মুহাম্মাদ নাসীম রিয়াজ - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৭১৫. প্রশ্ন

১. আমাদের সমাজে প্রচলন আছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার বার কালিমা তায়্যেবা পড়লে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়।

আবার কেউ কেউ নিজ জীবদ্দাশায় এ উদ্দেশ্যে ৭০ হাজার বার কালিমা পড়ে। তবে কেউ মারা গেলে তার কবরের আযাব মাফ হওয়ার জন্য পড়ার রেওয়াজটা  বেশি। মুফতী সাহেবের কাছে জিজ্ঞাসা হল, এটি হাদীসে আছে কি না? আর এ আমল করলে কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে?

২. আমাদের এলাকায় একথা প্রসিদ্ধ যে, যদি কোনো ব্যক্তির হাত থেকে অনিচ্ছায় ও ভুলবশত কুরআন শরীফ পড়ে যায়, তাহলে তা ওজন করে চাল বা গম ইত্যাদি সদকা করতে হয়। এ কথাটি মহিলাদের মাঝে বেশি প্রসিদ্ধ। তাই জানতে চাচ্ছি, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা কেমন?

আর আল্লাহ না করুন, কখনো এমনটি হয়ে গেলে আমাদের করণীয় কি?

দয়া করে প্রশ্ন দুটির শরয়ী সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন। আল্লাহ আপনাদের উত্তম বিনিময় দিন।

উত্তর

১. প্রশ্নোক্ত কথাটি সহীহ নয়। বরং এটি লোকমুখে প্রচলিত একটি কথা। যার কোনো দালীলিক ভিত্তি নেই। শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রাহ.-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি সহীহ বা যয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই।’ -মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২৪/৩২৩

প্রকাশ থাকে যে, কালিমা তায়্যেবা পাঠ করা অনেক বড় সওয়াবের কাজ এবং হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী এটি উত্তম যিকির। একাধিক হাদীসে এ কালিমা পাঠের বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে এসেছে-

مَنْ قَالَ لَا إِلهَ إِلّا اللهُ صَادِقًا بِهَا دَخَلَ الْجَنّةَ.

‘যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে لَا إِلهَ إِلّا اللهُ পাঠ করবে সে জান্নাতে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৯৬৮৯; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস ৪০০৩)

তাই নিজে কালিমা তায়্যেবা পাঠ করা কিংবা কোনো মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের জন্য পাঠ করা ভালো কাজ। কিন্তু  প্রশ্নোক্ত সংখ্যা ও পদ্ধতির কোনো দালীলিক ভিত্তি নেই। তাই  এ পদ্ধতি বর্জনীয়।

২. কুরআন মাজীদ হাত থেকে পড়ে গেলে তা ওজন করে চাল বা গম দেওয়ার কোনো বিধান শরীয়তে নেই; বরং সদকা দেওয়ার উদ্দেশ্যেও এক্ষেত্রে কুরআন মাজীদ ওজন করা একধরনের বেআদবী। কখনো অনিচ্ছাকৃত এমনটি হয়ে গেলে আল্লাহ তাআলার দরবারে ইসতেগফার করে নিবে। আর এক্ষেত্রে কুরআন মাজীদ ওজন না করে কেউ এমনিতেই কোনো কিছু সদকা করতে চাইলে তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৬০

শেয়ার লিংক

মামুনুর রহমান - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৪৭১৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার এক চাচা ইন্তেকাল করেছেন। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি তার বড় ছেলেকে অসিয়ত করে বলেছিলেন, ‘আমি তোমার ফুফার কাছে এক লক্ষ টাকা পাই। আমার মৃত্যুর পরে এ টাকার কিছু অংশ গ্রামের এতিমখানায় দিয়ে দিবে। আর বাকি টাকা দিয়ে চল্লিশতম দিনে কুলখানী করবে। জানাযার পরে আমাদের এলাকার ইমাম সাহেবের নিকট বিষয়টি পেশ করলে তিনি বললেন, শরীয়তে কুলখানী করা বৈধ নয়।

মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই,

১. ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক?

২. যদি ঠিক হয়, তাহলে এখন আমরা আমার চাচার এ অসিয়ত কীভাবে আদায় করব?

উত্তর

বর্তমানে আমাদের সমাজে কুলখানী বলতে যা প্রচলিত সাধারণত তা নির্দিষ্ট দিন-তারিখে মায়্যেতের জন্য দুআ করিয়ে মিষ্টি বা খাবারের আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয়। এটি একটি ভুল প্রথা, যা সংশোধনযোগ্য। ক্ষেত্র বিশেষে এতে গরীব-মিসকিনদের চেয়ে ধনীরাই বেশি আমন্ত্রিত হয়ে থাকে। কোথাও এর সাথে আরো শরীয়তনিষিদ্ধ কাজ যুক্ত হয়। তাই এ পদ্ধতি ঠিক নয়। আপনারা এভাবে কুলখানী না করে এক লক্ষ টাকার অংশবিশেষ এতিমখানায় প্রদানের পর বাকি অংশ চাইলে গরীব-মিসকিনদের দান করে দিতে পারেন।

উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে প্রথমে কাফন-দাফনের খরচ নির্বাহ করা হবে। এরপর তার কোনো ঋণ থাকলে অবশিষ্ট সম্পদ থেকে তা পরিশোধ করতে হবে। এরপর যা সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে এর এক তৃতীয়াংশ থেকে তার যদি কোনো বৈধ অসিয়ত থাকে তবে তা আদায় করা হবে।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়াহ ৪/৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ২৮/৮৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৪০, ৬/৬৭০

শেয়ার লিংক