আমানুল হক - ফরিদাবাদ

৫৮৬২. প্রশ্ন

আমার একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে প্রতিদিন প্রায় এক-দেড় শ মুরগির প্রয়োজন হয়। মুরগি সাধারণত আমরা নিজেরাই কিনে নিয়ে এসে নিজেদের লোক দিয়ে জবাই করাই। এক্ষেত্রে প্রায়ই একটা সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যাটা হল, আমাদের রেস্টুরেন্টের পেছনে আমরা যেখানে মুরগি জবাই করি তার পাশেই একটা ছোট পুকুর আছে। তো মাঝে মধ্যেই কিছু মুরগি জবাইয়ের পর লাফাতে লাফাতে ঐ পুকুরে পড়ে যায় এবং পানিতেই মারা যায়। আর এত মুরগি একসঙ্গে জবাই করার কারণে সবগুলোকে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। জানার বিষয় হল, জবাইয়ের পর যে মুরগি পানিতে পড়ে মারা যায় তার কী হুকুম হবে? ঐ মুরগি খাওয়া কি বৈধ হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুরগির জবাই যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর যেহেতু তা পানিতে পড়েছে, তাই তা খাওয়া হালাল হবে। কারণ, এক্ষেত্রে মুরগির জান জবাইয়ের কারণে বের হয়েছে; পানিতে পড়ার কারণে নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৩; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/১৭৩; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯০

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ফেনী

৫৮৬৩. প্রশ্ন

আমার মামা প্রতি বছর দুটি কুরবানী করেন। একটি নিজের পক্ষ থেকে, আপরটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা মৃত আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকে। তবে তিনি যেটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা মৃত আত্মীয়ের পক্ষ থেকে কুরবানী করেন সেটির পুরো গোশত গরীবদের দান করে দেন। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কুরবানীর গোশত নিজেরা খাওয়া যায় না; গরীবদের দান করে দিতে হয়। জানার বিষয় হল, আমার মামার কথা কি ঠিক?

উত্তর

আপনার মামার কথা ঠিক নয়। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল কুরবানী করলে কিংবা তার জন্য সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে কুরবানী করলে এর গোশত নিজেরাও খাওয়া যায়, অন্যদেরকেও দান করা যায়। অর্থাৎ নিজেদের কুরবানীর মতই এই কুরবানীর গোশতের হুকুম। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মামা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে বা মৃত আত্মীয়-স্বজনের নামে কোনো পশু কুরবানী করলে ঐ পশুর গোশত তিনি ও তার পরিবার খেতে পারবে। চাইলে অন্যদেরকেও দিতে পারবে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো ব্যক্তি কুরবানীর জন্য ওসিয়ত করার পর মৃত্যুবরণ করলে এবং তার সম্পদ থেকে ওসিয়ত পূরণের জন্য কুরবানী করলে সেই কুরবানীর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। এই গোশত পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৯০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/২৯৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৫

শেয়ার লিংক

হাফিজুর রহমান - কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা

৫৮৬৪. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় কিছু লোকের মধ্যে একটা প্রচলন আছে। তা হল, গুড়, রস ও মধুতে পিঁপড়া লাগলে, কিছু পিঁপড়া বেছে ফেলে দেওয়ার পর তা খেয়ে ফেলে। অথচ খাওয়ার সময় তাতে কিছু পিঁপড়া থেকে যায়। অনেক সময় সব পিঁপড়া বেছে ফেলে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই পিঁপড়া খাওয়াকে তারা দূষণীয় মনে করে না।

আমার জানার বিষয় হল, এভাবে পিঁপড়া খাওয়াতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা আছে কি?

উত্তর

ইচ্ছাকৃত পিঁপড়া খাওয়াও সম্পূর্ণ নাজায়েয। তাই মধু বা খাবারের মধ্যে পিঁপড়া থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে বেছে ফেলে দিতে হবে। অবশ্য সাধ্যমত সব পিঁপড়া বেছে ফেলে দেওয়ার পর ভুলবশত কোনো পিঁপড়া খাওয়া হয়ে গেলে গুনাহ হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪১৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩০৬; বাযলুল মাজহুদ ১৬/১৫৮

শেয়ার লিংক

তাবাসসুম আক্তার - খিলগাঁও

৫৮৬৫. প্রশ্ন

আমার চেহারায় দুই কানের পাশে গালের উপর কিছুদূর পর্যন্ত এবং গোঁফের স্থানে বড় আকারের কালো লোম রয়েছে। আমার স্বামী এটা পছন্দ করে না। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তিনি আমাকে লোমগুলো তুলে ফেলতে বলছেন। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এমতাবস্থায় আমি লোমগুলো তুলে ফেলতে পারব কি? এতে কি শরয়ী কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে?

উত্তর

মহিলাদের গোঁফ, দাড়ি বা চেহারার কোনো স্থানে অতিরিক্ত লোম গজালে তা তুলে ফেলা জায়েয। ইবনে আবিস সকরের স্ত্রী থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা রা.-এর কাছে ছিলেন। তখন এক মহিলা তাকে জিজ্ঞাসা করল, হে উম্মুল মুমিনীন! আমার চেহারায় কিছু লোম রয়েছে। আমি কি আমার স্বামীর সামনে সাজগোজের জন্য তা উপড়ে ফেলতে পারব? তখন আয়েশা রা. বললেন-

أَمِيطِي عَنْكِ الْأَذَى، وَتَصَنَّعِي لِزَوْجِكِ كَمَا تَصَنَّعِينَ لِلزِّيَارَةِ.

তুমি তোমার চেহারার অসুশ্রী লোমগুলো ফেলে দাও এবং তোমার স্বামীর জন্য সাজসজ্জা গহণ কর, যেমন কোথাও যাওয়ার সময় তুমি তা করে থাকো। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫১০৪)।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মুখের লোমগুলো তুলে ফেলতে পারবেন।

-তাবয়ীনুল মাহারিম, পৃ. ২৬১; শরহু সহীহি মুসলিম, নববী ১৪/১০৬; ফাতহুল বারী ১০/৩৯০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৭৩

শেয়ার লিংক