মুহাররম ১৪২৮   ||   ফেব্রুয়ারি ২০০৭

রেজভী ভাইদের জন্য ভাবনার পাথেয়

মাওলানা আশেকে ইলাহী বুলন্দশহরী

ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনার মৌলিক ভিত্তি দুটি এক. তাওহীদে বিশ্বাস ও দুই. রিসালাতে বিশ্বাস। তাওহীদের অর্থ সব ধরনের শিরক থেকে বিমুখ হয়ে একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই রব ও ইলাহরূপে স্বীকার করা, আল্লাহ তাআলার সকল খাস বৈশিষ্ট্যে ওয়াদাহু লা শরীকা লার উপর বিশ্বাস রাখা এবং কর্মের মাধ্যমে এই বিশ্বাসের প্রমাণ দেওয়া। রিসালাতে বিশ্বাসের অনিবার্য ফল হল, সুন্নতের অনুসরণ করা ও বিদাআত থেকে বেঁচে থাকা। বাংলা-পাক ভারতের যে শ্রেণীটির মধ্যে নানা ধরনের শিরক ও বিদআতের ব্যাপারে কার্যত শিথিলতা লক্ষ করা যায়, এমনকি তাদের পড়াশোনা জানা শ্রেণীটি মারাত্মক ধরনের কার্যকলাপের সপক্ষে বৈধতার সনদ উদ্ভাবনের অবিরাম প্রচেষ্টায় লিপ্ত তারা জনাব আহমদ রেজা খান বেরেলভী ও তার শীষ্যদেরকে নিজেদের অনুসরণীয় ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মনে করে থাকে। এ সম্বন্ধের কারণে তারা বেরেলভী, রেজভী, রেজাখানী ইত্যাদি নামে পরিচিত। আমরা আলকাউসারের পক্ষ থেকে এই ভাইদের কাছে তাওহীদ ও সুন্নতের হাদিয়া পেশ করতে ইচ্ছা করেছি এবং এ কাজের সূচনা মাওলানা আশেকে ইলাহী বুলন্দশহরী রহ.-এর পুস্তিকা বেরেলভী হাতকে লিয়ে লামহায়ে ফিকরিয়াশুরু করা উপযোগী বিবেচনা করেছি। পুস্তিকটিতে তাঁর দরদী মনের ছবি রয়েছে। আমরা আশা করি, তিনি যে ইখলাস ও দরদের সঙ্গে কথাগুলো লিখেছেন, ঠিক সেরকম ইখলাস ও আন্তরিকতা নিয়েই কথাগুলো শোনা হবে। আমরা সামান্য পরিবর্তন, পরিমার্জ সহ পুস্তিকাটির ধারাবাহিক অনুবাদ পেশ করছি। পুস্তকাটির অনুবাদ সমাপ্ত হওয়ার পর এপ্রসঙ্গে জরুরি আরও কিছু বিষয় পাঠকদের খেদমতে পেশ করব ইনশাআল্লাহ। -সম্পাদক

 

আল্লাহ তাআলা মানব জাতির হেদায়েতের জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামকে প্রেরণ করেছেন। তাঁদের প্রতি কিতাব ও সহীফা অবতীর্ণ করেছেন। অবশেষে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মানবকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর মাধ্যমেই নবুওয়ত ও রিসালাতের ধারবাহিকতা সমাপ্ত করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী কিংবা রাসূল আসবেন না।

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে নবুওয়ত ও রিসালাতের ধারা সমাপ্ত হয়েছে এবং দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। সূরা মাইদাতে ইরশাদ হয়েছে,

اَلْیَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِیْنَكُمْ وَ اَتْمَمْتُ عَلَیْكُمْ نِعْمَتِیْ وَ رَضِیْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِیْنًا ؕ

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীনরূপে ইসলামকেই পছন্দ করলাম

আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত এই দ্বীনে কোনো সংযোজন-বিয়োজনের অবকাশ নেই। এই দ্বীনের মূল ভিত্তি দুটি। তাওহীদ ও রিসালাত। তাওহীদের অর্থ হল, শুধু আল্লাহ তাআলাই ইবাদতের উপযুক্ত-এ কথার বিশ্বাস রাখা এবং রব ও ইলাহ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো মাখলুককে আল্লাহর সঙ্গে শরীক না করা। আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক করা কিংবা কারও প্রতি এমন সম্মান প্রদর্শন করা যা কেবল আল্লাহর জন্যই হতে পারে, সুস্পষ্ট কুফর ও শিরক।

শিরকের নিন্দা

শিরকের নিন্দা প্রসঙ্গে অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে। সূরা নিসায় ইরশাদ হয়েছে,

اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ

 আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করাকে আল্লাহ তাআলা কখনো ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যত গুনাহ আছে যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে অনেক দুরের গোমরাহীতে নিপতিত হল।

রিসালাতের উপর ঈমান আনার অর্থ হল, আল্লাহ তাআলার সকল নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। তাঁদেরকে আল্লাহ তাআলার প্রেরিত পয়গম্বর বিশ্বাস করা এবং তাঁদের প্রতি যে কিতাব বা সহীফা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করা। বিশেষভাবে সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ নবী বিশ্বাস করে অন্তরের গভীরে এ কথার দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, তিনি যা কিছু বলেছেন ও বাতলেছেন সব আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বলেছেন। তাঁর আনীত দ্বীন পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ। এর মধ্যে কোনো হ্রাস-বৃদ্ধির অবকাশ নেই।

বিদআত পরিত্যাজ্য

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

مَن أَحْدَثَ في أَمْرِنا هذا ما ليسَ منه، فَهو رَدٌّ.

অর্থাৎ যে কেউ আমাদের এই দ্বীনে কোনো নতুন বিষয় সংযোজন করবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে। -সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম

শয়তান সকল মানুষের বিশেষত মুসলমানদের দুশমন। তার প্রথম চেষ্টা হল মানুষ যাতে ইসলাম গ্রহণ না করে এবং মৃত্যুর পর চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে পতিত হয়।

এরপর যারা মুসলমান হয় তাদের আমল ও কর্মকে বিনষ্ট করার জন্য নানাভাবে শয়তানের প্রচেষ্টা কার্যকর থাকে। কখনো সে মানুষকে রিয়া ও লোক দেখানো মানসিকতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, যার ফলে নেক আমলের ছওয়াবই শুধু বিনষ্ট হয় না, মানুষ রিয়াকারির মারাত্মক গুনাহেরও শিকার হয়ে পড়ে।

শয়তানের বড় অস্ত্র

শয়তানের আরেকটি বড় অস্ত্র হল, সে যাকে নেক আমলের প্রতি আগ্রহী হতে দেখে, তাকে মনের চাহিদার অনুসরণে লাগিয়ে দেয়। ফলে অনেক মানুষ শুধু ভালো লাগে এজন্য দ্বীনের মধ্যে অনেক কিছু সংযোজিত করে। এই নতুন সংযোজনগুলোই শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত নামে চিহ্নিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

إن خيرَ الحديثِ كتابُ اللهِ وخيرَ الهديِ هديُ محمدٍ صلّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ وشرَّ الأمورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وكلَّ بدعةٍ ضلالةٌ.

নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব এবং সবচেয়ে উত্তম আদর্শ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ। আর সর্বনিকৃষ্ট বিষয় যা (দ্বীনের মধ্যে) নতুন সৃষ্টি করা হয়। এরকম প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী। -সহীহ মুসলিম; মিশকাতুল মাসাবিহ ২৭

উপরোক্ত হাদীসে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করার আদেশ করা হয়েছে এবং বলে দেওয়া হয়েছে যে, (দ্বীনের মধ্যে) যে নতুন বিষয় সৃষ্টি করা হয় তা সর্বনিকৃষ্ট এবং  নতুন উদ্ভাবিত সকল বিষয়ই বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহী।

বিদআত অত্যন্ত মন্দ মুসিবত। যারা বিদআতে নিপতিত হয় তাদের তওবা নসিব হয় না। কেননা তারা বিআদতকে পুণ্যের কাজ মনে করে। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রত্যেক বিদআতকারীর তওবা বন্ধ করে রেখেছেন, যতক্ষণ না (সে তার বিদআত পরিহার করে) তওবা করে।” -আলমুজামুল আওসাত; তবারানী ৪২১৪

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, ইবলিস বলে, আমি মানুষকে গুনাহের মধ্যে নিমজ্জিত করে ধ্বংস করি আর মানুষ তওবা-ইস্তেগফার করে আমাকে ধ্বংস করে। ফলে আমি এক নতুন পন্থা বের করলাম। পন্থাটি হল, আমি তাদেরকে তাদের চাহিদার অনুসরণের মাধ্যমে ধ্বংস করলাম। অর্থাৎ তাদেরকে এমন আকাইদ ও কাজকর্মে প্রবৃত্ত করলাম যা তারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো উদ্ভাবন করে দ্বীনের অংশ বানিয়ে ফেলল। ফলাফল এই হল যে, তারা ধারণা করতে লাগল, আমরা হেদায়েতের উপর রয়েছি। তাই তারা -ইস্তেগফার করল না (এবং এ অবস্থায়ই গুনাহগাররূপে মৃত্যুমুখে পতিত হল) -আততারগিব ওয়াত তারহিব ১/৮৭

প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য, সে যে আকিদা পোষণ করবে এবং যে কাজ করবে তা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক করবে। কিতাব-সুন্নাহয় যে মাসাইল সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান নেই সেসব ক্ষেত্রে চার ইমামের কোনো এক ইমামের অনুসরণ করবে। যারা ফিকহে হানাফীর অনুসারী, যাদের মধ্যে বেরেলভী জামাতও অর্ন্তভুক্ত তারা এ ধরনের মাসাইলের ক্ষেত্রে ফিকহে হানাফীর অনুসরণ করবে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হানাফী ফকীহগণ যে সিদ্ধান্ত অবলম্বন করেছেন এবং যে সাসআলাকে মুফতাবিহিরূপে সাব্যস্ত করেছেন সে মোতাবেক আমল করবে। এদিক সেদিকের কথা এবং নিজেদের মনগড়া কথাবার্তাকে দলিল বনাবে না। যা করবে স্পষ্ট ও মজবুত দলিলের ভিত্তিতে করবে।

সংস্কারক ও দ্বীন প্রচারকদের প্রচেষ্টা

আল্লাহ তাআলা ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই এমন ব্যক্তিদের সৃষ্টি করেছেন এবং আজও সৃষ্টি করছেন যারা শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম জারি রেখেছেন। এরা কন্ঠ ও লেখনীর মাধ্যমে শিরক-বিদআতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বিদআত সৃষ্টিকারীদেরকে নরমে গরমে নানাভাবে একথা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, শিরকি ও বিদআতি কাজকর্মে ধ্বংস ও বরবাদি রয়েছে। এগুলো পরিহার করে সুন্নত অনুযায়ী আমল কর। অন্যদিকে এই দ্বীন প্রচারক ও সংস্কারকদের আহ্বানের বিপরীতে শিরকপন্থী ও বিদআতপন্থীদের আহ্বানও জারি ছিল এবং এখনও জারি আছে। তারা হাদীস ও ফিকহের বাক্য ও বক্তব্যগুলো অপব্যাখ্যা করে এবং তাতে ভুল অর্থ আরোপ করে বিদআতের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল। এই শ্রেণীর লোকদের জ্ঞান ان من العلم جهلاজ্ঞানের মধ্যে একটি প্রকার রয়েছে যা মূর্খতাএকথার বাস্তব রূপ হয়ে দেখা দিল। এদের মাধ্যমে বিদআতীদের কোমর মজবুত হল এবং এক পর্যায়ে এরা একটি দল ও ফিরকার রূপ লাভ করল।

আহমদ রেযা খান বেরেলভীর নেতৃত্ব

জনাব আহমদ রেযা খান বেরেলভীর আগেও অনেক বিদআত ও বিদআতি ছিল। কিন্তু যখন থেকে ইনি রচনা ও সংকলনের ময়দানে নামলেন তখন থেকে সকল বিদআতি তার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হতে লাগল এবং এই চিন্তাধারা পোষণকারী সকল ব্যক্তি বেরেলভী নামে আখ্যায়িত হল।

দারুল উলূম দেওবন্দ ও মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুর-এর অবদান

হযরত মাওলানা কাসিম নানুতবী রহ. (মৃত্যু ১২৯৭ হি.) সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ গ্রামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন ১২৮০ হিজরী সনে, এর কয়েক মাস পর হযরত মাওলানা সাআদাত আলী ফকীহে সাহারানপুরী রহ. সাহারানপুর শহরে আরও একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন যা মাজাহিরুল উলূম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এই মাদরাসাদ্বয় থেকে পড়া-শোনা সমাপ্ত করে কর্মক্ষেত্রে পদার্পণকারী ব্যক্তিবর্গ এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণকারীরা বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এসব মাদরাসায় অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তাওহীদের প্রচার প্রসার করা হয় এবং শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। জাহেলী রসম-রেওয়াজ যা হিন্দুস্তানের মুশরিকদের প্রতিবেশীত্বের কারণে মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করেছিল তা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি এসব মাদরাসায় হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাব ও অন্যান্য কিতাবের দরসের ব্যবস্থা করা হয়। এই ব্যক্তিরা সিলেবাসের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কিতাব রচনা করেছেন এবং হাদীস ও ফিকহের গ্রন্থাদির ভাষ্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। অনেক কিতাবে প্রয়োজনীয় টীকা সংযোজনের কাজও তারা করেছেন। ইখলাস ও আল্লাহমুখিতা এবং তাকওয়া ও আল্লাহভীতির সঙ্গে বক্তব্য ও রচনার মাধ্যমে দ্বীনী খিদমত সম্পাদন করেছেন।

ইংরেজ শাসকদের শত্রু ও মিত্র

উলামায়ে দেওবন্দ এই উপমহাদেশে ইংরেজ শাসকদের অস্তিত্বের বিরোধী ছিলেন। তাঁরা এই ভূখণ্ড থেকে সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ইংরেজদেরকে বিতাড়িত করার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন। এ অবস্থায় ইংরেজদের এমন কিছু মিত্র প্রয়োজন ছিল যারা তাদের সাপোর্ট দিবে এবং এঅঞ্চলে তাদের ঘাঁটি গেড়ে অবস্থানের সপক্ষে কাজ করবে। এই প্রয়োজনকে সামনে রেখেই তারা মির্যা কাদিয়ানীকে নবী বানিয়ে দাঁড় করাল। সে জিহাদের বিধান রহিত হওয়ার ঘোষণা দিল এবং ইংরেজদের মিত্রতাকেই তার ধর্মের মূল ভিত্তিরূপে গ্রহণ করল।

ফাযেলে বেরেলভীর অবদান

আহমদ রেযা খান বেরেলভী একদিকে বিদআতপন্থীদের নেতৃত্বে ছিলেন, অন্যদিকে সচেতনভাবে কিংবা অসচেতনতার কারণে ইংরেজদের পক্ষে ব্যবহৃত হতে থাকলেন। তিনি ওই সব ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বইপত্র রচনা করতে আরম্ভ করলেন, যারা ইংরেজদের বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে দণ্ডায়মান ছিলেন। তার প্রসিদ্ধ রচনা হুসামুল হারামাইনযখন জনসমক্ষে এল, তখন সর্বশ্রেণীর মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কেননা এই রচনায় তিনি তাওহীদের দায়ীগণকে এবং ইসলামের সত্যিকারের খাদিম কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকহ বিশারদ উলামা-মাশায়েখ ও সংস্কারক ব্যক্তিবর্গকে কাফেরআখ্যা দিয়ে বসলেন। এ কাজে তিনি কী ধরনের অসাধুতার আশ্রয় নিয়েছিলেন তা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর অতি সাধারণ মুসলিম জনগণও তার ও তার অনুসারীদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল। -চলবে

অনুবাদ : মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

 

 

advertisement