সুমাইয়া - লালবাগ, ঢাকা

২৯৯৪. প্রশ্ন

ডিএনসি-এর পর যে রক্তস্রাব দেখা যায় তার কারণে কি নামায রোযা বন্ধ রাখতে হবে? এটা হায়েয নাকি নেফাস? কিছু দিন আগে আমার গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়। গর্ভ খুব অল্প দিনের। তাই কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি। জমাট রক্ত ছিল কেবল। ডিএনসির পর থেকে আজ ১১ দিন স্রাব চলছে। আমি প্রতিমাসে ৮দিন অপবিত্র থাকি। এখন আমার করণীয় কী?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ডিএনসির পর আট দিন পর্যন্ত হায়েয ধর্তব্য হবে। এরপর থেকে ইস্তিহাযার হুকুমে হবে। তাই প্রথম আট দিনের পর থেকে স্রাব থাকলেও নিয়মিত নামায পড়তে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, গর্ভটির যেহেতু কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল না তাই ডিএনসি পরবর্তী স্রাব হায়েযের হুকুমে হয়েছে। যদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকত তাহলে এ স্রাব নেফাস গণ্য হত।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৭০; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফখরুল ইসলাম - চাপরতলা, বিবাড়িয়া

২৯৯৫. প্রশ্ন

আমার বয়স বিশ বছর। বালেগ হওয়ার পর থেকে মাঝেমধ্যে কয়েক ওয়াক্ত নামায পড়েছি। অধিকাংশ সময়ই পড়া হয়নি। এজন্য আমি অনুতপ্ত। এখন আমি ছুটে যাওয়া নামাযগুলো আদায় করতে চাই। তাই জানার বিষয় হল, অনাদায়ী নামাযগুলো আমি কীভাবে আদায় করব? ফজরের সময় ফজরের কাযা, যোহরের সময় যোহরের কাযা এভাবে আদায় করব, নাকি যোহরের সময় ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব, ইশার নামাযও কাযা করতে পারব? আর ঐ কাযা নামাযগুলোর নিয়ত কীভাবে করব? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

কাযা নামায আদায়ের জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই। নিষিদ্ধ তিন ওয়াক্ত (সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়) ব্যতিত অন্য যে কোনো সময়ই যে কোনো কাযা নামায আদায় করা যায়। তাই আপনি এক নামাযের ওয়াক্তের মধ্যে অন্য যে কোনো ওয়াক্তের কাযা নামায আদায় করতে পারবেন। যেমন ফজরের ওয়াক্তে যোহরেরও কাযা আদায় করতে পারবেন।

আর কাযা নামায আদায়ের ক্ষেত্রে এভাবে নিয়ত করবেন যে, আমার জীবনের অনাদায়ী প্রথম যোহর নামায আদায় করছি। অথবা এভাবে নিয়ত করবেন যে, ছুটে যাওয়া বা অনাদায়ী সর্বশেষ যোহর নামায আদায় করছি। প্রতিবার কাযা আদায়ের সময় মনে ম নে এভাবে নিয়ত করবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৭৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৪৯৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ যিকরুল্লাহ মানসুর - পাঁচকাহনীয়া, ইটনা

২৯৯৬. প্রশ্ন

অনেক সময় নামাযের রাকাত নিয়ে সংশয়ে পড়ে যাই। চেষ্টা করেও স্মরণ করতে পারি না কত রাকাত পড়েছি। এক্ষেত্রে করণীয় কী?


উত্তর

নামাযের রাকাত-সংখ্যা নিয়ে সংশয়ে পড়লে করণীয় হল, যে সংখ্যার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হবে সেটাকে ধরে নিয়ে অবশিষ্ট রাকাত পূর্ণ করবে। এক্ষেত্রে সাহু সিজদা দেওয়া লাগবে না। পক্ষান্তরে রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে যদি কোনো ধারণাই প্রবল না হয় তাহলে সম্ভাব্য সংখ্যার মাঝে কম সংখ্যাটি ধরবে। অতপর ঐ হিসাবে অবশিষ্ট নাময পূর্ণ করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রাকাতের শেষে বৈঠক করে তাশাহহুদ পড়বে এবং শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করবে।

উল্লেখ্য যে, নামাযের মধ্যে এ ধরনের সংশয় মনোযোগের অভাবে হয়ে থাকে। তাই খুশু-খুযুর সাথে নামায আদায়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এজন্য কোনো আল্লাহ ওয়ালা বুযুর্গের সোহবতে যাওয়া ও তার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

-কিতাবুল আছল ১/২২৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪২৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৫২; রদ্দুল মুহতার ২/৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুহিববুল্লাহ সাঈদ - জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া

২৯৯৭. প্রশ্ন

একদিন যোহরের নামাযের প্রথম বৈঠকে আমি ইমামের সাথে শরিক হই। এরপর আমি তাশাহহুদ পূর্ণ করার আগে ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু আমি তার সাথে না দাঁড়িয়ে তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়াই। এ কারণে আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি? মূলত এক্ষেত্রে নিয়ম কী? ইমামের সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া না তাশাহহুদ পূর্ণ করে তারপর দাঁড়ানো? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাশাহহুদ পূর্ণ করে দাঁড়ানোই ঠিক হয়েছে। কারণ তাশাহহুদ পড়া ইমাম-মুক্তাদী সকলের উপরই পৃথক পৃথক ওয়াজিব। তাই মুক্তাদির তাশাহহুদ পূর্ণ করার আগে ইমাম তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেও মুক্তাদী তাশাহহুদ পূর্ণ করেই দাঁড়াবে।

-রদ্দুল মুহতার ২/১২, ৪৯৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়াহ

শেয়ার লিংক

হাফেয গিয়াস উদ্দীন - ফেনী

২৯৯৮. প্রশ্ন

আমি একটি হেফযখানার শিক্ষক। আমাদের হেফযখানার অধিকাংশ ছাত্রই নাবালেগ। ছাত্রদের থেকে সবক শোনার সময় প্রায়ই সিজদার আয়াত শুনতে হয়। জানতে চাই, এ সকল নাবালেগ ছাত্রদের থেকে সিজদার আয়াত শোনার কারণে আমার উপর কি সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে?


উত্তর

বুঝমান নাবালেগ শিশু থেকে সিজদার আয়াত শুনলে শ্রোতার উপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়। হেফযখানার ছাত্ররা সাধারণত বুঝমানই হয়ে থাকে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হেফযের ছাত্র নাবালেগ হলেও তাদের থেকে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে।

-কিতাবুল আছল ১/৩১১; মাবসূত, সারাখসী ২/৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫০০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

২৯৯৯. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের খাদেমকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাকে মুক্ত করতে বেশ কিছু টাকা প্রয়োজন। তাই মসজিদ কমিটির লোকজন খাদেমকে মুক্ত করার জন্য মুসল্লিদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে।

জানার বিষয় হল, আমি যদি যাকাতের টাকা দেই তবে কি আমার যাকাত আদায় হবে? উল্লেখ্য যে, টাকা সংগ্রহের বিষয়টি মসজিদ কমিটি খাদেমের সাথে আলোচনা করেনি।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহের এ বিষয়টি যেহেতু খাদেম থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি তাই এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করলে যাকাত আদায় হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, খাদেম যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয় তবে তার অনুমতি সাপেক্ষে এ বাবদ যাকাতের টাকা ব্যয় করা যাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; ফাতহুল কাদীর ২/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৫

শেয়ার লিংক

মাওলানা যাকারিয়া - ঢাকা

৩০০০. প্রশ্ন

আগামী বছর আমরা স্বামী-স্ত্রী হজ্বে যাব। আমাদের দু বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। তাকেও নিয়ে যাব। প্রশ্ন হল এই শিশু ছেলের ইহরাম বা হজ্বের আমল কীভাবে হবে? তাকেও কি ইহরাম পরাতে হবে? ঠান্ডার দরুণ মাথা মুখ ঢাকতে হলে তা পারব কি না? তার ভুলের কারণে দম ওয়াজিব হবে কি? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে তার পিতা ইহরাম  করে নিবেন। আর এই শিশুকে ইহরামের কাপড় পরানো জরুরি নয়। সম্ভব হলে পরাবে এবং যথাসম্ভব ইহরামের নিষিদ্ধ জিনিস থেকেও তাকে বিরত রাখতে চেষ্টা করবে। প্রয়োজন হলে তাকে সেলাই করা পোশাক পরাতে পারবে এবং চেহারা ও মাথা ঢাকতেও পারবে।

শিশু-বাচ্চা ইহরামের নিষিদ্ধ কোনো কিছু করার দ্বারা তার উপর কিংবা তার অভিভাবকের উপর জরিমানা-দম বা অন্য কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। অভিভাবক তাকে নিয়ে তাওয়াফ-সায়ী করবে। আর তার পক্ষ থেকে তাওয়াফের দুই রাকাতও পড়তে হবে না। মিনা, আরাফায় নিজেদের সাথে সাথে রাখবে এবং তার পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করবে। আর তার পক্ষ থেকে দমে শোকর আদায় করতে হবে না। ইহরাম ত্যাগ করার জন্য তার মাথা মুন্ডন করে দিবে।

-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১১২-১১৩, ২৬৩; গুনইয়াতুন নাসিক ৮৩-৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৬

শেয়ার লিংক

আজিমুদ্দীন - ফেনী

৩০০১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার এক লোক পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে। একপর্যায়ে সে তার স্ত্রীকে বলে, তুমি যদি তোমার মেয়ের বাড়িতে কোনো জিনিস দাও তাহলে তোমাকে তোমার পিতার বাড়িতে চলে যেতে হবে। বৃদ্ধকালেও স্ত্রী যদি কোনো জিনিস দেয় তখনও কি এ কথার কারণে স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত হবে?

জানার বিষয় হল, ক) এই শর্ত কতদিন বাকি থাকবে এবং এই শর্ত হতে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?

খ) স্ত্রীর ছেলেরা যদি বোনের বাড়িতে কোনো জানিস দেয় তাহলে তখন স্বামীর এই শর্ত পাওয়া যাবে কি না এবং স্বামীর এই শর্ত পাওয়া গেলে কী করতে হবে?

গ) স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে তুমি তোমার মেয়ের বাড়িতে কোনো জিনিস দিতে পার তখন স্ত্রী যদি কোনো জিনিস দেয় তখন স্বামীর পূর্বের শর্ত পাওয়া যাবে কি না? দলিল-প্রমাণের সাথে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত কথাটি (অর্থাৎ যদি তোমার মেয়ের বাড়িতে কোনো জিনিস দাও তাহলে তোমাকে তোমার পিতার বাড়ি চলে যেতে হবে) স্বামী যদি তালাক প্রয়োগের নিয়তেই বলে থাকে তাহলে ঐ মহিলাটি মেয়ের বাড়িতে ভবিষ্যতে কখনো কিছু দিলেই এক তালাকে বায়েন হয়ে যাবে। এমনকি স্বামীর আদেশক্রমে নিজে কিছু দিলেও তালাক হয়ে যাবে। হ্যাঁ, স্বামী নিজে দিতে চাইলে তাকে জিনিস পত্র জোগাড় করে বা প্রস্ত্তত করে দিতে পারবে। আর তার ছেলে নিজ থেকে বোনের বাসায় কিছু দিলেও কোন অসুবিধা নেই, একারণে তালাক পতিত হবে না।

আর উপরোক্ত কথাটি যদি তালাকের নিয়তে না বলে থাকে তাহলে মহিলাটি মেয়ের বাড়িতে কোনো কিছু দিলে তালাক পতিত হবে না। এখানে উল্লেখ্য যে, ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য মা-ববার উপর বিভিন্ন হক রয়েছে। তারা উভয়ে মা-বাবা থেকে ভালো আচরণ পাওয়ার অধিকার রাখে। তবে এক্ষেত্রে অসমতা বা সীমালঙ্ঘন কোনোটিই ঠিক নয়। সুতরাং স্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো সীমালঙ্ঘন হয়ে থাকলে সেটা সুন্দরভাবে বোঝানো যেত। তা না করে স্বামী যে পন্থা অবলম্বন করেছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৪৬১; রদ্দুল মুহতার ৩/৩০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪২০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - প্রকাশে অনিচ্ছুক

৩০০২. প্রশ্ন

প্রায় তিন বছর আগে আমি আমার মায়ের মাথা ছুঁয়ে কসম করেছিলাম যে, আমি আর ধূমপান করব না। কিন্তু পরে আমি ধূমপান করেছি। অতপর আমি তাবলীগে গিয়ে আল্লাহ তাআলার মেহেরবানিতে দ্বীনের বুঝ পেয়েছি। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় এখন দ্বীনদারির সাথে জীবনযাপন করার চেষ্টা করছি। সকল মন্দ কাজ থেকে তওবা করেছি। এরপর থেকে আর ধূমপান করিনি। আমাকে কি এখন সেই কসমের কাফফারা দিতে হবে? আমি এখনো ছাত্র। আমার ভরণ-পোষণের খরচ আববা থেকে নেই। কাফফারা দিতে হলে তার থেকে টাকা নিয়ে কি দেওয়া যাবে? তাকে কি জানাতে হবে কী জন্য টাকা নিয়েছি? কাফফারা স্বরূপ কী করতে হবে?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কসম ভঙ্গ করার কারণে আপনাকে কাফফারা দিতে হবে। কসমের কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে দু বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়ানো অথবা তাদেরকে এক জোড়া করে বস্ত্র দান করা। আর আপনার পিতাকে জানিয়ে তার থেকে টাকা নিয়েও কাফফারা আদায় করতে পারবেন। তবে নিজ থেকে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য না থাকলে লাগাতার তিনটি রোযা রেখে কাফফারা আদায় করা যাবে। প্রকাশ থাকে যে, কসম একমাত্র আল্লাহ তাআলার নামেই করা যায়। আল্লাহ তাআলা ব্যতিত অন্য কারো নামে কসম করা নাজায়েয। আর পিতা-মাতা বা অন্য কারো মাথা ছুয়ে কসম করা কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত।

-সূরা মায়েদা : ৮৯; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৫৩; কিতাবুল আছার ২/৬০০; কিতাবুল আছল ২/২৭৬, ২৮০; ফাতহুল কাদীর ৪/৪৬৭; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৫, ৩/৭০৮

শেয়ার লিংক

ইমতিয়ায মাসরূর - বগুড়া

৩০০৩. প্রশ্ন

আমাদের পার্শ্ববর্তী সমাজের কয়েকজন দ্বীনদার লোকের সাথে আমি শরিকে কুরবানী করে থাকি। আমাদের ঈদগাহে ঈদের নামায একটু বিলম্বে হয়। পাশের সমাজে সকাল সাতটার দিকেই হয়ে যায়। আমার শরিকরা তাদের সমাজে ঈদের জামাত হওয়ার পরপরই আমাদের কুরবানীর পশুটি যবাই করে ফেলে। তখনো আমাদের ঈদগাহে ঈদের নামায অনুষ্ঠিত হয়নি। জানার বিষয় হল, আমি ঈদের নামায পড়ার আগে তারা আমার কুরবানী করে ফেলার কারণে কোনো অসুবিধা হয়েছে কি? এক্ষেত্রে আমার কুরবানী কি আদায় হয়েছে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কুরবানী আদায় হয়ে গেছে। কেননা এক এলাকার কোনো এক স্থানে ঈদের নামায হয়ে গেলে ঐ এলাকাবাসী সকলের জন্য কুরবানী করা সহীহ হয়ে যায়। তাই যে ব্যক্তি পরবর্তী জামাতে নামায পড়বে তার জন্যও কুরবানী করা সহীহ।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০৫; শরহু মুখতাছারিত তহাবী ৭/৩৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৯৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফয়যুর রহমান - কদমতলী, সিলেট

৩০০৪. প্রশ্ন

 

খালেদ এবং তার ছোট চার ভাই মোট পাঁচ জন মিলে প্রতিবছরই একটি গরু কুরবানী করে থাকে। খালেদ বলছে, কুরবানীর পশুর অর্ধেক মূল্য সে একাই দেয়। আর বাকি অর্ধেক মূল্য বাকি চারজন মিলে পরিশোধ করে। যার ফলে বাকি চারজনকে পূর্ণ এক সপ্তমাংশের কম মূল্য আদায় করতে হয়। খালেদ টাকা বেশি দিলেও গোশত বেশি দাবি করে না। সকলের মাঝে সমান বণ্টনই হয়। বরং এক ভাইয়ের পরিবারের সদস্য বেশি বিধায় তাকে সবচেয়ে বেশি গোশত দেওয়া হয়। এখন জানতে চাই এভাবে কুরবানী করা কি সহীহ হবে?


 

উত্তর

 

প্রশ্নের বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যিনি টাকা বেশি দেন তিনি অন্য ভাইদের অংশের অবশিষ্ট টাকা নিজ থেকে পরিশোধ করে দেন তাই এমনটি হলে তাদের সকলের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। 

তবে এক্ষেত্রে যদি প্রত্যেকের টাকা অনুযায়ী অংশ বণ্টন করা এবং সে অনুপাতে গোশত নেওয়া উদ্দেশ্য হয় তাহলে কারো কুরবানীই সহীহ হবে না। কারণ এক্ষেত্রে চারজনের প্রত্যেকের অংশ পশুর এক সপ্তমাংশের কম হয়ে যায়।

 

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮

শেয়ার লিংক

জুনায়েদ আহমদ - দামপাড়া, চট্টগ্রাম

৩০০৫. প্রশ্ন

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমার মেয়ের স্বামী আমার নাতির আকীকা করেনি। অদূর ভবিষ্যতে আকীকা করার সম্ভাবনাও কম।  নানা হিসেবে আমি নিজ টাকায় নাতির আকীকা করলে আকীকা হবে কি না এবং তা জায়েয কি না? আমি আমার বাড়িতে নাতির আকীকা করতে চাই, আমার বাড়িতে আকীকা করলে হবে কি না? গরু বা ছাগল কোন্ পশু দিয়ে আকীকা করা উত্তম? নাতি জন্মের পর পরই আমার মেয়ের শ্বাশুড়ি আকীকা করার গরু নানা বাড়ি থেকে দিতে হয় বলে আমার মেয়ের নিকট গরু দাবী করেছে। এ প্রসঙ্গে ফতোয়া কী? মেয়ের শ্বাশুড়ির দাবির প্রেক্ষিতে আমি আমার নাতির আকীকা করার জন্য গরু বা ছাগল দিলে তা কি যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে? আমার মেয়ের স্বামী সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আকীকা করছে না। এতে শরীয়তের বিধান কী? আকীকার গোশত নাতির দাদার বাড়িতে না পাঠালে আকীকা কবুল হবে কি না? তাছাড়া আকীকার পশু জবাই করে গোশত কোনো আত্মীয়স্বজনকে না দিয়ে সব গোশত এতিমখানায় দিয়ে দিলে আকীকা হবে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

আকীকা করা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে আকীকা করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সন্তানের আকীকা করা পিতার দায়িত্ব; নানার দায়িত্ব নয়। কেননা সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব যার উপর শরীয়ত তাকেই আকীকা করার নির্দেশ দিয়েছে। অবশ্য পিতার অনুমতিক্রমে নানা নাতির আকীকা করলে তা সহীহ হবে। কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দৌহিত্র হাসান-হুসাইনের আকীকা করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৮৩৪)

আর এক্ষেত্রে নানা চাইলে তার নিজ বাড়িতেও আকীকা করতে পারবেন।

ছেলের আকীকার জন্য দুটি ছাগল দেওয়া উত্তম। কেননা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৫১৩)

প্রকাশ থাকে যে, মেয়ের শ্বাশুড়ির ঐ কথা ঠিক নয়। শ্বাশুড়ির জন্য পুত্রবধুর কাছে আকীকার গরু দাবি করা জায়েয হয়নি। এটি যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত।

আর আকীকার পুরো গোশত এতিমখানায় দিয়ে দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে।

তবে উত্তম হলো তিন ভাগ করে একভাগ নিজেদের জন্য রাখা, একভাগ প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া এবং একভাগ ফকীর-মিসকীনকে দেওয়া। আর আত্মীয়দের অংশ থেকে সন্তানের দাদা ও অন্যান্য আত্মীয়দেরকেও দেওয়া উচিত।

-আলমওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ ৩০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শরীফুদ্দীন - রামপুর, ফেনী

৩০০৬. প্রশ্ন

আমরা তিন ভাই একটি ঘরের সমহারে মালিক। বড় ভাই তার অংশ বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে ছোট ভাই খরিদ করতে রাজি হয়। উভয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, উক্ত ঘরের মূল্য নির্ণয় করার জন্য তাদের দুজনের পছন্দমতো দ্বীনদার লোকের সমন্বয়ে পাঁচ জনের একটি কমিটি গঠিত হবে। তারা যে মূল্য নির্ধারণ করবে উভয় পক্ষ তা মেনে নিবে বলে ওয়াদাবদ্ধ হয়। কমিটি যখন মূল্য নির্ধারণ করে তখন ক্রেতা ছোট ভাই ওয়াদা মোতাবেক তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কিন্তু বড় ভাই ঘরের মূল্য কম হচ্ছে মনে করে কমিটির নিকট পুনরায় আরো সাত লক্ষ টাকা বেশি দাবি করেন। কমিটি মাসলাহাত মনে করে তা আমলে নিয়ে আরো পাঁচ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে দেন। তখন বড় ভাই (বিক্রেতা) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। তখন কমিটি সকলের উপস্থিতিতে লেনদেন ও রেজিস্ট্রির সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, রেজিস্ট্রির সময় তিনি বলেন আমি উক্ত মূল্যে বিক্রি করব না। আমার বিক্রি শুদ্ধ হয়নি। আমার শরীয়া মোতাবেক ফিরে যাওয়ার এখতিয়ার আছে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এই ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হয়েছে কি না এবং বিক্রেতার ফিরে যাওয়ার এখতিয়ার আছে কি না। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সালিশের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণের পর বড় ভাই কেবল আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এরপর লেনদেন ও রেজিস্ট্রির জন্য সামনে একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বক্তব্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সালিশের মধ্যে বড় ভাইয়ের অংশের কেবল মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি এবং লেনদেন কিছুই হয়নি। বরং সামনের ঐ তারিখে ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন সম্পন্ন করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর বড় ভাই সালিশের ঐ সিদ্ধান্ত যেহেতু মেনে নিয়েছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন সেহেতু পরবর্তীতে তার জন্য উক্ত মূল্যে বিক্রি করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করা ঠিক হয়নি। এতে ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করার গুনাহ হয়েছে। তাই বড় ভাইয়ের উচিত হবে, সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত মূল্যেই ছোট ভাইয়ের নিকট তা বিক্রি করে দেওয়া।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩১৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সালমান - গোপালগঞ্জ

৩০০৭. প্রশ্ন

আমি এবং রফিক মুদারাবা চুক্তিতে পাটের ব্যবসা শুরু করি। শ্রম আমার আর মূলধন রফিকের। আমরা মুকসুদপুর বাজারে একটি দোকান ও গুদাম ভাড়া নিয়েছি। পাটের সিজনে পাট ক্রয়ের জন্য অনেক সময় আমাকে নিকটে ও দূরে যেতে হয়। আমার নিজের মোটরসাইকেল আছে। আমি তাতে যাতায়াত করি। যাওয়া-আসার পথে মোটরসাইকেলে যে তেল খরচ হয় আমি তা মুদারাবা সম্পদ থেকে নিতে পারব কি? অনুরূপভাবে দোকানের সাইনবোর্ড স্থাপন এবং মাল গাড়িতে উঠানো ও নামানোর লেবার খরচ মুদারাবার সম্পদ থেকে নিতে পারব কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

পাট ক্রয়ের জন্য কোথাও গেলে বা ব্যবসার কোনো কাজে কোথাও যাতায়াতের কারণে বাস্তবে মোটর সাইকেলে যে পরিমাণ তেল খরচ হয় তা ব্যবসার সম্পদ থেকে নিতে পারবেন। খরচের অতিরিক্ত তেল নেওয়া যাবে না। আর বিনিয়োগকারী অনুমতি দিলে দোকানের সাইনবোর্ড স্থাপন করা এবং এর খরচও ব্যবসার মাল থেকে নিতে পারবেন। এ বাবদ যতটুকু অনুমতি দিবে তার বেশি খরচ করা যাবে না। আর গাড়িতে ব্যবসার মাল উঠানো ও নামানোর জন্য যে খরচ হবে তাও মুদারাবার সম্পদ থেকে নিতে পারবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২২/৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৫৭, ৫/৬৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৫৩; শরহুল মুহাযযাব ১৫/১৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৯৬

শেয়ার লিংক

মুহিউদ্দীন - মেঘনা, কুমিল্লা

৩০০৮. প্রশ্ন

আমি বাংলা এক বইয়ে তিরমিযী শরীফের বরাত দিয়ে উল্লেখ দেখতে পেলাম যে, বিভিন্ন দিন সম্পর্কে বলেছেন, এই দিন স্ত্রী সহবাস করলে সন্তান পিতামাতার নাফরমান হয়। ঐদিন সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হয়। আরো অনেক কিছু।

আমার জানার বিষয় হল, হাদীসে এমন কোনো দিন বা সময়ের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আছে কি?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত বইয়ের ঐ কথাগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এগুলো হাদীস নয়। তিরমিযী শরীফ বা অন্য কোনো হাদীসের কিতাবে এ ধরনের কোনো বর্ণনা নেই। মানুষের বানানো কথাবার্তাকে হাদীসের কিতাবের মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া ভয়াবহ কবীরা গুনাহ।

হাদীস শরীফে এসেছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অর্থ : যে ব্যক্তি জেনেশুনে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করল সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০৭

প্রকাশ থাকে যে, স্ত্রী মিলনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বা দিন তারিখের সীমাবদ্ধতা নেই। মাসিকের দিনগুলো ছাড়া অন্য যে কোনো সময় স্ত্রী মিলন বৈধ।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল মতিন - ভালুকা, ময়মনসিংহ

৩০০৯. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি থেকে শুনলাম যে, কোনো ব্যক্তির যখন হাই আসে সে সময় মুখে হাত না দিলে মুখের ভিতরে শয়তান প্রবেশ করে এবং মুখের ভিতরে সে হাসতে থাকে। কথাটি কতটুকু সত্য?

এ সম্পর্কে হাদীসে কিছু থাকলে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত কথা সঠিক। এটি হাদীস শরীফেরই ভাষ্য।

আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন মুখে হাত রাখে। কেননা, (এ সময়) শয়তান মুখে প্রবেশ করে। (আল আদাবুল মুফরাদ ৯৫৯)

সহীহ বুখারীতে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা হাঁচি পছন্দ করেন, হাই তোলা অপছন্দ করেন। কেননা হাই শয়তান থেকে আসে। সুতরাং তোমাদের কারো যদি হাই আসে সে যেন যথাসাধ্য তা দমন করার চেষ্টা করে। কেননা হাই তোলার কারণে শয়তান হাসতে থাকে। (সহীহ বুখারী ২/৯১৯)

সহীহ ইবনে হিববানের একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কারো যদি হাই আসে সে যেন যথাসাধ্য মুখ বন্ধ রাখে অথবা মুখের উপর হাত রাখে। কেননা কোনো ব্যক্তি যখন হাই তোলে এবং আহ বলে তখন শয়তান তার মুখের ভেতর হাসতে থাকে।

-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৩৫৬; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৭৪৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আসাদুল হক - এলজিইডি

৩০১০. প্রশ্ন

 

অযু-গোসলের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন? কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু-গোসলের পর কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মোছেননি। কথাটি কতটুকু সঠিক? দলিলপ্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।


 

উত্তর

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু ও গোসলের পর কখনো কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন। আবার কখনো মোছেননি। উভয় ধরনের আমলই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত আছে। 

অযু ও গোসলের পর তিনি কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন এ সম্পর্কিত দু একটি হাদীস নিম্নে পেশ করা হল। 

সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করেন। এরপর তিনি তার গায়ের পশমী জুববা উল্টে নিয়ে চেহারা মুছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৬৮)

প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ সুনানে ইবনে মাজাহর অযু ও গোসলের পর রুমাল ব্যবহার করা নামক অধ্যায়ে এসেছে, কায়েছ বিন সাআদ রা. বলেন, আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন। আমরা তাঁর জন্য পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি গোসল করলেন। তখন আমরা তাঁকে হলুদ রঙ্গের একটি চাদর এনে দিলাম। তিনি সেটি গায়ে জড়িয়ে নিলেন। (ফলে সেটি শরীরের পানি মোছার জন্য রুমালের কাজ দিল)। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৬৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫১৪৩)

অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু ও গোসলের পর কাপড় দ্বারা শরীর মোছেননি এমন হাদীসও আছে। যেমন, উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফরয গোসল করছিলেন তখন (শরীর মোছার জন্য) একটি কাপড় এনে দিলাম। তিনি তা ফেরত দিলেন এবং শরীরের পানি (হাত দ্বারা) ঝাড়তে লাগলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৭৪)

তবে এ হাদীস দ্বারা যেমনিভাবে না মোছা প্রমাণিত হয় তেমনিভাবে মোছার বিষয়টিও বোঝা যায়। যেমন তাইমী রাহ. উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গোসলের পর কখনো কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মুছতেন এ হাদীসটি তার একটি দলিল। কেননা যদি গোসলের পর শরীর একেবারেই না মুছতেন তাহলে মায়মুনা রা. শরীর মোছার জন্য রুমাল এনে দিতেন না। (ফাতহুল বারী ১/৪৩২)

আল্লামা শাববীর আহমদ উছমানী রাহ. সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফযলুল বারীতে এবং আল্লামা তকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম ইনআমুল বারীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, গোসলের পর শরীর মোছার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় ব্যবহার অন্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে।

আল্লামা আবদুল হাই লখনবী রাহ.-ও এমনটি বলেছেন।

মোটকথা উভয় ধরনের আমলই প্রমাণিত আছে। তাই নির্দিষ্টভাবে কোনো একটিকে সঠিক ও সুন্নত বলা এবং অন্যটিকে সুন্নত পরিপন্থী বলা যাবে না। বরং হাদীসের দৃষ্টিতে উভয় ধরনের আমলের সুযোগ আছে।

 

-আসসিআয়াহ ১/১৯১; রিসালাতুল কালামিল জালীল ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিলমিন্দীল ৫/৩৭০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫-১৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৩; শরহু মুসলিম নববী ১/১৪৭

শেয়ার লিংক

রুমা - কুড়িগ্রাম

৩০১১. প্রশ্ন

নাবালেগ ছেলের হাত পায়ে মেহেদি ব্যবহার করার হুকুম কি? জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

পুরুষের হাত পায়ে মেহেদি লাগানো নাজায়েয। এমনিভাবে নাবালেগ ছেলের হাত পায়ে মেহেদি লাগানোও নিষেধ।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৮৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১০৯

শেয়ার লিংক

আবদুর রকীব - মানিকগঞ্জ

৩০১২. প্রশ্ন

জনৈক মহিলা তার বাসায় কোন পুরুষ লোক না থাকায় সে ছোট বাচ্চার সহায়তা নিয়ে নিজেই মুরগী যবেহ করেছে। তার জন্য মুরগী যবেহ করা জায়েয হয়েছে কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

হ্যাঁ, জায়েয হয়েছে। কেননা যবেহের জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়; বরং মহিলার যবাইও সহীহ। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কাব রা. তার পিতা কাব রা. থেকে বর্ণনা করেন, এক মহিলা ধারাল পাথর দ্বারা ছাগল যবেহ করেন, অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তা খেতে বললেন।

-সহীহ বুখারী ২/৮২৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩০৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/৩০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৭

শেয়ার লিংক

তামরীন আহমদ হাদী - কমলাপুর, ঢাকা

৩০১৩. প্রশ্ন

হেলান দিয়ে পানাহারের ব্যাপারে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি? দলিলের আলোকে জানালে খুশি হব।


উত্তর

খানা পিনার সময় হেলান না দেওয়া সুন্নত। স্বাভাবিকভাবে বসে খেতে পারে এমন সুস্থ ব্যক্তির জন্য হেলান দিয়ে বা কিছুতে ঠেস দিয়ে পানাহার করা অনুত্তম। হাদীস শরীফে আবু জুহাইফা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হেলান দিয়ে আহার করি না। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৯৮)

অন্য একটি হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বাভাবিক অবস্থায় কখনো হেলান দিয়ে আহার করতে দেখা যায়নি। (সুনানে আবু দাউদ ৪/২৮৭)

অন্য এক হাদীসে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আল্লাহ তাআলার গোলাম। আমি সেভাবেই আহার করি যেভাবে একজন গোলাম আহার করে এবং আহারের জন্য সেভাবেই বসি যেভাবে একজন গোলাম বসে। (কিতাবুয যুহদ পৃ. ১১)

অবশ্য অসুস্থতা বা দুর্বলতার কারণে হেলান দিয়ে পানাহার করার অবকাশ রয়েছে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার্ত অবস্থায় দুর্বলতার কারণে হেলান দিয়ে আহার করেছেন এ কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে খেজুর পেশ করা হল তখন আমি তাকে ক্ষুধায় দুর্বল হওয়ার কারণে হেলান দিয়ে আহার করতে দেখেছি।

(শামায়েলে তিরমিযী, পৃ. ১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫২৯০); ফাতহুল বারী ৯/৪৫২; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫৬; উমদাতুল কারী ২১/৪৪

শেয়ার লিংক