আবু মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - জামিয়া ফারুকিয়া, টেকনাফ

৩৭৬৬ . প্রশ্ন

এক কিতাবে পেয়েছি, গোশত, তরকারি গন্ধ হয়ে গেলে নাকি নাপাক হয়ে যায়। এ কথা কি ঠিকআমরা তো মহিলাদের দেখেছি, তরকারি গন্ধ হয়ে গেলে খাওয়ার সোডা মিশিয়ে দিয়ে তা খেয়ে ফেলে। কারণ সোডা দিলে গন্ধটা অনুভব হয় না। দয়া করে এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানিয়ে উপকৃত করবেন।

 


উত্তর

গোশত বা তরকারি গন্ধ বা বাসি হয়ে গেলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তা নাপাক হয় না। তবে খাবার যদি এতটা বাসি বা গন্ধযুক্ত হয়ে যায় যেতা খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেক্ষেত্রে তা খাওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য সামান্য গন্ধ হলে এবং তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হলে তা খেতে অসুবিধা নেই।

-গামযু উয়ুনিল বাসাইর ২/১৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪৯

শেয়ার লিংক

ফুরকান হোসেন - মংলা, বাগেরহাট

৩৭৬৭. প্রশ্ন

মশা মারার জন্য বাজারে এক ধরনের ইলেক্ট্রিক র‌্যাকেট পাওয়া যায়। উক্ত র‌্যাকেট মশাতে লাগলে আঘাত করলে তা থেকে স্ফুলিঙ্গ বের হয় এবং মশা মারা যায়। আমার জানার বিষয় হল, এ ধরনের র‌্যাকেট দ্বারা মশা মারা জায়েয হবে কি না?

 


উত্তর

কোনো ক্ষতিকর প্রাণীকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা জায়েয নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

وَإِنَّ النَّارَ لاَ يُعَذِّبُ بِهَا إِلَّا اللَّهُ

আল্লাহ ব্যতীত আর কারো অধিকার নেই আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়ার। -সহীহ বুখারীহাদীস ৩০১৬

উক্ত র‌্যাকেট দিয়ে আঘাত করলে যেহেতু মশা পুড়ে মারা যায় তাই তা দ্বারা মশা মারা জায়েয হবে না। 

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৩৬১; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/৩৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৫২

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান - চট্টগ্রাম

৩৭৬৮. প্রশ্ন

আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে সবাই আলহামদু লিল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে চেষ্টা  চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমার বাবা-মা এবং অন্যান্য আত্মীয়, যারা অমুসলিম অবস্থায় মারা গেছে, তাদের জন্য খুবই দুঃখ ও আফসোস হয়। পরকালে তাদের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করতাম। এ ব্যাপারে ইমাম সাহেবের সাথে আলোচনা করলে তিনি বললেন, তাদের জন্য এভাবে দুআ করা জায়েয হবে না। তাই জানার বিষয় হল, আসলেই কি তাদের জন্য দুআ করা জায়েয হবে না?

 


উত্তর

হাঁইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। কোনো ব্যক্তি কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার মাগফিরাতের জন্য বা পরকালে মুক্তির জন্য দুআ করা নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْ یَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِیْنَ وَ لَوْ كَانُوْۤا اُولِیْ قُرْبٰی مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ

আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য নবী ও মুমিনদের ক্ষমা প্রার্থনা সংগত নয় যখন তা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যেতারা নিশ্চয়ই জাহান্নামী। -সূরা বারাআত (৯) : ১১৩

সুতরাং আপনি পরলোকগত অমুসলিম পিতামাতা ও অন্যান্য অমুসলিম আত্মীয়-স্বজনের জন্য মাগফিরাত কামনা ও পরকালে মুক্তির দুআ করা থেকে বিরত থাকবেন।

-সূরা বারাআত (৯) : ১১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৭১; তাফসীরে কুরতুবী ৮/১৭৩; তাফসীরে রূহুল মাআনী ১১/৩২; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৬৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫২২

শেয়ার লিংক

আবুল বাশার - কুষ্টিয়া

৩৭৬৯. প্রশ্ন

অনেক সময় দেখা যায়, কাউকে সালাম দিলে উত্তরই দেয় না। আবার অনেকে উত্তর দিলেও তা শোনা যায় না। শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে উত্তর দেয়। আমার জানার বিষয় হল, সালামের জবাব দেওয়া কী? এবং তা কি জোরে দেওয়া জরুরি, নাকি আস্তে দিলেও হবে?

 


উত্তর

সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। জবাব না দিলে ওয়াজিব লঙ্ঘনের গুনাহ হবে। আর সালাম প্রদানকারীকে জবাব শুনিয়ে দেওয়াও ওয়াজিব। তবে যদি দূরত্ব অথবা অন্য কোনো কারণে শুনিয়ে জবাব দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে জবাবের বাক্য উচ্চারণের পাশাপাশি হাত দ্বারা ইশারা করা যাবে এবং এর দ্বারা জবাব দেওয়ার হক আদায় হয়ে যাবে।

-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৮০৬; তাফসীরে ইবনে আতিয়্যাহ ৪/১৯৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ১/৪৬৭; আলআযকার ৪০২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৩; আলইখতিয়ার ৪/১৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/১১৩

শেয়ার লিংক

রুহুল আমীন - খুলনা

৩৭৭০ . প্রশ্ন

আমরা সাধারণত নখ, চুল কেটে ফেলে দিই। কেউ কেউ বলে, এগুলো নাকি মাটিকে পুঁতে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা কী?

 


উত্তর

নখচুল কাটার পর যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। বরং তা মাটির নিচে পুঁতে দেওয়া উত্তম। নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত আছেআবদুল্লাহ  ইবনে উমর রা. নখচুল কাটার পর তা মাটির নিচে পুঁতে দিতেন। -কিতাবুত তারাজ্জুল ৬০

তবে নখচুল মাটিতে পোঁতা কষ্টকর হলে ডাস্টবিনে বা সংরক্ষিত জায়গায় ফেলে দিলে তাতেও সমস্যা নেই। তবে যেসব লোম শরীরে থাকা অবস্থায় অন্যের জন্য দেখা না জায়েয শরীর থেকে পৃথক হওয়ার পরও তা অন্যকে দেখানো জায়েয নয়। তাই এ ধরনের পশম ফেলার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬১৭১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২১০; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪

শেয়ার লিংক

আনিসুজ্জামান - হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

৩৭৭১. প্রশ্ন

আমাদের বাজারে এক হিন্দু দোকানী আছে। কিছুদিন পরপর তার সাথে দেখা হয়। তখন মুসাফাহা করার জন্য সে হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি কখনো তার সাথে মুসাফাহা করি আবার কখনো করি না। জানার বিষয় হল, অমুসলিমদের সাথে মুসাফাহা করা বৈধ কি না?

 


উত্তর

মুসাফাহা কেবল মুসলমানদের সাক্ষাতের সময়ের অভিবাদনের জন্য নির্ধারিত। এর দ্বারা পরস্পরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদীস শরীফে এসেছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ فَتَصَافَحَا، وَحَمِدَا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ، وَاسْتَغْفَرَاهُ غُفِرَ لَهُمَ.

যখন দুজন মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক সাক্ষাৎ হয় এবং তারা মুসাফাহা করে আর তার সাথে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ -সুনানে আবু দাউদহাদীস ৫১৬৯

তাই অমুসলিমদের সাথে মুসাফাহা হয় না। তাদের সাথে মুসাফাহার প্রচলন করা ঠিক নয়। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৬২৩৯-২৬২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৪১২

শেয়ার লিংক

আফফান - চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা

৩৭৭২. প্রশ্ন

আমার বুকে ও পিঠে অনেক পশম, আজকাল জেন্টস পার্লারে গিয়ে বুক-পিঠের পশম উঠানো যায়। জানার বিষয় হল, আমার জন্য ঐ পশমগুলো উঠানো জায়েয হবে কি?

 


উত্তর

বুক ও পিঠের পশম উঠানো অনুত্তম ও অনর্থক কাজ। আজকাল বিজাতীয়দের মাঝে এই ফ্যাশন চালু হয়েছে। এতে অনর্থক কাজে অর্থ ব্যয় করা হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। 

-আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২১১; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৭ 

শেয়ার লিংক