যিলক্বদ ১৪৩৮   ||   আগস্ট ২০১৭

একটি বই, একটি চিঠি : কাতারে দাঁড়ানোর পদ্ধতি

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল গাফফার

জামাআতের সাথে সালাত আদায় করতে মুসল্লীদেরকে তিনটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে। এক : কাতার সোজা করে দাঁড়ানো। কোনো মুসল্লী যেন তার পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর চেয়ে এগিয়ে না দাঁড়ায় এবং পিছিয়েও না দাঁড়ায়। দুই : এমনভাবে দাঁড়ানো, যাতে দুই মুসল্লীর মাঝখানে কোনো ফাঁক না থাকে। তথা পরস্পরের মাঝে ফাঁক না রেখে দাঁড়ানো। তিন : একটি কাতার থেকে অপর কাতারের মাঝখানে অস্বাভাবিক দূরত্ব না থাকা। বরং স্বাভাবিকভাবে সেজদা করতে যতটুকু দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন ততটুকু দূরত্ব বজায় রেখে কাতার তৈরি করা। কেউ একটু এগিয়ে বা একটু পিছিয়ে দাঁড়ালে কাতার বাঁকা হয়। এরূপভাবে আগে পিছে দাঁড়ানো, যদ্দারা কাতার বাঁকা হয়ে যায়- সুন্নত-পরিপন্থী। তেমনই ফাঁক রেখে দাঁড়ানো নিয়ম-বিরোধী ও সুন্নত-পরিপন্থী। তদ্রূপ, দুই কাতারের মাঝখানে অস্বাভাবিক ফাঁক রেখে কাতার করাও নিয়ম ও সুন্নত-পরিপন্থী। এসব বিষয়ে কারও কোনো দ্বিমত নাই। থাকতেও পারে না। দ্বিমত দেখা দিয়েছে নববী যুগের তেরশ বছর পরে। যখন আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের কিছু ভাই এই নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন যে, নামাযে প্রত্যেককে অপরের পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং প্রয়োজনে সেই উদ্দেশ্যে দুই পা ছড়িয়ে দাঁড়াবে!! অথচ না এটা কোনো হাদীসের শিক্ষা আর না সালাফ ও খালাফের কোনো ফকীহ বা মুহাদ্দিসের বক্তব্য বা আমল এর পক্ষে পাওয়া যায়। কিন্তু মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেব এই নব আবিষ্কৃত পদ্ধতিরই সমর্থন করে গেলেন! ‘জাল হাদীসের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছালাত’ বইটিতে তার বক্তব্য হল, কাতারের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ করতে হলে মুসল্লীদের প্রত্যেককে অপরের পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু ও কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে। তিনি লিখেছেন, পায়ে পা, টাখনুর সাথে টাখনু ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছালাতে দাঁড়াতে হবে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বহু হাদীছে নির্দেশ করেছেন। এরপর বেশ কয়েকটি হাদীস তিনি উল্লেখ করেছেন। সেইগুলোর কোনোটিতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক পায়ের সাথে পা মিলানোর নির্দেশ নেই। আমরা এখানে হাদীসগুলো পেশ করছি। এগুলোতে এই তিনটি বিষয় তো আছে যেগুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু নব আবিষ্কৃত এ বিষয়টি নেই যার সমর্থন করতে চেয়েছেন মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেব! হাদীস-১ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَنْ سَدّ فُرْجَةً فِى صَفٍّ رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَ بَنٰى لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنّةِ. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কাতারের মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দিবেন। -আলমু‘জামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৫৭৯৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস ৩৮২৪ হাদীসটি উল্লেখ করার পর মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেব লিখেছেন, সুধী পাঠক, মুরব্বীরা বলে থাকেন, পায়ের সাথে পা মিলালে সম্মান নষ্ট হয় আর রাসূল (ছাঃ) বলছেন, আল্লাহ সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আমি তাহলে কার কথা গ্রহণ করব? সুধী পাঠক, প্রথমত কোন্ মুরব্বীরা এরকম বলে থাকেন তা তিনি উল্লেখ করেননি। সালাতের মধ্যে পায়ের সাথে পা মিলানো সম্মান নষ্ট হয় কি হয় না তা আলোচনার পাদপ্রদীপে আসেইনি কখনও। দ্বিতীয়ত আপনারা লক্ষ করে দেখুন, মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবের বক্তব্য কী রকম বাস্তবতা-বিরোধী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতারের মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করার ফযীলত ব্যক্ত করেছেন যে, যে ব্যক্তি কাতারের মধ্যকার ফাঁক বন্ধ করবে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন। পায়ের সাথে পা মিলালে সম্মান বৃদ্ধি করে দেওয়ার কথা হাদীসটিতে ব্যক্ত করা হয়নি। হাদীস-২ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ اِنّ اللهَ وَ مَلٰئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الذِيْنَ يَصِلُوْنَ الصُّفُوْفَ وَ مَنْ سَدّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً. আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা কাতারসমূহকে সংযুক্ত করে। আর যে ব্যক্তি ফাঁক বন্ধ করল, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৯৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৬৩১ এই হাদীসেও পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর কথা বলা হয়নি। হাদীসটিতে ফাঁক বন্ধ করার ফযীলত ব্যক্ত করা হয়েছে শুধু। হাদীস-৩ عَنِ ابْنِ عُمَرَ اَنّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى الله عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ أَقِيْمُوا الصُّفُوْفَ وَ حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَ سُدُّوْا الْخَلَلَ وَ لِيْنُوْا بِأَيْدِيْ اِخْوَانِكُمْ وَ لَاتَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشّيْطَانِ وَ مَنْ وَصَلَ صَفّا وَصَلَهُ اللهُ وَ مَنْ قَطَعَ صَفّا قَطَعَهُ اللهُ. ইবনু উমার রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাতার সোজা কর। কাঁধসমূহকে বরাবর রাখ। ফাঁক বন্ধ কর। তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও এবং শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ে দিয়ো না। যে কাতার জুড়ে দেয় আল্লাহ তাআলাও তাকে জুড়ে দেন। পক্ষান্তরে যে কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলা তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। -সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস ৬৬৬ ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাওয়ার অর্থ হল, কেউ যদি কাতার সোজা করার জন্য তোমাদেরকে হাত দিয়ে একটু টান দিয়ে এগিয়ে নিতে চায় বা পিছিয়ে নিতে চায় তাহলে তার হাতে নরম হয়ে যাও। তার হাতের অনুগামী হয়ে যাও। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকো না। মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেব বাক্যটির অশুদ্ধ তরজমা করেছেন। তিনি তরজমা করেছেন : তোমাদের ভাইদের হাতের সাথে নম্রতা বজায় রেখে মিলিয়ে দিবে। যা হোক, এই হাদীসেও পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর কথা নাই; আছে কাঁধসমূহকে বরাবর করার কথা। আছে ফাঁক বন্ধ করার কথা। আছে কাতারকে বিচ্ছিন্ন না করার কথা। হাদীস-৪ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى الله عَلَيْهِ وَ سَلّمَ يَتَخَلّلُ الصّفّ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلٰى نَاحِيَةٍ يَمْسَحُ صُدُوْرَنَا وَ مَنَاكِبَنَا وَ يَقُوْلُ لَاتَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوْبُكُمْ وَ كَانَ يَقُوْلُ إِنّ اللهَ وَ مَلٰئِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى الصُّفُوْفِ الْاُوَلِ. বারা ইবনে আযেব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত কাতারে প্রবেশ করে আমাদের বুক এবং কাঁধ স্পর্শ করতেন এবং বলতেন ভিন্ন ভিন্ন হয়ো না। নতুবা তোমাদের অন্তরসমূহ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলতেন, আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ প্রথম দিকের কাতারসমূহের উপর রহমত নাযিল করেন। -সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস ৬৬২ এই হাদীসে কাতার সোজা করার কথা ব্যক্ত হয়েছে। কাতার সোজা ও বরাবর করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের কারও বুকে কারও কাঁধে হাত দিতেন। যে সাহাবীকে দেখতেন একটু এগিয়ে তাঁর বুকে হাত দিয়ে তাঁকে একটু পিছনে সরিয়ে কাতারের বরাবর দাঁড় করাতেন আর যে সাহাবীকে দেখতেন একটু পিছিয়ে তাঁর কাঁধে হাত দিয়ে তাঁকে সামনে টেনে এনে তাঁকে কাতারের বরাবর দাঁড় করাতেন। এইভাবে তিনি কাতার সোজা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতেন। কাতার সোজা হল কি না সে ব্যাপারে নিজে তদারকী করতেন। এই হাদীসেও পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর কথা বলা হয়নি। হাদীস-৫ عَنْ اَبِىْ مَسْعُوْدٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِى الصّلَاةِ وَ يَقُوْلُ اِسْتَوُوْا وَ لَاتَخْتَلِفُوْا فَتَخْتَلِفَ قُلُوْبُكُمْ لِيَلِنِىْ مِنْكُمْ اُولُوا الْاَحْلَامِ وَ النُّهٰى ثُمّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمّ الّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ قَالَ اَبُوْ مَسْعُوْدٍ فَاَنْتُمُ الْيَوْمَ اَشَدُّ اِخْتِلَافًا. আবূ মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে আমাদের কাঁধ স্পর্শ করতেন এবং বলতেন, বরাবর হয়ে দাঁড়াও। পৃথক হয়ে দাঁড়িও না। নতুবা তোমাদের অন্তরসমূহ পৃথক হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্য হতে যারা জ্ঞান ও বুদ্ধির অধিকারী তারাই যেন আমার নিকটে থাকে। অতপর তারা, যারা তাদের কাছাকাছি জ্ঞান ও বুদ্ধির অধিকারী, অতপর তারা, যারা তাদের কাছাকাছি জ্ঞান ও বুদ্ধির অধিকারী। আবূ মাসঊদ রা. বলেন, তো আজ তোমরা অধিক বিভিন্নতার শিকার। -মুসনাদে সিরাজ, হাদীস ৭৬৬ এই হাদীসেও পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু, ও কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর কথা বলা হয়নি। হাদীসে কাতার সোজা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কাতারে আগু পিছু হয়ে দাঁড়ালে অন্তরসমূহের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। হাদীস-৬ عَنْ اَنَسٍ قَالَ اُقِيْمَتِ الصّلَاةُ فَاَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ بِوَجْهِهِ فَقَالَ اَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصٌّوْا فَاِنِّى اَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ. হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা সালাতের ইকামত দেওয়া হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে অভিমুখী হয়ে বললেন, তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা কর এবং গায়ে গায়ে মিশে মিশে দাঁড়াও। কেননা আমি তোমাদেরকে আমার পেছন দিক থেকেও দেখতে পাই। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৯ এই হাদীসেও পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু ও কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর কথা বলা হয়নি। হাদীস-৭ عَنْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلُ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ قَالَ رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَ قَارِبُوْا بَيْنَهَا وَ حَاذُوْا بِالْاَعْنَاقِ فَوَالذِى نَفْسِىْ بِيَدِهِ اِنِّىْ لَاَرَى الشّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصّفِّ كَاَنّهَا الْحَذَفُ. আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে সংলগ্ন কর। কাতারগুলোকে কাছাকাছি রাখ। তোমাদের ঘাড়সমূহকে বরাবর রাখ। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, নিশ্চয়ই আমি শয়তানকে দেখি ভেড়ার বাচ্চার ন্যায় কাতারের মাঝে প্রবেশ করতে। -সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস ৬৬৭ এই হাদীসেও পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর কথা বলা হয়নি। হাদীসটিতে প্রথমে কাতারসমূহের মাঝে নিকটবর্তিতা সৃষ্টির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতপর মুসল্লীদের পরস্পরের ঘাড়সমূহকে বরাবর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর কাতারে ফাঁক থাকলে কী ক্ষতি হয় তা জানান দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, শয়তান তখন ভেড়ার বাচ্চার ন্যায় কাতারের মাঝে প্রবেশ করে। হাদীস-৮ عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلمَ يُسَوِّىْ صُفُوْفَنَا حَتّٰى كَأَنّمَا يُسَوِّىْ بِهَا الْقِدَاحَ حَتّٰى راٰى اَنّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ ثُمّ خَرَجَ يَوْمًا فَقَامَ حَتّٰى كَادَ اَنْ يُكَبِّرَ فَراٰى رَجُلًا بَادِيًا صَدْرَهُ مِنَ الصّفِّ فَقَالَ عِبَادَ اللهِ لَتُسَوُّنّ صُفُوْفَكُمْ اَوْ لَيُخَالِفَنّ اللهُ بَيْنَ وُجُوْهِكُمْ. নু‘মান ইবনে বাশীর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলোকে এমনভাবে সোজা করতেন যেন তিনি তদ্দারা তীর সোজা করবেন। এভাবে তিনি করতে থাকলেন যতদিন না তিনি দেখলেন যে, আমরা তাঁর থেকে বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছি। অতপর একদিন তিনি (সালাতের জন্য) বের হলেন। যখন তিনি তাকবীর দিতে যাবেন সেই মুহূর্তে এক ব্যক্তিকে দেখলেন তার বুকটাকে কাতারের বাইরে বের করে রাখতে। তা দেখে তিনি বললেন, আল্লাহর বান্দারা, হয় তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করবে নতুবা তোমাদের মাঝে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই বিরোধিতা সৃষ্টি করে দেবেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০০৭ হাদীস-৯ عَنْ اَبِى الْقاسِمِ الْجَدَلِىِّ قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ يَقُوْلُ اَقْبَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ عَلَى النَّاسِ بِوَجْهِهِ فَقَالَ اَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ ثَلَاثًا وَاللهِ لَتُقِيْمَنَّ صُفُوْفَكُمْ اَوْ لَيُخَالِفَنّ اللهُ بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ قَالَ فَرَأَيْتُ الرّجُلَ يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَ رُكْبَتَهُ بِرُكْبَةِ صَاحِبِهِ وَ كَعْبَهُ بِكَعْبِهِ. আবুল কাসেম আলজাদালী বলেন, আমি নু‘মান ইবনে বাশীর রা.-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের দিকে অভিমুখী হয়ে তিনবার বললেন, তোমরা তোমাদের কাতারগুলোকে সোজা কর। আল্লাহর শপথ তোমরা তোমাদের কাতারগুলোকে সোজা করবে নতুবা আল্লাহ তাআলা তোমাদের অন্তরসমূহের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন। নু‘মান ইবনে বাশীর বলেন, আমি ব্যক্তিকে দেখতাম তার কাঁধকে তাঁর পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সঙ্গে এবং তার হাঁটুকে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির হাঁটুর সঙ্গে এবং তার টাখনুকে তার টাখনুর সঙ্গে মিলিয়ে দিতে। -সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস ৬৬২ হাদীস-১০ عَنْ اَنَسٍ عَنِ النّبِىِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ قَالَ اَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ فَاِنِّىْ اَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِىْ وَ كَانَ اَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَ قَدَمَهُ بِقَدَمِهِ. হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে সোজা কর। কারণ, আমি তোমাদেরকে আমার পেছন দিক থেকে দেখতে পাই। তো আমাদের একজন তার কাঁধ অপরজনের কাঁধের সাথে এবং তার পা অপরজনের পায়ের সাথে মিলিয়ে দিত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭২৫ এই শেষোক্ত (৯ ও ১০ নং) হাদীসদুটিতে সাহাবীর বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে যে, সাহাবীগণের কেউ কেউ তাদের পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির পায়ের সাথে পা, হাঁটুর সাথে হাঁটু, এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দিতেন। পর্যালোচনা আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, প্রথম হাদীসে কাতারের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ করার ফযীলত ব্যক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় হাদীসেও ফাঁক বন্ধ করার ফযীলত ব্যক্ত হয়েছে। তৃতীয় হাদীসে কাতার সোজা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং ফাঁক বন্ধ করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। চতুর্থ হাদীসে কাতার সোজা করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরূপ ভূমিকা পালন করতেন তা বর্ণিত হয়েছে। পঞ্চম হাদীসেও কাতার সোজা করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং কাতার সোজা না করার পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। ষষ্ঠ হাদীসে কাতার সোজা করার নির্দেশ ব্যক্ত হয়েছে এবং গায়ে গায়ে মিশে মিশে দাঁড়ানোর তথা ফাঁক বন্ধ করার নির্দেশ ব্যক্ত হয়েছে। সপ্তম হাদীসে একটি কাতার থেকে অপর কাতারের দূরত্ব বেশি না রেখে কাছাকাছি রাখতে বলা হয়েছে এবং কাতার সোজা করার জন্য প্রত্যেকের ঘাড়কে সমান্তরালে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে কাতারে মুসল্লীদের মাঝখানে ফাঁক থাকলে সেই ফাঁকা জায়গায় শয়তান প্রবেশ করে বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। অষ্টম হাদীসেও কাতার সোজা করার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে এবং কাতার বাঁকা করে দাঁড়ানোর পরিণতি সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। নবম ও দশম হাদীসেও কাতার সোজা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাতার সোজা না করলে যে কুফল সৃষ্টি হবে তা ব্যক্ত করা হয়েছে। এই নবম ও দশম হাদীসে সাহাবী যথাক্রমে হযরত নু‘মান ইবনে বাশীর ও হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবীগণ তাদের একজন অপরজনের কাঁধের সাথে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু, টাখনুর সাথে টাখনু এবং পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দিত। সুধী পাঠক, প্রথমত কাঁধের সাথে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু, টাখনুর সাথে টাখনু এবং পায়ের সাথে পা মিলানোর কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ হিসাবে কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু কাতার সোজা করার কথা এবং ফাঁক বন্ধ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। আর কাঁধের সাথে কাঁধ, টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং পায়ের সাথে পা মিলানোর আমলটি পাওয়া যাচ্ছে সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক। সুতরাং মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবের এই দাবী- পায়ে পা, টাখনুর সাথে টাখনু, ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছালাতে দাঁড়াতে হবে মর্মে রাসূল (ছাঃ) বহু হাদীসে নির্দেশ করেছেন- আদৌ সঠিক নয়, বরং বিভ্রান্তিকর। দ্বিতীয়ত একটু মনোনিবেশ করে দেখুন যে, সাহাবীদ্বয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন কথার পরে এই বর্ণনা দান করেছেন। সাহাবীদ্বয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কাতার সোজা করার নির্দেশদানের বিবরণদানের পর সাহাবীগণের আমল উল্লেখ করেছেন। ফাঁক বন্ধ করার নির্দেশদানের বিবরণদানের পরে নয়। বুঝা যায় যে, সাহাবীগণ ঐরূপ আমল করতেন কাতারের ফাঁক বন্ধ করার জন্য নয়। তারা ঐরূপ আমল করতেন কাতার সোজা করার জন্য। অতএব সহজেই অনুমান করা যায় যে, তাঁরা নামাযের পুরো সময়ে কাঁধের সাথে কাঁধ, পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু ও হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে রাখতেন না। বরং তাঁরা ঐরূপ আমল করতেন কাতার সোজা হল কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে, পায়ের সাথে পা মিলিয়ে, টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে এবং হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে তাঁরা দেখে নিতেন যে, কাতার সোজা হল কি না। মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবগণ সাহাবীদ্বয়ের কথার মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝতে পারেননি। তাঁরা শব্দ ও বাক্যের বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করেছেন। শব্দ ও বাক্যের উদ্দিষ্ট অর্থ তাঁরা বুঝতে ও গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উদ্দেশ্য হল, কাতার সোজা করা। আর পায়ের সাথে পা মিলানো, টাখনুর সাথে টাখনু মিলানো ইত্যাদি কাজগুলো ঐ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উপায় মাত্র। মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবগণ উপায়কেই উদ্দেশ্য বলে ঠাউরে নিয়েছেন। ফলে তাঁদের পোষিত মত হয়ে গেছে হাদীস থেকে অনেক দূরের মত। তাঁদের পোষিত মত হাদীসের অর্থ ও মর্মের ধারে কাছেও নেই। বলতে দ্বিধা নেই যে, সালাতের পুরো সময়ে এইরূপ একের পা অপরের পায়ের সাথে মিলিয়ে রাখা, টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে রাখা, হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে রাখা এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব। কারণ, মানুষের দেহের উর্ধ্বাংশ নিম্নাংশ অপেক্ষা অধিক চওড়া। আর তা দুটো হাতের কারণে। হাত দুটোর গোড়ার অংশ কাঁধের সাথে যুক্ত হওয়ার ফলে কাঁধ হয়ে গেছে নিম্নাংশ অপেক্ষা অধিক চওড়া। অতএব পা দুটো যদি স্বাভাবিক ফাঁক রেখে দাঁড়ানো হয় তাহলে কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানো সম্ভব হবে কিন্তু তখন পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানো, টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে দাঁড়ানো এবং হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে দাঁড়ানো অসম্ভব হবে। আর যদি পা দুটো অস্বাভাবিক ফাঁক করে দাঁড়ায় তবে পায়ের সাথে পা মিলানো সম্ভব হবে কিন্তু তখনও টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলানো সম্ভব হবে না। আর তখন দুই মুসল্লীর দুই কাঁধের মাঝখানে দুস্তর দূরত্ব সৃষ্টি হবে। তখন ফাঁক তো বন্ধ হবেই না অধিকন্তু দুইজন মুসল্লীর মধ্যকার ফাঁক খুব স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আর যদি কাঁধ মিলানোর সঙ্গে সঙ্গে পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে মুসল্লীকে অস্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে যা হবে মুসল্লীর জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। মুসল্লীর দেহের রূপ-দৃশ্য হবে তখন কিম্ভুতকিমাকার। মুসল্লীগণ এই পন্থাকয়টি পরীক্ষা করলেই তাদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে আশা করি। সাহাবায়ে কেরাম টাখনুর সাথে টাখনু, পায়ের সাথে পা, এবং হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে দেখে নিতেন কাতার সোজা হল কি না। ব্যস এই পর্যন্তই। তারা সব সময়েই টাখনুর সাথে টাখনু, পায়ের সাথে পা এবং হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে রাখতেন- তা নয়। হাঁ, ফাঁক বন্ধ করার জন্য তাঁরা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে রাখতেন। যা সম্ভব এবং ফাঁক বন্ধের জন্য জরুরিও বটে। আমার এই কথাগুলো শুধু আমি নই, লা মাযহাবী ঘরানার দুইজন বিশিষ্ট আলেমও এইজাতীয় কথাই বলেছেন এবং আরও স্পষ্ট করে ও সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছেন। প্রসিদ্ধ সালাফী আলেম জেদ্দা ফিকহ একাডেমীর সাবেক প্রধান ড. বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়দ তাঁর ‘লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ’ বইয়ে নামাযে নতুন আবিষ্কৃত কিছু পদ্ধতি চিহ্নিত করেছেন। কাতারে পাশের মুসল্লীর পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোকেও তিনি নব আবিষ্কৃত পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত বলে সাব্যস্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন : وَ مِنَ الْهَيْآتِ الْمُضَافَةِ مُجَدّدًا اِلَى الْمُصَافّةِ بِلَامُسْتَنَدٍ مَا نَرَاهُ مِنْ بَعْضِ الْمُصَلِّيْنَ مِنْ مُلَاحَقَتِهِ مَنْ عَلٰى يَمِيْنهِ اِنْ كَانَ فِى يَمِيْنِ الصّفِّ وَ مَنْ عَلٰى يَسَارِهِ اِنْ كَانَ فِى مَيْسَرَةِ الصّفِّ وَلـَىِّ الْعَقِبَيْنِ لِيُلْصِقَ كَعْبَيْهَ بِكَعْبِ جَارِهِ، وَهٰذِهِ هَيْئَةٌ زائِدَةٌ عَلَى الْوَارِدِ، فِيْهَا اِيْغَالٌ فِى تِطْبِيْقِ السُّنّةِ. وَهِىَ هَيْئَةٌ مَنْقُوْضَةٌ بِاَمْرَيْنِ : اَلْاَوّلُ اَنّ الْمصَافّةَ هِىَ مِمّا يَلِى الْاِمَامَ فَمَنْ كَانَ عَلٰى يَمِيْنِ الصّفِّ فَلْيُصَافّ عَلٰى يَسَارِهِ مِمّا يَلِى الْاِمَامَ، وَ هٰكَذَا يَتَرَاصُّوْنَ ذَاتَ الْيَسَارِ وَاحِدًا بَعْدَ وَاحِدٍ عَلٰى سمْتٍ وَاحِدٍ فِى تَقْوِيْمِ الصّفِّ، وَ سَدِّ الْفُرُجِ، وَالتّرَاصِّ وَالْمُحَاذَاةِ بِالْعُنُقِ وَالْمَنْكبِ وَالْكَعْبِ وَ اِتْمَامِ الصّفِّ الْاَوّلِ فَالْاَوّلِ اَمّا اَنْ يُلَاحِقَ بِقَدَمِهِ الْيُمْنٰى থ وَ هُوَ فِى يَمِيْنِ الصّفِّ থ مَنْ عَلٰى يَمِيْنِهِ وَ يَلْفِتَ قَدَمَهُ حتّٰى يَتِمّ الْاِلزَاقُ، فَهٰذَا غَلَطٌ بَيِّنٌ، وَ تَكَلُّفٌ ظَاهِرٌ، وَ فَهْمٌ مُسْتَحْدَثٌ فِيْهِ غُلُوٌّ فِى تَطْبِيْقِ السُّنّةِ، وَتَضْيِيْقٌ وَمُضَايَقَةٌ، وَ اِشْتِغَالٌ بِمَا لَمْ يُشْرَعْ، وَتَوْسِيْغٌ لِلْفُرُجِ بَيْنَ الْمُتَصَافّيْنِ، يَظُهُرُ هٰذَا اِذَا هَوَى الْمَامُوْمُ لِلسُّجُوْدِ، وَ تَشَاغَلَ بَعْدَ الْقِيَامِ لِمَلأِ الْفَرَاغِ، وَلَىِّ الْعَقِبِ لِلْاِلْزَاقِ وَتَفْوِيْتٌ لِتَوْجِيْهِ رُؤُوْسِ الْقَدَمَيْنِ اِلَى الْقِبْلَةِ. وَ فِيْهِ مُلَاحَقَةُ الْمُصَلٍّى لٍلْمُصَلِّى بِمَكَانِهِ الّذِىْ سَبَقَ اِلَيْهِ، وَ اِقْطَاعٌ لِمَحَلِّ قَدَمِ غَيْرِهِ بِغَيْرِ حَقٍ، وَ كُلُّ هٰذَا تَسَنُّنٌ بِمَا لَمْ يُشْرَعْ. اَلثّانِىْ اَنّ النّبِىّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلّمَ لَمَّا اَمَرَ بِالْمُحَاذَاةِ بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَالْاَكْعُبِ قَدْ اَمَرَ اَيْضًا بِالْمُحَاذَاةِ بِيْنَ الْاَعْنَاقِ كَمَا فِى حَدِيْثِ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عِنْدَ النّسَائي (رقم الحديث ৮১৪ ) وَكُلُّ هٰذَا يَعْنِى الْمصَافّةَ وَ الْمُوَازَاةَ وَالْمُسَامَتَةَ وَ سَدّ الْخَلَلِ ، وَلَايَعْنِىْ الْعَمَلَ عَلَى الْاِلْزَاقِ فَاِنّ الْزَاقَ الْعُنُقِ بِالْعُنُقِ مُسْتَحِيْلٌ، وَ اِلْزَاقُ الْكَتِفِ بِالْكَتِفِ فِى كُلِّ قِيَامٍ تَكَلُّفٌ ظَاهِرٌ، وَ اِلْزَاَقُ الرُّكْبَةِ بِالرُّكْبَةِ مُسْتَحِيْلٌ، وَ اِلْزَاقُ الْكَعْبِ بِالْكَعْبِ فِيْهِ مِنَ التّعَذُّرِ و التّكَلُّفِ وَ الْمُعَانَاةِ وَ التّحَفُّزِ والْاِشْتِغَالِ بِهِ فِى كُلِّ رَكْعَةٍ مَاهُوَ بَيِّنٌ ظَاهِرٌ. فَتَبَيّنَ اَنّ الْمُحَاذَاةَ فِى الْاَرْبَعَةِ اَلْعُنُقِ اَلْكَتِفِ اَلرُّكْبَةِ اَلْكَعْبِ مِنْ بَابَةٍ وَاحِدَةٍ يُرَادُ بِهَا الْحَثُّ عَلٰى اِقَامَةِ الصّفِّ وَالْمُوَازَاةِ وَالْمُسَامَتَةِ وَالتّرَاصِّ عَلٰى سِمْتٍ وَاحِدٍ بِلَاعَوْجٍ وَلَافُرُجٍ. وَبِهٰذَا يَحْصُلُ مَقْصُوْدُ الشّارِعِ. এক্ষেত্রে নব আবিষ্কৃত পদ্ধতিটি হল, স্বাভাবিকভাবে না দাঁড়িয়ে দুই পা দুই দিকে বেশি ছড়িয়ে দিয়ে এবং দুই পাশের মুসল্লীর পায়ের সঙ্গে নিজের পা চাপাচাপি করে মিলিয়ে দাঁড়ানো। এমনকি পায়ের গোড়ালী বাঁকা করে হলেও দুই পাশের মুসল্লীর পায়ের গোড়ালীর সঙ্গে নিজের পায়ের গোড়ালী মিলিয়ে রাখার কসরত করা। এই পদ্ধতিটি হাদীসে বর্ণিত পদ্ধতির বহির্ভূত। হাদীসের শিক্ষার ভ্রান্ত বাস্তবায়ন। দুটি কারণে এ পদ্ধতি পরিত্যাজ্য। প্রথমত নিয়ম হল, কাতার সোজা করতে হবে ইমামের দিক থেকে। কাতারের ডান দিকের লোকেরা তার বাম দিকের লোকের সঙ্গে ঘেঁষে দাঁড়াবে। এভাবে মাঝের খালি জায়গাগুলো পূরণ করে ফেলবে। গর্দান, কাঁধ, টাখনু সব পার্শ¦বর্তী ব্যক্তির বরাবর থাকবে। এবং প্রথমে প্রথম, তারপর দ্বিতীয় কাতার এভাবে একের পর এক কাতার পূরণ করবে। এ হল কাতার সোজা করার প্রকৃত নিয়ম। কিন্তু তা না করে পা ছড়িয়ে দিয়ে এবং প্রয়োজনে পায়ের গোড়ালী বাঁকা করে পাশের মুসল্লীর পায়ের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে দেওয়া স্পষ্ট ভুল। এতে তাকাল্লুফ ও কৃত্রিমতার ছাপ সুস্পষ্ট। এটা মেনে নেওয়ার অর্থ এমন কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া, যা শরীয়তের বিধান নয়। তাছাড়া এভাবে দাঁড়ানোর ফলে দুই ব্যক্তির মাঝে ব্যবধান বেড়ে যায়। সেজদায় যাওয়ার সময় সৃষ্ট ব্যবধান এবং সেজদা থেকে দাঁড়ানোর পর ফাঁকা জায়গা পূরণের জন্য ব্যতিব্যস্ততা থেকে যা স্পষ্টরূপে ধরা পড়ে। অথচ শরীয়তের নির্দেশ হল, ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দাঁড়ানো। আরও এক সমস্যা হল, পায়ের সঙ্গে পা মিলানোর জন্য পা ফাঁক করে দেওয়া হয়। যার ফলে পায়ের অগ্রভাগ কিবলামুখী রাখার যে বিধান তা পালন করা সম্ভব হয় না। এসব কিছুই শরীয়ত অসমর্থিত কাজকে সুন্নত আখ্যা দেওয়ার নামান্তর। তাদের আবিষ্কৃত এ পদ্ধতি পরিত্যাজ্য হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হল তা হাদীসের মর্ম ও উদ্দেশ্যের বিরোধী। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে পরস্পরের কাঁধ ও টাখনু বরাবর রাখার হুকুম করেছেন ঠিক একইভাবে পরস্পরের ঘাড়ও বরাবর রাখার হুকুম করেছেন। সুনানে নাসায়ীর ৮১৪ নং হাদীসে বিষয়টি এসেছে। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এসব কিছুর উদ্দেশ্য হল, কাতার এমনভাবে সোজা করা যাতে মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে এবং কেউ আগপিছ না হয়ে থাকে। কাঁধ, টাখনু ও গর্দান অপর ব্যক্তির কাঁধ, টাখনু ও গর্দানের সঙ্গে লাগিয়ে রাখা কখনও হাদীসের উদ্দেশ্য হতে পারে না। কেননা, বলা বাহুল্য যে, গর্দানের সঙ্গে গর্দান মিলিয়ে দাঁড়ানো অসম্ভব। হাঁটুর সঙ্গে হাঁটু মিলিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। আর সর্বক্ষণ টাখনুর সঙ্গে টাখনু মিলিয়ে রাখা যে কতটুকু কষ্টসাধ্য এবং তাতে যে কত কৃত্রিমতার আশ্রয় নিতে হয় এবং প্রত্যেক রাকাতে এর জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হয় তা তো বলাই বাহুল্য। এ থেকে প্রমাণিত হয় গর্দান, কাঁধ, হাঁটু ও টাখনু চার জায়গায় محاذاة তথা বরাবর হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হল, কাতার সোজা করা, পরস্পরের বরাবর সমানভাবে মিলেমিশে এমনভাবে দাঁড়ানো যাতে কাতার ফাঁকা হয়ে না থাকে এবং কাতারে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে। (লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ) আর শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আলউছাইমীন-এর নিকট যখন প্রশ্ন করা হল যে, কাতারবন্দীর ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য পন্থা কী? মুসল্লীর টাখনু পার্শ¦বর্তী মুসল্লীর টাখনুর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া কি শরীয়তসম্মত? এর জবাবে তিনি যা লিখেছেন তা তাঁর ‘ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম’ গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে। তিনি এই প্রশ্নের জবাবে লিখেছেন : اَلصّحِيْحُ اَنّ الْمُعْتَمَدَ فِى تَسْوِيَةِ الصّفِّ مُحَاذَاةُ الْكَعْبَيْنِ بَعْضِهِمَا بَعْضًا لَارؤُوْسِ الْاَصَابِعِ، وَ ذٰلِكَ لِاَنّ الْبَدَنَ مركبٌ عَلَى الْكَعْبِ، وَالْاَصَابِعُ تَخْتَلِفُ الْاَقْدَامُ فِيْهَا فَهُنَاكَ الْقَدَمُ الطّوِيْلُ وَهُنَاكَ الْقَدَمُ الْقَصِيْرُ فَلَايُمْكِنُ ضَبْطُ التّسَاوِىْ اِلّا بِالْكَعْبِ، وَ اَمّا اِلْصَاقُ الْكَعْبَيْنِ بَعْضِهِمَا بِبَعْضٍ فَلَاشَكّ اَنّهُ وَارِدٌ عَنِ الصّحَابَةِ رَضِىَ الله عنهم فَاِنّهُمْ كَانُوْا يُسَوُّوْنَ الصُّفُوْفَ بِاِلْصَاقِ الْكَعْبَيْنِ بَعْضِهِمَا بِبَعْضٍ أَىْ اَنّ كُلّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ يُلْصِقُ كَعْبَهُ بِكَعْبِ جَارِهِ لِتَحَقُّقِ الْمُحَاذَاةِ وَتَسْوِيَةِ الصَّفِّ، فَهُوَ لَيْسَ مَقْصُوْدًا لِذَاتِهِ لٰكِنّهُ مَقْصُوْدٌ لِغَيْرِهِ كَمَا ذَكَرَ بَعْضُ اَهْلِ الْعِلْمِ، وَ لِهٰذَا اِذَا تَمّتِ الصُّفُوْفُ وَ قَامَ النّاسُ يَنْبَغِىْ لِكُلِّ وَاحِدٍ اَنْ يُلْصِقَ كَعْبَهُ بِكَعْبِ صَاحِبِهِ لِتَحَقُّقِ الْمُسَاوَاةِ، وَ لَيْسَ مَعْنٰى ذٰلِكَ اَنْ يُلَازِمَ هٰذَا الْاِلْصَاقَ وَ يَبْقٰى مُلَازِمًا لَهُ فِي جَمِيْعِ الصّلَاةِ. وَ مِنَ الْغُلُوِّ فِى هٰذِهِ الْمَسْئَلَةِ مَايَفْعَلُهُ بَعْضُ النّاسِ مِنْ كوْنِهِ يُلْصِقُ كَعْبَهُ بِكَعْبِ صَاحِبِهِ وَيَفْتَحُ قدَمَيْهِ فِيْمَا بَيْنَهُمَا حَتّٰى يَكُوْنُ بَيْنَهُ وَ بَيْنَ جَارِهِ فِى الْمَنَاكِبِ فُرْجَةٌ فَيُخَالِفَ السُّنّةَ فِى ذٰلِكَ، وَ الْمَقْصُوْدُ اَنّ الْمَنَاكِبَ وَ الْاَكْعُبَ تَتَسَاوٰى. কাতার সোজা করার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে পরস্পরের টাখনুদুটো বরাবর করে নেওয়া। পায়ের আঙ্গুলসমূহ বরাবর করা নয়। কেননা শরীরের ভর থাকে মূলত টাখনুর উপরে। আর আঙ্গুলগুলো পায়ের মাপের বিভিন্নতা অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কিছু পা থাকে বেশ লম্বা আর কিছু থাকে খাট। সে ক্ষেত্রে পায়ের টাখনু বরাবর করা ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতিতে কাতার বরাবর ও সোজা করা সম্ভব নয়। বাকি রইল টাখনুদ্বয় পরস্পরে মিলিত করা; তো তা নিঃসন্দেহে সাহাবায়ে কেরাম হতে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা কাতার সোজা করতেন টাখনুদ্বয় পরস্পরে মিলিত করে। অর্থাৎ তাঁদের প্রত্যেকেই নিজের টাখনু পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর টাখনুর সাথে মিলিয়ে দিতেন কাতার বরাবর ও সোজা হল কি না তা নিশ্চিত করতে। সুতরাং টাখনু মিলিত করা মূল উদ্দেশ্য নয়। তা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ণের নিমিত্ত মাত্র। অতএব কাতার পূর্ণ হলে এবং মানুষ দাঁড়িয়ে গেলে প্রত্যেকের জন্য উচিত হল কাতার সোজা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে নেওয়া। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, পুরো নামাযে এভাবে টাখনুর সাথে টাখনু সর্বক্ষণের জন্য মিলিয়ে রাখবে। অনেকে বাড়াবাড়ি করে পার্শ্ববর্তী মুছুল্লীর টাখনুর সঙ্গে টাখনু মিলাতে গিয়ে নিজের দু পায়ের মাঝে অতিরিক্ত ফাঁক সৃষ্টি করে ফেলে। ফলে তার ও তার পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর কাঁধের মাঝে দূরত্ব ও ফাঁক সৃষ্টি হয়। ফলত তা হয়ে যায় সুন্নাত বিরোধী। উদ্দেশ্য হচ্ছে টাখনু ও কাঁধসমূহকে বরাবর রাখা। (শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উছাইমীন, ফতোয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন নং ২৩৪-এর জবাব) উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব মসজিদেই লম্বা ও সোজা রেখা অঙ্কন করা থাকে। অথবা গালিচা, মাদুর বা এইজাতীয় কিছু বিছানো থাকে। ফলে রেখার উপর কিংবা গালিচা, মাদুর ইত্যাদির পিছন দিকের শেষ প্রান্তে প্রত্যেকেই যদি গোড়ালী রাখে তা হলে কাতার সোজা ও বরাবর হয়ে যায়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের যুগে এরূপ কিছু ছিল না। ফলে তাঁরা প্রত্যেকেই উভয় পার্শ্বের মুসল্লীর টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে নিতেন এবং তদ্দারা তাঁরা নিশ্চিত হতেন যে, কাতার সোজা হল কি না। ফাঁক বন্ধ করার জন্য তাঁরা এরূপ করতেন না। এবং পূর্ণ নামাযে এভাবে টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে রাখতেন না। শাইখ সালেহ আল উছাইমীন এবং বকর বিন আবদুল্লাহ আবূ যায়দের বক্তব্য থেকে যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। টাখনুর সাথে টাখনু, হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে রেখে কাঁধের সঙ্গেও কাঁধ মিলানো অসম্ভব- এই কথাটিও তাঁদের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কাতার সোজা করতে হবে এবং ফাঁক বন্ধ করতে হবে। কাতার সোজা করতে গোড়ালী অথবা টাখনু বরাবর হল কি না তা দেখতে হবে এবং ফাঁক বন্ধ করতে হলে পরস্পরের কাঁধকে মিলিয়ে রাখতে হবে। যদি কাঁধ মিলিয়ে রাখে তবেই ফাঁক বন্ধ হবে। টাখনুর সাথে টাখনু ও হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলাতে গেলে একদিকে তা হবে আয়াসসাধ্য কাজ অপরদিকে তাতে পরস্পরের কাঁধের মাঝে সৃষ্টি হবে দূরত্ব ও ফাঁক। এক বর্ণনায় হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলানের কথা থাকলেও মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেব বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। তাঁর মূল বক্তব্যে তিনি টাখনুর সাথে টাখনু ও কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর কথা বলেছেন। কারণ, তিনিও হয়তো বুঝেছেন যে, টাখনুর সাথে টাখনু মিলিয়ে কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানো কষ্টকর হলেও সঙ্গে সঙ্গে হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলানো অধিকতর কষ্টকর। বরং প্রায় অসম্ভব। দেখুন ইমাম বুখারী রাহ. একটি অনুচ্ছেদের শিরোনাম লিখেছেন এভাবে : بَابُ اِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِى الصّفِّ وَ قَالَ النُّعْمَانُ بْنُ بَشِيْرٍ رَاَيْتُ الرّجُلَ مِنّا يُلْزِقُ كَعْبَهُ بِكَعْبِ صَاحِبِهِ. ‘কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানো এবং পায়ের সাথে পা মিলানো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ। নু‘মান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমাদের মধ্য হতে ব্যক্তিকে দেখেছি তার টাখনুকে পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির টাখনুর সাথে মিলিয়ে দিতে।’ বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. এই অনুচ্ছেদের অধীনে লিখেছেন : (قَوْلُهُ باَبُ اِلْزَاقِ الْمَنْكِبِ بِالْمَنْكِبِ وَالْقَدَمِ بِالْقَدَمِ فِى الصّفِّ) اَلْمُرَادُ بِذٰالِكَ اَلْمُبَالَغَةُ فِى تَعْدِيْلِ الصّفِّ وَ سَدِّ خَلَلِهِ وَقَدْ وَرَدَ الْاَمْرُ بِسَدِّ خَلَلِ الصّفِّ وَ التّرْغِيْبُ فِيْهِ فِى اَحَادِيْثٍ كَثِيْرَةٍ اَجْمَعُهَا حَدِيْثُ اِبْنِ عُمَرَ عِنْدَ اَبِى دَاوُدَ وَصَحّحَهُ اِبْنُ خُزَيْمَةَ وَ الْحَاكِمُ وَلَفْظُهُ اَنّ رَسُوْلُ الله صَلّى الله عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ اَقِيْمُوْا الصُّفُوْفَ وَ حَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوْا الْخَلَلَ وَلَاتذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشّيْطَانِ وَمَنْ وَصَلَ صَفّا وَصَلَهُ الله وَ مَنْ قَطَعَ صَفّا قَطَعَهُ اللهُ. অর্থাৎ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কাতার সোজা করার ব্যাপারে এবং ফাঁক বন্ধ করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা। অনেক হাদীসেই ফাঁক বন্ধ করার নির্দেশ এবং এতদসম্পর্কে উৎসাহ প্রদানের কথা ব্যক্ত হয়েছে। সেসব হাদীসের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক অর্থবোধক হাদীসটি ইবনে উমারের হাদীস। যেটি বর্ণিত হয়েছে আবূ দাঊদে। ইবনে খুযাইমাহ ও হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলে মত ব্যক্ত করেছেন। হাদীসটি হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কাতারকে সোজা কর এবং কাঁধসমূহকে বরাবর কর এবং ফাঁক বন্ধ কর। শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দিয়ো না। আর যে ব্যক্তি কাতারকে মিলিয়ে দেয় আল্লাহও তাকে মিলিয়ে দেন, আর যে ব্যক্তি কাতারকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহও তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। দেখুন, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানীও ইমাম বুখারীর অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঐ একই কথা বলেছেন। যা আমি বলেছি এবং যা বলেছেন ড. বকর বিন আবদুল্লাহ আবূ যায়দ এবং শায়েখ সালেহ আল উছাইমীন। কাতারে দাঁড়ানোর সময়ে দুই পায়ের মাঝখানে কতটুকু ফাঁক রাখা উচিত কাতারে দাঁড়ানোর সময়ে দুই পায়ের মাঝখানে স্বাভাবিক ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। দুই পা সম্পূর্ণ সংযুক্ত করেও দাঁড়াবে না, আবার দুই পা অস্বাভাবিক ছড়িয়েও দাঁড়াবে না। বরং দুই পায়ের মাঝখানে যতটুকু ফাঁক রেখে দাঁড়ালে মুসল্লী স্বস্তিবোধ করবে এবং রুকু ও সেজদা স্বস্তির সঙ্গে আদায় করতে পারবে ততটুকুই ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নাই। দেহের স্থুলতা ও ক্ষীণতার উপর নির্ভর করবে কে কতটুকু ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, দুই পায়ের মাঝখানে ফাঁক রেখে দাঁড়াবে এবং এও বুঝা যায় যে, দুই পা অস্বাভাবিক ছড়িয়ে দিয়ে অতিরিক্ত ফাঁক রেখে দাঁড়াবে না। নিম্নোক্ত হাদীসগুলো দেখুন। হাদীস-১১ ইবনে আবী শাইবাহ বলেন, حَدّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ عُيَيْنَةَ بْنِ عَبْدِ الرّحْمَنِ، قَالَ : كُنْتُ مَعَ أَبِي فِي الْمَسْجِدِ فَرَأٰى رَجُلاً صَافّا بَيْنَ قَدَمَيْهِ، فَقَالَ : أَلْزِقْ إحْدَاهُمَا بِالأُخْرٰى لَقَدْ رَأَيْتُ فِي هٰذَا الْمَسْجِدِ، ثَمَانيَةَ عَشَرَ مِنْ أَصْحَابِ النّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنْهُمْ فَعَلَ هَذَا قَطُّ. আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন ওয়াকী‘, উয়াইনাহ ইবনে আবদুর রহমান হতে, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। আমার পিতা এক ব্যক্তিকে দেখলেন, দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়াতে। তিনি বললেন, পাদুটোর একটিকে অপরটির সাথে মিলিয়ে দাও। আমি এই মসজিদে আঠারো জন সাহাবীকে দেখেছি। তাঁদের কাউকেই আমি এরকম করতে দেখিনি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭১৩৬ হাদীসটির রাবী ওয়াকী‘ হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমাম। আর তাঁর উস্তায উয়াইনাহ ছিকাহ রাবী। আর তাঁর পিতা আবদুর রহমান হচ্ছেন আবদুর রহমান ইবনে জাওশান। তিনি ছিকাহ রাবী। দ্বিতীয় সারির তাবিঈ। যেমন মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন ও হাসান বাছরী দ্বিতীয় সারির তাবিঈ। উয়াইনাহ সম্পর্কে আল্লামা যাহাবী ইবনে মাঈন ও ইমাম নাসাঈর তাওছীক উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ইবনে মাঈন ও ইমাম নাসাঈ তাঁকে ছিকাহ বলেছেন। অবশ্য তাকরীবুত তাহযীবে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাঁকে সাদূক বা সত্যনিষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা তাঁর মানকে কিছুটা অবনমন ঘটায়। কিন্তু তাকরীবুত তাহযীবের টীকায় বাশশার রাওয়াদ মারূফ ও শুআ‘ইব আল আরনাউত লিখেছেন : بَلْ ثِقَةٌ، وَثّقَهُ اِبْنُ مَعِيْنٍ، وَ وَكِيْعٌ، وَ اِبْنُ سَعْدٍ، وَ الْعِجْلِى، وَ النّسائي، وَ قَالَ اَحْمَدُ لِيْسَ بِهِ بَاسٌ، صَالِحُ الْحَدِيْثِ وَ قَالَ اَبُوْ حَاتِمٍ صَدُوْقٌ وصَحّحَ التّرْمِذِىُّ حَدِيْثَهُ وَذَكَرَهُ اِبْنُ حِبّانَ فِى "الثِّقَاتِ" وَلَانَعْلَمُ فِيْهِ جَرْحًا. বরং তিনি ছিকাহ। ইবনু মাঈন, ওয়াকী‘, ইবনু সা‘দ, ইজলী এবং নাসাঈ- এঁরা সকলেই তাঁকে ছিকাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন । ইমাম আহমাদ বলেছেন তার ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই, তার হাদীস উপযুক্ত। আবূ হাতেম বলেছেন, সাদূক। ইমাম তিরমিযী তাঁর হাদীসকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন। ইবনু হিব্বান তাঁকে তাঁর “আছ ছিকাত” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাঁর সম্পর্কে কোনো সমালোচনা আছে বলে আমাদের জানা নেই। অর্থাৎ বাশশার রাওয়াদ মারূফ ও শুঅ‘াইব আল আরনাউত তাঁকে শুধু সাদূক মানতে রাযী নন। বরং তাঁরা তাঁকে ছিকাহ বলতে চান। এর কারণও তাঁরা উল্লেখ করে দিয়েছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন যে, একাধিক মুহাদ্দিস তাঁকে ছিকাহ বলে মত ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা এও উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম তিরমিযী তাঁর হাদীসকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। অনুসন্ধান করে দেখা গেল যে, উয়াইনাহ ইবনে আবদুর রহমান কর্তৃক বর্ণিত সুনানে তিরমিযীর ৭৯৪ নং হাদীস সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেছেন, হাসান সহীহ। আর সুনানে তিরমিযীর ২৫১১ নং হাদীসকেও ইমাম তিরমিযী রাহ. হাসান সহীহ বলে বিশেষায়িত করেছেন। শায়েখ আলবানী রাহ. শেষোক্ত হাদীস সম্পর্কে বলেছেন ‘সহীহ’। উল্লেখ্য, এই দুটো হাদীসই উয়াইনাহ বর্ণনা করেছেন তাঁর পিতা থেকে। অতএব আমাদের বর্ণিত হাদীসটি যে সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই সহীহ হাদীসে আমরা পাচ্ছি যে, একই মসজিদে আঠারো জন সাহাবীকে আবদুর রহমান ইবনে জাওশান দেখেছেন যে, তাঁরা কেউই দুই পা কে ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়াতেন না। দুই পা কে ছড়িয়ে না দিয়ে তাঁরা দুই পা কে মিলিয়ে দাঁড়াতেন । তবে মিলানো বলে এখানে সম্পূর্ণ মিলিয়ে দাঁড়ানোর কথা বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। কেন নয় তার কারণ পরবর্তী হাদীসে দেখুন। হাদীস ১২ ইমাম আবূ দাঊদ বলেন : حَدّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِىٍّ حَدّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ حَدّثَنَا صَالِحُ بْنُ رُسْتُمَ أَبُو عَامِرٍ عَنْ عَبْدِ الرّحْمَنِ بْنِ قَيْسٍ عَنْ يُوسُفَ بْنِ مَاهَكَ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنّ رَسُولَ اللهِ -صلّى الله عَلَيْهِ وَسَلّمَ- قَالَ إِذَا صَلّٰى أَحَدُكُمْ فَلاَ يَضَعْ نَعْلَيْهِ عَنْ يَمِينِهِ وَلاَ عَنْ يَسَارِهِ فَتَكُونَ عَنْ يَمِينِ غَيْرِهِ إِلاّ أَنْ لاَ يَكُونَ عَنْ يَسَارِهِ أَحَدٌ وَلْيَضَعْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ. হযরত আবূ হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে তখন সে যেন তার জুতোজোড়া তার ডানে না রাখে এবং বামেও না রাখে। কেননা তার বাম অপরের ডান। তবে তার বামে যদি কেউ না থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। সে যেন তার জুতোজোড়া তার দুই পায়ের মাঝখানে রাখে। -সুনানে আবূ দাঊদ, হাদীস ৬৫৪ হাদীসটির মান : হাদীসটি হাসান। আবদুর রহমান ইবনে কায়স ব্যতীত হাদীসটির সকল রাবী বুখারী ও মুসলিমের রাবী। আর আবদুর রহমান ইবনে কায়স সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. মাকবুল শব্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বাশশার রাওয়াদ মারূফ এবং শুআইব আল আরনাঊত কিছুটা আপত্তির সুরে বলেছেন : بَلْ صَدُوْقٌ حَسَنُ الْحَدِيْثِ فَقَدْ رَوٰى عَنْهُ جَمْعٌ مِنَ الثِّقَاتِ الْكِبَار الرُّفَعَاءِ ، وَ ذَكَرَهُ اِبْنُ حِبّانَ فِى الثِّقَاتِ ، وَ لَانَعْلَمُ فِيْهِ جَرْحًا. বরং সত্যনিষ্ঠ, হাসানুল হাদীস। তাঁর থেকে তো হাদীস বর্ণনা করেছেন বড় বড় উচ্চমানের একদল নির্ভরযোগ্য রাবী। এবং ইবনে হিব্বান তাঁর আছ-ছিকাত গ্রন্থে তাঁকে উল্লেখ করেছেন। তাঁর সম্পর্কে কোনো আপত্তি ও সমালোচনা আছে বলে আমাদের জানা নাই। মাকবুল শব্দটি তাওছীকের সর্বনিম্ন পর্যায়ের একটি শব্দ। বাশশার আওয়াদ মারূফ এবং শুআইব আলআরনাউত হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী কর্তৃক উয়াইনাহ সম্পর্কে মাকবুল শব্দের ব্যবহারকে অপছন্দ করে বলতে চাচ্ছেন যে, উয়াইনাহ মাকবুল অপেক্ষা উচ্চতর পর্যায়ের। তিনি সাদূক, তাঁর হাদীস হাসান পর্যায়ের। তাছাড়া শায়েখ আলবানী রাহ.ও হাদীসটিকে হাসান-সহীহ বলেছেন। ১ জামাতে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে তার জুতোজোড়া দুই পায়ের মাঝখানে রাখার পরামর্শ দান প্রমাণ করে যে, মুসল্লী তার দুই পায়ের মাঝখানে ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। দুই পা একেবারে মিলিয়ে দাঁড়াবে না।২ উপরে বর্ণিত এই বারোটি হাদীস থেকে যে সারনির্যাস বের হয়ে আসে তা এই যে, কাতারে মুসল্লীবৃন্দ যখন দাঁড়াবে তখন কাতার সোজা করে দাঁড়াবে। প্রয়োজনে কাতার সোজা হল কি না তা যাচাই করতে একজন অপরজনের টাখনুর সাথে টাখনু, পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দেখে নেওয়া যায়। কিন্তু পুরো সালাতের সময়ে পরস্পরে একে অপরের পায়ের সাথে পা, টাখনুর সাথে টাখনু, এবং হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে রাখবে না। তা হাদীসের উদ্দেশ্যও নয় এবং তা সম্ভবও নয়। দ্বিতীয়ত কাতারের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়াবে। আর তা করতে একজন অপরজনের কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দেবে। কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর অর্থ গায়ের সাথে গা মিলিয়ে দাঁড়ানো। তৃতীয়ত দুই পা অতিরিক্ত ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়াবে না। বরং দুই পায়ের মাঝে স্বাভাবিক ফাঁক রেখে দাঁড়াবে। তা হতে পারে চার ছয় ইঞ্চি বা এর চেয়ে বেশি বা কম। হাঁ, অসুস্থ বা স্থূলকায় ব্যক্তির কথা ভিন্ন। চতুর্থত দুই পা-কে কিবলামুখী করে দাঁড়াবে। পায়ের অগ্রভাগ যেন বাঁকা হয়ে না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবে। এই চতুর্থ কথাটি উপরিউক্ত হাদীসসমূহ থেকে বোঝা যায় না। মুসল্লীর সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিবলামুখী রাখা সালাতের একটি মূলনীতি। সে হিসেবেই প্রসঙ্গত কথাটি এখানে উল্লেখ করলাম। উপরের বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এ দেশের মানুষ সালাতে যেভাবে দাঁড়ায় তা হাদীসসম্মত। মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবগণ যেভাবে সালাতের কাতারে দাঁড়াতে হবে বলে দাবি করে থাকেন তা কোনো মারফু হাদীসে ব্যক্ত হয়নি। বাকি রইল সাহাবীগণের আমল। তো এক্ষেত্রে মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবগণ সাহাবীগণের আমল বিষয়ক বর্ণনার বাহ্য অর্থ অনুযায়ী আমল করে থাকেন আর আমরা তার মর্ম ও উদ্দেশ্য কী তা নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী আমল করে থাকি। এবং সলফ ও খলফের সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহ এভাবেই আমল করেছেন। এখন পাঠকবৃন্দই বিচার করুন, কাদের আমল হাদীস অনুযায়ী আর কাদের আমল হাদীস থেকে দূরে। এ দেশের মানুষের, না মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবদের? ইবনে আবী শাইবায় তাবেয়ী আবদুর রহমান বিন জাউশান কর্তৃক বর্ণিত সাহাবায়ে কেরামের আমল স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবগণ সাহাবায়ে কেরামের আমল বুঝতে এবং অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ সাহাবায়ে কেরাম পাগুলো ছড়িয়ে দাঁড়াতেন না। অথচ এরা পাগুলো ছড়িয়ে দাঁড়ায়। ফায়দা : কেউ ছাত্রসুলভ প্রশ্ন করতে পারে যে, হাদীসটিতে (১১ নং হাদীসে) বর্ণিত صَافّا بَيْنَ قَدَمَيْهِ বাক্যটির তরজমা আপনি দুই পা ‘ছড়িয়ে দেওয়া’ করলেন কী করে? صفٌّ শব্দের অর্থ তো সারিবদ্ধ হওয়া, সংযুক্ত হওয়া, বা সংযুক্ত করা। বলা হয়, صَفّ الْقَوْمُ اَىْ اِنْتَظَمُوْا فِى صَفٍّ وَاحِدٍ । এর উত্তরে প্রথমত বলব যে, ১১ নং হাদীসের পরবর্তী বাক্যটি আমাকে এই তরজমার দিকে নিয়ে গেছে। কারণ, পরবর্তী বাক্যে আছে, اَلْزِقْ اِحْدَاهُمَا بِالْاُخْرٰى অর্থাৎ দুই পায়ের একটিকে অপরটির সাথে মিলিয়ে দাও। এই আদেশটি তখনই সংগতিপূর্ণ হবে যখন ব্যক্তি পা দুটিকে ছড়িয়ে দিয়ে ছিল বলে ধরা হবে। দ্বিতীয়ত এক হাদীসে সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরানের ফযীলত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, كَاَنّهُمَا حِزْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافّ (সূরা দুইটি যেন পক্ষবিস্তারকারী পাখীর দুটো দল। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯১২।) লিসানুল আরব-এ হাদীসটি উদ্ধৃত করে صَوَافّ শব্দটির তরজমা করা হয়েছে : بَاسِطَاتٍ اَجْنِحَتَهُنّ فِى الطّيْرَانِ অর্থাৎ উড়ার ক্ষেত্রে তাদের পাখা বিস্তারকারী। বিস্তার করা অর্থ ছড়িয়ে দেওয়া। صَوَافّ ও صَافّاتٍ এই উভয় শব্দই صَافّةُ -এর বহুবচন। সূরা মুল্ক-এ আছে أَوَ لَمْ يَرَوْا إِلَى الطّيْرِ فَوْقَهُمْ صَافّاتٍ । বুখারী শরীফের কিতাবুত তাফসীরে আয়াতটির ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী রাহ. মুজাহিদের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। মুজাহিদصافّاتٍ -এর তাফসীরে বলেছেন : بسط اجنحتهن। সুতরাং আমি যে তরজমা করেছি তা সঠিক ও যথোপযুক্ত বলেই মনে করি।

 

 

advertisement