শাওয়াল ১৪৪৫   ||   এপ্রিল ২০২৪

ওলী হওয়ার মাপকাঠি ঈমান ও তাকওয়া

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

হামদ ও সানার পর...

আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَا تَكُوْنُ فِیْ شَاْنٍ وَّ مَا تَتْلُوْا مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّ لَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَیْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِیْضُوْنَ فِیْهِ وَ مَا یَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ وَ لَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَ لَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍ،  اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ، لَهُمُ الْبُشْرٰی فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ فِی الْاٰخِرَةِ لَا تَبْدِیْلَ لِكَلِمٰتِ اللهِ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ، وَ لَا یَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْ ۘ اِنَّ الْعِزَّةَ لِلهِ جَمِیْعًا هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ، اَلَاۤ اِنَّ لِلهِ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنْ فِی الْاَرْضِ  وَ مَا یَتَّبِعُ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ شُرَكَآءَ  اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنْ هُمْ اِلَّا یَخْرُصُوْنَ.

(হে নবী!) তুমি যে-অবস্থায়ই থাক এবং কুরআনের যে-অংশই তিলাওয়াত কর এবং (হে মানুষ!) তোমরা যে-কাজই কর, তোমরা যখন তাতে লিপ্ত থাক, তখন আমি তোমাদের দেখতে থাকি। তোমার প্রতিপালকের কাছে অণু-পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না- না পৃথিবীতে, না আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট এবং তার চেয়ে বড় এমন কিছু নেই, যা এক স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।

স্মরণ রেখ, যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা সেইসব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তাদের দুনিয়ার জীবনেও সুসংবাদ আছে এবং আখেরাতেও। আল্লাহর কথায় কোনো পরিবর্তন হয় না। এটাই মহাসাফল্য। (হে নবী!) তাদের কথা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়। নিশ্চয়ই সমস্ত শক্তিই আল্লাহর। তিনি সব কথার শ্রোতা সব কিছুর জ্ঞাতা।

স্মরণ রেখ, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, সব আল্লাহরই মালিকানাধীন। যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকে, তারা আল্লাহর (প্রকৃত) কোনো শরীকের অনুসরণ করে না। তারা কেবল ধারণারই অনুসরণ করে। আর তাদের কাজ কেবল আনুমান-নির্ভর কথা বলা। -সূরা ইউনুস (১০) : ৬১-৬৬

এসকল আয়াতে অনেকগুলো শিক্ষা রয়েছে। একটা বড় শিক্ষা হচ্ছে মুরাকাবা। ফার্সিতে বলে- ইয়াদদাশত; স্মরণ রাখা, মনে রাখা।

কী মনে রাখব? সেটা এই আয়াতে বলা হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন, তোমরা যে হালতেই থাক, যে আমলেই থাক, কুরআন তিলাওয়াত বা অন্য কোনো নেক আমল কিংবা কোনো গুনাহের কাজ করছ; সর্বাবস্থায়-

كُنَّا عَلَیْكُمْ شُهُوْدًا.

আমি হাজির, আমি সবকিছু দেখছি।

শুধু আমল দেখছেন তাই নয়; বরং-

اِذْ تُفِیْضُوْنَ فِیْهِ .

আমলের মধ্যে বান্দা কতটুকু মনোযোগী, কীভাবে সে আমলে ধাবিত হচ্ছে, সবকিছুর বিস্তারিত ইলম আল্লাহ তাআলার আছে। নামায কতটা মনোযোগের সাথে পড়ছে, তাও আল্লাহ দেখছেন। আবার কোনো গুনাহের কাজ করলে তা বান্দা কত তৎপরতা ও উদ্যমের সাথে করছে, আল্লাহ তাও দেখছেন।

বান্দার আমল আল্লাহ শুধু এজমালীভাবে হালকা হালকা জানেন- এমন না; বিস্তারিত, আমলের মান ও পরিমাণও তিনি জানেন, শোনেন এবং দেখেন।

আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে আমাদের এ বিষয়টি জানিয়ে দিলেন- বান্দা, আমি তোমার সঙ্গে আছি, তোমার কাছে আছি। সব দেখছি, শুনছি।

কারো হুকুম যদি কেউ লঙ্ঘন করে, আর ভাবে, তিনি তো দেখছেন না। তাহলে বিষয়টা তার কাছে হালকা মনে হয়। আর যদি বোঝে যে, তিনি দেখছেন, পরে এর হিসাবও হবে; তাহলে তার কাছে সংকোচ লাগবে, গুনাহের কাজটা থেকে সে বিরত থাকবে।

বান্দার অনুভূতিতে যা-ই থাকুক, বাস্তবতা এটাই, আল্লাহ তাআলা সব দেখছেন। ছোট থেকে ছোট বিষয় দেখছেন। আয়াতের সামনের অংশে এটাই বলা হয়েছে-

وَ مَا یَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ وَ لَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَ لَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍ.

একেবারে কণা থেকে কণা সব আল্লাহ দেখেন- এই বাস্তবতা আমাদের উপলব্ধিতে আসলেই মুরাকাবার আমল সার্থক হবে।

বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকে। আল্লাহর দেখার সামনে এ ক্যামেরা কিছুই না। অথচ অনেক স্থানে শুধু লেখা থাকে, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তা দেখে সকলে সতর্ক হয়ে যায়। কারণ, যদিও এখানে কোনো লোক নেই, কিন্তু স্ক্রিনের সামনে বসে তাকে কেউ না কেউ ঠিকই দেখছে।

তো দুনিয়ার যাবতীয় প্রযুক্তি সবই আল্লাহর মাখলুকের তৈরি। সেগুলোর পর্যবেক্ষণই যদি এমন হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার নিজের জানা-দেখা-শোনা কত সূক্ষ্ম হবে- তা সহজেই বোঝা যায়। আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের দেখেন ও শোনেন। যাতে ইবাদতের মধ্যেও মনে থাকে, আল্লাহ আমায় দেখছেন, তাঁর কাছে ভালো লাগছে আমার তিলাওয়াত, আমার নামায। আল্লাহ এটা দেখে খুশি হচ্ছেন যে, আমি আল্লাহ্কে রাজি করানোর জন্য, আল্লাহর ভয়ে অমুক গুনাহ থেকে দূরে ছিলাম।

এভাবে যদি নেক কাজ করার সময় এটা মনে আসে যে, আল্লাহ দেখছেন; তাহলে নেক কাজটা করতে ভালো লাগবে। তেমনিভাবে গুনাহের কাজেও যদি এ অনুভূতি জাগ্রত থাকে যে, আল্লাহ দেখছেন, তিনি অসন্তুষ্ট হচ্ছেন, নারাজ হচ্ছেন। তাহলে গুনাহ করতে সংকোচ হবে- না এটা করা যাবে না। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আগে করে থাকলেও আর করা যাবে না।

এটা মুরাকাবার ফায়েদা। এই কাজে যে যত দক্ষ হবে, সে তত আল্লাহর ওলী হতে পারবে। পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(মনে রেখো, যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের না কোনো ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তিত হবে। যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে থেকেছে।)

যারা আল্লাহর ওলী, তাদের কোনো ভয় নেই।

কারা আল্লাহর ওলী? আল্লাহ বলেন-

الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

ওলীর পরিচয় হল, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।

এটি হল, কুরআন-হাদীস অনুযায়ী বেলায়েত বা আল্লাহর ওলী হওয়ার মানদণ্ড। যার ঈমান ও তাকওয়া যত বেশি, সে তত বড় ওলী।

কারো মধ্যে এ মানদণ্ড না থাকলে অন্য যত সিফাতই থাকুক, সে আল্লাহর ওলী হতে পারবে না। কুরআন কারীমের অনেক জায়গাতেই এ সিফাতের কথা এসেছে।

ঈমান ও তাকওয়া নাজাতের মানদণ্ড, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মানদণ্ড, তেমনি ওলী হওয়ারও মানদণ্ড।

ঈমান আর তাকওয়া না থাকলে ওলী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ঈমান-তাকওয়া সামান্য আছে, তাহলে যতটুকু আছে ততটুকু ওলী। তবে সামান্য দিয়ে তো আর ওলী নাম হবে না। ওলী হওয়ার বিভিন্ন স্তর রয়েছে।

আল্লাহর যেকোনো বান্দার মধ্যে যদি ঈমান থাকে, তাহলে সামান্য হলেও তাকওয়া থাকবে।

তাকওয়া হল- শিরক ও কুফর থেকে বাঁচা, বদ অভ্যাস ও গুনাহ থেকে বাঁচা। আল্লাহর নাফরমানী থেকে বাঁচা।

তো যার মধ্যে ঈমান আছে, যদি সত্যিই ঈমান থেকে থাকে, তাহলে তার মধ্যে কুফর থাকবে না, শিরক থাকবে না। মুমিন মানেই হল, সে শিরক ও কুফর থেকে বেঁচেছে, মুনাফিকী থেকে বেঁচেছে। তবেই তো মুমিন হবে। অন্যথায় তো সে মুমিন হতে পারবে না।

তেমনিভাবে যে মুমিন তার মধ্যে কিছু না কিছু তাকওয়া থাকবেই। তাই যে মুমিন, সে একেবারে প্রাথমিক স্তরের হলেও আল্লাহর ওলী। তবে এতটুকু স্তর দিয়ে কারো নাম ওলী হয় না।

উদাহরণস্বরূপ- ধনী ও গরিব। গরিব ব্যক্তির কাছে যে কিছুই নেই, তা তো নয়। তার ঘর আছে, মোটামুটি চলার মতো অর্থও আছে। তবু সে গরিব বলে বিবেচিত। কারণ, ধনী বলতে যে পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকা দরকার, তা তার কাছে নেই।

ওলী শব্দ আরবী বেলায়াহ (الوِلاَيَةُ) শব্দ থেকে এসেছে। ওলী শব্দের বহুবচন আউলিয়া। বেলায়েতের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। একেবারে স্বাভাবিক স্তরের কারণে কাউকে ওলী বলা হয় না। কিন্তু সেটাও একটা স্তর।

ঈমান ও তাকওয়া এই দুই গুণে অগ্রসর হওয়ার কারণে আল্লাহর খাস বান্দাদের ওলী বলা হয়।

আমাদের সমাজে ওলীর মানদণ্ড নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে। যেমন, কেউ বাস্তবে আল্লাহর ওলী, কিন্তু তাকে আল্লাহর ওলী মনে করা হয় না। অবশ্য এতে তার কোনো সমস্যা নেই।

বিপরীতও দেখা যায়, বাস্তবে ওলী না, কিন্তু সমাজে তাকে ওলী মনে করা হচ্ছে।

পীরফার্সী শব্দ। কুরআন-হাদীসে এ শব্দ নেই। আরবীতে বলা যায়-শায়েখ। শায়েখ অর্থ যিনি মুরব্বি, মুরশিদ। মানুষকে সঠিক পথের রাহনুমায়ী করেন। তাই তাকে শায়েখ বলা হয়।

শায়েখ একটা পরিভাষা। কাকে শায়েখ বানাবেন, তার মানদণ্ড ঠিক করতে হবে কুরআন-হাদীস থেকে। কে আমার মুর্শিদ হতে পারেন এবং একজন মুর্শিদের মধ্যে কী কী গুণাবলি থাকা আবশ্যক- এ সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা আছে। যদিও মুর্শিদ বা শায়েখ শব্দে নেই; তবে মূল বিষয়টি বর্ণিত আছে।

কুরআনের নিজস্ব ভাষা-পরিভাষা আছে, সেটা বুঝতে হবে। তাহলে আপনি কুরআনে এগুলো পাবেন, অন্যথায় পাবেন না।

যেমন এখানে ওলী হওয়ার মানদণ্ড বলা হয়েছে, ঈমান ও তাকওয়া। কিন্তু মানুষ তো অনুবাদ পড়ে পড়ে চলে যায়। এখানে যে এটা বলা হল, তা অনেকেই খেয়াল করে না।

ওলী নাম হলেই যে আল্লাহর ওলী- এমন না। আবার ওলী নাম না হলেও যে সে আল্লাহর ওলী না- এমনও নয়। কারণ এখানে মূল বিষয় হল, শরীয়তের মানদণ্ড। ওলী হওয়ার যে মানদণ্ড কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা যার মধ্যেই থাকবে সে আল্লাহর ওলী। আর এই মানদণ্ড যার মধ্যে থাকবে না তার নাম ওলী হলেও সে ওলী নয়।

সে জন্য মানদণ্ডটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, অনেক সময় অনেকের হালত পরিবর্তন হয়ে যায়। এমন হয়, কেউ আগে ভালো ছিলেন, কিন্তু পরে তার মধ্যে অনেক গোমরাহী চলে এসেছে।

তখন কিন্তু তার কাছ থেকে দ্বীনী রাহবারি গ্রহণ করা আর জায়েয হবে না।

নিজামুদ্দীন মারকায থেকে আমরা তাবলীগের হেদায়েত গ্রহণ করতাম। কেন? সেটা কি কেবল নিজামুদ্দীন হওয়ার কারণে? না, এজন্য যে, সেখানে যারা কথা বলতেন তারা সুন্নাহ-শরীয়তের অনুসারী এবং হেদায়েতের কথা বলতেন? কিন্তু যদি মিম্বর এমন লোকের হাতে যায়, যে আয়াত-হাদীসের বিকৃতি করে, নবীদের সমালোচনা করে, নতুন নতুন বিধান বানিয়ে সেগুলোকে সুন্নত ও শরীয়ত নাম দেয়, তাহলে কি আপনি তা গ্রহণ করবেন? কিছুতেই না।

কিন্তু যে ব্যক্তি ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দানকে, নিজামুদ্দীনকে হক ও এতাআতের মানদণ্ডমনে করে, সে তো নতুন এ লোকের কথা সবই মানবে। যেমন, এ দেশে সাদপন্থী এতাআতী ভাইয়েরা সব গ্রহণ করে। বলে, নিজামুদ্দীনই আমাদের মারকায।

কিন্তু নিজামুদ্দীন কি শুধু নিজামুদ্দীন হওয়ার কারণে মারকায হয়েছিল? এটা তো মূলত বাংলাওয়ালী মসজিদ! মারকাযের পাশেই নিজামুদ্দীন রাহ.-এর মাজার আছে। ওখানে গেলে দেখা যায়, কত ধরনের শিরক হয়। যদি নিজামুদ্দীনের কারণেই মারকায হত, তাহলে তো কেউ বলতে পারে, আসল নিজামুদ্দীন তো বাংলাওয়ালী মসজিদের পাশে- ঐদিকে। সেখানে গিয়ে দেখে আসবেন, কী হয় সেখানে।

তো সঠিক হওয়ার মানদণ্ড কোনো স্থাননয়। কেউ যদি মনে করে, নিজামুদ্দীনই আসল। নিজামুদ্দীন নিজামুদ্দীন হওয়ার কারণেই মানদণ্ড, সেটা ভুল হবে।

ঠিক তেমনি, শায়েখের অনুসরণ কর, তার কথা অনুযায়ী চল- এটা কেন বলা হচ্ছে? এটি কি শুধু শায়েখ হওয়ার কারণে, নাকি তিনি সুন্নত-শরীয়তের অনুসরণ করার কারণে? এখন যদি শায়েখ সুন্নত-শরীয়তের খেলাফ বলেন, খেলাফ চলেন, তখন আর তাকে মানা হবে না, তিনি আর গ্রহণযোগ্য থাকবেন না।

তবে এখানে একটা বিষয় বুঝতে হবে। কেউ আছে, খামোখাই শায়েখের বিরুদ্ধাচরণ করে, অযথাই শায়েখের বদনাম করে। বলে বেড়ায়, শায়েখ গলদ কথা বলে, গোমরাহীর কথা বলে। আসলে এটা ঐ ব্যক্তির বাড়াবাড়ি।

এরকম আরো কিছু বিষয় আছে। মানুষ যখন এধরনের কথা শোনে, তখন পেরেশান হয়ে যায়। অথচ এখানে পেরেশানির কিছু নেই।

এখন অনেক ভেজাল দিয়ে দুনিয়া ভরা; অনেক জাল-প্রতারণা-ধোঁকা রয়েছে। দুনিয়াবী ক্ষেত্রে এসবকিছুর ভেতর দিয়েই মানুষ খুব সচেতন-সতর্কতার সাথে চলে। কিন্তু দ্বীনের বিষয়ে যখন এধরনের কিছু শোনে, খুব পেরেশান হয়ে যায়। বলে, আমরা তাহলে কোথায় যাব?

এটি পেরেশানীর বিষয় না। আপনি যদি শরীয়তের সঠিক মানদণ্ড মাথায় রাখেন, তাহলে সঠিক রাস্তায় চলতে পারবেন। শরীয়ত দলীলকে মানদণ্ড বানিয়েছে আর দলীলের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, দলীলকে বোঝার জন্য মানদণ্ড বানিয়েছেন হক্কানী ওলামায়ে কেরামকে। ইরশাদ হয়েছে-

اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(স্মরণ রেখ, যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা সেইসব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।)

তো মানদণ্ড হল, শরীয়ত-সুন্নত, কুরআন-হাদীস।

তো ওলী হওয়ার মানদণ্ড কুরআন দিয়ে দিয়েছে- ঈমান ও তাকওয়া।

ঈমান ও তাকওয়া যত কম হবে, তত তার ওলী হওয়া দুর্বল হতে থাকবে। একপর্যায়ে গিয়ে একেবারে সব শেষ হয়ে যাবে।

আমি বলেছি, ওলীর বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এখন নিজের ইসলাহের জন্য কার সোহবতে থাকা যাবে? ঈমান আছে, শিরক নেই, মুনাফিকী নেই- এটি এক স্তরের মুত্তাকী, এক প্রকারের ওলী। একেবারে প্রথমিক স্তর। এমনও হতে পারে, সে না জানার কারণে গুনাহে লিপ্ত। কিন্তু কাঁটায় কাঁটায় ঈমান আছে, যতটুকু থাকলে কাফের বলা যাবে না। এমন লোকের সোহবত  গ্রহণ করা যাবে না।

তাহলে আমার ঈমান-আমল ঠিক করার জন্য কার সোহবতে থাকব? মানদণ্ড তো ঈমান ও তাকওয়া। তবে তা এমন এক স্তরে থাকতে হবে, যাতে তার সোহবতে গেলে আমার ইসলাহ হয়।

এটিও শরীয়তে বলে দেওয়া হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

أَيُّ جُلَسَائِنَا خَيْر يا رَسُولَ الله؟

হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যার সোহবতে, যার মজলিসে যেতে পারি- তিনি কেমন লোক হতে হবে?

উত্তরে তিনি বলেন-

مَنْ ذَكَّرَكُمْ بِاللهِ رُؤْيتُهُ، وَزَادَ فِي عِلْمِكُمْ مَنْطِقُهُ، وَذَكَّرَكُمْ بِالْآخِرَةِ عَمَلُهُ.

قال الهيثمي : رواه أبو يعلى، وفيه مبارك بن حسان، وقد وثق، وبقية رجاله رجال الصحيح.

যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, যার আলোচনায় বা কথায় তোমাদের ইলম বাড়ে। যার আমল তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৯০০০; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২৪৩৭; আলআহাদীসুল মুখতারাহ, যিয়া মাকদিসী, হাদীস ২০৯; আলমুনতাখাব মিন মুসনাদি আবদ ইবনু হুমাইদ, হাদীস  ৬৩১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৭৬৮৬

এখন যার আলোচনায় গোমরাহী থাকে, তার সোহবতে গেলে ইলম বাড়বে, নাকি গোমরাহী বাড়বে? গোমরাহী বাড়বে। এটা অনেক বড় শর্ত।

তাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়-এর অর্থ হল, তার মাধ্যমে আমার দুনিয়া-বিমুখতা সৃষ্টি হবে, দুনিয়ার মহব্বত কমবে, আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলার তাওফীক হবে। এজন্য তাকে দেখে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। শুধু চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন- এরূপ নয়। আল্লাহর কথা স্মরণ হবে। অর্থাৎ আল্লাহ আমার খালিক, মালিক। আমি আল্লাহর বিধান মতো চলি কি না। ঈমান আর তাকওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য তার চেহারায় এত নূর। আমিও যদি ঈমান ও তাকওয়ার পথে অগ্রসর হতে পারি, তাহলে আমার আমলও ভালো হবে।

وَزَادَ فِي عِلْمِكُمْ مَنْطِقُهُ، وَذَكَّرَكُمْ بِالْآخِرَةِ عَمَلُهُ.

তার আলোচনায় তোমাদের ঈমান বাড়বে। তার আমল তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

যার আমল দেখলে মনে হবে, এটি সুন্নাহ মোতাবেক, ভারসাম্যপূর্ণ।

প্রান্তিকতা, বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনমুক্ত হবে তার আমল।

খাঁটি মুমিন এমন, তার আমলে কোনো বাড়াবাড়ি নেই, বরং সুন্নাহসম্মত।

বলছিলাম, মাপকাঠি হল ঈমান ও তাকওয়া। আর সুন্নতের অনুসরণ এবং সহীহ ইলম ছাড়া তাকওয়া হয় না। একারণে মানদণ্ডের ইলম থাকা দরকার। নতুবা সে ভাববেইলিয়াস রাহ.-এর খান্দানে যেই হবে, সেই আমাদের অনুসরণীয় হবে। কারণ, তার কাছে মূল মানদণ্ড স্পষ্ট না। মূল মানদণ্ড কি ইলিয়াস রাহ.?

না, তিনিও যেহেতু সুন্নতের অনুসারী ছিলেন, হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তাঁর উস্তাযগণ ছিলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র বড় বড় ব্যক্তিত্ব। তাঁদের সাহচর্যে থেকে তাবলীগ-দাওয়াত ইত্যাদির কাজ বুঝেছেন। এজন্য মানুষ তাঁর অনুসরণ করেছিল।

এখন তাঁর খান্দানে এমন একজন এসেছে, যে পড়াশোনাও ঠিকমতো করেনি, তবে আলোচনা করতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু যাকে বলে দ্বীনের সমঝ- সেটা তার মধ্যে নেই। তার কথা বলার যোগ্যতা আছে। এজন্য সাধারণ মানুষ তার আলোচনা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায় আর বলে, আলেমরা সাদ সাহেবকে বোঝে না। তার জ্ঞান অনেক ঊর্ধ্বের, তিনি অনেক গভীরের কথা বলেন।

একবার এক সাদপন্থী ভাই এসেছিল। বলল, হুজুর! আপনারা শুধু বলেন, সমস্যা! আমি তো নিজামুদ্দীন ঘুরে এসেছি, কোনো সমস্যা তো নেই। দেখেছি, ঠিকমতো পাঁচ ওয়াক্ত নামায হয়, বয়ান হয়, তালীম হয়। কোনো সমস্যা তো দেখলাম না।

বয়ান তো হয়, কিন্তু বয়ানের মধ্যে কী বলা হয়? তুমি তো সাদ সাহেবের বয়ান শোনো এভাবে যে, তিনি যা বলছেন সব কুরআন-হাদীসের কথাই বলছেন।

একজন বিজ্ঞ আলেমই বুঝতে পারেন, তিনি কতটুকু সঠিক বলছেন! সঠিক বলছেন, নাকি কুরআন-হাদীসের বিকৃতি করছেন! শুধু হাদীস বলছেন, নাকি নিজের থেকে কিছু কথা বাড়িয়ে বলছেন!

আগে তো হাদীস বলতেন, তাতে একটা কথা বাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু এখন কী করেন? সরাসরি হাদীস বানিয়ে ফেলেন নাউযুবিল্লাহ।

গত ডিসেম্বর ২০২৩ -এ ভূপালে যে ইজতেমা হল সেখানেও এ কাণ্ড ঘটেছে। তার ভূপালের বয়ান আমি পুরোটা পড়েছি। যারা এ বয়ানে উপস্থিত ছিলেন তাদের কারো কারো সাথেও আমার কথা হয়েছে। বয়ানের রেকর্ডও সংরক্ষিত আছে আবার লিখিতও আছে।

কিন্তু এটা কি একজন সাধারণ মানুষ বুঝবে? রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য যদি আরেকজন সাধারণ রোগীই যায়, তাহলে সে আর কী বুঝবে?

তো এভাবে মানুষ মানদণ্ড পরিবর্তন করে ফেলছে। হকের মানদণ্ড হয়ে যাচ্ছে, ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দান, নিজামুদ্দীন মারকায!

কারো ব্যাপারে কোনো আপত্তি উঠলে তা তো যাচাই করবে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। সাধারণ কেউ তার কী বুঝবে?

আমাদের মানদণ্ড বুঝতে হবে।

ওলীর মানদণ্ড হল-

اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(স্মরণ রেখ, যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা সেইসব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।)

এ মানদণ্ড দিয়ে বুঝতে হবে, কে আল্লাহর ওলী আর কে গোমরাহ! কুরআন-হাদীসের এসব মানদণ্ড সামনে রেখে উলামায়ে কেরাম কিতাব লিখেছেন। তেমন একটা কিতাব আছে, নাম-

الفرقان بين أولياء الرحمن و أولياء الشيطان.

কে রহমানের ওলী আর কে শয়তানের ওলী, তোমাকে পার্থক্য করতে হবে। কীভাবে পার্থক্য করবে?

শরীয়তের এ মানদণ্ড দিয়ে পার্থক্য করা যাবে, কে আল্লাহর ওলী আর কে শয়তানের ওলী।

তো কিছু শয়তানের ওলী আছে, যাকে দেখলে মানুষ মুগ্ধ হয়ে যায়, তার কথায়, তার আখলাকে মুগ্ধ হয়ে যায়। এভাবে এগুলো দেখে মুগ্ধ হওয়া শরীয়তের মানদণ্ড না। শরীয়তের মানদণ্ড হল, ঈমান ও তাকওয়া। এর সাথে আরো কিছু থাকলে ভালো। যেমন, ঈমান ও তাকওয়ার সাথে কারো আখলাকও ভালো। তো মুত্তাকী মানুষের আখলাক ভালো হওয়াই তো স্বাভাবিক। যদি আখলাক ভালো না হয়, তবে বুঝতে হবে, তাকওয়া ও ঈমানের কমতি আছে। কিন্তু ঈমান আর তাকওয়া নেই, অথচ আখলাক খুব ভালো, আল্লাহর  কাছে এর কোনো মূল্য নেই।

অনেকে পশ্চিমাদের প্রশংসা করে বলে, ওখানে ভেজাল নেই, মিথ্যা নেই, দুর্নীতি নেই। এসব প্রশংসা করবেন না। আল্লাহর সাথে যে দুর্নীতি করে আর মানুষের সাথে স্বার্থের কারণে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকে, আপনি তার প্রশংসা করবেন কীভাবে?

আল্লাহর প্রতি যার ঈমান নেই, সে কি দুর্নীতিবাজ না? খালিক, রাব্বুল আলামীনের সাথে দুর্নীতি করছে, বেয়াদবি করছে। আপনি তার প্রশংসা করছেন!

আমি অস্বীকার করি না যে, তাদের গুণ নেই। তবে এ গুণও তো আল্লাহরই দেওয়া। সে তো আল্লাহর দেওয়া এ নিআমতেরও শোকর আদায় করছে না! আল্লাহর ওপর ঈমান আনছে না, আল্লাহ্কে মানেই না, তাঁর সাথে শিরক করছে। অনেকে তো অস্বীকারই করে। তাহলে মূলে তো সে বেয়াদবই রয়ে গেল!

আমি একথা বলছি না যে, আপনি কোনো অমুসলিমকে দেখলে বেয়াদব বলবেন। ইসলাম এ শিক্ষা দেয় না। কিন্তু বাস্তবে সে আল্লাহর সাথে গাদ্দারি করে, বেয়াদবি করে।

এটা ইসলামের সৌন্দর্য যে, এসমস্ত কাফের, মুনাফিকদের সাথেও ইসলাম একটা সাধারণ ভালো আচরণের অনুমতি দেয়। এটা ইসলামের উদারতা। ইসলাম বলে, তারা আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করলেও তারা তো তোমার রক্তের ভাই, রক্তের সম্পর্কে সে-ও বনী আদম, তুমিও বনী আদম। মানুষ হিসেবে সাধারণ আচরণ কর, খারাপ আচরণ কর না।

কিন্তু আবার প্রশংসার অনুমতি দেয়নি শরীয়ত। বরং নিজের কমতির কথা চিন্তা করি, আমি আল্লাহর বান্দা হয়ে, তাঁর ওপর, আখেরাতের ওপর ঈমান এনেও আল্লাহর একজন নেক বান্দার যেমন আখলাক হওয়া উচিত ছিল, তেমন আখলাক আমি বানাতে পারিনি।

এটা আমাদের দোষ, তাই আমরা  নিজেদের ভর্ৎসনা করব। ওদের তারিফ কেন করব? আমাদের মুসলিম সমাজকে উন্নত করতে হবে, ইসলাম মাফিক বানাতে হবে।

তারা ইসলামের ঈমান না শিখে অন্য শিক্ষাগুলো গ্রহণ করে নিজেদের সমাজ উন্নত করছে। আমাদের কাছে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা আছে। তা সত্ত্বেও এ বিষয়ে আমাদের কোনো ফিকির নেই। সেজন্য আমরা নিজেদের ইসলাহের বিষয়ে যত্নবান হই। আর ওদের প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকি এবং ওদের সঙ্গে মুসলিম সমাজের তুলনা না করি।

খোলাসা কথা হল-

الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(আল্লাহর ওলী তারা, যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।)

যাহোক আলোচনা চলছিল, ঈমান ও তাকওয়া নিয়ে। ঈমানের জন্য লাগবে ইসলামী আকীদা এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাসলাক।

কারো ইসলামী আকীদায় সমস্যা আছে, তাহলে ঈমান তো শেষ। তেমনি কেউ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে ছুটে যাচ্ছে, তাহলে তার আকীদা সহীহ থাকলেও সে গোমরাহ!

যার ঈমানের মৌলিক আকীদাতেই সমস্যা, তার থেকে তো কিছু নেওয়াই যাবে না। যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে ছুটে যাচ্ছে তার থেকেও কিছু নেওয়া যাবে না।

দ্বীন নিতে হবে, ইসলাহ নিতে হবে এমন ব্যক্তির কাছে এসে, যার মধ্যে ইসলামী আকীদা যথাযথ আছে এবং যিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাসলাকের ওপর যথাযথ আছেন।

তো ঈমান ও তাকওয়া যার মধ্যে আছে তিনি হলেন আল্লাহর ওলী। তাঁর সোহবতে যেতে হবে।

যার আকীদায় সমস্যা, সেখানে গিয়ে গোমরাহ হওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সহজ ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় হল-

এক. তারা কখনো কোনো নবী-রাসূলের সমালোচনা  করে না।

দুই. তারা কোনো সাহাবীর সমালোচনা করে না, আহলে বাইতের মুত্তাবিয়ে সুন্নত কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করে না।

তিন. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কোনো ফকীহ-ইমাম, মাযহাবের কোনো ইমামের সমালোচনা করে না। তেমনিভাবে হাদীসের ইমাম, তাফসীরের ইমাম, ইসলাহের লাইনের ইমাম- কোনো ইমামেরই সমালোচনা করে না।

চার. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত ঢালাওভাবে উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করে না।

সমাজে কিছু লোক আছে, যারা আলেমদের দেখতে পারে না। তারা বলে, আলেমরা কী বোঝে, তারাই সব শেষ করল।

এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তরীকা না।

ব্যক্তিপর্যায়ে সমালোচনা আলাদা জিনিস। যেমন, কেউ বলল, এত বড় হুজুরের দ্বারা কীভাবে এ কাজটা হল। এটাও দলীল ছাড়া এমনি আন্দাযে খামোখা বলা গলত, অন্যায়।

ব্যক্তির সমালোচনা এক জিনিস আর গোটা আলেম সমাজের সমালোচনা ভিন্ন জিনিস। তো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা আলেম সমাজের সমালোচনা করে না। যারা আলেমদের কটাক্ষ করে কথা বলে, তারা সঠিক রাস্তায় নেই।

যাদের দেখবেন, ঢালাওভাবে আলেমদের সমালোচনা করে এবং সাহাবায়ে কেরামের, এমনকি নবী-রাসূলের সমালোচনা করে, বুঝবেন সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তরীকায় নেই। তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে যাবেন না, মসিবতে পড়বেন।

সাধারণ মুসলমান হিসেবে একটা সম্পর্ক রাখা, সেটা ভিন্ন জিনিস। কিন্তু ঈমান, আমল, ইসলাহের নেসবতে, দ্বীনী কাজ শেখার নেসবতে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না।

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমলের তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

[মাসিক দ্বীনী মজলিস, ৫ জানুয়ারি ২০২৪ ঈ.

মারকাযুদ দাওয়াহ জামে মসজিদ, হযরতপুর, কেরাণীগঞ্জ

মুসাজ্জিলা থেকে শ্রুতিলিখন :

কামরুল আনাম খান ও খালিদ সাইফুল্লাহ]

 

 

advertisement