উম্মে আম্মার - উত্তরখান, ঢাকা

৪১০০. প্রশ্ন

আমি প্রায় দিনই ফজর নামায পড়ে জায়নামাযে বসে যিকির আযকার করতে থাকি। এরপর এশরাকের সময় হলে দু’চার রাকাত এশরাকের নামায পড়ে ঘরের কাজ শুরু করি। গত ঈদের দিনও ফজর নামায পড়ে এশরাকের অপেক্ষায় বসেছিলাম। আমার স্বামী দেখে বললেন, ঈদের দিন ঈদের নামাযের আগে মহিলাদের কোনো নফল নামায নেই। জানতে চাই, আমার স্বামীর উক্ত কথা কি ঠিক?

উত্তর

আপনার স্বামী ঠিকই বলেছেন। ঈদের দিন ঈদের নামাযের আগে নারী-পুরুষ সকলের জন্যই নফল নামায নেই। হাদীস শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্র্ণিত আছে-

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَومَ أَضْحَى، أَوْ فِطْرٍ، فَصَلَى رَكْعَتَيْنِ، لَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا وَلَا بَعْدَهَا.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে ঈদের দু’রাকাত নামায পড়েছেন। আগে পরে কোনো নামায পড়েননি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৮৪)

উক্ত হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, ঈদের দিন নারী-পুরুষ কেউই ঈদের নামাযের আগে নফল পড়বে না। এবং ঈদগাহে ঈদের নামাযের পরেও পড়বে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫৮৯৫; কিতাবুল আছল ১/৩২২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/১৬৯

শেয়ার লিংক

মুহসিন - মোমেনশাহী

৪১০১. প্রশ্ন

মাগরিবের নামাযে ৩য় রাকাতের রুকুর পূর্বে ইমামের সাথে শরীক হই। ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর যখন বাকি নামায পূর্ণ করছিলাম তখন ভুলে প্রথম রাকাতের বৈঠক না করেই দাঁড়িয়ে যাই। নামায শেষে সাহু সিজদাহ আদায় করিনি। এমতাবস্থায় আমার এ নামায কি পুনরায় পড়তে হবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছুটে যাওয়া নামায আদায়ের সময় প্রথম রাকআতের পর বৈঠক করাই নিয়ম ছিল। কিন্তু এ বৈঠক যেহেতু নামাযের সাধারণ বৈঠকের মত নয় তাই তা ছুটে গেলে সাহু সেজদা দেওয়া আবশ্যক হবে না। এবং নামায হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তা ছেড়ে দেওয়ার কারণে আপনার উপর সাহু সেজদা ওয়াজিব হয়নি। এবং ঐ নামায আদায় হয়ে গেছে, পুনরায় পড়তে হবে না।

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَدْرَكَ مَسْرُوقٌ وَجُنْدبٌ رَكْعَةً مِنَ الْمَغْرِبِ، فَلَمَّا سَلَمَ الإِمَام قَامَ مَسْرُوقٌ فَأَضَافَ إلَيْهَا رَكْعَةً، ثُمَ جَلَسَ وَقَامَ جُنْدَبٌ فِيهَما جَمِيعًا، ثُمَ جَلَسَ فِي آخِرِهَا، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِعَبْدِ اللهِ، فَقَالَ: كِلاَهُمَا قَدْ أَحْسَنَ، وَأَفْعَلُ كَمَا فَعَلَ مَسْرُوقٌ أَحَبُّ إلَيَ.

একদিন মাগরিবের নামাযে ইমাম সাহেব দুই রাকআত পড়ে ফেলার পর মাসরুক ও জুনদুব রাহ. নামাযে শরীক হলেন। তারা ইমামের সাথে এক রাকআত পড়ে বাকি নামায পূর্ণ করার জন্য দাঁড়ালেন। মাসরুক রাহ. এক রাকআত পড়ে বৈঠক করলেন। আর জুনদুব রাহ. প্রথম রাকআত পড়ে বৈঠক না করে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দ্বিতীয় রাকআতে বৈঠক করলেন। নামাযের পর তাঁরা উভয়ে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট গিয়ে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তোমরা উভয়েই যথানিয়মে নামায পড়েছ। তবে মাসরুক  যে ভাবে নামায পড়েছে সেটি আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৮৫৬৯)

-কিতাবুল আসার (১৩০); বাদায়েউস সনায়ে ১/৫৬৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৬৪৪

শেয়ার লিংক

নোমান হামীম - পরশুরাম, ফেনী

৪১০২. প্রশ্ন

আমি ফেনী থেকে সফর করে ঢাকায় আসছিলাম। আমাদের বাস যখন কুমিল্লা অতিক্রম করছিল তখন আসরের নামাযের সময় হয়ে যায়। বাসটি একটি মসজিদের পাশে থামে এবং যাত্রিদেরকে নামাযের জন্য সময় দেয়া হয়। আমরা নেমে সে মসজিদের মুকীম ইমামের পেছনে আসরের চার রাকাত নামায আদায় করি। নামায শেষে ইমাম সাহেব ঘোষণা করেন, নামায হয়নি, আবার পড়তে হবে। এদিকে আমাদের বাস ছাড়ার সময় হয়ে যায়। তাই আমরা দ্রুত গিয়ে বাসে উঠে যাই। জানার বিষয় হল, এখন আমরা উক্ত নামায কয় রাকাত কাযা করব?

 

উত্তর

উক্ত নামায সময়ের ভেতর পুনরায় পড়ে নেওয়ার সুযোগ থাকলে তাই করা উচিত ছিল। যেহেতু তা করা হয়নি এখন তা কাযা করতে হবে। আর উভয় অবস্থাতেই আপনাদেরকে দুই রাকাত পড়তে হবে। কেননা চার রাকাত পূর্ণ করা আবশ্যক হয়েছিল মুকীম ইমামের পেছনে ইক্তিদা করার কারণে। ইমামের নামায যেহেতু ফাসেদ হয়ে গেছে। তাই সকলের নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। ফলে মুসাফিরদের জন্য কসরের হুকুমই পুনরায় বহাল হয়েছে। সুতরাং সফর অবস্থার দুই রাকাত নামাযের কাযা দুই রাকাতই পড়তে হবে।

 -হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫২২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৪; ফাতহুল কাদীর ২/১২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৪২; রদ্দুল মুহতার ২/১৩০

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

৪১০৩. প্রশ্ন

আমি একজন দুর্বল প্রকৃতির লোক। সময়ে অসময়ে আমার ঘুম চলে আসে। এমনকি নামাযের মধ্যেও; বিশেষত ফজরের নামাযে এবং রমযান মাসে তারাবীর নামাযে। জানতে চাই এভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নামায পড়াটা কেমন?

উত্তর

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নামায পড়া ঠিক নয়। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। তাই চেষ্টা করতে হবে যেন নামাযে ঘুম না আসে। হযরত আনাস রা.

থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ فِي الصَلاَةِ فَلْيَنَمْ، حَتَى يَعْلَمَ مَا يَقْرَأُ.

তোমাদের কারো যখন নামাযে ঘুম আসে তখন সে যেন (নামায ছেড়ে) এতটুকু ঘুমিয়ে নেয় যে, (তার অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং) সে বুঝতে পারে সে কী পড়ছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২১৩)

তবে নামাযে কোনো কারণে ঝিমুনি এসে গেলে নামাযের ক্ষতি হবে না। আর সময় সংকীর্ণ হলে যেভাবেই হোক ঘুম দূর করে নামায পড়ে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৩৬; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ.২২৭

শেয়ার লিংক

আবু তাহের - লোহাগড়া, চট্টগ্রাম

৪১০৪. প্রশ্ন

বার বছর যাবৎ কাজের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যাতায়াত করছি। সফরে কসর করতে হয় এ মাসআলা আমি জানতাম। কিন্ত কখনো কখনো সফরের সময় তা আমার স্মরণ থাকত না। তাই পথিমধ্যে কোনো বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থামলে আসরের সময় হলে চার রাকাত, মাগরীব হলে তিন রাকাত আদায় করতাম।

হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার জানা থাকা সত্ত্বেও এত বছর যাবৎ আমি যে চার রাকাত বা তিন রাকাত পড়েছি এর কী হুকুম? উক্ত নামাযগুলো আমাকে কি পুনরায় আদায় করে নিতে হবে? আমার তো সব স্মরণও নেই। বিস্তারিত জানালে খুশি হব।

উত্তর

সফর অবস্থায় চার রাকাত ফরয নামায দু’রাকাত পড়া ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃত চার রাকাত পড়া গুনাহ। তবে চার রাকাত পড়ে নিলেও ফরয আদায় হয়ে যায়। আর ভুলবশত চার রাকাত পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তাই সামনে থেকে সতর্ক থাকবেন। আর চার রাকাত পূর্ণ করলে যেহেতু ফরয আদায় হয়ে যায় তাই পেছনের নামায নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করবেন না। অবহেলাবশত যা হয়েছে তার জন্য তওবা-ইস্তিগফার করে নিবেন।

উল্লেখ্য, চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামাযের কসর দুই রাকাত। কিন্তু তিন রাকাত বা দু’রাকাতবিশিষ্ট ফরযের কোনো কসর নেই। তাই সফর অবস্থাতেও মাগরিব তিন রাকাত এবং ফজর দু’রাকাতই পড়তে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৮

শেয়ার লিংক

মঞ্জুরুল করীম - উত্তরখান, ঢাকা

৪১০৫. প্রশ্ন

রমযান মাসে তারাবীর সময় কোনো কোনো মুসল্লী ভাইকে দেখা যায়, ইমাম সাহেব রুকুতে যাওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন। যখনই ইমাম সাহেব রুকুতে যান তখন তারা দ্রুত উঠে তাকবীর বেঁধে রুকুতে চলে যান। জানতে চাই এমনটি করা কি ঠিক?

উত্তর

নামায শুরু হওয়ার পর কোনো মুক্তাদীর জন্য সাথে সাথে শরীক না হয়ে রুকুতে যাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকা অলসতা ও উদাসীনতার লক্ষণ। নামাযে অলসতা ও উদাসীনতা মুমিনের শানের খেলাফ। তাই বিনা ওজরে এমনটি করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

উল্লেখ্য, অসুস্থতা, দুর্বলতা, বার্ধক্য ইত্যাদি ওজরের কারণে যদি কারো দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয় তবে সে বসেই তারাবী আদায় করতে পারে। আর কিছুটা দাঁড়াতে সক্ষম হলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এবং কিছুক্ষণ বসেও পড়তে পারে। কিন্তু জামাতে অংশগ্রহণ না করে বসে থাকা এবং রুকুর সময় অংশগ্রহণ করা খুবই অপছন্দনীয় কাজ।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬৪; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪১০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ.২২৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮

শেয়ার লিংক

শাকিল হুসাইন - উত্তরখান, ঢাকা

৪১০৬. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার একটি যুবক ছেলে গত কিছুদিন আগে নানা অপরাধকর্মে জড়িত হয়ে শেষে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার খবর জেনে আশপাশের কোনো হুযুর তার জানাযা পড়াতে সম্মত হননি। তাই দূর থেকে একজন হুযুর এসে যুবকটির কয়েকজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে জানাযা পড়েন। জানার বিষয় হল, আত্মহত্যাকারীর জানাযার বিধান কী?

উত্তর

আত্মহত্যা অনেক বড় গুনাহ। শরীয়তের দৃষ্টিতে আত্মহত্যাকারী ফাসেক; তবে সে কাফের নয়। কিন্তু ফাসেক হলেও তার জানাযা পড়তে হবে। হযরত ইমরান রাহ. বলেন,

سَأَلْتُ إبْرَاهِيمَ النَّخَعِيّ عَنْ إنْسَانٍ قَتَلَ نَفْسَهُ أَيُصَلَى عَلَيْهِ؟ قَالَ : نَعَمْ , إنَمَا الصَّلاَةُ سُنَّةٌ.

আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া যাবে কি? তিনি বললেন, হাঁ, নামায পড়াটাই নিয়ম। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১১৯৯০

অবশ্য জানাযা আদায়ের জন্য উপযুক্ত লোক থাকলে সমাজের কোনো বড় আলেম এবং নেতৃস্থানীয় কোনো লোক জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না। যেন অন্যরা তা দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকে। জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি ধারালো বস্তু দিয়ে আত্মহত্যা করল। তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

أَمَا أَنَا فَلَا أُصَلِّي عَلَيْهِ.

আমি এর জানাযা পড়ব না। (সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ২১০২)

-শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৯১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৭; রদ্দুল মুহতার ২/২১১; ফাতহুল মুলহিম ২/৫১২

শেয়ার লিংক

আহলে শুরা - খুলনা তাবলীগী মারকায

৪১০৭. প্রশ্ন

আমাদের খুলনা জেলার তাবলীগী মারকায মসজিদটি শহরের আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। মসজিদের পূর্ব পাশে বড় মাঠ রয়েছে। সেখানে ঈদের নামায ও জানাযার নামায আদায় করা হয়। মারকায হওয়ার কারণে প্রতি বৃহস্পতিবার এবং বিশেষ মাশওয়ারার দিনগুলিতে বহু মানুষের জমায়েত হয়। এসব দিনে মাগরিব, এশা ও বাদ ফজর বয়ান ও তা‘লীমের আমল হয়ে থাকে। এ সময় জানাযা আসলে জানাযার নামায আদায়ের জন্য সবাই বাহিরে গেলে মারকাযী আমলে কিছুটা ইনতেশার পয়দা হয় এবং মজমা জমাতে বেশ সময় লেগে যায়।

এখন আমাদের জানার বিষয় হল উক্ত জরুরতের কারণে কেবল ঐ দিনগুলিতে আমরা জানাযার নামায মসজিদে আদায় করতে পারবো কি না?

উল্লেখ থাকে যে, মেহরাবের সাথে একটা দরওয়াজা আছে এবং পশ্চিম পাশে এতটুকু জায়গা আছে যে মাইয়েত ও ইমাম সাহেবসহ এক কাঁতার মুসল্লী দাঁড়াতে পারে।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু মসজিদের বাইরে লাশ রাখা এবং ইমাম ও এক কাতার মুসল্লী বাইরে দাঁড়ানোর জায়গা আছে তাই বিশেষ দিনগুলোতে প্রয়োজনে

এভাবে জানাযা পড়লে তা মাকরূহ হবে না। তবে লোকজন কম থাকলে সাধারণ অবস্থায় সকলেই বাইরে গিয়ে জানাযা পড়বে।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৩; আত্তাজরীদ, ইমাম কুদূরী ৩/১১০৬; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৬৮; শরহুল মুনয়া পৃ.৫৮৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬১৪; রদ্দুল মুহতার ২/২২৭

শেয়ার লিংক

আমাতুল্লাহ - চৌহালি, সিরাজগঞ্জ

৪১০৮. প্রশ্ন

আমার একটি রোযার মানত ছিল। সেদিন রোযা রেখে দুপুরে লাকড়ির চুলায় রান্না করছিলাম। তখন নাকে-মুখে বেশ কিছু ধোঁয়া ঢুকে যায়। এদিকে আমিও শ্বাস নেয়ায় তা নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। আমি ভাবলাম, সিগারেট খেলে যেহেতু রোযা ভেঙ্গে যায় তাই এর দ্বারাও রোযা ভেঙ্গে গেছে। তাই আমি পরে পানাহার করি। জানতে চাই, আমার উক্ত কাজটি কি ঠিক হয়েছে? আর এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর

 চুলার ধোঁয়া কিংবা অন্য কোনো ধোঁয়া অনিচ্ছায় নাকে বা মুখের ভেতর চলে গেলে রোযা ভাঙ্গে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে পানাহার করা ভুল হয়েছে। আর সিগারেটের সাথে চুলার ধোঁয়াকে তুলনা করা ঠিক হয়নি। সিগারেটের ধোঁয়া টানা হয় ইচ্ছাকৃত। তাই এর দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যায়। শরীয়তের মাসআলা নিজ থেকে এভাবে ভেবে নেয়া কিছুতেই উচিত নয়। প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, দ্বীনী বিষয়ে নির্ভরযোগ্য আলেমদের শরণাপন্ন হওয়া। এখন আপনাকে উক্ত রোযার কাযা করতে হবে। কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৮৮৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৯৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬৭; আলবহরুর রায়েক ২/২৭৩; মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৬১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ - কক্সবাজার

৪১০৯. প্রশ্ন

গত ২৩ রমযান আমার নানী ইন্তেকাল করেন। অসুস্থতার দরুণ মাত্র দুইটি রোযা ছাড়া কোনো রোযা রাখতে পারেননি। আমার মামা-খালারা এখন তার উক্ত রোযাগুলোর ফিদয়া আদায় করতে চাচ্ছেন। তাই জানতে চাই, তার ছুটে যাওয়া প্রতি রোযার জন্য কত টাকা করে ফিদয়া আদায় করতে হবে?

 

উত্তর

আপনার নানী যেহেতু গত রমযানেই ইন্তেকাল করেছেন এবং সেই রমযানের ছুটে যাওয়া রোযাগুলো কাযা করার সুযোগই পাননি তাই সেগুলোর জন্য ফিদয়া দিতে হবে না।

-কিতাবুল আছল ২/১৬৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪২৩

শেয়ার লিংক

হাবীবুল্লাহ - হবিগঞ্জ, সিলেট

৪১১০. প্রশ্ন

আমি রোযা অবস্থায় মিসওয়াক করছিলাম। তখন দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। এবং তা থুথুর সাথে পেটে চলে যায়। এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে? ভেঙ্গে থাকলে এখন আমার কী করণীয়? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গলায় যদি রক্তের স্বাদ অনুভূত হয় কিংবা রক্ত যদি থুথুর সমপরিমাণ বা বেশি হয়ে থাকে তাহলে তা গিলে ফেলার দ্বারা রোযাটি ভেঙ্গে গেছে। এক্ষেত্রে ঐ রোযা কাযা করতে হবে। আর যদি থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ কম হয় এবং গলায় স্বাদও অনুভূত না হয় তাহলে রোযাটি ভাঙ্গেনি, তা সহীহ হয়েছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়াত হিন্দিয়া ১/২০৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮

শেয়ার লিংক

আবদুল কাদীর - নবিগঞ্জ, সিলেট

৪১১১. প্রশ্ন

আমি একদিন ঘুম থেকে দেরিতে উঠি এবং তখনো সাহরীর সময় বাকি আছে ধারণা করে সাহরী খেতে থাকি। খাওয়া শেষে জানতে পারি তখন সুবহে সাদিক হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, উপরোক্ত কারণে আমার রোযা সহীহ হবে কি না? না হলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় আপনার রোযাটি ভেঙ্গে গেছে, তা সহীহ হয়নি। তাই আপনাকে রোযাটির কাযা আদায় করে নিতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।

উল্লেখ্য যে, রমযানের কোন রোযা নষ্ট হয়ে গেলেও নিয়ম হল, ঐ দিন ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত রোযাদারের ন্যায় কাটাবে। বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে, তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি এখনো রাত্র বাকি আছে ভেবে সাহরী খেতে থাকে, অতপর স্পষ্ট হয় যে, তখন সুবহে সাদিক হয়ে গেছে, সে যেন তার রোযাটিকে পূর্ণ করে (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/১৪৯-১৫০, হাদীস : ৯১৩২) এবং হযরত সায়ীদ ইবনে যুবাইর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি কেউ সুবহে সাদিক হওয়ার পর খানা খেয়ে ফেলে তখন সে যেন ঐ দিন পানাহার থেকে বিরত থাকে এবং অন্য একদিন একটি রোযা কাযা করে নেয়।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯১৩৪; সুনানে বায়হাকী ৪/২১৬; কিতাবুল আসল ২/১৪৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫

শেয়ার লিংক

যায়েদ হামীদ - বরিশাল

৪১১২. প্রশ্ন

রমযানের কাযা রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে রাখলে উভয়টি আদায় হবে কি? এবং কাযা ও নফল রোযার সওয়াব পাওয়া যাবে কি?

উত্তর

রযমানের কাযা রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে নিয়ত করলে শুধু রমযানের কাযা রোযা আদায় হবে। শাওয়ালের ছয় রোযা আদায় হবে না। শাওয়ালের ছয় রোযা রাখতে হলে পৃথকভাবে শুধু এর নিয়তে রোযা রাখতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৭

শেয়ার লিংক

উম্মে হাবীব - উত্তরা, ঢাকা

৪১১৩. প্রশ্ন

আমি আর আমার স্বামী আমাদের ছোট্ট একটি সন্তানসহ শহরের একটি ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকি। বাসায় অন্য কোনো মহিলা নেই। রমযান মাসে রোযা রেখে মাঝেমধ্যেই আমার সন্তানকে খাদ্য চিবিয়ে খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। তখন রোযা রাখেনি এমন কাউকে না পেয়ে আমি নিজেই খাদ্য চিবিয়ে ওর মুখে দেই। জানতে চাই, রোযাবস্থায় এভাবে খাদ্য চিবালে রোযার কোনো ক্ষতি হয় কি না?

উত্তর

রোযা অবস্থায় বিশেষ ওজর ছাড়া খাবার চিবানো মাকরূহ। হা, একান্ত নিরুপায় হলে অনুমতি আছে। তবে খাদ্য চিবানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন খাবারের কোনো অংশ গলায় চলে না যায়। কেননা গলায় চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যায়। ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,

لاَ بَأْسَ أَنْ تَمْضُغَ الْمَرْأَةُ لِصَبِيِّهَا وَهِيَ صَائِمَةٌ، مَا لَمْ يَدْخُلْ حَلْقَهَا.

কোনো মহিলা তার সন্তানের জন্যে রোযা অবস্থায় খাদ্য চিবাতে সমস্যা নেই; যদি খাদ্য গলায় চলে না যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৩৮৫)

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০০; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৬৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯

শেয়ার লিংক

ইসমাইল শিকদার - আজমপুর, ঢাকা

৪১১৪. প্রশ্ন

একটি বিশেষ উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে ৫০০০/- টাকা সদকা করার মানত করেছিলাম। আল্লাহর রহমতে তা পূর্ণ হয়েছে। আমি এখনো উক্ত টাকা সদকা করিনি। এদিকে আমার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়ে গেছে। জানতে চাই, উক্ত অর্থ কি যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে?

উত্তর

না, ঐ টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে না। বরং সেটারও যাকাত দিতে হবে। অবশ্য আপনি যদি যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগেই উক্ত মানত আদায় করে দিতেন তবে তা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যেত। কিন্তু যেহেতু যাকাতবর্ষ পূর্ণ হয়ে গেছে এবং আপনি এখনো ঐ অর্থ আদায় করেননি তাই এখন সে টাকারও যাকাত দিতে হবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৩

শেয়ার লিংক

যোবায়ের রশীদ - সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

৪১১৫. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আব্বা মারা যান। তিনি প্রতি বছর যাকাত আদায় করতেন। মারা যাওয়ার সময় তার যাকাতবর্ষ পূর্ণ হতে ২ মাস বাকি ছিল। আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ৮ বছর। আর ছোট বোনের বয়স ৬ বছর। বাবার সম্পদ থেকে তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্ত অংশ নেছাব পরিমানের চেয়ে বেশি হয়। তাদের অর্থ এখন আমার দায়িত্বে আছে। জানতে চাই, দুই মাস পর যাকাতবর্ষ পূর্ণ হলে তাদের অংশের যাকাত আদায় করতে হবে কি না?

উত্তর

নাবালেগের উপর যাকাত ফরয নয়। তাই আপনার ছোট ভাই ও বোন নেছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও সাবালক হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর যাকাত ফরয হবে না। সাবালক হওয়ার পর প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকলে বছর শেষে যাকাত ফরয হবে। ইবনে মাসউদ রা. বলেন,

لَيْسَ فِيْ مَالِ الْيَتِيْمِ زَكَاةٌ.

ইয়াতীমের সম্পদে যাকাত নেই। (কিতাবুল আছার, হাদীস ২৯৪)

উল্লেখ্য, আপনার বাবার যাকাতবর্ষের হিসাব ওয়ারিশদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তাই আপনি ও প্রাপ্তবয়স্ক অন্য ওয়ারিশ যেদিন থেকে নেসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদের মালিক হবেন সেদিন থেকেই যাকাতবর্ষের হিসাব শুরু হবে।

-কিতাবুল আছল ২/৫৬; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৬২; বাদায়েউস সনায়ে ২/৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২০

শেয়ার লিংক

মুনীরুজ্জামান - ঢাকা

৪১১৬. প্রশ্ন

আমার এক বড় ভাই যাকাতের টাকার মাধ্যমে মাদরাসার জন্য জমি ক্রয় ও ছাত্রাবাস নির্মাণ করতে চায়। সেটা করা যাবে কি না?

উত্তর

যাকাতের টাকা দিয়ে মাদরাসার জমি ক্রয় করা এবং ছাত্রাবাস নির্মাণ করা জায়েয হবে না। কেননা, এগুলো যাকাতের খাত নয়। যাকাত কাদেরকে এবং কোন্ কোন্ খাতে দেয়া যাবে তা কুরআন মাজীদের সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে। উক্ত খাতেই তা ব্যয় করতে হবে। এবং ঐ খাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে এর মালিক বানিয়ে দেয়া আবশ্যক। তাই যাকাতের টাকা মাদরাসার জমি ক্রয় বা নির্মাণ কাজে লাগানো যাবে না। এটা শরীয়তের উদ্দেশ্য বহির্ভূত কাজ হবে। মাদরাসা-মসজিদ নির্মাণ করতে হবে মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ  অনুদান দিয়ে।

-বাদায়েউস সনায়ে ২/১৪২; আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/১২৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সাখাওয়াতুল্লাহ - বরগুনা, বরিশাল

৪১১৭. প্রশ্ন

আমি এ বছর হজ্ব করার ইচ্ছা করেছি। শুনেছি, ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত কাপড় পরা যায় না। আমি সবসময় প্যান্ট ও পায়জামা পরে অভ্যস্থ। তাই সেলাই ছাড়া লুঙ্গি পড়ে থাকাটা আমার জন্য খুবই কঠিন মনে হচ্ছে। জানতে চাই, ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত লুঙ্গি পরে থাকলে কি খুব বড় কোনো সমস্যা হয়ে যাবে?

 

উত্তর

ইহরাম অবস্থায় সেলাইবিহীন লুঙ্গি পরাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ ও সাহাবা থেকে ইহরাম অবস্থায় সেলাইবিহীন লুঙ্গি পরাই প্রমাণিত। অবশ্য কারো যদি সেলাইবিহীন লুঙ্গি পরিধান করলে কষ্ট হয় এবং সতর খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সে ব্যক্তি সেলাই করা লুঙ্গিও পরতে পারবে। তবে পায়জামা বা প্যান্ট জাতীয় কোনো কিছু পরা জায়েয হবে না। আর সেলাই করা লুঙ্গি পরলে কোনো দম বা জরিমানা

ওয়াজিব হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, এই মাসআলা শুধু লুঙ্গির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়া শরীরের মাপে সেলাইকৃত বা বানানো যে কোনো পোশাক পুরুষের জন্য ইহরাম অবস্থায় পরা নাজায়েয। এ ধরনের কোনো পোশাক বারো ঘণ্টা পরিমাণ সময় পরিধানে রাখলেই দম ওয়াজিব হবে।

-ফাতহুল কাদীর ২/৪৪৩; আহকামে হজ্ব, মুফতি মুহাম্মাদ শফী রাহ. পৃ. ৩৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ - সাভার, ঢাকা

৪১১৮. প্রশ্ন

আমার এক চাচা চার সন্তান রেখে মারা যায়। এবং এ পরিমাণ সম্পদ রেখে যায়, যা প্রত্যেককে বণ্টন করে দিলে প্রত্যেকে এ পরিমাণ সম্পদ পায়, যার দ্বারা প্রত্যেকের উপর হজ্ব ফরয হয়ে যায়। কিন্তু পারিবারিক জটিলতার কারণে এখনো সম্পদ বণ্টন করা হয়নি।

জানার বিষয় হল এ মুহূর্তে তাদের উপর হজ্ব ফরজ হবে কি?

উল্লেখ্য, উক্ত মাসআলায় কিছু মুফতী সাহেবদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে, তাই বিষয়টি দলিল প্রমাণের আলোকে জানতে চাচ্ছি।

 

উত্তর

মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন না হলেও তাতে ওয়ারিশদের এজমালী মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সম্পত্তি যদি বাস্তবেই এ পরিমাণ হয় যে, ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা হলে তাদের প্রত্যেকের অংশ দ্বারা তাদের প্রয়োজনীয় খরচাদি বহন করার পরও এতটুকু সম্পদ অবশিষ্ট থাকবে, যার দ্বারা হজ্বের খরচও হয়ে যায় তাহলে সম্পত্তি বণ্টন করা না হলেও তাদের উপর হজ্ব ফরয হয়ে গেছে। এখন তাদের কর্তব্য, যত দ্রুত সম্ভব নিজ নিজ অংশ বুঝে নিয়ে ফরয হজ্ব আদায় করা।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/১০৫; বাদায়েউস সনায়ে ২/১২৩, ২৯৮; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ১০৬০

শেয়ার লিংক

যুলফিকার - টঙ্গী, গাজীপুর

৪১১৯. প্রশ্ন

আমার ভাইয়া ও ভাবীর মাঝে কয়েকদিন ধরে ঝগড়া চলছিল। একদিন সকালে একটা বিষয়ে কথা কাটাকাটির সময় ভাইয়া বলে উঠল, এই বাড়িতে থাকার অধিকার তোমার নেই। তুমি যদি এ বাড়ি থেকে চলে না যাও তাহলে তুমি তালাক। ভাবী ঐ দিনই বিকালবেলা তার বাবার সাথে তাদের বাড়িতে চলে যায়। আমি জানতে চাচ্ছি, বিকেল পর্যন্ত বিলম্বের কারণে কি ভাবীর উপর তালাক পড়বে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযয়ী আপনার ভাবী যেহেতু ঐ দিনই বাবার বাড়ি চলে গেছে। তাই তার উপর কোন তালাক পতিত হয়নি। এক্ষেত্রে স্বামী যেহেতু বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো সময় নির্ধারণ করেনি তাই বিলম্বের কারণে কোন সমস্যাও হয়নি। উল্লেখ্য যে, তালাক খুবই স্পর্শকাতর ও নিকৃষ্টতম কাজ। তাই এভাবে তালাকের বাক্য উচ্চারণ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১১৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/৩০৫

শেয়ার লিংক

উসামা - কুট্টাপাড়া, বি.বাড়িয়া

৪১২০. প্রশ্ন

আমি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষার কিছুদিন আগে আমার জ্বর হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম, আমি সুস্থ হলে কয়েকদিন রোযা রাখার মান্নত করলাম। এখন প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি এখন রোযা রাখা আবশ্যক? এবং রোযা রাখতে হলে কয়টা রাখব?

 

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য রোযা রাখা আবশ্যক। আপনি যেহেতু কয়েকদিন রোযা রাখার মানত করেছেন, তাই ন্যূনতম ৩ টি রোযা রাখতে হবে। আর আপনি যেহেতু রোযা রাখতে সক্ষম তাই মানত পূরণের জন্য রোযাই রাখতে হবে। এক্ষেত্রে রোযা ব্যতীত অন্য কোনোভাবে মানত আদায় হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৪, ৩৫১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/১৬০; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪২

শেয়ার লিংক

হাসান মাহমুদ - আম্বরখানা, সিলেট

৪১২১. প্রশ্ন

আমার বন্ধু নাঈম একদিন কুরআন শরীফের উপর হাত রেখে বলে, আমি কুরআন শরীফ ছুঁয়ে কসম করলাম, আমি আর জীবনেও জাবেরদের বাসায় যাব না। সে মূলত জাবেরের সাথে ঝগড়া করে এ কথা বলে। পরবর্তীতে মিলমিশ হয়ে গেলে সে জাবেরদের বাসায় যায়। জানতে চাচ্ছি, এভাবে কুরআন শরীফ ছুঁয়ে কসম করার কারণে কি তা কসম বলে গণ্য হয়েছে? এবং এটা ভঙ্গ করার কারণে কি তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে?

 

উত্তর

হাঁ, ঐ কথা বলার দ্বারা তার কসম সংঘটিত হয়েছে। তাই পরবর্তীতে সে জাবেরদের বাসায় যাওয়ার কারণে তার উক্ত কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে। সুতরাং তার কসমের কাফ্ফারা দেওয়া ওয়াজিব।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; রমযুল হাকায়েক ১/২০৫; রদ্দুল মুহতার ৩/৭১২

শেয়ার লিংক

ফুয়াদ হাসান নাবিল - মাইজদি, নোয়াখালী

৪১২২. প্রশ্ন

একবার আমার নানী বড় মামীর উপর রাগ করে বলে ফেলেন, ‘আমার জন্য মুরগী হারাম’। কিন্তু অনেকদিন পর নানী তার এই কথা ভুলে মুরগীর গোশত খেয়ে ফেলেন। আমি স্মরণ করিয়ে দিলে আবার খাওয়া বন্ধ করে দেন।

প্রশ্ন হল, এভাবে কোনো কিছু হারাম করলে কি সত্যিই তা হারাম হয়ে যায়? হারাম হলে পুনরায় তা হালাল করার কোনো উপায় আছে কি?

উত্তর

কোনো হালাল বস্তুর ব্যাপারে তা আমার জন্য হারাম- এ ধরনের কথা বলা উচিত নয়। এবং এ কথা বলার কারণে তার উপর ঐ বস্তু হারাম হয়ে যায় না। তবে এর দ্বারা কসম সংঘটিত হয়। আর নিয়ম হল, এ ধরনের ক্ষেত্রে কসম ভেঙ্গে কাফফারা আদায় করে দেওয়া। অতএব আপনার নানীর দায়িত্ব হল এখন নিজ কসমের কাফফারা আদায় করা। এবং এ কথা বলার কারণে মুরগীর গোশত খাওয়া থেকে বিরত না থাকা।

আর কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে তৃপ্তি সহকারে দু’বেলা খানা খাওয়ানো বা এর মূল্য দিয়ে দেওয়া। অথবা তাদের প্রত্যেককে এক জোড়া করে কাপড় দেয়া। আর এ পরিমাণ আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিনদিন রোযা রাখা।

-সূরা মায়েদা (৫) : ৮৯; সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৯১১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৪৩৮, ৪৩০; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯২, ২৮৯; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৬৫

শেয়ার লিংক

খন্দকার মাহফুজুর রহমান - উত্তরা, ঢাকা

৪১২৩. প্রশ্ন

মুহতারাম, যথাবিহীত সম্মান প্রর্দশন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকায় একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ রয়েছে। উক্ত মসজিদে আমরা প্রায় ৪০-৫০ বছর যাবৎ নামায পড়ে আসছি। কালের বিবর্তনে বসত বাড়ি বেড়ে যাওয়ায় মসজিদটি এলাকার বাড়ি-ঘরের ভেতরে পড়ে যাচ্ছে এবং মুসল্লিদের জায়গা হচ্ছে না। যার কারণে আমরা মসজিদটি স্থানান্তর করতে চাচ্ছি। উল্লেখ্য যে, উক্ত জায়গাটি পূর্বপুরুষদের ছিল। ঐ জায়গাটি তারা লিখিত কিংবা মৌখিক কোনোভাবেই ওয়াকফ করে যাননি। কিন্তু ঐ জায়গায় তারা সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে স্ব উদ্যোগে একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়ে যান এবং সেটাকে তারা শরয়ী মসজিদ হিসেবেই জানতেন। এখন পর্যন্ত এভাবেই চলে আসছে। এখন জানার বিষয় হচ্ছে, মসজিদটি স্থানান্তরিত করা যাবে কি না? করা গেলে পূর্বের জায়গাটি কোন্ অবস্থায় রাখতে হবে? জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

 

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনানুযায়ী মসজিদটি যেহেতু জমির মালিকগণই নির্মাণ করে দেন এবং তখন থেকেই তা মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তাই তা পূর্ণ শরয়ী মসজিদ হয়ে গেছে। লিখিত বা মৌখিক ওয়াকফ করা হয়নি এ অজুহাতে তাকে শরঈ মসজিদ না বলার অবকাশ নেই। কেননা জায়গার মালিক কর্তৃক কোনো স্থানে মসজিদের জন্য ঘর নির্মাণ করে নামাযের জন্য স্থায়ীভাবে দিয়ে দিলেই তা শরঈ মসজিদ হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত মসজিদটিও শরঈ মসজিদ। বসতবাড়ি বেড়ে যাওয়া, জায়গার সংকীর্ণতা ইত্যাদি কারণে তা স্থানান্তর করা জায়েয হবে না। বরং মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে সমস্যার অন্য সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে মুসল্লিদের সংকুলান না হলে এটিকে বহুতল ভবনের পরিকল্পনায় নিয়ে পুনঃনির্মাণ করা যেতে পারে। এছাড়া এ মসজিদটি যথাস্থানে চালু রেখে অন্যত্র সুবিধাজনক স্থানে ভিন্ন আরেকটি মসজিদও নির্মাণ করা যেতে পারে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৪,১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৪,৪৫২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৬

শেয়ার লিংক

দাউদ হাসান - লক্ষীকোল, ফরিদপুর

৪১২৪. প্রশ্ন

আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়ে গ্রামীণ ব্যাংকে চাকুরী করি। আমরা সবাই জানি যে, ব্যাংকিং লেনদেন সুদমুক্ত নয়। তো পরিশ্রমের বিনিময়ে আমাদেরকে বেতন দেওয়া হচ্ছে এবং অবসরের পর কয়েক লক্ষ টাকা পেনশন দেওয়া হবে।

আমার প্রশ্ন হল, পরিশ্রমের মাধ্যমে উক্ত বেতন এবং পেনশন-এর টাকা আমাদের জন্য হালাল হচ্ছে কি না?

উত্তর

১. প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো সুদী নিয়মে পরিচালিত। তাই ব্যাংকের চাকুরীর বেতন হালাল নয়। কেননা ব্যাংকের চাকুরী সুদী কারবারে সরাসরি সহযোগিতা। শরীয়তে সুদের কঠোরতা ও নিষেধাজ্ঞা অনেক দৃঢ়। হাদীসে শুধু সুদ লেন-দেনকেই হারাম বলা হয়নি। বরং এর লেখক ও সাক্ষীগণের উপরও অভিসম্পাত করা হয়েছে। জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহণকারী, সুদ দাতা, সুদী কারবারের লেখক এবং তার সাক্ষীদ্বয়ের উপর অভিসম্পাত করেছেন। এবং তিনি বলেছেন, তারা (সকলে) সমান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮)

উল্লেখ্য, শ্রমার্জিত টাকা হলেই তা হালাল হয়ে যায় না। বরং শ্রমার্জিত টাকা তখনই হালাল হবে যখন কাজটি বৈধ হবে। আর কাজ বৈধ না হলে উপার্জনও হালাল হবে না। এটি শরীয়তের স্বীকৃত কথা, যা বহু দলীল দ্বারা প্রমাণিত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮; জামেউল বায়ান, তাবারী ৩/১০৩; ফাতহুল বারী ৪/৩৬৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম - ওয়েব সাইট থেকে প্রাপ্ত

৪১২৫. প্রশ্ন

আমি একজন বেসরকারী কর্মকর্তা। আমাকে প্রতি বছর অনেক টাকা ইনকামট্যাক্স দিতে হয়। করের পরিমাণ কমানোর জন্য আয়কর রেয়াত পাওয়ার কয়েকটি অপশন আছে। তার মধ্যে ব্যাংকে ডিপিএস করা, সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা ইত্যাদি। সুদের লভ্যাংশ না নেয়ার নিয়তে কেবলমাত্র করের পরিমাণ কমানোর জন্য ব্যাংকে ডিপিএস করা অথবা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা ঠিক হবে কি না?

 

উত্তর

ইনকামট্যাক্স কমানোর জন্য সুদী ব্যাংকে ডিপিএস করা কিংবা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা জায়েয নয়। যদিও অর্জিত সুদ সদকা করে দেয়ার নিয়ত থাকে। কেননা, এতে সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হচ্ছে। আর সুদ নিজে ব্যবহার না করলেও সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়াই পৃথক গুনাহের কাজ। তাই কর কমানোর জন্যও সুদী চুক্তির আশ্রয় নেয়া জায়েয হবে না।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮, ১৫৯৯

শেয়ার লিংক

দুলাল - টঙ্গী, গাজীপুর

৪১২৬. প্রশ্ন

আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি আর আমার পার্টনার মিলে চাচ্ছি, আমরা বেহালা, তবলা, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের দোকান দিব। তাই জানতে চাচ্ছি, এই ব্যবসা করা জায়েয আছে কি না?

 

উত্তর

না, বাদ্যযন্ত্রের বেচাকেনা ও ব্যবসা বৈধ নয়। কারণ, বেহালা, তবলা, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নাজায়েয। এগুলো বাজানো গুনাহ। এছাড়া এগুলো সরাসরি গানবাদ্যেই ব্যবহার হয়। তাই এর ব্যবসা সম্পূর্ণ নাজায়েয।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৬৮; জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৪৭-৪৪৮

শেয়ার লিংক

সুনান আহমদ - গৌরিপুর, কুমিল্লা

৪১২৭. প্রশ্ন

ছ’মাস আগে আমি একজন কৃষক থেকে ৬০০/- টাকা দরে ১০ মণ ইরি ধান ক্রয় করি। চুক্তিটি এমন ছিল, আমি তাকে নগদ ৬০০০/- টাকা দিবো। ছ’মাস পর সে দশ মণ ধান দিবে। কিন্তু এখন ধান দেওয়ার সময় সে আমাকে আট মণ ধান দিয়ে বাকি দু’মণের টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছে। এবং বলছে, এবার ধান কম হয়েছে। আমি তাকে বললাম, দু’মণ ধান কম এ শর্তে নিতে পারি, যদি সে বাকি  ধানগুলো সেদ্ধ করে শুকিয়ে দেয়। এবং এর বিনিময় হিসেবে বাকি দু’মণের টাকা সে রেখে দিবে। আমাকে ফেরত দিতে হবে না। সে এতে সম্মত হয়।

প্রশ্ন হল, ধান সেদ্ধ করে দেওয়ার এই চুক্তিটা বৈধ হয়েছে কি? হুযুরের কাছে জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দু’মণ ধানের পরিবর্তে অবশিষ্ট ধান সেদ্ধ করে দেওয়ার শর্ত করা বৈধ নয়। কেননা বাইয়ে সালাম অর্থাৎ আগাম ক্রয়ের  লেনদেনে পূর্ব চুক্তির সাথে নতুন কোনো চুক্তি করা বৈধ নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

مَنْ أَسْلَفَ فِي شَيْءٍ فَلَا يَصْرِفْهُ إِلَى غَيْرِهِ.

যে ব্যক্তি অগ্রিম মূল্যে বাকিতে পণ্য ক্রয় করবে, সে যেন তা অন্য কিছুতে ব্যয় না করে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৬২)

হযরত ইবনে উমর রা. বলেন,

إِذَا سَلَفْتَ فِي شَيْءٍ فَلَا تَأْخُذْ إِلَا رَأْسَ مَالِكَ أَوِ الَذِي سَلَفْتَ فِيهِ.

যদি তুমি অগ্রিম মূল্যে কোনো বাকি পণ্য ক্রয় কর, তবে তোমার মূলধন বা ঐ পণ্য ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করো না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ১৪১০৬)

সুতরাং সে যদি বর্তমানে ৮ মণ ধানের বেশি দিতে না পারে তবে অবশিষ্ট দুই মণ ধানের মূল্য ১২০০/- টাকা আপনাকে ফেরত দেওয়া আবশ্যক। ঐ ১২০০/- টাকা বুঝে পাওয়ার পর আপনি চাইলে তা ধান সেদ্ধ করা ও শুকিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে দিয়ে দিতে পারবেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৪১০৬; আলজামেউস সগীর, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ৩২৭; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৩৭; বাদায়েউস সনায়ে ৪/৪৩৪

শেয়ার লিংক

শাফায়েত মান্নান - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪১২৮. প্রশ্ন

নিম্নোক্ত বক্তব্যটির যর্থাথতা জানিয়ে ধন্য করবেন বলে আশা করি।

১. ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলার দ্বারা নেক আমলসমূহ এমনভাবে নষ্ট হয়ে যায় যেমন আগুন শুকনো কাঠকে ধ্বংস করে দেয়।’

২. ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ (চল্লিশ) বছরের নেক আমল নষ্ট করে দেন।’

উত্তর

প্রশ্নে উল্লেখিত কথা দুটি লোকমুখে হাদীস হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। ‘মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলার দ্বারা নেক আমলসমূহ এমনভাবে নষ্ট হয়ে যায় যেমন আগুন শুকনো কাঠকে ধ্বংস করে দেয়’- এ বর্ণনাকে মোল্লা আলী কারী রাহ. ও আল্লামা সাফারীনী রাহ. জাল বলেছেন। আর ‘যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ (চল্লিশ) বছরের আমল নষ্ট করে দেন’- এ বর্ণনাটিকে আল্লামা সাগানী রাহ. এবং আল্লামা কাউকজী রাহ. এবং মোল্লা আলী কারী রাহ.সহ আরো অনেক মুহাদ্দিস জাল বলে উল্লেখ করেছেন। তাই ঐ দু’টিকে হাদীস হিসেবে বর্ণনা বা প্রচার করা জায়েয হবে না।

উল্লেখ্য যে, মসজিদ আল্লাহর ঘর। মসজিদের ভিত্তিই হল নামায, যিকির, তালীম ও অন্যান্য দ্বীনী আমলের জন্য। তাই দুনিয়াবি অনুষ্ঠান, মিটিং কিংবা নিছক দুনিয়াবি কথাবার্তা ও কাজকর্মের জন্য মসজিদে যাওয়া এবং সেখানে অবস্থান করা নাজায়েয। তবে কোনো দ্বীনী কাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে অন্যের বিঘœ না করে দুনিয়াবি কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে কারো নামায বা ইবাদতে বিঘœ না হওয়া শর্ত। আর অন্যান্য ইবাদতকারীর অসুবিধা করে জোরে জোরে যিকির বা তিলওয়াত করাও নাজায়েয।

-আলমাসনূ, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৯২, ১৮২; গিযাউল আলবাব ২/২৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৩; শরহুল মুনয়া পৃ. ৬১০; রদ্দুল মুহতার ১/৬৬২

শেয়ার লিংক

আবু বকর - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪১২৯. প্রশ্ন

ছোটবেলায় আমার সামনের একটি দাঁত পড়ে যায়। দাঁতটি আর নতুনভাবে উঠেনি। এখন আমি দাঁতটি অপারেশনের মাধ্যমে লাগিয়ে নিতে চাচ্ছি। যা আমি মরে গেলেও আমার সাথে চলে যাবে। আমি জানতে চাই ইসলাম কি আমাকে এটার অনুমতি দেয়? যদি স্বর্ণ বা রূপার দাঁত লাগাই সেটারও কি অনুমতি আছে? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

হাঁ, আপনি নতুন দাঁত লাগাতে পারবেন। আর স্বর্ণ বা রূপার দাঁত স্থায়ীভাবে লাগানোও জায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَهِ بْنِ عَبْدِ اللَهِ بْنِ أُبَيٍّ أَنَ ثَنِيَتَهُ أُصِيبَتْ مَعَ رَسُولِ اللَهِ - صَلَى اللَهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَخِذَ ثَنِيَةً مِنْ ذَهَبٍ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কোনো যুদ্ধে গিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রা.-এর সামনের দাঁত পড়ে যায়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে স্বর্ণের দাঁত লাগানোর নির্দেশ দেন।’ (মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৩০১১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৮৭১৩)

উল্লেখ্য, স্থায়ীভাবে স্বর্ণ বা রুপার দাঁত লাগানো হলে মৃত্যুর পর তা খুলবে না।

-শরহু মুশকিলিল আসার ৪/৩৫-৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৩১; এলাউস সুনান ১৭/২৯৫

শেয়ার লিংক