জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩৬   ||   এপ্রিল ২০১৫

শোকর ও দুআ

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد

শোকর আদায়ের নির্ধারিত কোনো সময় নেই। সবসময়ই আমরা আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের মধ্যে।

وإن تعدوا نعمة الله لا تحصوها

আল্লাহর নেআমত গণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়।  

اللهم لا أحصي ثناء عليك أنت كما أثنيت على نفسك

ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার গুণগান করে শেষ করতে অক্ষম। আপনি তেমনি যেমন নিজে বর্ণনা করেছেন।

তাসবীহ ও হামদ তো সব সময়ের আমল। বিশেষত প্রতি সকাল-সন্ধ্যার। সকাল-সন্ধ্যার শোকরগোযারির মাসনূন দুআও হাদীস শরীফে আছে, যা প্রতিদিনের আমল হওয়া চাই। সকালের দুআ :

 اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لا شَرِيكَ لَكَ ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ 

ইয়া আল্লাহ! এ সকালে আমার যা কিছু প্রাপ্তি কিংবা আপনার কোনো মাখলুকের, সব আপনারই দান, আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং আপনারই হামদ, আপনারই শোকর।

সন্ধ্যার দুআ:

اللّهُـمَّ ما أَمسى بي مِـنْ نِعْـمَةٍ أَو بِأَحَـدٍ مِـنْ خَلْـقِك ، فَمِـنْكَ وَحْـدَكَ لا شريكَ لَـك ، فَلَـكَ الْحَمْـدُ وَلَـكَ الشُّكْـر .

ইয়া আল্লাহ! এ সন্ধ্যায় আমার যা কিছু প্রাপ্তি, কিংবা আপনার যে কোনো মাখলুকের, সব আপনারই দান, আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং আপনারই হামদ, আপনারই শোকর।

কোনো নেক আমলের তাওফীক হওয়া অনেক বড় নেআমত। এরপর তা জারি থাকা আরো বড় নেআমত। এ নেআমতের শোকর হওয়া চাই সবসময়। আর ভবিষ্যতেও তা চলমান থাকার, আরো নিখুঁত, আরো ফলপ্রসূ হওয়ার এবং তাঁর দরবারে কবুল ও মকবুল হওয়ার দুআ জারি থাকা চাই। এ শোকর ও দুআ বছরান্তের কাজ নয়, দশ বছর পূর্তির কর্মও নয়। এ সব সময়ের আমল। তবে এক বিশেষ সময়সীমা পর্যন্ত কোনো আমলের ধারাবাহিকতার তাওফীক এক বিশেষ নেআমত। এর উপর কিছু বেশি পরিমাণে শোকর আদায় ভালো কাজ বৈকি। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা মানুষকে চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হলে এক বিশেষ দুআ শিখিয়েছেন। সুরা আহকাফে আছে-

 حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَ بَلَغَ اَرْبَعِیْنَ سَنَةً ۙ قَالَ رَبِّ اَوْزِعْنِیْۤ اَنْ اَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِیْۤ اَنْعَمْتَ عَلَیَّ وَ عَلٰی وَالِدَیَّ وَ اَنْ اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضٰىهُ وَ اَصْلِحْ لِیْ فِیْ ذُرِّیَّتِیْ ؕۚ اِنِّیْ تُبْتُ اِلَیْكَ وَ اِنِّیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْن

অবশেষে সে যখন তার পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়, তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাওফীক দান করুন, যেন আপনি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নিআমত দিয়েছেন তার শোকর আদায় করতে পারি এবং এমন সৎকর্ম করতে পারি, যাতে আপনি খুশি হন এবং আমার জন্য আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ করুন। আমি আপনার কাছে তওবা করছি এবং আমি আনুগত্য প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত। -সূরা আহকাফ ৪৬ : ১৫

মারকাযুদ দাওয়াহ-এর প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ বেশুমার। এক বড় অনুগ্রহ, একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশের তাওফীক। আলহামদুলিল্লাহ এখন তা দশ বছর পূর্ণ করে এগারতম বছরে প্রবেশ করেছে।

 فالحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات

সকল প্রশংসা আল্লাহর, যাঁর অনুগ্রহে ভালো কাজগুলো পূর্ণতা লাভ করে।

আমাদের ত্রুটি ও দুর্বলতার তো কোনো সীমা নেই। আর সময়ের দাবি ও সমাজের প্রয়োজন বিচার করলে তো এ এক মামুলী বিষয়। এরপরও যা কিছু সম্ভব হয়েছে একান্তই তাঁর দয়া।

ہم کیا ہیں جو کوئی کام ہم سے ہوگا

جو کچھ ہوا ہوا  کرم سے تیرا

جو کچھ ہوگا تیرے کرم سے ہوگا

 আমরা কী যে, আমাদের দ্বারা কোনো কাজ হয়/ যা কিছু হয়েছে তোমার দয়ায় হয়েছে/ যা কিছু হবে তোমার দয়ায় হবে।

فالحمد لله حمدا كثيرا طيبا مباركا فيه

আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ের একটি দিক এই যে, আল্লাহর নেআমত বান্দার কাছে পৌঁছুতে যাদের তিনি মাধ্যম বানিয়েছেন তাদেরও শোকর আদায় করা। একটি প্রসিদ্ধ হাদীস-

من لم يشكر القليل لم يشكر الكثير و من لم يشكر الناس لم يشكر الله عز وجل...

অর্থাৎ, যে অল্প কিছুর শোকর করে না সে বেশিরও শোকর করে না। আর যে মানুষের শোকর করে না সে আল্লাহরও শোকর করে না। -মুসনাদে আহমদ হাদীস ১৮৪৪৯; ১৯৩৫০- যাওয়াইদ- কিতাবুস সুন্নাহ, ইবনে আবী আসিম, হাদীস ৯৩

এজন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে ঐ সকল মুরব্বী, ভাই ও বন্ধুর শোকর আদায় করছি যাদের দ্বারা এ দ্বীনী কাজে যে কোনো দিক থেকে যে কোনো সেবা ও সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন।

বিশেষত এ কাজের শুরুতে যাদের হিম্মত ও মেহনত এবং সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ আছে তাদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জাহেরী আসবাবের বিচারে মাসিক আলকাউসার; বরং মারকাযুদ দাওয়াহই যাঁর হিম্মত ও মনোবলের ফল তিনি হচ্ছেন মারকাযুদ দাওয়াহ-এর মুদীরে মুআসসিস (প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক), মারকাযের দারুল ইফতার রঈস, আততাখাসসুস ফিল ফিকহ বিভাগের মুশরিফ (প্রধান) ও মাসিক আলকাউসারের সম্মানিত সম্পাদক জনাব মাওলানা মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন। তাঁকে পবিত্র ও দীর্ঘ জীবন দান করুন। তাঁর বলিষ্ঠ সম্পাদনা ও বরকতপূর্ণ কলম দ্বারা জাতিকে উপকৃত করুন এবং সাম্প্রতিক সমস্যাবলির ইসলামী সমাধান, যা ফিকহে ইসলামীর কঠিনতম অধ্যায়, বেশি বেশি পেশ করে পাঠকবৃন্দকে তৃপ্ত ও পরিতৃপ্ত করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

পত্রিকার শুধু প্রথম ভলিউমটিতে (১৪২৬ হি. মোতাবেক ২০০৫ ঈ.) নজর বুলালেই কত বড় বড় ব্যক্তি ও বন্ধু সুহৃদের নাম পাওয়া যাবে, আলকাউসারের সাথে যাদের সহযোগিতা এর প্রকাশনা শুরু হওয়ারও আগে থেকে। আর কত আল্লাহর বান্দা আছেন যাদের নাম আলকাউসারের পাতায় পাওয়া যাবে না, কিন্তু কর্মের দ্বারা তারা এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা অন্তরের অন্তস্তল থেকে তাদের সবার শোকর আদায় করছি এবং প্রত্যেকের জন্য দুআ করছি।

আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তাদের সবার যারা

১. এই মাসিক পত্রিকাটির সূচনা করেছেন।

২. এর রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন।

৩. পরামর্শের দ্বারা সহযোগিতা করেছেন।

৪. ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

৫. প্রবন্ধ-নিবন্ধের মাধ্যমে আলকাউসারকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। বিশেষত যারা শুরুতে এই খিদমত করেছেন এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত করেই গেছেন। অনেকে এখনো পর্যন্ত এ ধারা জারি রেখেছেন। অনেকে পরে শুরু করলেও নিয়মিত লিখে চলেছেন। যেমন

* মাওলানা আবদুল গাফফার

* মাওলানা আবদুল মতীন

* মাওলানা হেমায়েতুদ্দীন

* মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

* মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী

* মাওলানা আহমদ মায়মূন

* মাওলানা যাইনুল আবিদীন

* মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী

* মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী

* মাওলানা ইসহাক ওবায়দী

* মাওলানা ইসহাক ফরীদি রাহ.

* মাওলানা আবু সাবের আবদুল্লাহ

* মাওলানা হাবীবুর রহমান খান

এবং এরকম আরো অনেকে। আমরা তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং তাদেরও প্রতি, যারা যে কোনো ধরনের লেখা দ্বারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে জাযায়ে খায়ের দান করুন এবং প্রত্যেকের জীবনে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে তাদের দ্বারা বেশি বেশি উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

কলম, দুআ ও রাহনুমায়ীর মাধ্যমে যিনি আলকাউসারের সবচেয়ে বেশি খিদমত করেছেন তিনি সম্ভবত হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ ছাহেব (দা.বা.) দুটি দীর্ঘ ও বরকতপূর্ণ আদবী ও রুহানী সফরনামা তিনি আলকাউসারকে দান করেছেন। কয়েকটি সংক্ষিপ্ত শানদার সফরনামা এবং বেশ কিছু বয়ান, দরস, প্রবন্ধ-নিবন্ধও দিয়েছেন। একটি সফরনামা এখনো ধারাবাহিকভাবে আসছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্বাস্থ্য দান করুন, দীর্ঘজীবী করুন এবং তাঁর কলম ও কলব বরকত দ্বারা পূর্ণ করুন। সর্বোপরি তাঁকে শায়ানে শান জাযা দান করুন। আমীন।

তেমনি জনাব মাওলানা আবুল বাশার দামাত বারাকাতুহুমেরও বিশেষভাবে শোকর আদায় করছি, যিনি তাঁর কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ ছাড়াও ইসলামে পরিমিতি বিষয়ে একটি ধারাবাহিক লেখা লিখে চলেছেন; যা একাধারে ইলমী ও আদবী উভয় বেশিষ্ট্যের ধারক।

আমরা তাদেরও শুকরিয়া জানাই যারা যে কোনোভাবে এর শুদ্ধি ও সম্পাদনায় অবদান রেখেছেন।

ঐ বুযুর্গ ও মুরব্বীগণেরও, যাঁদের প্রবন্ধ-নিবন্ধের তরজমা আলকাউসারে প্রকাশিত হয়েছে এবং তাদেরও, যাদের মাধ্যমে এ তরজমা আমরা পেয়েছি।

তাদেরও শুকরিয়া জানাই যারা এর প্রকাশনা ও বিতরণে অবদান রেখেছেন। কাউকে পড়তে বলেছেন, কাউকে গ্রাহক বা এজেন্ট বানিয়েছেন।

তাদেরও শুকরিয়া জানাই যারা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন,

তাদেরও যারা দুআ করেছেন এবং তাদেরও যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। যদিও বিজ্ঞাপনের বিষয়ে আমার ধারণা, আলকাউসারের মত ভাবমর্যাদাপূর্ণ দ্বীনী ও ইলমী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না আসাই বোধ হয় বেশি ভালো। তবে যাইহোক এতে কিছু ইতিবাচকতাও রয়েছে। কোনো দাওয়াতী কাজ আমাদের উদাসীনতায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার চেয়ে অন্তত এ উপায়ে এর সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কল্যাণশূন্য নয়।

৬. শুকরিয়া আদায় করছি প্রতি মাসে যাদের প্রত্যক্ষ শ্রমে আলকাউসার প্রস্তুত হয় তাদের, বিশেষত শুরুর সময়ে যে বন্ধুগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতি মাসে আমাদের একটি করে নতুন সংখ্যা উপহার দিয়েছেন, যখন অভিজ্ঞতাও ছিল কম। উপকরণও ছিল অপ্রতুল।

৭. যারা এর মুদ্রণ ও বাঁধাই-এর খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তাদের।

৮. সম্মানিত পাঠকবৃন্দের।

৯. যারা এর চিন্তা-ধারা এবং বাণী ও বার্তার প্রচার-প্রসার করেছেন তাদের।

১০. যারা এর ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাদের।

১১. এবং যাদের উল্লেখ এ সংক্ষিপ্ত সারণীতে নেই তাদের সকলের। তাদের নাম স্মৃতিতে থাক বা না থাক যারাই আমাদের সহযোগিতা করেছেন বা যার দ্বারাই আমাদের কোনো উপকার হয়েছে প্রত্যেকের আমরা শোকর আদায় করি এবং প্রত্যেকের জন্য দুআ করি। পাঠকবৃন্দের কাছেও সবার জন্য দুআর দরখাস্ত করছি এবং এ লেখার মাধ্যমে- যার দৃষ্টিতে এ লেখা পড়ে বা এর বার্তা পৌঁছে-প্রত্যেকের খিদমতে নিবেদন, তাঁরা যেন এ সাময়িকীটির উত্তরোত্তর উন্নতি ও সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে মকবুল থেকে মকবুলতর হওয়ার দুআ করেন। 

 

-মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

 

 

advertisement