মুহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ - যাত্রাবাড়ি মাদরাসা

প্রশ্ন

ক. জরহ ও তাদীল সম্পর্কে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কী কী কিতাব আছে? সংক্ষিপ্ত পরিচিতিসহ জানালে উপকৃত হব।

খ. আল্লামা যাহাবী কর্তৃক রচিত সিয়ারু আলামিন নুবালা-এর পরিচিতি ও ইস্তেফাদার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করলে আমিসহ আরো অনেকে উপকৃত হবে বলে আশা করছি।

উত্তর

জারহ ও তাদীল সংক্রান্ত কিতাবসমূহের পরিচিতি জানার জন্য তো আপনি সায়্যেদ মুহাম্মাদ ইবনে জাফর আলকাত্তানী (১৩৪৫ হি.)-এর আররিসালাতুল মুসতাতরাফা ফী বায়ানি মাশহুরি কুতুবিস সুন্নাতিল মুশাররাফা, ড. আকরাম জিয়া ওমারীর বুহুছ ফী তারীখিস সুন্নাতিল মুশাররাফাহ, আবদুল মাজেদ গওরীর কুতুবুর রিজাল : তারীফুহা ও আনওয়াউহা-এগুলোর যে কোনটি দেখতে পারেন। আর এখন তো ইসতিখরাজুল হাদীস ও দিরাসাতুল আসানীদ বিষয়ক অনেক স্বতন্ত্র কিতাব প্রকাশিত হয়েছে; যাতে জরহ ও তাদীলের কিতাবগুলোর পরিচিতিও তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়াও অনেক লাইব্রেরীতে রিজাল ও জারহ ও তাদীল সংক্রান্ত কিতাবাদি রয়েছে, আপনি সেখানে গিয়ে কিতাবগুলোর সাথে পরিচিত হতে পারেন। সেগুলোর ভূমিকা অংশেও সংশ্লিষ্ট বহু কিতাবের নাম ও পরিচিতি পেয়ে যাবেন।

খ. সিয়ারু আলামিন নুবালা-নামটি থেকেও এ গ্রন্থের বিষয়বস্ত্ত বুঝে আসে যে, এটি বিখ্যাত মনীষীগণের জীবনীগ্রন্থ। এতে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সীরাত ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনচরিত সন্নিবিষ্ট হয়েছে। এরপর নববী যুগ থেকে গ্রন্থাকারে সমসাময়িক যুগ পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে যেসব প্রথিতযশা মনীষীর জন্ম ও মৃত্যু হয় তাঁদের জীবনী, তবাকার ক্রমানুসারে উপস্থাপিত হয়েছে।

উলামা-মাশায়েখ, কবি-সাহিত্যিক, দার্শনিক-চিন্তাবিদের পাশাপাশি খলীফা-সুলতান, উযীর-আমীর প্রমুখ খ্যাতিমানদের জীবনী এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

মনে রাখতে হবে, কোনো কিতাব থেকে যথাযথ ইস্তেফাদার জন্যে কিতাবটির নাম ও আলোচ্য বিষয় এবং মুসান্নিফের পরিচয় জানার পর তার তারতীব ও বিন্যাসরীতি এবং মানহাজ ও উসলূব সম্পর্কে অবহিত হওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থে যেহেতু কুতুবুত তবাকাত (তবাকা ও স-রভিত্তিক জীবনীগ্রম')-এর বিন্যাসরীতি অনুসরণ করা হয়েছে তাই তবাকা শব্দের ব্যবহার ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে। তবাকা শব্দটির ব্যবহার-বৈচিত্র রয়েছে তবে মুহাদ্দিসের পরিভাষায় তবাকা বলতে সাধারণত বুঝানো হয়, একই যুগে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গ যাঁদের পরস্পরে সাদৃশ্য রয়েছে বয়সের এবং সমকালীন আসাতিযা ও মাশায়েখগণের শিষ্যত্ব লাভের। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে বুহুছ ফী তারীখিস সুন্নাতিল মুশাররাফা বা আততবাকাত লিখালীফা ইবনিল খায়্যাত-এর মুকাদ্দিমায় ড. আকরাম জিয়া ওমারীর আলোচনা, শায়খ শুয়াইব আরনাউতের তাহকীকসহ প্রকাশিত সিয়ারু আলামিন নুবালা-এর শুরুতে রয়েছে তা দেখে নেয়া যেতে পারে।

(শায়খ বাশশার আওয়াদ মারুফের প্রবন্ধ আযযাহাবী ও কিতাবুহু সিয়ারু আলামিন নুবালা (৯৭-১০৯)

গ্রন্থকার শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. (৬৭৩-৭৪৮ হি.) তো অষ্টম শতকের প্রখ্যাত হাফেজে হাদীস ও নাকিদ মুহাদ্দিস। তাঁর রচনাবলির দৃঢ়তা ও গভীরতা, নিরপেতা ও বস্ত্তনিষ্ঠা, সুপ্রাজ্ঞ ভাষা ও উপস্থাপনা এবং ফন ও ইলমের সফল প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল। সিয়ারু আলামিন নুবালা গ্রন্থে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত, দৃষ্টি উন্মোচক ও সম্প্রসারক ইলমী নকদ ও সমালোচক ব্যক্তিত্ব, বিস্তৃত জ্ঞানদৃষ্টি এবং শাস্ত্রীয় বুৎপত্তির প্রতিফলন ঘটেছে। কোনো সচেতন ও উদ্যমী তালেবে ইলম যদি গ্রন্থটি আদ্যোপান্ত অধ্যয়ন করেন তবে তা থেকে যেমন ফনের বিশুদ্ধ রুচি ও মেজায এবং তাহকীক ও গবেষণার অনেক উপাদান ও দিকনির্দেশনা আহরণ করতে পারবেন তেমনি জীবনীগ্রন্থ হিসেবে এখান থেকে সালাফের আদাব ও আখলাক, যুহদ ও তাকওয়া এবং সমুন্নত ফিকির ও চিন্তার অসংখ্য নমুনা ও উদাহরণ সংগ্রহ করতে পারবেন।

অতএব সাধারণভাবে তাহকীক ও গবেষণায় আগ্রহী যে কোনো তালিবে ইলমের জন্য এবং বিশেষত উলূমে হাদীসের তালিবে ইলমের জন্য এই কিতাবের সাথে মুমারাসাত তৈরি করা এবং তা থেকে ইস্তেফাদা করা থেকে বঞ্চিত থাকা উচিত নয়।

 

প্রথমত পুরো কিতাবটির উপর দ্রুত নজর বুলিয়ে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু অংশ পাঠ করে এবং এর তবাকা ভিত্তিক তারতীব ও উসলূবের সাথে পরিচিত হোন। অতপর বিভিন্ন সুযোগে ও প্রসঙ্গে কিতাব থেকে জীবনী অধ্যয়ন করুন এবং এতে সন্নিবেশিত ইলমী ফাওয়ায়েদ নোট করতে  থাকুন। এ কিতাব থেকে কোনো তরজমা ও জীবনী বের করার সময় বর্ণনাক্রমিক সূচির সাহায্য না নিয়ে সরাসরি নিজে কিতাবের মূল তারতীব তবাকা হিসেবে বের করার অভ্যাস গড়ে তোলাই বেশি উপকারী। এতে করে যেমন আহলে ইলমের তবাকা সম্পর্কে ধারণা বাড়তে থাকবে তেমনি উদ্দিষ্ট জীবনী অনুসন্ধান করতে গিয়ে আগে পরে আরো কিছু জীবনীর উপর নজর বুলোনোর সুযোগ হবে। আর সম্ভব ও সুযোগ হলে নিজের তালীমী মুরববীর পরামর্শক্রমে এ কিতাবকে কিছুদিনের জন্য নিয়মিত অধ্যয়ন করা যেতে পারে। আর এ কিতাব থেকে আহরণ করার মতো বহু ধরনের ইলমী ফাওয়ায়েদ তো রয়েছেই এবং একে কেন্দ্র করে করার মতো কাজও অনেক রয়েছে, যা নিজে চিন্তা-ভাবনা করে বা অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারণ করা সম্ভব। আল্লাহ তাআলাই তাওফীক দাতা। ষ

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রাজ্জাক - যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

প্রশ্ন

ইমাম আবু হানীফা রহ. ও ইমাম বুখারী রহ.-এর নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ লেখকের নামসহ জানালে খুশি হব।

উত্তর

ইমাম আযম আবু হানীফা রহ. (১৫০ হি.)-এর জীবনীর উপর স্বতন্ত্র জীবনীগ্রন্থ প্রচুর লিখিত হয়েছে। ইমাম ত্বহাবী (৩২১) রহ. হতে এখন পর্যন্ত অনেক আলেমই এই বিষয়ে কিতাব লিখেছেন, লিখে চলেছেন। তন্মধ্যে প্রকাশিত কটি মাত্র গ্রন্থের নাম তুলে ধরা হল।

১. ফাযায়িলু আবী হানীফাহ ওয়া আখবারুহু ওয়া মানাকিবুহু -আবুল কাছেম ইবনু আবিল আওয়াম

(৩৩৫ হি.)।

২. আখ্বারু আবি হানীফা ওয়া আস্হাবিহী -কাযী আবু আবদুল্লাহ হুসাইন বিন আলী সাইমারী রহ.

(৪৩৬ হি.)।

৩. আলইনতিকা ফী ফাযায়িলিল আয়িম্মাতিস সালাসাতিল ফুকাহা - ইমাম ইবনু আবদিল বার (৪৬৩ হি.)।

৪. মানাকিবুল ইমামিল আযম - ইমাম মুয়াফফাক বিন আহমদ মক্কী রহ. (৫৬৮ হি.)

৫. মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা - মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ শিহাব ইবনে বাযযায কারদারী (৮২৭ হি.) রহ.। ইমাম মুয়াফফাক ও কারদারী রহ.-এর উভয় কিতাব দুই খন্ডে এক ভলিউমে প্রকাশিত হয়েছে।

৬. মানাকিবুল ইমাম আবী হানিফা ওয়া সাহিবাইহি - হাফিয মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন উসমান যাহাবী হাম্বলী (৭৪৮ হি.) রহ.। এটি হায়দারাবাদের লাজনাতু ইহইয়ায়িল মাআরিফিন

নুমানিয়া হতে মাওলানা আবুল ওয়াফা আফগানী ও যাহেদ কাউসারী রহ.-এর তাহকীক-তালীকে খুব উত্তম ও সুন্দরভাবে ছাপা হয়েছে। 

৭. তাবয়ীযুয সহীফা বি-মানাকিবিল ইমাম আবী হানীফা-আবুল ফজল জালাল উদ্দীন আবদুর রহমান সুয়ুতী শাফেয়ী (৯১১ হি.) রহ.।

৮. উকুদুল জুমান ফী মানাকিবিল ইমাম আবী হানীফাতান নুমান  - মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সালেহী শাফেয়ী রহ. (৯৪২ হি.)। এটি একটি সুন্দর ও বিস্তৃত কিতাব।

৯. আল্-খায়রাতুল হিসান ফী মানাকিবিল ইমাম আবী হানীফাতান নুমান - শায়খ শিহাব উদ্দীন আহমদ ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী শাফেয়ী (৯৭৩ হি.) রহ.।

১০. আবু হানীফা : হায়াতুহু ওয়া আসরুহু ওয়া ফিকহুহু ওয়া আরাউহু - শায়খ আবু যাহরা মিসরী রহ.।

এখানে প্রকাশিত প্রসিদ্ধ দশটিমাত্র কিতাবের নাম উল্লেখ করা হল। তাছাড়া ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর জীবনের একেকটি দিক নিয়ে বিস্তর কিতাব বের হয়েছে ও হচ্ছে। যেমন ইলমে হাদীসে ইমাম আবূ হানীফার মাকাম সম্পর্কে

 

উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রশীদ নুমানী রহ.-এর কিতাব -মাকানাতুল ইমাম আবী হানীফা ফীল হাদীস ও শায়খ মুহাম্মদ আমীনের কিতাব-মাসানীদুল ইমাম আবী হানীফা ওয়া আদাদু মারবিয়াতিহি। বেশ কয়েক বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে মাওলানা আব্দুশ শহীদ নুমানাীর -ইমাম আবূ হানীফা কী তাবিইয়্যাত। আর আবূ হানীফাতাল মুফতারা আলাইহি নামেও একটি কিতাব পান্ডুলিপি আকারে আমার কাছে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা অতি শীঘ্রই যেন এর যথাযথ নজরে ছানী ও পরিমার্জনের পর ছাপানোর তাওফীক দান করেন। আমীন।  

শেয়ার লিংক