শাওয়াল ১৪৪৫   ||   এপ্রিল ২০২৪

ঈমানের ডাক (১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আদব

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল গাফফার

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقُوْلُوْا رَاعِنَا وَ قُوْلُوا انْظُرْنَا وَ اسْمَعُوْا  وَ لِلْكٰفِرِیْنَ عَذَابٌ اَلِیْمٌ.

ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা রাইনাবলো নাবরং উনযুরনাবল এবং শোন। আর  কাফেরদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। -সূরা বাকারা (০২) : ১০৪

আল্লাহ তাআলা মুমিনগণকে ঈমানের গুণ আরোপ করে সম্বোধন করেছেন। বলেছেন-ওহে যারা ঈমান এনেছ। সাধারণ একজন মানুষও যদি একজন মুমিনকে ঈমানের শিরোনামে সম্বোধন করে, তবুও তা মুমিনের জন্য হয়ে ওঠে আনন্দকর ও গর্বের। এখানে কোনো মানুষ নয়, সম্বোধন করছেন আল্লাহ তাআলা। সুতরাং এই সম্বোধন যে মুমিনের জন্য কী পরিমাণ গর্বের, কী পরিমাণ সৌভাগ্যের- তা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা বড় আদর করে মুমিনকে এইভাবে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে এইভাবে সম্বোধন করেছেন কুরআনে কারীমের ঊননব্বইটি স্থানে। এইরূপ সম্বোধনের পর কখনও তিনি মুমিনদেরকে এমন কিছু কার্যাবলির নির্দেশ দান করেন, যে কার্যাবলিতে নিহিত থাকে মুমিন বান্দার সৌভাগ্য ও চূড়ান্ত সফলতা। কখনও তিনি এই সম্বোধনের পর কিছু বিষয় নিষিদ্ধ করেন। যে নিষেধাজ্ঞা পালনে মুমিন দুর্ভাগ্য ও ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। সেসব নিষিদ্ধ বিষয়ে নিহিত থাকে অকল্যাণ, অনিষ্ট আর শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি। কখনও তিনি এই সম্বোধনের পর মুমিন বান্দাদেরকে সুসংবাদ দান করেন অথবা তাদেরকে সতর্ক করেন, অথবা এমন কিছু বিষয় তাদেরকে জানান দেন, যার মধ্যে নিহিত থাকে মুমিনদের জন্য কল্যাণ আর কল্যাণ। এক্ষেত্রে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রা.-এর কথা স্মরণযোগ্য। জনৈক ব্যক্তি তাঁকে একবার অনুরোধ করেছিল কিছু উপদেশ দান করতে। বলেছিল-

اِعْهَدْ إِلَيَّ.

আমাকে নসীহত করুন।

তিনি বলেছিলেন-

إِذَا سَمِعْتَ اللهَ يَقُوْلُ: ( یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا) فَأَرْعِهَا سَمْعَكَ فَإِنَّهُ خَيْرٌ يَأْمُرُ بِهِ أَوْ شَرٌّ يَنْهٰى عَنْهُ.

যখন তুমি আল্লাহ তাআলাকে শুনবে যে, তিনি বলছেন, ‘ওহে, তোমরা যারা ঈমান এনেছ!তখন তুমি উৎকর্ণ হয়ে উঠবে। কেননা, এইরূপ সম্বোধনের পরে তিনি হয়তো কল্যাণকর কোনো বিষয়ের আদেশ করবেন অথবা অনিষ্টকর কোনো বিষয় নিষিদ্ধ করবেন। -তাফসীরে ইবনে আবী হাতেম ১/১৯৬; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩২৫

কাজেই এইরূপ সম্বোধনে মুমিনের কান খাড়া হয়ে যাওয়া উচিত। এই আদুরে ডাকের পর আল্লাহ তাআলা কী বলছেন তা মনোযোগসহ শোনা উচিত। অতঃপর আল্লাহ তাআলার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত।

আলোচ্য আয়াতটিতে আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে সম্বোধন করে তাঁদেরকে একটি শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। শব্দটি হল رَاعِنَا  (রাইনা’)। এর পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে اُنْظُرْنَا  (উনযুরনা’) শব্দটি বলতে আদেশ করেছেন।

তত্ত্ব ও তথ্য

আয়াতটি যে কারণে নাযিল হয়েছে

আয়াতটির প্রথম সম্বোধিত ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন সাহাবায়ে কেরাম। সাহাবায়ে কেরামকে আল্লাহ তাআলা একটি শব্দ পরিহার করে তদস্থলে অপর একটি শব্দ বলতে আদেশ করেছেন। (رَاعِنَا) শব্দটি আরবী ভাষার একটি বিশুদ্ধ ও প্রমিত শব্দ। এর অর্থ হল, আমাদের প্রতি একটু লক্ষ্য করুন, শ্রোতার প্রতি লক্ষ্য রাখুন। (اُنْظُرْنَا) শব্দটিও আরবী ভাষার একটি বিশুদ্ধ ও প্রমিত শব্দ। উভয় শব্দ সমার্থক। অর্থাৎ আপনি আমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখুন আমরা শুনলাম কি শুনলাম না। দুটোই আরবী শব্দ, দুটোই প্রমিত ও শুদ্ধ শব্দ। কিন্তু কেন আল্লাহ তাআলা শব্দদুটির মধ্য থেকে একটি বলতে বললেন, অপরটি বলতে নিষেধ করে দিলেন? এর প্রেক্ষাপট হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে যখনই কোনো জরুরি কথা বলতেন, স্পষ্ট করে বলতেন এবং বারবার বলতেন। তারপরও কখনো এমন হত যে, শ্রোতাদের কেউ কোনো একটি কথা ভালোভাবে শুনতে পারতেন না বা বুঝতে পারতেন না। এজন্য কখনও কখনও তাঁরা বলতেন رَاعِنَا হে আল্লাহর রাসূল আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। এতদ্দ্বারা তাঁরা বুঝাতে চাইতেন, কথাটি পুনরায় বলুন অথবা কথাটি একটু খুলে বলুন ইত্যাদি। এদিকে কাছাকাছি উচ্চারণে হিব্রু ভাষায় একটি শব্দ ছিল এই শব্দটির অনুরূপ। ইহুদীরা  راعنا শব্দটিকে একটু জিহ্বা বাঁকিয়ে ও কুঞ্চিত করে উচ্চারণ করত। ফলে তা হিব্রু ভাষার একটি শব্দে পরিণত হত। হিব্রু ভাষার সেই শব্দটি নিন্দার্থে এবং গালিরূপে ব্যবহৃত হত। ইহুদীরা যখন মুসলমানদেরকে راعنا শব্দটি বলতে শুনল তখন তারা এটিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করল। তারাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে জিহ্বা বাঁকিয়ে ও কুঞ্চিত করে শব্দটি বলতে থাকল। বাহ্যত মনে হত, তারাও শব্দটি বলছে মুসলমানদের অনুরূপ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আবেদন পেশ করতে, কিন্তু তারা শব্দটি বলত জিহ্বা বাঁকিয়ে ও কুঞ্চিত করে। ফলে শব্দটি তাদের হিব্রু ভাষার একটি শব্দে পরিণত হত। সে শব্দটি মন্দ কোনো অর্থ ধারণ করত। তা সে মন্দ অর্থ গালি হোক কিংবা উপহাসমূলক কিছু হোক। শব্দটি তারা বলত এবং এ নিয়ে পরস্পরে হাসাহাসিও করত যে, মুসলমানদের নবী সম্পর্কে আমরা অপমানকর শব্দ ব্যবহার করলাম। তারা যে শব্দটিকে উপহাসের উদ্দেশ্যে বলছে, সাহাবায়ে কেরাম তা বুঝতে পারতেন না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ, সর্ব অবহিত। তিনি কোনটি সরল উক্তি, কোনটি বক্রোক্তি তা বোঝেন। কোনো তির্যক কথা বললে, উচ্চারণে হেরফের করে ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বললে আল্লাহ তাআলা তা বোঝেন। কাজেই আল্লাহ তাআলা আয়াতটি নাযিল করে সাহাবায়ে কেরামকে জানিয়ে দিলেন, আরবী ভাষা শব্দ-সমৃদ্ধ ভাষা। সুতরাং তোমরা راعنا শব্দের পরিবর্তে এর সমার্থক শব্দ انظرنا বল। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলা এই আদেশও করেন যে, রাসূলের কথা ভালোভাবে বোঝার জন্য তাঁকে যখন তোমরা তোমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখার আবেদন করবে তখন তোমরা নিজেরাও তাঁর কথার প্রতি অপেক্ষাকৃত অধিক মনোযোগ নিবিষ্ট করবে। اسمعوا বা শোনকথাটির  এক অর্থ এই যে, রাসূলের কথা অধিকতর মনোযোগী হয়ে শোন। আরেকটি অর্থ এই যে, রাসূল তোমাদেরকে যা বলেন তা গ্রহণ করে নাও, মেনে নাও এবং তা কার্যে পরিণত কর, তাঁর কথা অনুযায়ী আমল কর। আয়াতটির উপসংহারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَ لِلْكٰفِرِیْنَ عَذَابٌ اَلِیْمٌ (এবং কাফেরদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি)। অর্থাৎ নবীর উদ্দেশে মন্দ অর্থে কোনো শব্দ ব্যবহার করা কুফ্র। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ তাআলা উদ্ধত ও অশিষ্ট ইহুদীদেরকে প্রকারান্তরে কাফের বলে আখ্যায়িত করলেন। এটি আমাদেরকে জানান দেয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, তাঁর সঙ্গে শিষ্টাচার বর্জিত আচরণ, তাঁর প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ- প্রত্যক্ষভাবে হলে তো বটেই, পরোক্ষভাবে হলেও- কুফর। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।

কুরআন কারীমের অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইহুদীদের এজাতীয় আচরণকে সবিস্তার বর্ণনা করেছেন। সেইসঙ্গে তাদের আরও একটি দুষ্কর্মের কথা বর্ণনা করেছেন। আয়াতটি এই-

مِنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا یُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَّوَاضِعِهٖ وَ یَقُوْلُوْنَ سَمِعْنَا وَ عَصَیْنَا وَ اسْمَعْ غَیْرَ مُسْمَعٍ وَّ رَاعِنَا لَیًّۢا بِاَلْسِنَتِهِمْ وَ طَعْنًا فِی الدِّیْنِ وَ لَوْ اَنَّهُمْ قَالُوْا سَمِعْنَا وَ اَطَعْنَا وَ اسْمَعْ وَ انْظُرْنَا لَكَانَ خَیْرًا لَّهُمْ وَ اَقْوَمَ  وَ لٰكِنْ لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا یُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِیْلًا.

ইহুদীদের মধ্য থেকে কিছু লোক এমন আছে, যারা শব্দাবলিকে যথাস্থান থেকে সরিয়ে দেয় এবং বলে, ‘সামিনা ওয়া আসাইনাএবং ইসমাগায়রা মুসমাইনএবং জিহ্বা কুঞ্চিত করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলে রাইনা’, অথচ তারা যদি বলত, ‘সামিনা ওয়া আতানাএবং বলত, ‘ইসমাওয়ানযুরনা’, তবে সেটাই হত তাদের জন্য কল্যাণকর এবং সঠিক পন্থা। বস্তুত তাদের কুফরের কারণে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত করেছেন। ফলে তারা ঈমান আনবে না; অল্পসংখ্যক ব্যতীত। -সূরা নিসা (৪) : ৪৬

ইহুদীদের একটি দুষ্কর্ম তো এই যে, তারা তাওরাতের শব্দাবলিকে তার স্থান থেকে সরিয়ে দিত। শব্দাবলিকে তার স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কাজটি দুইভাবে হত :

এক. মূল শব্দকেই গায়েব করে দিত। ফলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যেত।

দুই. শব্দকে তার প্রকৃত অর্থ থেকে সরিয়ে দিয়ে মনগড়া অর্থ ব্যক্ত করত। দ্বিতীয় দুষ্কর্মটি ছিল এই যে, তারা এরূপ কিছু শব্দ ব্যবহার করত, যেগুলো হত দ্ব্যর্থবোধক। শব্দগুলোর বাহ্যার্থ হত ভালো; কিন্তু তারা শব্দগুলোকে বাহ্যার্থে ব্যবহার না করে শব্দগুলোর অভ্যন্তরে থাকা প্রচ্ছন্ন মন্দ অর্থে শব্দগুলোকে ব্যবহার করত। এমনই একটি শব্দ ছিল আমাদের আলোচ্য আয়াতে উল্লিখিত রাইনাশব্দটি।

উল্লেখ্য, আরও যেসব শব্দ তারা ব্যবহার করত, তার একটি প্রকার এইরূপ-

سَمِعْنَا وَ عَصَیْنَا.

এর অর্থ হল, আমরা (আপনার কথা) শুনলাম এবং অবাধ্যতা করলাম। কথাটি দ্বিবিধ অর্থ ধারণ করে। এর স্বাভাবিক ও প্রত্যক্ষ অর্থ হল, আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং আপনার বিরোধীদের অবাধ্যতা করলাম। এটি তো ভালো অর্থ। এই অর্থে বাক্যটির ব্যবহার দূষণীয় নয়। কিন্তু কথাটিকে পরোক্ষভাবে ভিন্ন অর্থেও ব্যবহার করা যায়। আর তা হল, আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং আপনার অবাধ্যতা করলাম, আপনার কথা মানলাম না। ইহুদীরা কপটতামূলকভাবে এই পরোক্ষ অর্থেই কথাটি বলত। এবং তারা পরস্পরে বলাবলি করত যে, যদি মুহাম্মাদ নবী হয়ে থাকেন, তাহলে তো আমাদের অন্তরে লুক্কায়িত মন্দ উদ্দেশ্য তাঁর বুঝে ফেলার কথা। তিনি যখন তা বুঝতে পারেন না, বুঝা গেল যে, তিনি নবী নন। তদ্রূপ ( اسْمَعْ غَیْرَ مُسْمَعٍ ) কথাটিও দ্বিবিধ অর্থ প্রকাশ করতে পারে। প্রত্যক্ষ অর্থ হল, আপনি আমাদের কথা শুনুন, আর আপনাকে আপনার অপছন্দনীয় কোনো কথা শোনানো না হোক। প্রত্যক্ষ অর্থ অনুযায়ী বাক্যের দ্বিতীয় অংশটি দুআবাচক। এই অর্থে বাক্যটির ব্যবহার নিসঃন্দেহে দূষণীয় কিছু নয়। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটিকে একটি মন্দ অর্থেও ব্যবহার করা যায়। আর তা হল, আপনি শুনুন এবং আপনাকে কোনো ভালো কথা শোনানো না হোক, বা আপনি আদৌ শোনার উপযুক্ত না থাকুন অর্থাৎ আপনি বধির হয়ে যান, বা আপনার মরণ হোক, যাতে আপনি আর শোনার উপযুক্ত না থাকেন। ইহুদীরা কপটতার আশ্রয় নিয়ে এই দ্বিতীয় অর্থেই বাক্যটি উচ্চারণ করত এবং পরস্পরে ঐরূপ বলাবলি করত। আল্লাহ তাআলা তাদের এই কপটতাকে প্রকাশ করে দিয়েছেন। ফলে এতদ্দ্বারা তাদের ঐ ভ্রান্ত ধারণাও অসার প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি সত্য নবী এবং সত্য নবী বলেই আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত ওহীর মাধ্যমে তাদের কপটতার কথা তিনি জানতে পেরেছেন।

সূরা বাকারার আলোচ্য আয়াত থেকে যেসব শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি

এক. আয়াতটি প্রমাণ করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কোনোভাবে তাচ্ছিল্য প্রকাশ কিংবা তাঁর সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনোরূপ আমার্জিত শব্দের ব্যবহার সরাসরি কুফর। এরূপ যে করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। যার পরিণতি মর্মন্তুদ শাস্তি।

দুই. আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এরূপ শব্দের ব্যবহার পরিহার করা উচিত, যেসব শব্দকে ইসলাম-বিরোধী ও ইসলাম-বিদ্বেষীরা বিকৃত অর্থে ব্যবহার করার সুযোগ লাভ করতে পারে। এবং সচেতন থাকা উচিত, ইসলামবিরোধীদের ঐসকল কথার ব্যাপারে, যেসকল কথা বাহ্যার্থে সত্য বটে, কিন্তু কথাটির মতলব হয় খারাপ।

তিন. পূর্বের আলোচনা দ্বারা আশা করি স্পষ্ট হয়েছে, আল্লাহ তাআলা একটি শব্দকে পরিহার করে তার পরিবর্তে অপর একটি শব্দ ব্যবহারের নির্দেশ কেন দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, এখন তো সেই যুগও নেই, নবীও নেই, ফলে নবীকে ঐ শব্দে সম্বোধন করার সুযোগও নেই। তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন কারীমে পঠিতব্য এই নিষেধাজ্ঞার কথাটি রেখে দেওয়া হল কেন? তদুপরি কুরআন শরীফ পৃথিবীর এরূপ বহু দেশে পঠিত হয়, যেখানে আরবীর কোনো প্রচলন নেই, যেখানকার অধিবাসীদের ভাষা আরবী নয়। তাহলে এই নিষেধাজ্ঞাকে কুরআন কারীমে সংরক্ষিত রাখার প্রতি এত গুরুত্ব কেন দেওয়া হল? এটা চিন্তার বিষয়।

এর জবাব হল, আয়াতটিকে কুরআন কারীমে বহাল রেখে আমাদেরকে আরেকটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তা হল, চিরদিনের জন্য আমাদের সামনে যেন এই সত্য উপস্থিত থাকে যে, ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি হয় সেরূপ একটি মাত্র শব্দের ব্যবহারও যখন নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল, তখন অমুসলিমদের স্বাতন্ত্র্যজ্ঞাপক বৈশিষ্ট্যাবলি, তাদের রীতি-নীতি ও প্রথা-প্রচলন অবলম্বন বৈধ হয় কী করে? নানাবিধ অমুসলিম সংস্কৃতি, নানা রকম অমুসলিম রীতি-নীতি ও প্রথাপ্রচলন আমাদের মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে এবং করছে, সেসব থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এই আয়াতের একটি বড় শিক্ষা। আল্লাহ আমাদেরকে কল্যাণের পথ অবলম্বন করার তাওফীক দিন- আমীন। 

 

 

advertisement