Zilqad 1446   ||   May 2025

মানবসেবায় ওয়াকফের ভূমিকা

মাওলানা শাহাদাত সাকিব

দান-সদকা মুমিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তাই পবিত্র কুরআন ও হাদীসে দান-সদকার অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْفِقُوْا مِنْ طَیِّبٰتِ مَا كَسَبْتُمْ وَ مِمَّاۤ اَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْاَرْضِ.

হে মুমিনগণ! তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর সূরা বাকারা (০২) : ২৬৭

সাধারণ দান তো আছেই; নিজের প্রিয় বস্তু দান করার মাধ্যমেও মুমিনদেরকে পুণ্য অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰی تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ.

তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে সূরা আলে ইমরান (০৩) : ৯২

তাছাড়া মানুষ সামাজিক জীব সে একা চলতে পারে না পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হয় একের বিপদে অন্যে সাহায্যের হাত বাড়াবে, এগিয়ে আসবে সহমর্মিতা নিয়ে; নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে সাহায্য ও সহমর্মিতার এই বোধ জাগিয়ে তুলেছেন

তাই মুসলিম সমাজে কোনো পীড়িত কিংবা অসহায় ব্যক্তি সংকটগ্রস্ত হলে একাকিত্ব বোধ করে না কারণ পাশেই আছে তার ভাই ভ্রাতৃত্বের টানে যে এগিয়ে আসবে সাহায্যের জন্য ইসলাম সকল মুসলমানকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ .

নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১০

তাই অপর ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসা, দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেওয়াই ইসলামের শিক্ষা ইতিহাস সাক্ষী এ শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য মুসলিম হৃদয়বান মানুষেরা সব সময় এগিয়ে এসেছেন সামাজিক প্রয়োজনে এবং দরিদ্র মানুষের কল্যাণে স্থায়ীভাবে দান করে গিয়েছেন নিজের সম্পদ পরিভাষায় যাকে ওয়াকফ বলে

ওয়াকফ দানেরই একটি প্রকার তবে এর রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অন্য সাধারণ দানের সুফল মানুষ সাময়িক সময়ের জন্য ভোগ করে কিন্তু ওয়াকফের সুফল ও কল্যাণের ধারা চলতে থাকে যুগের পর যুগ শতাব্দী থেকে শতাব্দী ওয়াকফের বৈশিষ্ট্য আলোচনা প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. বলেন

وفيه من المصالح التي لا توجد في سائر الصدقات، فإن الإنسان ربما يصرف في سبيل الله مالا كثيراً ثم يفنى، فيحتاج أولئك الفقراء تارة أخرى، ويجيء أقوام آخرون من الفقراء فيبقون محرومين، فلا أحسن ولا أنفع للعامة من أن يكون شيء حبسًا للفقراء وابن السبيل، يصرف عليهم منافعه و يبقى أَصله على ملك الْوَاقِف.

ওয়াকফের মধ্যে যে সমূহ কল্যাণ রয়েছে, তা অন্য কোনো দানের মধ্যে পাওয়া যায় না কারণ মানুষ অনেক সময় আল্লাহর পথে হয়তো প্রচুর সম্পদ দান করে কিন্তু একটা সময় সে দানকৃত বস্তু শেষ হয়ে যায় ফলে তার দান পেয়ে উপকৃত মানুষেরা পুনরায় প্রয়োজনগ্রস্ত হয়ে পড়ে আবার পরবর্তীতে আসা দরিদ্র মানুষেরাও তার দান থেকে বঞ্চিত থাকে তাই সাধারণ মানুষদের জন্য এর চেয়ে সুন্দর ও কল্যাণময় আর কিছু হতে পারে না যে, কিছু সম্পদ অসহায় মানুষদের কল্যাণের জন্য ওয়াকফ করে দেওয়া হবে; যা স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকবে আর তা থেকে উপার্জিত আয় অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হবে হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা, খ. ২, পৃ. ১৮০

ওয়াকফ মানবসেবা ও সমাজসেবার একটি স্থায়ী মাধ্যম তাইতো মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে সকল দেশের সকল যুগে ওয়াকফ ছিল সেবামূলক কাজের মূল চালিকাশক্তি ইসলামী সভ্যতার সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ একটি দিক হিসেবে ওয়াকফকে গণ্য করা হয় মানুষের প্রতি মমতা, দরিদ্রদের প্রতি দয়া, অসহায় মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দের যে প্রকাশ ওয়াকফের মাধ্যমে মুসলিম জাতি দেখিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল তাই ওয়াকফের ইতিহাস ইসলাম ও মুসলমানদের গর্বের ইতিহাস ওয়াকফের ইতিহাস মুসলমানদের মানবতা ও মহানুভবতার ইতিহাস ওয়াকফের ইতিহাস মুসলমানদের মর্যাদা ও গৌরবের ইতিহাস এই গর্ব ও গৌরব, এ মানবতা ও মহানুভবতা মুসলিমদের পরিচিত করেছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে

সমাজসেবায় ওয়াকফের ভূমিকা

সমাজের বিভিন্ন সেবাধর্মী কাজে ও সামাজিক উন্নয়নে ওয়াকফের অবদান অনস্বীকার্য সব যুগের সকল দেশের মুসলমানরাই ওয়াকফের ব্যাপারে ছিল বিশেষ মনোযোগী ক্ষুধার্তকে অন্নদান, অসহায়দের আশ্রয় প্রদান, পথচারীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা এ সবকিছুই হত ওয়াকফের সম্পদ থেকে  দরিদ্র ও অভাবী, এতীম ও বৃদ্ধ, পাগল ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণ সাধন কিংবা মাদরাসা, গ্রন্থাগার ও হাসপাতাল নির্মাণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ যেমন, কবরস্থান প্রতিষ্ঠা, কূপ ও নদী খনন, রাস্তাঘাট ও সেতু স্থাপন ইত্যাদি কোনো কিছুই ওয়াকফের বাইরে ছিল না বরং মুসলমানরা কুকুর, বিড়াল, পাখি ইত্যাদি প্রাণীদের কল্যাণেও ওয়াকফ করার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল পৃথিবীর বুকে

স্বচ্ছল মানুষেরা সমাজের বিভিন্ন সেবাখাত নির্দিষ্ট করে তার জন্য সম্পদ ওয়াকফ করত এবং সে সম্পদের উপার্জিত আয় থেকে সংশ্লিষ্ট সেবাটি পরিচালিত হত কেউবা একাধিক সেবাখাতের জন্যও নিজের সম্পদ ওয়াকফ করত বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো মনে করে থাকে ওয়াকফ শুধু মসজিদ-মাদরাসা ও কবরস্থানকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে এর বাইরেও যে ওয়াকফের আরও ধরন ও ক্ষেত্র আছে এটা অনেকে জানেই না তাই আমরা এ প্রবন্ধে মুসলিম ইতিহাসে সমাজসেবামূলক অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওয়াকফের ধরন ও ওয়াকফের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব

বন্দি মুক্তির জন্য ওয়াকফ

পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দী জুড়ে মুসলিম বিশ্বের ওপর ক্রুসেডারদের একের পর এক হামলা হতে থাকে  একপর্যায়ে বাইতুল মাকদিসও হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল মুসলমানদের অবশেষে সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর মাধ্যমে বাইতুল মাকদিস পুনরুদ্ধার হয়েছিল এ সময়জুড়ে বিভিন্ন যুদ্ধে অনেক মুসলমান ক্রুসেডারদের হাতে বন্দি হত বন্দি বিনিময় বা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করতে হত এক্ষেত্রে অনেকেরই সামর্থ্য থাকত না মুক্তিপণ দিয়ে আপনজনকে মুক্ত করার তখন বন্দি মুক্তির জন্য ওয়াকফের নতুন ধারা শুরু হয় সম্পদশালীগণ নিজেদের বিপুল সম্পদ ওয়াকফ করতেন, যার আয় বন্দি মুক্তির জন্য ব্যয় হত এক্ষেত্রে কাজী আবদুর রহীম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তিনি ছিলেন সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর খুব কাছের একজন মানুষ তার ব্যাপারে জামাল উদ্দিন বিন শীছ বলেন

কাজী আবদুর রহীমের বিশাল সম্পদ ছিল যার ভাড়া থেকে তিনি বিশাল অঙ্কের অর্থ লাভ করতেন একবার তিনি হজ্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাহনে চড়লেন এবং যখন এ জমির নিকট পৌঁছলেন, সেখানে থামলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আমার কাছে এ সম্পদ থেকে অধিক প্রিয় আর কিছু নেই আপনি সাক্ষী থাকুন, ফিরিঙ্গিদের হাত থেকে মুসলিম বন্দিদের মুক্ত করার জন্য আমি তা আপনার জন্য ওয়াকফ করে দিলাম (দ্র. আলমাওয়াইযু ওয়াল ই`তিবার লিল মাকরীযী, খ. ৩, পৃ. ১৪৪)

এই ওয়াকফের মাধ্যমে কাযী আবদুর রহীম মানুষের কী পরিমাণ  দুআ ও ভালবাসা পেয়েছিলেন, তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন কাযী মহিউদ্দীন তিনি বলেন

কাজী আবদুর রহীমের ওয়াকফকৃত সম্পদ থেকে অনেক অর্থ উপার্জিত হত এগুলো দিয়ে ক্রুসেডযুদ্ধে ফিরিঙ্গিদের হাতে বন্দি মুসলমানদের ক্রয় করে মুক্ত করা হত...

তিনি বলেন

سمعتهم مرارا يقولون: يا الله يا رحمن يا رحيم! ارحم القاضي الفاضل عبد الرحيم.

বন্দিদশা থেকে মুক্ত মানুষদের আমি অনেকবার কাজী আবদুর রহীমের জন্য এ দুআ করতে শুনেছি হে আল্লাহ, হে রহমান, হে রহীম! আপনি কাজী আবদুর রহীমের ওপর দয়া করুন (দ্র. আলমাওয়াইযু ওয়াল ই`তিবার লিল মাকরীযী, খ. ৩, পৃ. ১৪৪)

শত্রুর হাতে বন্দি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া মানুষের হৃদয়ের কেমন দরদমাখা দুআ এ মহান ব্যক্তি লাভ করতেন তা সহজেই অনুমেয়

অতিথি সেবা ও আপ্যায়ন-গৃহ

এখন তো আবাসিক হোটেলের রেওয়াজ হয়েছে কিন্তু আগের সময়ের কথা চিন্তা করুন অপরিচিত কোথাও সফর রাস্তাঘাট সবকিছুই অচেনা প্রচণ্ড গরম কিংবা শীতের যন্ত্রণাও শুরু হয়েছে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্তশ্রান্ত প্রয়োজন একটু বিশ্রামের কোথাও যদি একটু বিশ্রাম নেওয়া যেত কিংবা রাতটা কাটানো যেত, বাকিটা পথ চলতে সহজ হত কিন্তু অচেনা শহরে সে সুযোগ কোথায়?

হাঁ, আগন্তুক বা মুসাফির পথচারীদের এ কষ্টের কথা চিন্তা করেই সোনালি যুগে বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল অতিথিসেবা ও আপ্যায়ন-গৃহ যেসকল মুসাফির পথচারীদের একটু বিশ্রাম, সামান্য খাবারের প্রয়োজন হত তারা সে গৃহে গিয়ে এ সেবা পেতেন স্বাচ্ছন্দ্যে

যেসকল বাস্তুহারা মানুষদের থাকা খাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না, তারাও আশ্রয় পেত সেখানে খাবারের পাশাপাশি পোশাকেরও ব্যবস্থা করা হত সেখান থেকে আর এ আপ্যায়ন-গৃহের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করার জন্য ছিল নির্দিষ্ট ওয়াকফের সম্পদ বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন

ومنها أوقاف لأبناء السبيل؛ يُعطون منها ما يأكلون ويلبسون ويتزوَّدُون لبلادهم

অর্থাৎ (দামেশকে) কিছু ওয়াকফ ছিল পথচারীদের জন্য পথচারী মানুষদের খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাথেয়ও সরবরাহ করা হত সেখান থেকে (দ্র. রিহলাতু ইবনে বাতুতা, খ. ১, পৃ. ৭৯)

হাসপাতালের জন্য ওয়াকফ

সুস্থতা আল্লাহ তাআলার দেওয়া অনেক বড় নিআমত একজন অসুস্থ মানুষই গভীরভাবে অনুভব করে এ নিআমতের গুরুত্ব সুস্থতা সবার কাম্য হলেও চাইলেই সবাই সব সময় সুস্থ থাকতে পারে না বিভিন্ন সময় নানা কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয় তখনই আমরা শরণাপন্ন হই হাসপাতাল ও ডাক্তারের

মানুষের চিকিৎসার প্রয়োজনে ডাক্তার ও হাসপাতাল ব্যবস্থার এ ধারা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে বর্তমান যুগে হাসপাতাল ও চিকিৎসাব্যবস্থা অর্থ উপার্জনের বড় একটি মাধ্যম সেবার স্লোগান শুধুই কথার কথা তবে মুসলিমদের সোনালি ইতিহাসে হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রদানকে আক্ষরিক অর্থেই দেখা হত সেবা প্রদানের সুযোগ হিসেবে তাই সমাজসেবী মানুষেরা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাকে ভাবতেন সমাজসেবা ও মানবসেবার একটি পুণ্যময় মাধ্যম এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের চিন্তা তারা করতেন না তাইতো হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য তারা নিজেদের সম্পদ ওয়াকফ করতেন যার ফলে অসুস্থ মানুষেরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা লাভ করত হাসপাতাল পরিচালনার যাবতীয় ব্যয় ওয়াকফের আয় থেকে বহন করা হত সুলতান ফিরোজ শাহী নিজের আত্মজীবনীতে লেখেন

`আল্লাহ তাআলা আমাকে দারুশ শিফা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার তাওফীক দান করেছেন যেন সাধারণ ও বিশেষ সকল শ্রেণির মানুষেরা এখানে এসে চিকিৎসাসেবা লাভ করতে পারে এ হাসপাতালে রোগীদের রোগ নির্ণয় চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান করার জন্য সব সময় চিকিৎসকগণ উপস্থিত থাকেন তারা ওয়াকফের আয় থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধপত্র প্রদান করে থাকেন (দ্র. ফুতুহাতে ফিরোজ শাহী, পৃষ্ঠা ১৫-১৬)

দৈনিক ভাতা ও খাদ্য প্রদান

পৃথিবীতে সবাই সুখ ও আনন্দে থাকতে চায় কিন্তু সুখ তো আর সবার হাতে ধরা দেয় না তখন দুঃখকে বরণ করে নিয়েই চালাতে হয় জীবনতরি সে তরিতে কখনো সুখের দোলা লাগলেও তা সাময়িক নতুবা দুঃখ-কষ্টই তাদের নিত্যসঙ্গী এসকল দুঃখী মানুষের মুখে কীভাবে হাসি ফোটানো যায়, তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করা যায়, সুখের একটু ছোঁয়া যেন তাদের জীবনেও লাভ হয় তা নিয়ে কিছু মানুষ ভাবতেন সব যুগেই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন এর জন্য কোনো কোনো হৃদয়বান মানুষ সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে নিজের সম্পদ ওয়াকফ করতেন সে সম্পদের আয় থেকে প্রতিদিন নিম্নআয়ের অসহায় মানুষদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হত আর যারা একেবারেই উপার্জনে অক্ষম, তাদের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হত আর মাঝে মাঝে বিতরণ করা হত প্রয়োজনীয় পোশাক

অর্থাৎ কিছু সম্পদ ও স্থাবর জমি ওয়াকফ করা ছিল; যেগুলোর আয় দরিদ্র, অসহায়, সংকটগ্রস্ত পরিবার ও বিপদগ্রস্ত রোগীদের জন্য ব্যয় করা হত এসকল ওয়াকফ থেকে সুবিধাভোগী মানুষেরা প্রতিদিন স্বল্প পরিমাণ অর্থ দৈনিক ভাতা হিসেবে গ্রহণ করত যারা জীবিকা অর্জনে সক্ষম তাদের জন্য ছিল এ ব্যবস্থা আর যারা একেবারেই অক্ষম, তারা সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার লাভ করত ওয়াকফের সম্পদ থেকে আর মাঝেমধ্যে প্রয়োজনীয় পোশাকও বিতরণ করা হত (দ্র. দাওরু আওকাফিল মারিসতান ফিল হায়াতিল ইজতিমাইয়্যাহ বিমাদিনাতি ফাস, পৃ. ১৮৪)

ঋণ প্রদানের জন্য ওয়াকফ

প্রয়োজনের সময় ঋণ গ্রহণ করা একটি স্বাভাবিক বিষয় আর সমস্যাগ্রস্ত মানুষদের ঋণ প্রদান করা প্রত্যেকের মানবিক দায়িত্ব হাদীস শরীফে করযে হাসানা দেওয়ার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে অনেক সময় প্রয়োজনগ্রস্ত মানুষেরা কার থেকে ঋণ গ্রহণ করবে এ নিয়ে দ্বিধা সংশয়ে থাকে অপরিচিত মানুষের কাছে চাওয়াও যায় না, আবার পরিচিতদের কাছে চাইতেও সংকোচ হয় এসময় একটা মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয় তার মাঝে তাই ঋণ প্রদানের জন্য মুদ্রা ওয়াকফ করার একটি বৈচিত্র্যময় ধারা ছিল বিভিন্ন অঞ্চলে

এর পদ্ধতি ছিল, কেউ বড় অঙ্কের অর্থ ওয়াকফ করত ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে এর জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হত যার ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন হত, সে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে এসে ওয়াকফকৃত মুদ্রা থেকে ঋণ গ্রহণ করত নির্দিষ্ট সময় শেষে তা  আবার পরিশোধ করে দিত এ পদ্ধতির কারণে কাউকে ঋণ গ্রহণের জন্য  মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে হত না (দ্র. আলওয়াকফু ফিল ফিকরিল ইসলামী, খ. ১, পৃ. ১৩৫)

হজ্ব প্রত্যাশী দরিদ্রদের জন্য ওয়াকফ

হজ্ব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম তা কেবল সম্পদশালী সক্ষম ব্যক্তির ওপর ফরয হলেও ধনী-গরিব প্রতিটি মুমিনেরই জীবনের স্বপ্ন এ স্বপ্ন বুকে ধারণ করে অতিবাহিত হয় মুমিনের রাতদিন তবে সবার এ স্বপ্ন পূরণ হয় না স্বপ্ন-পূরণ করার সামর্থ্যও রাখে না সবাই তবে যারা ছিলেন বাইতুল্লাহর আশেক, বাইতুল্লাহর মুসাফির হওয়া ছিল যাদের  দিলের তামান্না, জীবনের স্বপ্ন, তাদের এ স্বপ্ন ও তামান্না পূরণে এগিয়ে এসেছিলেন সমাজের ধনবান ও হৃদয়বান মানুষেরা হজ্ব করার সামর্থ্য নেই এমন লোকদের হজ্বের খরচাদির জন্য ওয়াকফের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এর ফলে সামর্থ্যহীন মানুষেরাও সুযোগ পেতেন হজ্ব করার, যিয়ারতে বাইতুল্লাহর বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন

দামেশক শহরের ওয়াকফের ধরন ও ব্যয়-খাত গুনে শেষ করা যাবে না তার মধ্যে একটি হল হজে¦র সামর্থ্যহীন মানুষদের হজে¦র ইচ্ছা-পূরণের জন্য ওয়াকফ রিহলাতু ইবনে বাতুতা, পৃ. ৭৯

হজ্বকেন্দ্রিক অনেক ধরনের ওয়াকফের প্রচলন ছিল সে যুগে হাজ্বীদের খাবার-দাবার, বাসস্থান, যাতায়াত সুবিধা সবকিছুর জন্যই ছিল আলাদা আলাদা ওয়াকফ মুগীরা বিন আবদুর রহীম তার সম্পদের একাংশ ওয়াকফ করেছিলেন; যেন তা থেকে উপার্জিত আয় দ্বারা মিনায় অবস্থানের দিনে হাজ্বীদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয় যুগ যুগ ধরে এ ধারাটি চালু ছিল (দ্র. নিযামুল ওয়াকফ, পৃ. ২৭১)

রামলা বিনতে আবদুল্লাহ বিন আবদুল মালেক মক্কা শরীফে হজ্ব ও ওমরা সম্পাদনকারীদের অবস্থানের জন্য একটি গৃহ ওয়াকফ করেছিলেন যা অনেক হাজ্বী ও ওমরাকারীদের জন্য বাইতুল্লাহ যিয়ারতের সময় মক্কায় অবস্থানকে সহজ করেছিল এ দানশীল নারী আরও কিছু সম্পদ ওয়াকফ করেছিলেন যেন তার অর্থ দিয়ে এ গৃহের অন্যান্য সেবামূলক কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পাদন করা যায় (আখবারু মাক্কা লিল আযরুকী, খ. ২, পৃ. ২৪৯)

নিরক্ষরতা দূর করার জন্য ওয়াকফ

আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর হুকুম মেনে চলা মুমিন বান্দার মূল দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার হুকুম জীবনের সমস্ত অঙ্গন জুড়ে পরিব্যাপ্ত ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন সবকিছুতেই রয়েছে আল্লাহ তাআলার হুকুম একজন প্রকৃত মুমিন জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন করে না তাই কোন্ ক্ষেত্রে আল্লাহর কী আদেশ ও নিষেধ তা জানা একজন মুমিনের অবশ্য-কর্তব্য কিন্তু অসংখ্য মানুষ এমন আছেন, যাদের জীবনের দীর্ঘ একটা সময় জাগতিক জ্ঞান অর্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি ইত্যাদিতে কেটে যায় পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার দরুন দ্বীনের মৌলিক জ্ঞানটুকুও অর্জন করার সুযোগ হয়ে ওঠে না পারিবারিক অসচেতনতা, দ্বীন শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া, কিংবা নিজের অবহেলা এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ এ ধরনের মানুষ বর্তমান যুগে যেমন আছে, তেমনি ছিল অতীত যুগে এ ধরনের মানুষদের জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের সোনালি ইতিহাসে ছিল ওয়াকফের ব্যবস্থা

শৈশবে যাদের পড়ালেখা শেখার সুযোগ হয়নি এ ধরনের বয়স্ক মানুষদের শিক্ষাদানে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য কিছু জমি ও সম্পদের আয় বরাদ্দ করা ছিল (দ্র. দাওরু আওকাফিল মারিসতান ফিল হায়াতিল ইজতিমাইয়্যাহ বিমাদীনাতি ফাস, পৃ. ১৮২)

ঠান্ডা পানি পান করানোর জন্য ওয়াকফ

গ্রীষ্মকাল প্রচণ্ড গরম আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে কাঠফাটা রোদে তেতিয়ে আছে চারপাশ তৃষ্ণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত এসময় একজন পথিক ঠাণ্ডা পানির জন্য কী পরিমাণ কাতর থাকে তা যে কেউ অনুধাবন করতে পারে হাদীস শরীফে পিপাসার্ত মানুষদের পানি পান করানোর বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে তাই পথিককে ঠান্ডা পানি পান করানোর জন্য বিভিন্ন মুসলিম অঞ্চলে ওয়াকফের ধারা চালু ছিল পথের পাশে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হত পিপাসার্ত পথিক সেখান থেকে ঠান্ডা পানি পান করে কলিজা শীতল করত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এ সেবাকার্যক্রমের পুরো খরচ বহন করা হত সংশ্লিষ্ট ওয়াকফ খাত থেকে উপার্জিত অর্থে

শাওকী আবু খলীল বলেন

ووقف لسقيا الماء المثلوج في الصيف لعابري السبيل.

গ্রীষ্মকালে পথচারী মানুষদের বরফ মেশানো ঠান্ডা পানি পান করানোর জন্যও ছিল ওয়াকফের ব্যবস্থা আলহাযারাতুল আরাবিয়্যা, শাওকী আবু খলীল, পৃ. ৩৩৬; আলওয়াকফু ফিল ফিকরিল ইসলামী, পৃ. ১৩২

পথের পাশে আলো জ্বালানোর জন্য ওয়াকফ

এখনকার মতো বৈদ্যুতিক বাল্ব যখন ছিল না কুপি, মশাল ইত্যাদির সামান্য আলোতেই সম্পাদন করতে হত রাতের কাজকর্ম রাতের বেলা পথ চলা ছিল খুবই কষ্টের তাই পথের পাশে মশাল ইত্যাদি জ্বালিয়ে পথ আলো করার কথা ভেবেছিলেন অনেক হৃদয়বান মানুষ যেন মানুষের চলাচল নিরাপদ ও সহজ হয় এর জন্য নিজের সম্পদের কিছু অংশ ওয়াকফ করতেন, যার লভ্যাংশ থেকে এ সমাজসেবামূলক কাজটি পরিচালিত হত

কিছু ওয়াকফকৃত সম্পদ ছিল, যার আয় ফাস শহরের গলি ও সড়কগুলো সূর্য ডোবার পর প্রদীপ ও মশাল দিয়ে আলোকিত রাখার জন্য ব্যয় করা হত এসকল ওয়াকফকৃত সম্পদের আয় দিয়ে পথ আলোকিত করার উপকরণ, তেল, সলতে ও আলো জ্বালানোর দায়িত্বে থাকা মানুষদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করা হত (দ্র. দাওরু আওকাফিল মারিসতান ফিল হায়াতিল ইজতিমাইয়্যাহ বিমাদিনাতি ফাস, পৃ. ১৮২)

দরিদ্রদের জন্য প্রাসাদ

প্রাসাদ শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিলাসবহুল আলিশান দালানের দৃশ্য যেখানে  রয়েছে জীবন উপভোগের বিপুল আয়োজন সব যুগেই রাজা-বাদশাহরা ও সমাজের বিত্তবান মানুষেরা থাকে প্রাসাদে আর সাধারণ মানুষেরা হতাশ চোখে সেগুলো দেখেই জীবন পার করে

কিন্তু সাধারণ মানুষেরা কি শুধু দেখেই জীবন কাটাবে? তাদের কি মন চায় না প্রাসাদের আলিশান ভবনে একটু থাকতে  এমন ভাবনা দোলা দিয়েছিল ইতিহাস বিখ্যাত মুসলিম শাসক নুরুদ্দীন যানকীর মনে তাই তিনি দরিদ্রদের জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন নাম দিয়েছিলেন `কাসরুল ফুকারা` (দরিদ্রদের প্রাসাদ) আর এ প্রাসাদের ব্যয় নির্বাহের জন্য `গুতা` অঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রাম `দারিয়া`-কে ওয়াকফ করে  দিয়েছিলেন (দ্র. আলওয়াকফু ফিল ফিকরিল ইসলামী, পৃ. ১৪৩)

গুতা হচ্ছে পৃথিবীর সুন্দরতম অঞ্চলের একটি প্রকৃতির বিপুল সৌন্দর্য নিজের মাঝে ধারণ করেছিল এ অঞ্চল এমন একটি অঞ্চলের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রাম যে কতটা সমৃদ্ধ হবে, তা সহজেই অনুমেয় এমন সুসমৃদ্ধ একটি গ্রাম তিনি ওয়াকফ করেছেন `কাসরুল ফুকারা`র জন্য এ দেখে কবি তাজুদ্দীন আলকিন্দী বলেছিল

إن نور الدين لما أن رأى في البساتين قصور الأغنياء

عمر الربوة قصرا شاهقا نزهة مطلقة للفقراء

অর্থাৎ নুরুদ্দীন যখন বাগানে বাগানে ধনীদর প্রাসাদ দেখলেন, তখন তিনি দামেশক অঞ্চলে একটি বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করলেন যা উন্মুক্ত থাকবে দরিদ্রদের আনন্দ-উপভোগের জন্য

কেবল অসহায় মানুষ কিংবা দরিদ্রদের কল্যাণের জন্যই নয়, বরং পশু-পাখির কল্যাণেও ওয়াকফ করার অনন্য দৃষ্টান্ত রয়েছে মুসলিম ইতিহাসে নিম্নে এ সংক্রান্ত দুটি নমুনা তুলে ধরা হল

অতিথি পাখির জন্য ওয়াকফ

অতিথি পাখি কী চমৎকার নাম পাখি সে আবার অতিথি ভারী চমৎকার বিষয় হাঁ, কিছু কিছু পাখি আমাদের দেশে অতিথি হিসেবে এসে বছরের নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করে, এরপর আবার চলে যায় নিজ দেশে এ সকল পাখির প্রতি সবার আন্তরিকতা থাকে ভিন্ন হাজার হাজার মাইল উড়ে তারা আমাদের দেশে আসে সবাই এদের কিছু না কিছু মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে তাইতো দেখা যায়, সরকারিভাবে অতিথি পাখি শিকার না করার জন্য প্রচারণা চালানো হয়

শুধু আমাদের বাংলাদেশেই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও কিছু কিছু পাখি যায় অতিথি হিসেবে ঐতিহাসিক `ফাস` শহরেও কিছু অতিথি পাখি যেত সমাজের হৃদয়বান মানুষেরাও তখন তাদের বরণ করে নিত আপন মনে করে তাইতো কেউ কেউ এসকল অতিথি পাখিদের জন্য নিজের সম্পদ ওয়াকফ করে গিয়েছিল সে সম্পদের লভ্যাংশ ব্যয় করা হত অতিথি পাখিদের খাবার জোগান দেওয়ার জন্য এ যেন অতিথিদের আতিথেয়তার হক আদায়ের সামান্য প্রয়াস

ফাস শহরে নির্দিষ্ট মৌসুমে আগমনকারী  পাখিদের জন্য কিছু সম্পদ ওয়াকফ করা ছিল  এ সকল পাখিদের অবস্থান ও জীবন ধারণ যেন সহজ হয়, এজন্য কোনো কোনো দানশীল মানুষ নিজেদের সম্পদ ওয়াকফ করেছিলেন যেন অতিথি পাখিদের শহরবাসীর ওপর আশ্রয় ও আতিথেয়তা লাভের অধিকার রয়েছে! আততারবিয়াতুল ওয়াকফিয়্যাহ, পৃ. ১৫৪

বিড়ালের জন্য ওয়াকফ

দামেশকে বিড়ালের জন্য একটি ঘর ওয়াকফ করা ছিল এ ঘরে শত শত বিড়াল থাকত এখানেই তাদের খাবারসহ যাবতীয় প্রয়োজনাদি ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ দেখাশোনা করত বিড়ালগুলো শুধু বিচরণ ও বিনোদনের জন্য বাইরে যেত আবার ঘরে ফিরে আসত শায়েখ মুস্তফা আসসিবায়ী লেখেন

দামেশকের ওয়াকফসমূহের মধ্যে একটি ওয়াকফ ছিল বিড়ালের জন্য এ ওয়াকফ থেকেই বিড়ালগুলো খেত, ঘুমাত ও প্রতিপালিত হত বিড়ালের জন্য নির্ধারিত ওয়াকফকৃত ঘরে শত শত বিড়াল অবস্থান করত প্রতিদিন এগুলোকে খাবার দেওয়া হত বিড়ালগুলো এ ঘরেই থাকত কেবল বিনোদন কিংবা বিচরণের প্রয়োজনে বাইরে যেত মিন রাওয়াইয়ি হাদারাতিনা, পৃ. ১৮৪

ওয়াকফের মাধ্যমে সমাজের এই বহুমুখী সেবা ইসলামী ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়, যা মুসলমানদেরকে তৎকালে সকল জাতি ও ধর্মাবলম্বীদের থেকে দিয়েছিল স্বাতন্ত্র্য এ ইতিহাস শুধুই গর্বের তবে গর্ব পর্যন্তই যেন এর ধারা সীমিত না থাকে এ ধারা প্রবহমান থাকুক চিরকাল আবার শুরু হোক এ ধারা মুসলমানদের সুন্দর সমাজ-ব্যবস্থা আদর্শ ও অনুকরণীয় হয়ে উঠুক সবার জন্য

 

advertisement