সানাউল্লাহ - যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

৫৪৪৫. প্রশ্ন

আমার প্রতিবেশী ব্যবসায়ী রাজশাহীতে আম আনতে গেলে আমিও তাকে এক ট্রাক সমপরিমাণ আম কেনার জন্য টাকা প্রদান করি এবং একথা বলি যে, আম কেনার পর তোমাকে পৌঁছাতে হবে না। কারণ আমার লোক গিয়ে তা নিয়ে আসবে। অতঃপর সে আম ক্রয় করে বুঝে নেয় এবং আমার নামে রিসিটও কাটে। কিন্তু ঘটনাক্রমে আমার লোক আর যায়নি। এদিকে পাইকার বারবার ফোন দিয়ে আম নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলছিল। একপর্যায়ে আমি বিক্রেতাকে বলি যে, ভাই একটু কষ্ট করে আমগুলো ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীর মাধ্যমে পাঠিয়ে দিন। অতঃপর সে তাই করে। কিন্তু এখানে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। তা হচ্ছে, আমার আম বোঝাই কার্গোটি পথিমধ্যে কঠিনভাবে এক্সিডেন্ট করে, ফলে আম আর পাওয়া যায়নি। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, এ অবস্থায় পাইকারের কাছ থেকে কি আমি টাকা ফেরত পাব না? কারণ আমি তো আম হাতে পাইনি।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার জন্য বিক্রেতার কাছে ঐ আমের ক্ষতিপূরণ দাবি করা জায়েয হবে না। কেননা, আপনার প্রতিবেশী ব্যবসায়ী আপনার পক্ষ থেকে আম কিনে তা বুঝে নিয়েছে। পরবর্তীতে আপনি আমগুলো পাঠানোর জন্য বিক্রেতার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন এবং সে তার দায়িত্বও যথাযথ পালন করেছে। এক্ষেত্রে পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তার দায়ভার আড়তদারের উপর বর্তাবে না; বরং ক্ষতি আপনার নিজেরই ধর্তব্য হবে।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৫৮; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৪/১৬৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১২/৩২৯; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৪/৪৮০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৬

শেয়ার লিংক

জাহিদ হাসান - বাড্ডা

৫৪৪৬. প্রশ্ন

আমি এক লোককে ৫ লাখ টাকা ঋণ দিই। সে আমার কাছে তার একটি আমবাগান বন্ধক রেখেছে। বাগানে যে আম হয় সে তা নিয়ে যায়। এবার আমের সিজনে সে  আমাকে দুইটি গাছের আম খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আমার জন্য উক্ত গাছদুটির আম খাওয়া জায়েয হবে কি?

উত্তর

না, বন্ধকী বাগানের আম ভোগ করা জায়েয হবে না। কেননা, বন্ধকী সম্পত্তি থেকে বন্ধক গ্রহিতার সুবিধা ভোগ করা নাজায়েয। এটি ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণের মতই বিষয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। আপনি শুধু আপনার দেওয়া ঋণের টাকা ফেরত পাবেন। বন্ধকী সম্পত্তি থেকে বা অন্য কোনোভাবে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।

Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৭১; গামযু উয়ূনিল বাসাইর ৩/২৪৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; মাজমূআতু রাসাইলিল লাখনবী ৩/৪১৩

শেয়ার লিংক

আফলাহ - বিজয়নগর, ঢাকা

৫৪৪৭. প্রশ্ন

দুই ব্যক্তি যৌথভাবে ফ্ল্যাক্সিলোডের ব্যবসার জন্য ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে একজনের ২০ হাজার টাকা আর অপরজনের ৩০ হাজার টাকা। তারা এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্যাশ অনুপাতে লাভ  গ্রহণ করবে। কিন্তু কাজ করবে কেবল ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগকারী, অপরজন করবে না। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, তাদের এ যৌথ ব্যবসা সহীহ হচ্ছে কি না? যদি হয়ে থাকে তাহলে একজনের কাজ না করে নিজ বিনিয়োগকৃত পুঁজির পূর্ণ লভ্যাংশ গ্রহণ করা, আরেকজনের কাজ করেও কেবলমাত্র নিজ বিনিয়োগের অনুপাতে লভ্যাংশ গ্রহণ করা ঠিক আছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাদের চুক্তিটি সহীহ হয়নি। কারণ, মোবাইল টপআপের কারবারটি শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আলইজারাতথা শ্রমনির্ভর কাজ। এখানে অপারেটরের কাছে কিছু টাকা জমা রেখে সে পরিমাণ অর্থ একজন ব্যবসায়ী বিভিন্নজনকে রিচার্জআকারে দিয়ে থাকে। যার উপর সে কমিশন প্রাপ্ত হয়। সুতরাং এ কারবারের মূল হচ্ছে গ্রাহকদের মধ্যে টপআপ বিলি করা। তাই শুধু কিছু টাকা প্রদান করে এখান থেকে লাভ নেওয়ার সুযোগ নেই। অতএব যে শ্রম দিচ্ছে না, তার জন্য লাভ ভোগ করা বৈধ হবে না। তার জন্য এ লাভ সদকা করে দেওয়া জরুরি এবং তাদের জন্য এ চুক্তি ভেঙ্গে দেওয়া আবশ্যক।

Ñদুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ৩/৪১৭; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৪/৩১৭

শেয়ার লিংক

ইমদাদুল্লাহ - হেমায়েতপুর

৫৪৪৮. প্রশ্ন

আমি ঢাকা থেকে সাভার যাওয়ার জন্য ৫০ টাকা ভাড়ায় একটি বাসে আরোহণ করি।  কিন্তু তা মাত্র দুই মাইল দূরে গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়, যা মেরামত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। কন্ডাকটর সবার কাছে ৫ টাকা করে ভাড়া চাইলে কেউ তা দেয়নি। সবাই চলে যায়। আমিও ভাড়া না দিয়ে চলে আসি। আমার জন্য ভাড়া না দেওয়া ঠিক হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে স্থানে গাড়িটি নষ্ট হয়েছে ঐ পরিমাণ পথের সাধারণ ভাড়া পরিশোধ করা জরুরি। সুতরাং এটুকু পথের ভাড়া যদি ৫ টাকা হয়ে থাকে তাহলে তা দেওয়া আবশ্যক ছিল। এখন আপনার কর্তব্য হল, ঐ টাকা গাড়িওয়ালাকে পেঁৗছে দেওয়া। আর তা পৌঁছানো সম্ভব না হলে তার পক্ষ থেকে সদকা করে দেওয়া।

Ñফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৫৯; আলহাবিল কুদসী ২/৮০; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৬৩৫

শেয়ার লিংক

ইবরাহীম - ধানমণ্ডি, ঢাকা

৫৪৪৯. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি প্যাকেট তরল দুধ কেনার পর তা খাওয়ার জন্য চুলায় গরম করতে দিলে দেখা যায় দুধটি ফেটে যায় বা ছানার মত হয়ে যায়, ফলে সে তৎক্ষণাৎ চুলা থেকে পাতিলটি নামিয়ে ফেলে। এখন সে দোকানদার থেকে নতুন দুধ (আর দুধ না থাকলে টাকা ফেরত) নিতে চায়। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, উক্ত দুধ ফেটে যাওয়া বা ছানার মত করে ফেলার পরও কি তার ফেরত দেওয়ার অবকাশ আছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দোকান থেকে দুধ নিয়ে আসার পর ক্রেতার পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ত্রুটি ছাড়া যদি দুধ জাল দেওয়ার পর তা নষ্ট হয়ে থাকলে দোকানী থেকে দুধের আরেকটি প্যাকেট নিতে পারবে। আর দুধ না দিতে পারলে টাকা ফেরত দিতে হবে। কিন্তু যদি দুধ ক্রেতা গরম করতে বিলম্ব করে থাকে কিংবা ক্রেতার পক্ষ থেকে  অন্য কোনো ত্রুটির কারণে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ক্ষতিপূরণ নেওয়া যাবে না।

Ñফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১০৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৩৪৭; আলবাহরুর রায়েক ৬/৫৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৩/৫৪; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৩৩৪

শেয়ার লিংক

কামরুল ইসলাম - ঢাকা

৫৪৫০. প্রশ্ন

আমাদের পাশের মহল্লায় একটি মাদরাসা আছে। আমি সাধারণত জুমা এবং ঈদের নামায ঐ মাদরাসা মসজিদে পড়ি। সেখানে কুরবানীর ঈদের নামায আমাদের মহল্লার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আগে পড়া হয়। নামাযের পর হুজুরকে বলে কোনো একজন ছাত্রকে দাওয়াত দিয়ে বাসায় নিয়ে আসি। সে আমাদের গরু জবাই করে দেয়। জানার বিষয় হল, মহল্লার মসজিদে নামায শেষ হওয়ার আগে কি আমি কুরবানী দিতে পারব? (উল্লেখ্য, উভয় মহল্লা একই এলাকা অর্থাৎ মুহাম্মাদপুরের অন্তভুর্ক্ত)

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার মহল্লা যেহেতু মুহাম্মাদপুরের ভেতরেই সুতরাং আপনার মহল্লায় নামায শেষ হওয়ার আগেও কুরবানী করতে পারবেন। কারণ, একটি গ্রাম, শহর বা একটি এলাকার কোনো এক জায়গায় ঈদের নামায আদায় হয়ে গেলেই ঐ পুরো এলাকাবাসীর জন্য কুরবানী করা জায়েয হয়ে যায়। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের মহল্লা ভিন্ন হলেও মুহাম্মাদপুর এলাকারই অন্তভুর্ক্ত।

Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৩; আলইখতিয়ার ৪/২৬২; ফাতহুল কাদীর ৮/৪৩১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৮

শেয়ার লিংক

মিসবাহুদ্দীন - কুষ্টিয়া

৫৪৫১. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের এক গরীব ব্যক্তির ছেলে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। তখন ঐ ব্যক্তি মান্নত করেÑ ছেলে যদি সুস্থ হয় আগামী ঈদে একটি ছাগল কুরবানী করব। পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়। এখন জানার বিষয় হল, পরবর্তী ঈদে তাকে কয়টি কুরবানী করতে হবে? ওয়াজিব কুরবানী আদায়ের দ্বারা কি মান্নত আদায় হয়ে যাবে, নাকি মান্নতের জন্য পৃথক কুরবানী করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মান্নতের পরে ঐ ব্যক্তি যেহেতু নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে তাই তাকে দুটি কুরবানী করতে হবে। একটি সাধারণ ওয়াজিব কুরবানী, অপরটি মান্নতের কুরবানী। একটি কুরবানী উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে না। আর মান্নতের কুরবানীর গোশত সে ও তার পরিবার খেতে পারবে না। গরীবদেরকে দান করে দিতে হবে।

Ñখিযানাতুল আকমাল ৩/৫৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪২০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৩৭

শেয়ার লিংক

শাহাদাত হুসাইন - উত্তরা, ঢাকা

৫৪৫২. প্রশ্ন

আমরা তিন ভাই। প্রতি বছর কুরবানীর ঈদে তিন ভাই মিলে সাত শরীকে একটা গরু কুরবানী দিই। আমার এক ভাগ, বাকি ছয় ভাগ আমার দুই ভায়ের। এ বছর আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, আমরা ৫৫-৬০ হাজার টাকার ভেতর গরু ক্রয় করব। কিন্তু হাটে এই দামে গরু না পাওয়ায় আমার দুই ভাই ৯০ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু ক্রয় করে। সাত শরীক হিসেবে প্রতি শরীকে প্রায় ১৩ হাজার টাকা করে পড়ে, যা আমার জন্য কষ্ট্যসাধ্য ছিল। তাই আমার মেজ ভাই আমার থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে বাকি টাকা তিনি দিয়ে দেন। কিন্তু এর বিনিময়ে আমার শরীক থেকে তিনি কোনো ভাগ নেননি। জানার বিষয় হল, আমার শরীকের কিছু টাকা আমার ভাই দিয়ে দেয়ার কারণে আমার কুরবানী আদায়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত কুরবানী সহীহ হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার ভাই আপনার অংশের বাকি টাকা আপনাকে হাদিয়া দিয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে হাদিয়া লেনদেনে কোনো সমস্যা নেই।

Ñইমদাদুল আহকাম ৪/২৪৯

শেয়ার লিংক

সালমান - পাবনা

৫৪৫৩. প্রশ্ন

বিভিন্ন হোটেলে খাওয়ার পর হাত মোছার জন্য বা কোনো খাবার পেঁচিয়ে দেওয়ার জন্য পত্রিকার কাগজ কেটে রেখে দেওয়া থাকে। আবার অনেক দোকানে কোনো কিছু দেওয়ার জন্য পুরাতন বই-খাতার পৃষ্ঠা দিয়ে বানানো ঠোঙ্গা ব্যবহার করা হয়। এভাবে পত্রিকা, বই-খাতার পৃষ্ঠা বা লিখিত কোনো কাগজ হাত মোছা বা কোনো কিছু পেঁচিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করার হুকুম কী? এতে কোনো গুনাহ হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

কাগজ ইলম অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এর সম্মান ও আদব রক্ষা করা কর্তব্য। কোনো বই-খাতা বা পত্রিকার কাগজও এই ধরনের কাজে ব্যবহার করা অনুত্তম। তাই এসব ক্ষেত্রে কাগজের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। পড়ার অনুপযুক্ত বা কাজে আসে নাÑ এমন কাগজ পুড়িয়ে ফেলবে।

Ñআলমুহীতুল বুরহানী ৮/১২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৬

শেয়ার লিংক