রবিউল আউয়াল ১৪৩৬   ||   জানুয়ারি ২০১৫

নববর্ষ : একটি বর্ষের আগমন একটি বর্ষের বিদায়

রাতের পর দিন আসে, দিনের পর রাত- এ আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক নিদর্শন। আল্লাহ তাআলার মহা কুদরতের এই নিদর্শন মানুষমাত্রই প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু প্রাত্যহিকতার কারণে দিন-রাতের আবর্তন আমাদের কাছে অতি স্বাভাবিক। অথচ কেউ যদি দিন-রাতের এই আবর্তন নিয়ে চিমত্মা করে তাহলে উপলব্ধি করতে পারবে, আল্লাহ তাআলা কত বড় শক্তিমান! তিনি কত নিপুণ, কত কুশল! তো সৃষ্টিজগতের এসকল বিষয় থেকে যারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করে, কুরআনের দৃষ্টিতে তারা উলুল আলবাব বুদ্ধিমান।

تَبَارَكَ الَّذِي جَعَلَ فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَجَعَلَ فِيهَا سِرَاجًا وَقَمَرًا مُنِيرًوَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ خِلْفَةً لِمَنْ أَرَادَ أَنْ يَذَّكَّرَ أَوْ أَرَادَ شُكُورًا

অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা বলেন, বরকতময় সেই সত্তা যিনি আসমানে তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে দিয়েছেন একটি প্রদীপ ও আলোকিত চাঁদ। এবং তিনিই সেই সত্তা যিনি রাত ও দিনকে আবর্তনশীল বানিয়েছেন ঐ সকল লোকের উপকারের জন্যে যারা আল্লাহকে স্মরণ করতে চায় বা তাঁর শোকর আদায় করতে চায়। -সূরা ফুরকান ২৫ : ৬১-৬২

কেউ মহাকাশ সম্পর্কে অনেক জানল, সূর্য ও চন্দ্রের গতি সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করল, কিন্তু এ সকল কিছুর যিনি স্রষ্টা তাঁর পরিচয় পেল না, তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই। কুরআনের দৃষ্টিতে মূর্খ তারাই যারা তাদের জ্ঞানের দাবি পূরণ করে না। যারা জ্ঞানের দাবি পূরণ করে কুরআনের দৃষ্টিতে তারা জ্ঞানী। দ্বীনী জ্ঞান ও জাগতিক জ্ঞান উভয় ক্ষেত্রে এ কথা সত্য। সুতরাং যারা দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে, কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে এবং সে অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করে, কুরআনের দৃষ্টিতে তারা জ্ঞানী। তদ্রূপ যারা জাগতিক শিক্ষা অর্জন করে এবং সৃষ্টির মাধ্যমে স্রষ্টার পরিচয় লাভ করে, কুরআনের দৃষ্টিতে তারাও জ্ঞানী।

দিন-রাতের বিবর্তনের আরেক শিক্ষা, জীবনের মূল্যবান সময় নিঃশেষ হওয়ার চেতনা। কবি বলেন,

 গাফেল তুঝে ঘড়িয়াঁ দেতা হ্যায় মুনাদী, গরদুঁ নে ঘড়ী উমর কী এক আওর ঘটা দী।

ওহে উদাসীন! ঘড়ির ঘণ্টা তোমাকে দিচ্ছে এই বার্তা যে, সময়ের ঘূর্ণন তোমার জীবন থেকে আরো এক ঘণ্টা বিয়োগ করল।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন, যখন সকাল হয়, সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। (সন্ধ্যার আগেই পাকসাফ হয়ে যাও, প্রস্তুত হয়ে যাও।) আর যখন সন্ধ্যা হয় সকালের অপেক্ষা করো না। (সকাল হওয়ার আগেই পাকসাফ হও, প্রস্তুত হও।) তুমি তো জান না, আগামীকাল তোমার নাম কী হবে? (তোমার নাম কি জীবিতদের তালিকায় থাকবে, না মৃতদের তালিকায়?) সুতরাং সময় থাকতেই প্রস্তুত হও। আল্লাহর নিকট সমর্পিত হও। ভেবো না, এখনও যৌবন! এখনও তারুণ্য!

আমাদের জীবন থেকে সময় বিয়োগ হচ্ছে। মানুষকে আল্লাহ তাআলা যেসকল সম্পদ দান করেছেন, সময়, সুস্থতা, অর্থ, বিত্ত, জ্ঞান, প্রজ্ঞা- এ সকল সম্পদের মধ্যে সময়-সম্পদ সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কারণ অন্যান্য সম্পদ একবার চলে গেলে আবার ফিরে আসতে পারে। একবার লোকসান হলে আবার লাভ হতে পারে।  কিন্তু সময়-সম্পদ চলে গেলে আর ফিরে আসে না। সময়-সম্পদে কেবল বিয়োগই হয়, যোগ হয় না।  তো রাত ও দিনের আবর্তনের মাঝে আছে অনেক শিক্ষা, অনেক উপদেশ ।

ইংরেজি ক্যালেন্ডার হিসাবে একটি নতুন বছর উপস্থিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্য একশ্রেণীর মানুষ উৎসবে মেতে উঠে। থার্টিফার্স্ট নাইটের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক এ সময়টিকে  নানা গর্হিত অসামাজিক কার্যকলাপের জন্যেও বেছে নেয়। একটি বর্ষের আগমন কি শুধুই আগমন? একটি বষের্র আগমন কি জীবন থেকে একটি বর্ষের বিদায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় না? কারো অর্থ-সম্পদ বিয়োগ হলে সে চিন্তা করে, এতে আমার কী মুনাফা হয়েছে? কিন্তু জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ সময় জীবন থেকে বিয়োগ হয়ে যায়, অথচ একটুও চিন্তা হয় না যে, যে সময়টা গত হল তার কতটুকু কাজে লাগানো হয়েছে? এই সময়ে আমার ঈমান-আমলের কতটুকু উন্নতি হয়েছে? আখলাক-চরিত্র কতটুকু সংশোধিত হয়েছে? জ্ঞান-প্রজ্ঞা, মানবতা ও সমাজসেবায় আমি কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার নৈকট্যের পথে এবং আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি?

সময়ের  বিবর্তন আমাদের এ শিক্ষা ও চেতনা দান করে।

 

 

advertisement