জুমাদাল উলা-জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৫ || ডিসেম্বর ২০২৩

মুহা. জিয়াউদ্দীন ফারুকী - সিলেট

৬৩৩৫. প্রশ্ন

মুহতারাম মুফতী সাহেব, আমাদের এলাকায় কিছুদিন থেকে একটি লেনদেন প্রথা প্রচলিত হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদ কমিটি মসজিদের টাকা থেকে গরু কিনে সেটা নিলামে বাকিতে এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। যেমন ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ৬ মাস পরে মূল্য পরিশোধের চুক্তিতে ৬০ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। এবং এর জন্য একজন দায়িত্বশীল নিয়োগ করা হয়। যথাসময়ে আদায় না করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সমমূল্যের কোনো জিনিস ক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে আসে। এমন ক্রয়-বিক্রয়ের দ্বারা মসজিদ কমিটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, মসজিদ ফান্ডের কিছু লাভ করা। আর অনেক গরীব মানুষ যেহেতু একসাথে নগদ টাকা দিয়ে গরু কিনতে পারে না, তাই বেশি দামে হলেও তারা বাকিতে গরু কিনে নেয়। জানার বিষয় হল, উল্লিখিত পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে কি না? আর এজন্য লোক নিয়োগের হুকুম কী? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উল্লেখ্য, পারিশ্রমিক ছাড়াই লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। তার কাজ হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা উসূল করা। আর মেয়াদ শেষ হলে অন্য কোনো উপায়ে হলেও আদায় করা।

 

উত্তর

মসজিদ ফান্ডের সাধারণ দান-সদকার টাকা, যা মানুষ মসজিদের উন্নয়ন ও এর খরচাদি নির্বাহের জন্য দিয়ে থাকে, তা দিয়ে ব্যবসা করা শরীয়ত অনুমোদিত নয়। বিশেষত প্রশ্নোক্ত পদ্ধতির বাকিতে ব্যবসা, যেখানে পরবর্তীতে মূল্য যথাযথ আদায় হওয়ার বিষয়টিও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই মসজিদ ফান্ডের টাকা মসজিদ কমিটি আমানত হিসেবে নিজেদের কাছে হেফাজত করে রাখবে; তা এভাবে ব্যবসায় খাটাবে না। তবে কোনো ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ যদি ব্যবসা করে তহবিল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে কোনো অর্থ দান করে থাকেন, তাহলে সে টাকা মসজিদের আয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবসায় খাটানো যাবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসাটি হতে হবে হালাল, এবং তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ ।

অবশ্য এতদিন প্রশ্নোক্ত মসজিদ ফান্ডের টাকা দিয়ে যে ব্যবসা করা হয়েছে, তা যদি নিম্নোক্ত শর্তাদি রক্ষা করে করা হয়ে থাকে, তাহলে তা জায়েয গণ্য হবে এবং এ থেকে প্রাপ্ত টাকা মসজিদে খরচ করা যাবে-

১. বাকিতে বিক্রির কারণে কিছুটা (যৌক্তিক) বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। তবে মূল্য বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার আগেই সুনির্ধারিত হয়ে যেতে হবে।

২. মেয়াদান্তে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া বা শর্ত করে অতিরিক্ত কোনো কিছু নেয়া যাবে না।

উল্লেখ্য, দেনাদার কর্তৃক অকারণে অন্যের পাওনা পরিশোধে গড়িমসি অন্যায় ও গোনাহের কাজ। তবে বাস্তবসম্মত ওজরের কারণে কেউ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে সক্ষম না হলে তাকে সময় ও সুযোগ দেওয়া ইসলামের শিক্ষা। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করলে সমমূল্যের কোনো জিনিস নিয়ে আসা হয়’- বলে পাওনা উসূলের যে ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এর ধরন ও পদ্ধতি কী- তা জানা দরকার। তা অবগত হওয়ার পরই বলা যাবে, এভাবে কাজটি করা শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না। বাহ্যত মনে হচ্ছে, এটি পাওনা উসূলের সহীহ পন্থা নয়। তাই বিষয়টি বিস্তারিত জানিয়ে উত্তর জেনে সে অনুযায়ী আমল করা দরকার।

সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৮৮; আলইসতিযকার ৫/৫০৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/৭৬; আলমাজমু শরহুল মুহায্যাব ১৩/৭; কিফায়াতুল মুফতী ১০/২৫৩; মাজাল্লাতু মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী ৬/১/৪৪৭

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন