভবিষ্যৎ তাই শুধু মৃত্যুপূর্ব জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করলে কাজ হবে না মূলত কবর থেকেই আমাদের মূল ভবিষ্যতের শুরু তাই সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে

সেকথাই কুরআন কারীমে বলা হয়েছে

وَ لْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ.

প্রত্যেকেই চিন্তা কর ও ভেবে দেখ, আগামীকালের জন্য কী পাঠিয়েছ? কবর, হাশর এবং পরবর্তী সকল ধাপের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ? সেখানে কী পাঠিয়েছ? সেখানে পাঠানোর মূল জিনিস হল নেক আমল করা এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা

নেক আমল করলে যেমন সেখানে পৌঁছে যায়, গুনাহ না করা হলে, গুনাহ থেকে বাঁচলে সেটাও পৌঁছে যায় এভাবে লেখা থাকবে যে, এই বান্দা আল্লাহর ভয়ে গুনাহ করেনি

এভাবে আল্লাহর খাযানায় যা যা যুক্ত হবে, তা আর কমে যাওয়ার শঙ্কা নেই

পরকালের জন্য কী পাঠানো হয়েছে, সেই বিষয়ে সতর্ক করার পর আল্লাহ তাআলা বলেছেন

وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوا اللهَ فَاَنْسٰىهُمْ اَنْفُسَهُمْ  اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ.

ওদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে আল্লাহকে ভুলে গেলে আল্লাহও তোমাকে তোমার কথা ভুলিয়ে দেবেন

আমরা একটুও ভাবি না, দুনিয়ার একাউন্টে তো কত কিছু জমা করলাম, কিন্তু আখেরাতের একাউন্টে কিছু জমা হয়েছে তো আমার? ফলে যত বড় থেকে বড় পাপ সামনে আসে, করে ফেলা হচ্ছে! বড় থেকে বড় অপরাধগুলো করে ফেলতে ভেতরে কোনো ভয় কাজ করে না!

নিজেকে ভুলে যাওয়ার দ্বিতীয় দিক :  আল্লাহর বান্দাদের ভুলে যাওয়া

আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার শাস্তিস্বরূপ নিজেকে ভুলে যাওয়ার কঠিন আরেক দিক হল, আল্লাহর বান্দাদেরকে ভুলে যাওয়া

আল্লাহর কোনো বান্দার ওপর জুলুম হচ্ছে আর তাকে জুলুম থেকে রক্ষা করার সামর্থ্যও আমার আছে; তা সত্ত্বেও আমি তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি না এভাবে আল্লাহর বান্দাদের ভুলে যাওয়া আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার বড় একটা প্রকাশ যেখানে আমার দায়িত্ব আছে এবং জুলুম থেকে রক্ষা করার জন্য আমার সাধ্য ও সামর্থ্যরে মধ্যে করণীয় কিছু থাকে, অথচ তা নিয়ে আমি ভাবলাম না এবং করলাম না, তাহলে আমি আল্লাহর বান্দাকে ভুলে গেলাম আল্লাহর মাখলুককে ভুলে গেলাম, এটাও আল্লাহকে ভুলে যাওয়া

প্রসিদ্ধ দুটি ঘটনা ও শিক্ষা

এক মহিলা বিড়ালকে বেঁধে রেখেছে না বাঁধলে হয়তো সে আশপাশে ঘুরেফিরে কিছু খেতে পারত সে সুযোগও দিল না, নিজেও বিড়ালকে কোনো খাবার-পানি দিল না অবশেষে বিড়ালটা মারা গেল ফলে মহিলার ঠিকানা জাহান্নামে হল কারণ সে আল্লাহর মাখলুককে কষ্ট দিল চিন্তাই করল না যে, এও তো আল্লাহর মাখলুক তারও তো হক আছে কেন তার ওপর আমি জুলুম করছি? কেন তাকে কষ্ট দিচ্ছি? ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা যা হওয়ার তাই হয়েছে [দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৩১৪০]

পক্ষান্তরে আরেক পাপিষ্ঠ মহিলা পিপাসার্ত কুকুরের জন্য কূপ থেকে পানি উঠিয়ে তাকে পান করিয়ে আল্লাহ তাআলার মাগফিরাত লাভ করে ধন্য হয়ে গেল কারণ পাপ করার পর একদিকে তার নিজের মধ্যে যেমন অপরাধবোধ ছিল, সাথে আল্লাহ তাআলার মাখলুকের প্রতিও তার অন্তরে দরদ ছিল [দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৩১৪৩]

এক হল পাপ করে অহংকার করা এবং বেপরোয়া ভাব দেখানো আরেক হল, পাপ হওয়ার পর নিজের মধ্যে অপরাধবোধ থাকা কুকুরের এই দৃশ্য দেখে নিশ্চয় তার অপরাধবোধ আরও জাগ্রত হয়েছে সে দিল থেকে তওবা করে আল্লাহর মাখলুকের এই সেবাটা অন্তত করেছে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন

ন্যূনতম দয়া ও মানবতা

যে কোনো ইনসানের মধ্যেই এটুকু দয়া থাকা উচিত কেউ যদি ‘মানুষ’ হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহর কোনো মাখলুকের কষ্ট সে সহ্য করতে পারে না; বরং এই কষ্ট দূর করার ব্যাপারে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখা যদি তার জন্য সম্ভব হয়, সেটি সে করে সাধ্য অনুযায়ী মাজলুমের পক্ষে ভূমিকা রাখা হল আল্লাহকে স্মরণ করা এক্ষেত্রে গাফেল ও উদাসীন হয়ে পড়ে থাকা হল আল্লাহকে ভুলে যাওয়া

আমরা হাদীসে পড়েছি, আখেরাতে আল্লাহ তাআলা এভাবে প্রশ্ন করবেন

يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي.

আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি

বান্দা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি কীভাবে আপনাকে খাওয়াতে পারি, যখন আপনি জগৎসমূহের প্রতিপালক?

অর্থাৎ আপনি তো অমুখাপেক্ষী, আপনি খাওয়া-দাওয়ার মুখাপেক্ষী নন আল্লাহ, আপনি তো মাখলুকের সকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে সুতরাং কীভাবে আপনাকে আমি খাওয়াব?

আল্লাহ বলবেন

أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلَانٌ، فَلَمْ تُطْعِمْهُ؟ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي.

তুমি কি জানতে না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, অথচ তুমি তাকে খাবার দাওনি? তুমি কি জানতে না যদি তাকে খাবার খাওয়াতে, তবে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে? সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৯

মনে রাখবেন, আল্লাহর মাখলুককে ভুলে যাওয়া, আল্লাহর মাখলুকের যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা আমার দ্বারা সম্ভব, সেটা না করা, বিশেষত প্রয়োজন ও ঠেকার সময় এবং যখন তার ওপর জুলুম হচ্ছে, তখন যদি তার পাশে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে আমি আল্লাহকে ভুলে গেলাম!

জুলুম দেখে চুপ থাকা!

এমনিতে যারাই যেখানে জুলুম করছে, সকল জালেম আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, নিজেদেরকেও ভুলে গিয়েছে

সাথে সাথে যারা এসব জুলুম দেখে চুপ থাকে, ভাবখানা এমন, যেন কোনো তামাশা দেখছে! কারো মুখে কোনো কথা নেই! প্রতিবাদ নেই! কারো কোনো চিন্তা নেই, মাথাব্যথা নেই! এমন উদাসীন পড়ে থাকা আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার নিকৃষ্টতম পন্থা এ থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন!

আমরা কি আসলেই অক্ষম

অনেক শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিজেদের কেন মাযূর (অক্ষম) মনে হয়? বাস্তবেই কি সবাই অক্ষম?

বর্তমান বিশ্বের অবস্থা এমন যে, সবাই নিজেকে অক্ষম মনে করে গাজায় গণহত্যা চলছে, জাতিগত নিধন চলছে, নিজেরাই যুদ্ধবিরতির চুক্তি করল, কিন্তু সেই চুক্তি ভঙ্গ করে নিজেরাই নতুন করে হামলা শুরু করল হাজার হাজার নারী-শিশু শহীদ হচ্ছে আর গোটা বিশ্ব নীরব ভূমিকা পালন করছে আবার তারাই মানবাধিকারের স্লোগান দেয়! বিষয়টা কিন্তু সবাই দেখছে আমি দেখছি, আমি বলি, আমি কী করতে পারি? আপনি দেখছেন, আপনি বলছেন, আমার কী করার আছে? আমাদের দেশের সরকার দেখছে, সরকার বলে, আমরা কী করতে পারি? পাকিস্তান সরকার দেখছে, তারা বলে, আমরা কী করতে পারি? আরব দেশগুলো দেখছে, তারা বলে, আমরা কী করতে পারি? যেন সবাই মাযূর ও অপারগ! কারোরই কিছু করার কোনো শক্তি-সামর্থ্য নেই আসলেই কি সবাই মাযূর ও  অক্ষম?!

বাস্তবে অক্ষম হওয়া আর নিজেকে অক্ষম মনে করা এক নয়

এ তো গুনাহের শাস্তি

আরেকটা বিষয় হল, অনেক ওযর ও অপারগতা মূলত নিজেদের গুনাহের শাস্তি ওই গুনাহ থেকে বের হয়ে এলেই কাজ হয়ে যায় ওসব অপরাধ ছেড়ে তওবা করলেই ঈমানী শক্তি জাগ্রত হয়ে যায়! তখন দেখা যাবে, আপনার ঈমানী শক্তি কত বেশি! তখন নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যগুলো সামনে আসবে; যেগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে সমস্ত জালেম শক্তি পরাস্ত হতে বাধ্য!

আমার কাছে যদি আমার আখেরাতের ফিকিরই না থাকে, আল্লাহর বান্দার কোনো কদরই যদি আমার অন্তরে না থাকে, তখন হাজারো শক্তি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অক্ষম ও মাযূরই মনে হবে!

এখন সৌদি আরবও মাযূর! মিশরও মাযূর! জর্ডানও মাযূর! মধ্যপ্রাচ্যের সবাই মাযূর কেউ পারছে না পাশে দাঁড়াতে অথচ কেউই মূলত মাযূর নয়; বরং প্রত্যেকের কাছেই আছে শক্তি-সামর্থ্য; নেই কেবল ঈমানী শক্তি নেই আল্লাহর বান্দাদের প্রতি ভালবাসা! নেই মুসলিম উম্মতের প্রতি দরদ ও ব্যথা!

মুসলিম দেশগুলো যদি আজও নিজেদের ঈমানী শক্তিকে জাগ্রত করে, এক আমেরিকা কেন; আরও দশ আমেরিকাও যদি ইজরাইলের পেছনে থাকে, মুসলিম উম্মতের সঙ্গে তাদের পারার কোনো সম্ভাবনা নেই ইনশাআল্লাহ!

কী কী পন্থায় মজলুমের পাশে দাঁড়াতে পারি?

মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর অনেক পদ্ধতি আছে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তো হল সামরিক শক্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা সেটি তো মুসলিম সরকারগুলোর কাজ পৃথক পৃথকভাবে মুসলিম দেশগুলোর হয়তো ওরকম শক্তি হবে না, কিন্তু সকল দেশ যদি এই পয়েন্টে এক হয়ে যায় যে, আমরা মজলুমের পাশে দাঁড়াব, তাহলে তাদের জাগতিক শক্তির সামনেই অন্যদের শক্তির কোনো তুলনা নেই

সঙ্গে ঈমানী শক্তি যদি যুক্ত হয়, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই কিন্তু এ ছাড়াও আরও বিভিন্নভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর এবং সাহায্য সহযোগিতা করার পন্থা আছে; সেগুলোর ব্যাপারে উদাসীন থেকে কখনোই আমরা নিজেদের মাযূর মনে করতে পারি না

সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা যাক

ক. নির্ভরযোগ্য সূত্রে আর্থিক সহযোগিতা পৌঁছানোর চেষ্টা করা

খ. যার যার জায়গা থেকে ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত প্রতিবাদ জানানো

গ. সর্বোপরি তাদের জন্য দুআ ও রোনাজারি অব্যাহত রাখা

ঘ. নিজের ইসলাহ ও সংশোধন করার ফিকির করা

একদিকে দেখছি, সেখানে কঠিন হালত চলছে নারী-শিশুদের ওপর, মুসলিম ভাই বোনদের ওপর, অপরদিকে আমি বসে বসে মোবাইল দেখে চোখের গুনাহ করছি, নাজায়েয দৃশ্য দেখছি! চিন্তাও হচ্ছে না, আহারে সেখানে বোমার আঘাতে আমার মা-বোনরা শেষ হয়ে যাচ্ছে, শিশুরা হতাহত হচ্ছে অন্তত এই সময়গুলোতে আমার নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার! দুই রাকাত নামায পড়ে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি! এটাও তো একপ্রকার তাদের পাশে দাঁড়ানো

এগুলো আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে! আমি গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে তাদের জন্য দুআ করব, এটাও তাদের অনেক বড় সাহায্য

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন, কবুল করুন!

 

[শ্রুতলিখন : মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম]

 

advertisement